ভয়ঙ্কর রোনালদো, দুর্ধর্ষ রিয়াল মাদ্রিদ
মৌসুমের শুরুতে নিজেদের মাঠ মন্টোলিভি স্টেডিয়ামে রিয়াল মাদ্রিদকে হারিয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল জিরোনা। আজ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে কাতালান ক্লাবটি সমতায় ফেরার পর এমন কিছুর পুনরাবৃত্তিই চোখ রাঙ্গাচ্ছিল রিয়ালকে। তবে এবার আর কোনো অঘটন ঘটাতে পারেনি জিরোনা। এজন্য মূল কৃতিত্বটা অবশ্যই ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর। ‘সিআর৭’-এর চার গোলে জিরোনাকে ৬-৩ গোলে হারিয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। জিনেদিন জিদানের দলের হয়ে অন্য গোল দুটি করেছেন লুকাস ভাজকেজ এবং গ্যারেথ বেল।
প্রথমার্ধের শুরু থেকেই জিরোনা রক্ষপণভাগকে রীতিমত তটস্থ রেখেছিল রোনালদোরা। প্রথম ২০ মিনিটেই ম্যাচ থেকে ছিটকে যেতে পারত কাতালান ক্লাবটি। কিন্তু এমনটা না হওয়ার পেছনে মূল কৃতিত্বটা গোলরক্ষক ইয়াসিন বোনোর। ম্যাচের মাত্র ৪ মিনিটেই রোনালদোর আগুনে এক ফ্রিকিক ফিরিয়ে দেন মরক্কোর এই তরুণ কিপার। ১০ মিনিটে আবারও গোলের দারুণ এক সুযোগ তৈরি করেছিল রিয়াল। করিম বেনজেমার চমৎকার থ্রু পাস থেকে বোনোকে একা পেয়ে যান লুকাস ভাজকেজ। কিন্তু গোলের সামনে থেকে দারুণভাবে ভাজকেজের শটটি ফিরিয়ে দেন জিরোনার গোলরক্ষক। অবশ্য এর মিনিটখানেক পর আর দমিয়ে রাখা যায়নি রিয়ালকে। ১১ মিনিটে কর্ণার পায় রিয়াল। মার্সেলোর সাথে ‘ওয়ান-টু’ করে ডিবক্সে ঢুকে পড়েন টনি ক্রুস। জার্মান মিডফিল্ডারের ক্রসে বাঁ-পায়ের জোরাল ভলিতে বোনোকে পরাস্ত করেন রোনালদো।
ম্যাচের শুরুতেই পিছিয়ে পড়েও একেবারেই মনোবল হারায়নি জিরোনা। উলটো প্রথমার্ধের বাকিটা সময় রিয়ালকে সমানে সমান টেক্কা দিয়ে প্রমাণ করেছে, কেন সদ্য লা লিগায় ফিরলেও টেবিলের সাত নম্বরে আছে তারা। কেন আগামী মৌসুমের ইউরোপে খেলার অন্যতম দাবিদার। দুই ‘ক্রিশ্চিয়ান’ পর্তু, স্তুয়ানি এবং বোর্হাকে ঠেকাতে বেশ ঝামেলা পোহাতে হয়েছে রাফায়েল ভারানদের। রক্ষণে অধিনায়ক সার্জিও রামোস এবং মাঝ মাঠে কাসেমিরোর আগ্রাসনের অভাব বেশ ভুগিয়েছে রিয়ালকে। দলের অন্যতম সেরা দুই ফুটবলারকে ছাড়াও দারুণ খেলছিল রিয়াল। ২৪ মিনিটে জিরোনার জালে বলও পাঠিয়েছিলেন ভাজকেজ। কিন্তু অফসাইডে বাতিল হয় গোলটি। তবে রিপ্লেতে দেখা গেছে; অনসাইডেই ছিলেন ভাজকেজ। রেফারির বিতর্কিত এই সিদ্ধান্ত নিজদের পক্ষে যাওয়ার মিনিট পাঁচেক পরই সমতায় ফেরে জিরোনা। ২৯ মিনিটে অ্যান্থনি গ্রানেলের ফ্রিকিকে হেড করে দলকে সমতায় ফেরান স্তুয়ানি। কারভাহাল ফাঁকি দিয়ে ডিবক্সে জায়গা পেয়ে হেডে কেইলর নাভাসকে পরাস্ত করতে ভুল করেননি এই উরুগুয়াইন।
প্রথমার্ধে রিয়ালকে টেক্কা দিলেও দ্বিতীয়ার্ধে জিনেদিন জিদানের দলের সামনে রীতিমত তাসের ঘরের মত ভেঙ্গে পড়ে জিরোনা। ৪৮ মিনিটে বেনজেমার দারুণ এক থ্রু পাস থেকে রিয়ালকে লিড এনে দেন রোনালদো। লিড নেওয়ার পর থেকেই নিজেদের গুছিয়ে নেয় রিয়াল। রোনালদোর গোলের মিনিট দশেক পরই ব্যবধান ৩-১ করেন ভাজকেজ। মাঝমাঠে মার্সেলোর সাথে ‘ওয়ান-টু’ লরে ডিবক্সে ক্রস করেন বেনজেমা। বল নিয়ন্ত্রণে এনে শট নেওয়ার সুযোগ পেলেও ভাজকেজকে পাস দেন রোনালদো। ডানপায়ের প্লেসিং শটে গোল করেন এই স্প্যানিশ উইঙ্গার। ভাজকেজের গোলেই মূলত জয় নিশ্চিত হয় রিয়ালের। ৬৪ মিনিটে সোনায় সোহাগা হয়ে আসে রোনালদোর হ্যাটট্রিক। মার্কো আসেন্সিওর পাস থেকে বোনোকে একা পেয়েও গোল করতে ব্যর্থ হন বেনজেমা। কিন্তু ফিরতি বল জালে পাঠাতে ভুল করেননি রোনালদো। ক্যারিয়ারে হ্যাটট্রিকের ‘হাফ সেঞ্চুরি’ পূরণ করলেন তিনি। ব্যবধান ৪-১ হওয়ার পরেও হাল ছেড়ে দেয়নি জিরোনা। উলটো ম্যাচের ৬৮ মিনিটে হেড করে ম্যাচে ফেরার ইঙ্গিত দেন স্তুয়ানি। তবে জিরোনার ম্যাচের ফেরার ক্ষীণ সম্ভবনাকেও উড়িয়ে দেন বেল। ৮৬ মিনিটে লুকা মদ্রিচের পাস থেকে গোল করেন এই ওয়েলশ উইঙ্গার। তবে জিরোনা যেন নাছোড়বান্দা। মিনিটখানেক পরই কর্ণার থেকে গোল করে ব্যবধান কমান হুয়ানপি। তবে শুরুটা যিনি করেছিলেন, শেষটাও করলেন তিনিই। দ্বিতীয়ার্ধের অতিরিক্ত সময়ে নিজের চার নম্বর গোল করেন রোনালদো। লা লিগায় নিজের শেষ ৮ ম্যাচে এ নিয়ে ১৮ গোল করলেন রোনালদো। ২০১৮ তে সব ধরণের প্রতিযোগীতায় ইউরোপের সর্বোচ্চ গোলদাতা এখন তিনিই (২১)।
আজকের জয়ে ২৯ ম্যাচে ৬০ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের তিন-এ থাকল রিয়াল। ভিলারিয়ালের কাছে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ হেরে যাওয়ায় নগর প্রতিদ্বন্দ্বীদের সাথে রিয়ালের পয়েন্ট ব্যবধান কমে দাঁড়াল ৪-এ। ওদিকে ৭৫ পয়েন্ট নিয়ে যথারীতি টেবিলের শীর্ষেই আছে বার্সেলোনা।