জেকোর গোলে শেষ-৮ এ রোমা
ইতিহাস তাদের পক্ষে ছিল না। শাখতার দনেৎস্কের বিপক্ষে নিজেদের শেষ ৫ ম্যাচে জয় মাত্র ১টিতে। তার ওপর যে ৪ বার ইউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের 'নক আউট' পর্বের প্রথম লেগে ২-১ গোলে হেরেছিল তারা, কোনোবারই পরের রাউন্ডে যেতে পারেনি তারা। কিন্তু আজ স্তাদিও অলিম্পিকোতে রীতিমত ইতিহাস ঘটিয়েই শেষ আটের টিকেট নিশ্চিত করল এএস রোমা। শাখতারকে ১-০ গোলে হারিয়েছে ইতালিয়ানরা। দুই লেগ মিলিয়ে ২-২ সমতায় থাকলেও 'অ্যাওয়ে' গোল নিয়মে এক দশক পর কোয়ার্টার ফাইনালে গেল তারা। রোমার হয়ে একমাত্র গোলটি করেছেন এডিন জেকো।
প্রথম লেগ জেতায় রোমার মাঠে হার এড়ালেই পরের রাউন্ডে যেত শাখতার। সে কথা চিন্তা করেই হয়তবা একেবারেই রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে দল সাজিয়েছিলেন কোচ পাওলো ফন্সেকা। চিরাচরতি ৪-২-৩-১ থেকে সরে এসে ৪-৩-৩ ফর্মেশনে দল সাজিয়েছিলেন এই ব্রাজিলিয়ান। মাঝমাঠের তিনজনই ছিলেন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার। কিন্তু এত কিছুর পরও রোমার সাথে ঠিক পেরে উঠেনি ইউক্রেনের চ্যাম্পিয়নরা। শুরু থেকে জেকো, রাদজা নাইঙ্গোলানদের আক্রমণ সামলাতে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছিল শাখতারের রক্ষণভাগ। বল পায়েও খুব একটা ছন্দে ছিলেন না প্রথম লেগের নায়ক ফ্রেড, ফাসুন্দো ফেরেইরারা। রোমার 'প্রেসিং ফুটবল'-এর সামনে বারবার খেই হারিয়ে ফেলছিলেন তারা। ম্যাচের ১০ মিনিটেই লিড নিতে পারত রোমা। কিন্তু নাইঙ্গোলানের ফ্রিকিক থেকে রাইটব্যাক আলেসান্দ্রো ফ্লোরেঞ্জির হেড শাখতারের গোলের সামান্য বাইরে দিয়ে চলে গেলে হাঁফ ছেড়ে বাঁচে ফন্সেকার দল। প্রথমার্ধে গোলের আরও দুটি দারুণ সুযোগ পেয়েছিল রোমা। কিন্তু দুবারই গোলের সামনে কেমন যেন নেতিয়ে পড়েছিলেন জেকো। ডাগ আউটে রোমা কোচ ইউসেবিও ডি ফ্রাঞ্চেস্কোর হতাশ অভিব্যক্তি যেন পুরো রোম শহরেরই প্রতিচ্ছবি। গোলশূন্য প্রথমার্ধ শেষে মাঠেই এই বসনিয়ান স্ট্রাইকারকে যেন অনুপ্রেরণা দিলেন রোমা অধিনায়ক ড্যানিয়েল ডি রসি।
ডি রসির কথাতেই অনুপ্রারিত হয়েই কি না দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই রোমার কাঙ্ক্ষিত গোলটি করেন জেকোই। ৫২ মিনিটে মাঝ মাঠ থেকে কেভিন স্ট্রুটম্যানের চমৎকার পাসে ডিবক্সে শাখতার গোলরক্ষক পিয়াতোভকে একা পেয়ে যান তিনি। ডানপায়ের আলতো টোকায় দলকে লিড এনে দেন জেকো। গোলের পরই যেন পুরো স্তাদিও অলিম্পিকো পরিণত হয় যুদ্ধে বিজয়ী কোনো দলের নিজস্ব ঘাঁটিতে। সমর্থক, কোচ, ফুটবলারদের উদযাপনই জানান দিচ্ছিল গোলটির মাহাত্ম্য। গোলের পর থেকেই যেন স্বরূপে ফেরে রোমা। গোলরক্ষক পিয়াতোভ না থাকলে ম্যাচের ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই ধরাছোঁয়াড় বাইরে চলে যেত রোমা। পুরো ম্যাচেই দারুণ কিছু সেভ করে শাখতারের আশা কিছুটা হলেও জিইয়ে রেখেছিলেন তিনি। কিন্তু ৭৯ মিনিটে ডিফেন্ডার অর্ডেটস লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়লে কাজটা আরও সহজ হয়ে যায় রোমার। ম্যাচের বাকিটা সময় গোলের আর তেমন সুযোগই তৈরি করতে পারেনি শাখতার। রেফারির শেষ বাঁশির পরই রোমার ফুটবলারদের বাঁধভাঙ্গা উল্লাস প্রমাণ করছিল, এক দশক পর ইউরোপসেরা টুর্নামেন্টের শেষ আটে যেতে পেরে ঠিক কতটা উচ্ছ্বসিত তারা।