হিগুয়াইন-দিবালায় শেষ আটে জুভেন্টাস
ঘড়ির কাঁটায় সময় তখন ৮৯ মিনিট। ম্যাচের অনেকটা সময় এগিয়ে থেকেও গঞ্জালো হিগুয়াইন এবং পাউলো দিবালার গোলে লিডে তখন জুভেন্টাস, দুই লেগ মিলিয়ে ৪-৩ গোলে এগিয়ে 'তুরিনের বুড়ি'রা। এমন সময় ডিবক্সের বাঁপ্রান্তে বল পেলেন স্পার্স লেফটব্যাক বেন ডেভিস। ওয়েলশ ডিফেন্ডারের ক্রসে জর্জিও কিয়েলিনির ওপর দিয়ে লাফিয়ে উঠে হেড করলেন হ্যারি কেইন। সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও বল নাগালে পেলেন না জিয়ানলুইজি বুফন। পুরো ওয়েম্বলি স্টেডিয়াম যখন অতিরিক্ত সময়ের আশায় বুক বাঁধছে, তখনই বাঁধ সাধল ভাগ্য। বুফনকে ফাঁকি দিলেও কেইনের হেড ফিরে আসল বারপোস্টে লেগে। লাইন থেকে বল ক্লিয়ার করলেন বার্জালি। তুরিন থেকে দুটি 'অ্যাওয়ে' গোল নিয়ে ফিরলেও শেষ পর্যন্ত খালি হাতেই ফিরতে হল স্পার্সকে। ওয়েম্বলিতে ২-১ গোলের জয়ে শেষ আটে চলে গেল ম্যাক্সিমিলিয়ানো অ্যালেগ্রির দল। দুই লেগ মিলিয়ে ব্যবধান ৪-৩।
বিতর্কে ঠাসা প্রথমার্ধের শুরুতেই পেনাল্টির পেয়ে যেতে পারত স্পার্স। প্রথম মিনিটেই ডানপ্রান্ত থেকে কিরেন ট্রিপিয়েরের ক্রস জুভেন্টাস ডিফেন্ডার মেধি বেনাতিয়ার হাতে লাগলেও পেনাল্টির বাঁশি দেননি রেফারি। ম্যাচের শুরতেই বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিজেদের বিপক্ষে যাওয়ায় ক্ষোভে ফুঁসে ওঠে পুরো ওয়েম্বলিই। ডাগআউটেও ফোর্থ অফিশিয়ালের সাথে বাগবিতন্ডায় জড়িয়েছিলেন ক্রোধান্বিত মাউরিসিও পচেত্তিনোএ। ১৭ মিনিটে আরও এক বিতর্কিত সিদ্ধান্ত দেন রেফারি, তবে এবার ভুক্তভোগী জুভেন্টাস। ডিবক্সে পেছন থেকে ট্যাকেল করে ডগলাস কস্তাকে ফেলে দেন ইয়ান ভার্টনগেন। কিন্তু এবারও পেনাল্টির বাঁশি দেননি রেফারি। বিতর্কিত এই সিদ্ধান্তের মিনিটখানেক আগেই গোলের দারুণ এক সু্যোগ পেয়েছিল স্পার্স। তবে জিয়ানলুইজি বুফনকে কাটিয়েও গোল করতে পারেননি স্ট্রাইকার হ্যারি কেইন। ইংলিশ এই স্ট্রাইকারের মতই 'তুরিনের বুড়ি'দের রক্ষণভাগকে তটস্থ রেখেছিলেন হিউঙ-মিন সন। ৩৭ মিনিটে স্পার্সকে লিড এনে দেন এই কোরিয়ানই। ডানপ্রান্ত থেকে ট্রিপিয়েরের ক্রস থেকে বুফনকে পরাস্ত করেন সন।
অবশ্য গোলের মিনিট তিনেক পরই সমতায় ফিরতে পারত জুভেন্টাস। কিন্তু ডিবক্সের বাইরে থেকে মিরালেম পিয়ানিচের শট দারুণভাবে ফিরিয়ে দেন স্পার্স গোলরক্ষক হুগো লরিস। শেষ আটে যাওয়ার আশা বাঁচিয়ে রাখতে তখনও অন্তত দুই গোল করতে হত জুভেন্টাসকে। পরের রাউন্ডে যাওয়ার তীব্র ইচ্ছা নিয়েই যেন দ্বিতীয়ার্ধ শুরু করেছিল তারা। ম্যাক্সিমিলিয়ানো অ্যালেগ্রির 'হাফটাইম টিম টক' দিয়ে উদ্বুদ্ধ জুভেন্টাস সমতায় ফেরে ম্যাচের ৬৪ মিনিটে। ডানপ্রান্ত থেকে ডিবক্সে ক্রস করেন রাইটব্যাক স্টিফেন লিচেনস্টাইনার, তার ক্রসে হেড করে হিগুয়াইনের দিকে পাস বাড়ান স্যামি খেদিরা। গোলের মাত্র গজ চারেক দূর থেকে লরিসকে পরাস্ত করতে ভুল করেননি 'এল পিপিতা'। আগের ম্যাচে করেছিলেন দুই গোল, একটা পেনাল্টিও মিস করেছিলেন প্রথম লেগে। পরের লেগে সেই হিগুয়াইন আবারও ম্যাচে ফেরালেন জুভেন্টাসকে। গোল করেই অবশ্য থেমে থাকেননি হিগুয়াইন, জুভেন্টাসের পরের গোলটাও ছিল তারই বানানো।
ম্যাচে সমতায় আসার পরই যেন খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসে জুভেন্টাস। মিনিট তিনেক পর নিয়ে নেয় লিডটাও। ৬৭ মিনিটে হিগুয়াইনের থ্রু পাস থেকে লরিসকে একা পেয়ে যান দিবালা। বাঁ পায়ের মাপা শটে দলকে ম্যাচে এগিয়ে নেন 'লা জোয়া'। দ্বিতীয়ার্ধের বাকিটা সময় গোলের শত চেষ্টা করেও সমতাসূচক গোলের দেখা পায়নি পচেত্তিনোর দল। বার্জাগলি, কিয়েলিনিদের ইস্পাতদৃঢ় রক্ষণভাগকে ভেদ করতে পারেননি সন, কেইন, এরিকসেনরা। ৮৯ মিনিটে বুফনকে ফাঁক দিলেও দুর্ভাগ্যের কারণে সমতায় ফিরতে পারেনি স্পার্স। বেন ডেভিসের ক্রস থেকে কেইনের দারুণ হেড বুফনকে পরাস্ত করলেও ফিরে আসে বারপোস্টে লেগে। গোলের সামনে থেকে বল ক্লিয়ার করেন কিয়েলিনি। দ্বিতীয়ার্ধের অতিরিক্ত সময়েও জুভেন্টাসের সাথে পেরে উঠেনি স্পার্স। রেফারির শেষ বাঁশির পর পুরো ওয়েম্বলি যেন পরিণত হয়েছিল এক টুকরো তুরিনে। বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে সর্বজয়ী বুফন-কিয়েলিনিদের বাঁধভাঙ্গা উল্লাসই প্রমাণ করে, চ্যাম্পিয়নস লিগটা তুরিনের বুড়িদের জন্য ঠিক কতটা অর্থবহ।