রমরমা রবিবারে রোমাঞ্চের অপেক্ষা
লা লিগার শিরোপা নির্ধারনী ম্যাচ?
লা লিগার তৃতীয় ম্যাচ শেষেই শীর্ষে উঠেছিল বার্সেলোনা। এরপর থেকে এখনও তারা আছে সবার ওপরেই। আর রিয়াল মাদ্রিদ সুবিধা করতে না পারলেও প্রায় পুরোটা সময়জুড়েই বার্সাকে তাড়া করে গেছে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ। কিন্তু বার্সার এতোটা কাছে আসার সুযোগ এবারই প্রথম পেয়েছে তারা। দুই দলের পয়েন্ট ব্যবধান এখন ৫। এমন সমীকরণ নিয়েই ন্যু ক্যাম্পে আজ খেলতে যাচ্ছে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ।
অথচ ফেব্রুয়ারির শুরুতেও দুরন্ত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছিল বার্সা। গত মাসের ১৮ তারিখ অ্যাথলেটিক বিলবাওয়ের বিপক্ষে জয়ের পরও ডিয়েগো সিমিওনে উড়িয়ে দিয়েছিলেন তার দলের শিরোপা জয়ের সম্ভাবনা। সেই সিমিওনেই এখন আশায় বুক বাঁধছেন, ন্যু ক্যাম্পের ম্যাচে জিতলেই তো বার্সার সাথে পয়েন্ট ব্যবধান নেমে আসবে দুইয়ে! ২০১৩-১৪ সালে ন্যু ক্যাম্পে বার্সাকে হারিয়েই লিগ জিতেছিল অ্যাটলেটিকো। এবারের ম্যাচের আগে তাই ফিরে আসছে সেই প্রসঙ্গও। “লা লিগা জেতাটা অসম্ভব নয়। আমরা আগেও জিতেছি, কিন্তু এবার কিছুটা কঠিন। তবে শেষ ৫ ম্যাচ পর্যন্ত শিরোপাদৌড়ে টিকে থাকলে এটা খুবই সম্ভব”- ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন সিমিওনে।
কিন্তু ম্যাচ জয়ের জন্য আলাদা করে লিওনেল মেসিকে আটকানোর কৌশল অনুসরণ করতে রাজি নন অ্যাটলেটিকোর আর্জেন্টাইন ম্যানেজার। বরং নিজের খেলোয়াড়দের ওপরই ভরসা রাখতে চান তিনি। ডিয়েগো কস্তা দলে আসার পর কেটেছে অ্যাটলেটিকোর গোল খরা। আর শেষ ২ ম্যাচে ৭ গোল করা আঁতোয়া গ্রিজমানও যোগ দিয়েছেন কস্তার সাথে। রক্ষণের মতো তাই আক্রমণেও ভয়ঙ্কর সিমিওনের দল।
“মেসির জন্য আলাদা করে কোনো কৌশল নেওয়া বৃথা। প্রকৃতিগত ভাবে ও এমন যে আপনি ওকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না। কিন্তু আমি সবসময়ই বলে এসেছি গ্রিজমান অসাধারণ একজন অসাধারন খেলোয়াড়, ওকে মেসির পাশেই রাখা উচিত।”
সিমিওনে মেসিকে আটকাতে ছক না কষলেও বার্সা ম্যানেজার এর্নেস্তো ভালভার্দের কৌশল অনেকটাই মেসি নির্ভর। মৌসুমের বেশিরভাগ সময় ৪-৪-২ ফর্মেশনে খেলেই সাফল্য পেয়েছেন তিনি। এই কৌশল অনুযায়ী আক্রমণে বার্সা খেলোয়ড়দের লক্ষ্য থাকে মেসিকে খুঁজে বের করা। শেষ ম্যাচে লাস পালমাসের বিপক্ষে একই ফরমেশনে দল নামিয়েছিলেন ভালভার্দে। কিন্তু ওই ম্যাচে মেসিকে বল দেওয়াই ছিল বার্সার একমাত্র লক্ষ্য, ফলাফল পয়েন্ট হারিয়ে ফেরা!
দলে নতুন আসা ফিলিপ কুতিনিয়ো আর ওসমান ডেম্বেলেদের জায়গা এখনও নড়বড়ে। অ্যাটলেটিকোর বিপক্ষে ম্যাচে মাঝমাঠে সার্জিও বুস্কেটস, ইভান রাকিটিচ, আন্দ্রেস ইনিয়েস্তাদের জায়গা অনেকটাই নিশ্চিত। পলিনিয়োর জায়গায় কুতিনিয়োকে নামালে ৪-৩-৩ ফর্মেশনে খেলার সুযোগটাও থাকছে ভালভার্দের। কিন্তু রক্ষণাত্মক দিক দিয়ে কুতিনিয়ো শক্তিশালী না হওয়ায় মাঝমাঠে নিজের পছন্দের ‘কমপ্যাক্ট মিডফিল্ডটা’ হারাতে হতে পারে তাকে।
গত বছর ওয়ান্ডা মেট্রোপলিটানোর ম্যাচে বার্সার বিপক্ষে শুরুটা দারুণ করেছিল অ্যাটলেটিকো। দ্রুতগতির ফুটবল খেলে প্রথমে এগিয়ে গিয়ে পুরো ম্যাচ নিয়ন্ত্রণ করেছিল তারাই। পরে অবশ্য লুইস সুয়ারেজের গোলে এক পয়েন্ট নিয়েই ফেরত এসেছিল বার্সা। এবারও বার্সার বিপক্ষে একইরকম শুরুই চাইবেন সিমিওনে। এক গোলে ম্যাচ জেতাটা তার চেয়ে ভালো আর কে পারেন? এ কথা জানেন ভালভার্দে নিজেও। রেকর্ড গড়ে কুনিতিনিয়োকে দলে ভেড়ালেও তাই মৌসুমের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে শুরুটা সাইডবেঞ্চেই হওয়ার সম্ভাবনা বেশি কুতিনিয়োর।
এই মৌসুমে লিগে এখনও অপরাজিত বার্সা। এমন ম্যাচের আগে ঝুঁকি নিতে চাইবেন কেন ভালভার্দে? আর সিমিওনের কাছে শেষ পর্যন্ত হেরে গেলে তার পুরো মৌসুমের সাফল্যটাই ঢাকা পড়ে যাবে আড়ালে!
সিটির প্রশংসা করছেন কন্তেও
আগের মৌসুমে লিগে চেলসি ছিল অপ্রতিরোধ্য, এবার ম্যানচেস্টার সিটি। আর আগেরবারের শিরোপাজয়ী চেলসি এখন ধুঁকছে, শীর্ষে চারে জায়গা করে নিতে। কিন্তু নিজের দলের খারাপ অবস্থাতেও সিটির প্রশংসা করতে ভোলেননি আন্তোনিও কন্তে, “আমার মনে হয় আমাদের সবারই প্রশংসা করা উচিত সিটিকে। এই দলের ঘাটতি কোথায় আছে সেটা বের করাই কঠিন হয়ে পড়ে মাঝেমধ্যে।“
ইতিহাদ স্টেডিয়ামে সিটির বিপক্ষে হেরে গেলে শীর্ষ চার থেকে আরও দূরে চলে যাবে চেলসি। আর সিটি এখনই পাচ্ছে শিরোপার সুবাস। চেলসির সাথে জিতে গেলে লিগ জিততে গার্দিওলার দলের দরকার হবে মাত্র ১২ পয়েন্ট। চেলসির বিপক্ষে ম্যাচে অবশ্য দলে রাহিম স্টার্লিং, ফার্নান্দিনহোদের না পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি গার্দিওলার। তবে সেটাও সিটির ফেভারিট তকমাকে ম্লান করছে না এতোটুকুও।
শিরোপা ছাপিয়ে শিরোনাম মিলান ডার্বি
সিরি আর শিরোপা দৌড়ে দুই দল এগুচ্ছে একই গতিতে। গতরাতে পাউলো দিবালার শেষ মুহুর্তের গোলে লাতসিওকে হারানোর পর শীর্ষে থাকা নাপোলির সাথে পয়েন্ট ব্যবধানে একে নামিয়ে এনেছে জুভেন্টাস। আর রোমার কাছে ৪-২ ব্যবধানে হেরে জুভের জন্য কাজটা কিছুটা সহজ করে দিয়েছে নাপোলি। তুরিনের ওল্ড লেডিরা নাপোলির চেয়ে খেলেছে এক ম্যাচ কম, সেটাতে জিতলেই প্রথমবারের মতো নাপোলিকে টপকে শীর্ষে উঠবে তারা।
তবে এই শিরোপা দৌড়ের চেয়ে বড় আকর্ষণ আছে এ সপ্তাহে সিরি আতে। ফুটবল ক্যালেন্ডার হাতে পাওয়ার পর যে কয়টি ম্যাচের তারিখ আগে থেকে লাল কালি দিয়ে দাগ দিয়ে রাখেন সমর্থকেরা তেমন একটি ম্যাচ। ডার্বিতে মুখোমুখি হচ্ছে এসি মিলান ও ইন্টার মিলান। দুই দলের লড়াইটা শিরোপার জন্য নয়, তবুও তাতে ভাটা পড়ছে না রোমাঞ্চের।
মৌসুমের শুরুতে উলটো দিকে হাঁটতে থাকা মিলান, জেনেরো গাত্তুসোর অধীনে এখন অনেকটাই গোছানো। শেষ ১৪ ম্যাচে অপরাজিত, সাথে দলকে নিয়ে গেছেন কোপা ইতালিয়ার ফাইনালেও। আর শুরুটা দারুণ করলেও পরে পথ হারিয়েছে ইন্টার। এখন শীর্ষ চারে জায়গা করে নেওয়াটাই তাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সমীকরণ যেমনই হোক, দুই দলের অবস্থা পয়েন্ট তালিকার যেখানেই হোক- এই ম্যাচ যে রোমাঞ্চ ছড়াবে সেটা চোখ বন্ধ করেই বলে দেওয়া যায়।