রোনালদোর রেকর্ডের রাতে রিয়ালের জয়
সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে গেটাফেকে ৩-১ গোলে হারিয়ে লা লিগায় জয়ের ধারায় ফিরেছে রিয়াল মাদ্রিদ। আজকের জয়ে আগামী মঙ্গলবার চ্যাম্পিয়নস লিগে পিএসজির বিপক্ষে শেষ ষোলর দ্বিতীয় লেগের প্রস্তুতিটাও দারুণভাবে সেরে নিল জিনেদিন জিদানের দল। রিয়ালের হয়ে জোড়া গোল করেছেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, পূরণ করেছেন রিয়ালের হয়ে লা লিগায় গোলের 'ট্রিপল সেঞ্চুরি'। অন্য গোলটি এসেছে গ্যারেথ বেলের পা থেকে। ডেভিড বেকহামকে (১১৬) টপকে লা লিগায় সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলা বৃটিশ ফুটবলার হওয়ার রেকর্ডটা গোল দিয়েই স্মরণীয় করে রাখলেন বেল (১১৭)।
গেটাফের বিপক্ষে চিরাচরিত ৪-৩-৩ ফর্মেশন থেকে সরে এসে ৪-২-৩-১ এ দল সাজিয়েছিলেন জিনেদিন জিদান। মাতেও কোভাচিচের স্থলাভিষিক্ত হয়েছিলেন তরুণ মার্কোস ইয়োরেন্তে। কাসেমিরোর সাথে মাঝ মাঠে গেটাফের আক্রমণভাগের ফুটবলারদের পুরোটা ম্যাচই রীতিমত পকেটবন্দিই করে রেখেছিলেন তিনি। দুই ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারের কারণে নিচে নেমে সার্জিও রামোসদের রক্ষণে তেমন একটা সাহায্য করতে হয়নি বেল, রোনালদোদের। এই 'স্বাধীনতা' পেয়েই রিয়ালকে লিড এনে দিয়েছিলেন বেল। ২৪ মিনিটে ডানপ্রান্ত থেকে ক্রস করেন দানি কারভাহাল। রিয়ালের রাইটব্যাকের ক্রস হেড করে বেলের দিকে পাস বাড়ান ইস্কো। গেটাফের দূর্বল রক্ষণের সুযোগে ডিবক্সে বেশ খানিকটা জায়গা পেয়ে যান এই ওয়েলশ উইঙ্গার। বাঁ-পায়ের জোরাল শটে গেটাফে গোলরক্ষক মার্টিনেজকে পরাস্ত করেন তিনি।
বেলের গোলে অ্যাসিস্ট করলেও মূল একাদশে সুযোগ পেয়ে নিজেকে আজও মেলে ধরতে পারেননি ইস্কো। প্রথমার্ধে বেশ কয়েকবার বল হারানোয় বার্নাব্যুর দুয়োও শুনতে হয়েছে তাকে। শুধু ইস্কো নন, প্রথমার্ধে বেশ অগোছালো ছিল পুরো রিয়ালই। তবে প্রথমার্ধ শেষের আগে ঠিকই ব্যবধান দ্বিগুণ করে রিয়াল। ৪৫ মিনিটে করিম বেনজেমার পাস থেকে ডিবক্সে বল পান রোনালদো। গেটাফের দুজন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে বাঁপায়ের মাপা শটে লা লিগায় দ্রুততম ফুটবলার হিসেবে গোলের 'ট্রিপল সেঞ্চুরি' পূরণ করেন 'সিআর৭'। লা লিগায় গোলের দ্রুততম 'সেঞ্চুরি' এবং 'ডাবল সেঞ্চুরি'ও রোনালদোরই।
দুই গোলে পিছিয়ে পড়া গেটাফে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই পরিণত হয় দশজনের দলে। বল দখলের সময় নাচো ফার্নান্দেজের মুখে আঘাত করে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন স্ট্রাইকার লইক রেমি। তবে ৬৫ মিনিটে ম্যাচে ফেরার দারুণ এক সুযোগ পেয়ে যায় তারা। ডিবক্সে বল দখলের লড়াইয়ে নাচোর ট্যাকেলে পড়ে যান আনহেল। পেনাল্টির বাঁশি দেন রেফারি। ১২ গজ থেকে কেইলর নাভাসকে পরাস্ত করেন পোর্তিয়ো। এর মিনিট পাঁচেক পর আরও এক বিতর্কিত সিদ্ধান্তে বার্নাব্যু সমর্থকদের দুয়োধ্বনির মূল লক্ষ্যে পরিণত হন রেফারি হার্নান্দেজ। ৭০ মিনিটে হেড করে গোল করলেও অফসাইডের কারণে বাতিল হয় রোনালদোর গোল। কিন্তু রিপ্লেতে পরিষ্কার দেখা গেছে, অনসাইডেই ছিলেন এই পর্তুগিজ। এর মিনিটখানেক পর কারভাহালের দারুণ ক্রসে গোলের গজ তিনেক দূর থেকে শট নেন রোনালদো। কিন্তু গেটাফে গোলরক্ষক মার্টিনেজের অসামান্য দক্ষতায় এবারও খালি হাতেই ফিরতে হয় তাকে।
কিন্তু ৭৮ মিনিটে আর দমিয়ে রাখা যায়নি রোনালদোকে। বাঁপ্রান্ত থেকে মার্সেলোর ক্রসে হেড করে রিয়ালের জয় নিশ্চিত করেন 'সিআর৭'। এই গোল দিয়ে লা লিগায় হেডে করা গোলের 'হাফসেঞ্চুরি' পূরণ করলেন রোনালদো। এ নিয়ে টানা ৯ মৌসুম ৩০ গোলের মাইলফলক ছুঁলেন তিনি। গোলের পরপরই পিএসজি ম্যাচের কথা চিন্তা করেই তাকে উঠিয়ে মার্কো আসেন্সিওকে নামিয়ে দেন জিদান। মাঠে উপস্থিত প্রায় ৫১ হাজার মাদ্রিদ সমর্থক তখন দাঁড়িয়ে অভিবাদন জানাচ্ছিল রোনালদোকে। ম্যাচের বাকিটা সময় কিছুটা গা বাঁচিয়ে খেলেছে রিয়াল। শেষদিকে বেলের একটি শট বারপোস্টে প্রতিহত হলে শেষমেশ ৩-১ গোলের জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে রিয়াল।