কিক অফের আগেঃ বুফনের শেষ সুযোগ?
ঘরের ছেলে ফিরছে ‘পরের’ হয়ে
পিএসজি বনাম রিয়াল মাদ্রিদ; পার্ক দে প্রিন্স; ৬(৭) মার্চ; বাংলাদেশ সময় রাত ১ঃ৪৫, টেন ২
ফ্রান্সের ১৯৯৮ বিশ্বকাপ এবং ২০০০ সালের ইউরো জয়ের নায়ক ছিলেন তিনি। জন্ম আলজেরিয়ায় হলেও ‘লা ব্লুজ’দের নীল জার্সি গায়ে জড়িয়েই পায়ের জাদুতে মোহাচ্ছন্ন করেছিলেন ফুটবল বিশ্বকে। টেকো মাথার স্মিত হাসির সেই কিংবদন্তী আজ ফিরছেন স্বদেশে, কিন্তু ‘শত্রু’ পক্ষের হয়ে। বর্ণ, গোত্র, মতে বিভক্ত ফ্রান্স এই একটি জায়গাতে এখনও এক। আর তা হল জিনেদিন জিদানের প্রতি ভালবাসা। তবে অন্তত আজ এই ভালবাসায় হয়ত ভাটা পড়বে কিছুটা। নিজ দল রিয়াল মাদ্রিদকে নিয়ে শেষ ষোলর দ্বিতীয় লেগ দিয়েই তাকে ঈশ্বরতুল্য সম্মান দেওয়া মানুষগুলোর মাঝে ফিরছেন ‘জিজু’।
প্রথম লেগে আদ্রিয়ান রাবিয়োটের গোলে এগিয়ে গিয়েও শেষ পর্যন্ত রিয়াল মাদ্রিদের কাছে ৩-১ গোলে হেরেছিল পিএসজি। জোড়া গোল করে রিয়ালের জয়ে মূল অবদানটা যথারীতি ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোরই। দুই গোলের ব্যবধানে হারলেও পিএসজির আছে মহামূল্যবান ‘অ্যাওয়ে ’ গোল। প্যারিসে দ্বিতীয় লেগে নেইমার না থাকলেও তাই কিছুটা হলেও ভরসা পাচ্ছে পিএসজি। অন্তত এমনটাই মানছেন কোচ উনাই এমেরি, “নেইমার না থাকাটা যেমন দুঃখজনক, ঠিক তেমনি অ্যাওয়ে গোলটাও আমাদের জন্য একটা ইতিবাচক লক্ষণ”। নেইমারের মতই ইনজুরির কারণে ম্যাচটি মিস করতে হতে পারে তাদের মাঝ মাঠের দুই প্রাণভোমরা লুকা মদ্রিচ এবং টনি ক্রুসকে। কিন্তু পূর্ণশক্তির রিয়ালকেই প্যারিসে চাচ্ছেন এমেরি, “আমি রিয়ালের সেরা দলের বিপক্ষেই খেলতে চাই। মৌসুমের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ এটি। প্যারিসের মানুষদের জন্যও দারুণ এক উপভোগ্য সময়"।
নেইমার না থাকায় রিয়ালের বিপক্ষে মাঠে নামার কথা অ্যানহেল ডি মারিয়া। ডিফেন্ডার মার্কিনহোস এবং উইঙ্গার কিলিয়ান এম্বাপ্পের খেলা নিয়েও আছে কিছুটা সংশয়। তবে গত রবিবার অনুশীলনে অংশগ্রহণ করায় এম্বাপ্পের খেলার সম্ভাবনা বেশ জোরালই বলা চলে। এম্বাপ্পের মতই ম্যাচের মাত্র দিন দুয়েক আগে পূর্ণ অনুশীলনে ফিরেছেন ক্রুস-মদ্রিচ। হ্যামস্ট্রিংয়ের ইনজুরির কারণে সপ্তাহ তিনেক মাঠের বাইরে ছিলেন দুজনই। তবে সদ্যই ফেরায় হয়ত শুরু থেকে নাও থাকতে পারেন তারা। সেক্ষেত্রে কাসেমিরোর মাঝামাঠে খেলবেন মাতেও কোভাচিচ, ইস্কো।
রোনালদো বনাম দানি আলভেজ, ডি মারিয়া বনাম দানি কারভাহাল, ভেরাত্তি বনাম কাসেমিরো, রাবিয়োট বনাম কোভাচিচ, কাভানি বনাম রামোস, এম্বাপ্পে বনাম মার্সেলো- মৌসুমের অন্যতম ‘হাই ভোল্টেজ’ ম্যাচে পার্থক্য গড়ে দিতে পারে এই একক লড়াইগুলোর যেকোনোটিই। মাঝ মাঠের লড়াইটা হবে দেখার মত। বিশেষ করে মূল একাদশে মদ্রিচকে নামলে তাকে আটকানোটাই হওয়া উচিত পিএসজির মূল লক্ষ্য। এই মৌসুমে মদ্রিচের অভাবটা বেশ ভালোই ভুগিয়েছে রিয়ালকে। সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে রিয়াল বেটিসের কাছে হার এবং লেভান্তের মাঠে ড্র করা ম্যাচ দুটির কোনোটিতেই খেলেননি এই ক্রোয়েশিয়ান। প্রথম লেগে ক্রুস-মদ্রিচদের কাছে পাত্তাই পাননি ভেরাত্তি-রাবিয়োটরা।
তবে একেবারেই যে নির্ভার থাকতে পারছে রিয়াল, এমনটা কিন্তু নয়। কারণ? পুরো মৌসুমেই নড়বড়ে রক্ষণের কারণে পয়েন্ট খোয়াতে হয়েছে অনেক ম্যাচে। পিএসজির বিপক্ষে সার্জিও রামোস, রাফায়েল ভারানরা ইস্পাতদৃঢ় ডিফেন্স করতে না পারলে শেষ ষোল থেকেই বাদ পড়ার সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে রিয়ালের। লা লিগায় ২৭ ম্যাচে মোট ২৯ গোল হজম করেছে জিদানের দল, গড়ে প্রতি ম্যাচে একটিরও বেশি! আর চ্যাম্পিয়নস লিগে ৭ ম্যাচে রিয়ালের জালে ৮বার বল পাঠিয়েছে প্রতিপক্ষ। পিছিয়ে থাকলেও এসব পরিসংখ্যান দেখেই হয়ত অনুপ্রেরণা খুঁজছে এমেরির দল। তবে শুধু আক্রমণ নয়, রক্ষণভাগেও সাবধান থাকতে হবে পিএসজিকে। খুব সম্ভবত প্রতি আক্রমণে ইউরোপের সেরা দলটির বিপক্ষেই মাঠে নামছে তারা। প্রতি আক্রমণে বেল, রোনালদো, মদ্রিচদের আটকাতে না পারলে গত মৌসুমের মত এবারও হয়ত শেষ ষোল থেকেই বিদায় নিতে হতে পারে প্যারিসের ক্লাবটিকে।
সম্ভাব্য একাদশঃ
পিএসজি (৪-৩-৩): আরিওলা; আলভেজ, কিম্পেম্বে, সিলভা, কুরযাওয়া; ভেরাত্তি, রাবিয়োত, ড্র্যাক্সলার; এম্বাপ্পে, কাভানি, ডি মারিয়া
রিয়াল মাদ্রিদ (৪-৩-৩): নাভাস; কারভাহাল, ভারান, রামোস, মার্সেলো; ক্রুস, কাসেমিরো, কোভাচিচ; বেল, বেনজেমা, রোনালদো
সর্শেষ ৫ দেখায় রিয়ালের জয় ২টি, পিএসজির ১টি। ৩-১ গোলে প্রথম লেগ হারলেও দ্বিতীয় লেগের আগে পিএসজিকে আশা দেখাচ্ছে ইতিহাস। ১৯৯২-৯৩ মৌসুমের ইউয়েফা কাপের শেষ আটে দেখা হয়েছিল ইউরোপের অন্যতম সেরা এই দুই দলের। সেবারও প্রথম লেগ রিয়াল জিতেছিল ৩-১ গোলে। কিন্তু ফিরতি লেগে ৪-১ গোলে জিতে সেমিতে গিয়েছিল প্যারিসের ক্লাবটিই। পিএসজি কি পারবে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি করতে? নাকি ত্রয়োদশ চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপার আরও কাছে চলে আসবে রিয়াল?
বুফনের ‘শেষ’ সুযোগ?
টটেনহাম হটস্পার্স বনাম জুভেন্টাস; ওয়েম্বলি স্টেডিয়াম; ৭(৮) মার্চ, বাংলাদেশ সময় ১ঃ৪৫, টেন ২
বয়সটা চল্লিশের কোঠায় পৌঁছেছে বেশ আগেই। কিন্তু এখনও দিব্যি ইউরোপের সর্বোচ্চ পর্যায়ে খেলে যাচ্ছেন তিনি। তবে আর যা হোক, শরীর তো রক্ত-মাংসেই গড়া; হোক তা ইতালিয়ান কিংবদন্তী জিয়ানলুইজি বুফনের। এই মৌসুমের শেষেই তাই ফুটবল থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে বিশ্বকাপ জিতলেও চ্যাম্পিয়নস লিগের রূপালি শিরোপায় এখনও চুমু আঁকা হয়নি বুফনের। সেক্ষেত্রে এই মৌসুমটিই হতে যাচ্ছে ইউসিএল জেতার বুফনের শেষ সু্যোগ।
কিন্তু বুফনের শেষ মৌসুমে জুভেন্টাসের কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করার রাস্তাটা মসৃণ নয় একেবারেই। নিজেদের মাঠে প্রথম লেগে ২-০ গোলে এগিয়ে থেকেও শেষ পর্যন্ত হ্যারি কেইন এবং ক্রিশ্চিয়ান এরিকসেনের গোলে ২-২ গোলের ড্র নিয়েই ফিরেছে স্পার্স। দুটি অ্যাওয়ে গোল, দ্বিতীয় লেগ নিজেদের মাঠে- সব মিলিয়ে ফেভারিট মাউরিসিও পচেত্তিনোর দলই।
গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে দলের মূল তারকা পাওলো দিবালাকে পাচ্ছে জুভেন্টাস। গত সপ্তাহে লাৎসিও-র বিপক্ষে অতিরিক্ত সময়ে তার গোলেই জিতেছিল ‘তুরিনের বুড়ি’রা। প্রথম লেগে ‘লা জোয়া’র অভাবটা বেশ ভালমতই টের পেয়েছিল ম্যাক্সিমিলিয়ানো অ্যালেগ্রির দল। দিবালাকে পেলেও ইনজুরির কারণে এখনও মাঠের বাইরেই আছেন হুয়ান কুয়াদ্রাদো। লাৎসিও-র বিপক্ষে না খেললেও এই ম্যাচ দিয়েই ফেরার কথা হিগুয়াইনের, এমনটাই জানিয়েছেন অ্যালেগ্রি। ফিরতে পারেন মাঞ্জুকিচ এবং ফুলব্যাক মাতিয়া ডি শিলিও-ও। জুভেন্টাসের মত অবশ্য এত ইনজুরি ঝক্কি-ঝামেলা নেই স্পার্সের। ওয়েম্বলিতে দ্বিতীয় লেগের আগে পূর্ণশক্তির দলই পাচ্ছেন পচেত্তিনো।
ওয়েম্বলিতে স্পার্সকে হারাতে হলে কেইন-এরিকসেন জুটির বোঝাপড়াকে অকেজো করে দিতে হবে জুভেটাসকে। তাছাড়া আক্রমণভাগের অন্য দুই ফুটবলার হিউঙ-মিন সন এবং ড্যালে আলিকেও রাখতে হবে কড়া মার্কিং-এ। মাঝ মাঠে স্যামি খেদিরা, ব্লেইজ মাতুইদির মূল কাজ হবে মুসা ডেম্বেলেকে আটকানো। ওদিকে ইয়ান ভার্টনগেন, ডেভিনসন সানচেজের সাথে জুভেন্টাসের আক্রমণভাগে গঞ্জালো হিগুয়াইন, দিবালার লড়াইটাও হবে দেখার মতই। উইং-নির্ভর খেলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করা স্পার্সকে ঠেকাতে হলে দুই উইঙ্গার এবং ফুলব্যাকদের যতটা সম্ভব নিষ্ক্রিয় করে দিতে হবে। রক্ষণের ডানপ্রান্তে ড্যানিয়েল রুগানি এবং কোয়ান্দো আসামোয়ার কাঁধেই হয়ত এই দায়িত্ব বর্তাবেন অ্যালেগ্রি।
সম্ভাব্য একাদশঃ
স্পার্স (৪-২-৩-১): লরিস; অরিয়ের, সানচেজ, ভার্টনগেন, ডেভিস; ডেম্বেলে, ডায়ার; সন, এরিকসেন, আলি; কেইন
জুভেন্টাস (৩-৫-২): বুফন; কিয়েলিনি, রুগানি, বার্জাগলি; পিয়ানিচ, খেদিরা, মাতুইদি, আসামোয়াহ, মাঞ্জুকিচ; দিবালা, হিগুয়াইন
জুভেন্টাস কি পারবে ওয়েম্বলি থেকে কোয়ার্টারের টিকেট নিয়ে ফিরতে? নাকি কেইন-এরিকসেনে সওয়ার হয়ে ইউরোপ সেরাদের টুর্নামেন্টের শেষ আটে চলে যাবে টটেনহাম?
নিছক আনুষ্ঠানিকতার অপেক্ষায় লিভারপুল, সিটি
লিভারপুল বনাম পোর্তো; অ্যানফিল্ড, ৬(৭) মার্চ; বাংলাদেশ সময় ১ঃ৪৫; টেন ১
ম্যানচেস্টার সিটি বনাম বাসেল; ইতিহাদ স্টেডিয়াম; ৭(৮) মার্চ; বাংলাদেশ সময় ১ঃ৪৫, টেন ১
প্রথম লেগে পোর্তোকে তাদের মাঠে ৫-০ গোলে হারিয়েছিল লিভারপুল। আজ অ্যানফিল্ডে তাই দ্বিতীয় লেগের ম্যাচটি বলতে গেলে নিয়ম রক্ষার জন্যই। পর্তুগালে হ্যাটট্রিক করেছিলেন সাদিও মানে। গোল পেয়েছিলেন আক্রমণভাগে তার দুই সতীর্থ মোহাম্মদ সালাহ এবং রবার্তো ফিরমিনোও। বড় ধরণের কোনো অঘটন না ঘটলে শেষ আটের ড্রতে লিভারপুলের নাম থাকবে নিশ্চিতভাবেই।
লিভারপুলের মতই শেষ ষোলর প্রথম লেগে প্রতিপক্ষের মাঠে বড় জয় পেয়েছিল সিটি। সুইজারল্যান্ডের চ্যাম্পিয়ন বাসেলকে ৪-০ গোলে হারিয়েছিল পেপ গার্দিওলার দল। লিভারপুলের মতই নিয়ম রক্ষার ম্যাচে নামছে ‘সিটিজেন’রা। এরই মাঝে ইএফএল কাপের শিরোপা ঘরে তুলেছেন গার্দিওলা। লিগের বাকি ৯ ম্যাচ থেকে ১২ পয়েন্ট পেলেই জিতবেন প্রিমিয়ার লিগও। সাথে চ্যাম্পিয়নস লিগটা জিতে ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বারের মত ‘ট্রেবল’ জয়ের স্বপ্নটাও হয়ত বুনতে শুরু করেছেন গার্দিওলা।