• চ্যাম্পিয়নস লিগ
  • " />

     

    মরিনহো বদলাবেন, না তাঁকে বদলে দেওয়া হবে?

    মরিনহো বদলাবেন, না তাঁকে বদলে দেওয়া হবে?    

    “একটা ম্যাচ নিয়ে মন খারাপ করার খুব বেশি সময় নেই আমাদের হাতে, হয়ত চব্বিশ ঘন্টা! এর বেশি কিছু নয়। একটা ম্যাচই, এটাই সবকিছুর শেষ না।” – সেভিয়ার কাছে ওল্ড ট্রাফোর্ডে হেরে চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে বিদায় নেওয়ার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা হোসে মরিনহোর। সংবাদ সম্মেলনে ইউনাইটেড ম্যানেজার একবার মনেও করিয়ে দিয়েছেন, তিনিও রিয়াল মাদ্রিদ আর পোর্তোকে নিয়ে জয়ী হয়েই ফিরেছিলেন ওল্ড ট্রাফোর্ড থেকে। কিন্তু তার এই কথার সঙ্গে আসলে ইউনাইটেডের বর্তমান অবস্থার সম্পর্ক কী? সেভিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে নিজের কৌশলের ভুল স্বীকার করেছেন বটে, কিন্তু সেটা কি আদৌ আশা দেখাতে পারছে ইউনাইটেড সমর্থকদের?

    শনিবার লিভারপুলকে হারিয়ে পরের ম্যাচে সেভিয়ার সাথে নেমেছিল ইউনাইটেড। প্রিমিয়ার লিগের ওই ম্যাচের কথাই ধরা যাক। প্রথমার্ধে মার্কোস র‍্যাশফোর্ডের দুই গোলে এগিয়ে থেকেই বিরতিতে গিয়েছিল মরিনহোর দল। আক্রমণাত্মক ফুটবল যে ইউনাইটেডও খেলতে পারে সেটাই সেদিন দেখিয়ে দিয়েছিলেন র‍্যাশফোর্ড, লুকাকুরা। কিন্তু ইউনাইটেডের আক্রমণাত্মক ভঙ্গি ওই বিরতিতে যাওয়া পর্যন্তই থাকল। এরপর দ্বিতীয়ার্ধে নিজেরাই নিজেদের খোলসবন্দি করে রাখল। শেষ ৪৫ মিনিটে গোলের তেমন চেষ্টা করেনি মরিনহোর দল। শেষদিকে লিভারপুল পেনাল্টি পেয়ে গেলে হয়ত পয়েন্টও খোয়াতে হত তাদের। কিন্তু ম্যাচ শেষে ইউনাইটেড জেতায় এসব প্রশ্ন থেকে গেছে আড়ালে। 


    আরও পড়ুনঃ ১২ মিনিট ধরে 'ঐতিহ্য' শেখালেন মরিনহো!


    মরিনহো তার এই ট্যাকটিকস দিয়েই হয়েছেন বিশ্বের অন্যতম সেরা কোচ। কিন্তু গত কয়েক বছরে তার অধীনে খেলা দলগুলোর নিম্নগামী ফর্ম উসকে দিচ্ছে নতুন প্রশ্ন। সেকেলে হয়ে গেছে মরিনহো, আর তার কৌশল? ফুটবলের বিবর্তনের সাথে তার কৌশলের বিবর্তনটা কি হয়েছে?

    সেভিয়ার সাথে প্রথম লেগে মরিনহো হুট করেই নামিয়ে দিলেন স্কট ম্যাকটমিনেকে। সেই ম্যাচের পর চেলসি, লিভারপুলের সাথেও দুর্দান্ত খেলেছিলেন তিনি। পরের লেগে সেই ম্যাকটমিনেকে বসিয়ে রেখে নামিয়ে দিলেন মারুয়ন ফেলাইনিকে। একাদশ দিয়ে হয়ত চমকে দিতে চেয়েছিলেন প্রতিপক্ষকে, সেটা হয়নি। উলটো রেড ডেভিল সমর্থকেরাই অবাক হয়েছেন সেই সিদ্ধান্তে। পরে ম্যাচ শেষে মরিনহোর মন্তব্যটা তো আরও বিস্ফোরক, নিজের দলের সমর্থকদের সমর্থনটাও কি হারাতে বসেছেন মরিনহো?  

    পগবার সাথে বদলি হয়ে মাঠ ছাড়ার আগে ৬০ মিনিট পর্যন্ত মাঠে ছিলেন ফেলাইনি। ততোক্ষণ পর্যন্ত মাঝমাঠে তিনি পাস দিয়েছিলেন সব মিলিয়ে ২৯ টি। আর মাঝমাঠে তার প্রতিপক্ষ এভার বানেগা শুধু প্রথমার্ধেই পাস দিয়েছেন ৪৯ টি। মাঠের এক প্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে ছুটে বেড়িয়ে পুরো খেলাই নিয়ন্ত্রণ করেছেন বানেগা আর স্টিভেন এনজনজি। আর মাঝমাঠে তখন অসহায় নেমানিয়া মাতিচ আর ফেলাইনি। মাঝমাঠে বলের দখল নেই, সাথে প্রতি আক্রমণেও বারবার বল হারাচ্ছিল ইউনাইটেড। আক্রমণভাগে লুকাকু তাই একলা সৈনিক। যাদের সঙ্গ দেওয়ার কথা সেই অ্যালেক্সিস সানচেজ যেন বল নিয়ন্ত্রণ করাই ভুলে গেছেন নতুন ঠিকানায় এসে। ডান প্রান্তে মার্কোস র‍্যাশফোর্ড কী করছিলেন, সেটা বোধ হয় জানা ছিল না তার নিজেরও।

    ওল্ড ট্রাফোর্ডে নির্ধারিত সময়ে ম্যাচ জিততে হলে গোল করতেই হত ইউনাইটেডকে। অথচ ম্যাচে পিছিয়ে পড়ার আগ পর্যন্ত ইউনাইটেড খেলোয়াড়দের যেন গোল করার ইচ্ছাই ছিল না। ঘরের মাঠে নিশ্চিত গোলের সুযোগ তৈরিতে একেবারেই ব্যর্থ ছিল মরিনহোর দল। স্ট্রাইকারদের দোষ দেওয়া যায়, মিডফিল্ডারদের দোষও দেওয়া যায়। কিন্তু প্রতি সপ্তাহে রক্ষণাত্মক খেলা একটা দল, যারা নিজেদের গুটিয়ে রাখতেই পছন্দ করে, তাদেরকে হুট করে আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলতে বললে সেটা তো চাপই মনে হওয়ার কথা। ঘরের মাঠে সেভিয়ার বিপক্ষে তাই এই দশা মরিনহোর দলের। দুই লেগ মিলিয়ে সবমিলিয়ে মাত্র চারবার গোলে শট নিয়েছিল তারা।

    দলটা সেভিয়া বলেই এতো প্রশ্ন। ফুটবলে অঘটন হয় বটে। কিন্তু সেভিয়ার সাথে ইউনাইটেডের হারটাকে অঘটনও বলা যায় না। লা লিগার পয়েন্ট তালিকায় ৫ নম্বরে আছে তারা, চার নম্বরে থাকা দলের চেয়েও ১১ পয়েন্ট পিছিয়ে। পুরো মৌসুম জুড়েই অধারাবাহিক সেভিয়া। গতকালের ম্যাচের আগে ইতিহাসও ছিল সেভিয়ার বিপক্ষে। চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে আগে কখনই পা রাখা হয়নি তাদের। অথচ সেই দলকেই কাল ইউনাইটেডের বিপক্ষে মনে হল ‘অপরাজেয়’।

    গতবারও আরেক ইংলিশ ক্লাব লেস্টার সিটি এই সেভিয়াকেই হারিয়ে উঠেছিল কোয়ার্টার ফাইনালে। এবার বাকি ইংলিশ দলগুলোর ভেতর লিভারপুল, ম্যানচেস্টার সিটি উঠে গেছে পরের রাউন্ডে। সেয়ানে সেয়ানে লড়াই করেও অভিজ্ঞতার কাছে শেষ পর্যন্ত হেরেছে টটেনহাম হটস্পার। চেলসি প্রথম লেগে বার্সাকে আটকে দিয়ে এখনও টিকিয়ে রেখেছে পরের রাউন্ডের স্বপ্ন। বাকি ইংলিশ দলগুলোর চেয়ে এখানেও ফিকে মরিনহোর ইউনাইটেড।    

    চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে বাদ পড়ার পর মরিনহোর সামনে এখন থাকলো কেবল এফএ কাপ। মাঠের খেলার সাথে নিজের কথা বার্তা দিয়েও ইউনাইটেড সমর্থকদের সমর্থন কিছুটা হলেও হারিয়েছেন তিনি। খেলাটা দিনশেষে ফল নির্ভর, তিনিও মাঠের খেলার চেয়ে ফলের ওপরই জোর দেন বেশি। কিন্তু সেই ফল যখন বিপক্ষে যায় তখন নিজের পক্ষে কী যুক্তি থাকে মরিনহোর কাছে? ইউনাইটেডে এসেছে প্রায় দুই বছর হতে চলেছে, কালকের ম্যাচটাই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে মরিনহোর পুরনো কৌশল আর খাটছে না। মরিনহো বদলাবেন নাকি শেষ পর্যন্ত তাঁকেই বদলে দেওয়া হবে?