মিনিটের ব্যবধানে দুই গোলে দিয়ে হার এড়াল বার্সা
সেভিলের আকাশে পূর্ণিমার চাঁদটা জ্বলজ্বল করছিল ম্যাচের শুরু থেকেই। চাঁদের সাথে বার্সেলোনার বিপক্ষে মাঠেও আলোকিত হয়ে উঠেছিল সেভিয়া। কিন্তু রাতটা নিমিষেই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠল সেভিয়ার জন্য, ৫৫ সেকেন্ডের এক ঝড়ে। ৮৮ মিনিট পর্যন্তও ম্যাচে এগিয়ে ছিল সেভিয়াই, তাও ২-০ তে। আর বার্সাকে চোখ রাঙাচ্ছিল মৌসুমের প্রথম হার। হারতে বসা সেই ম্যাচটাকেই শেষ পর্যন্ত অনুপ্রেরণায় পরিণত করল বার্সা। ৮৮ মিনিটে যখন লুইস সুয়ারেজ এক গোল দিলেন তখনও কাজ বাকি ছিল অনেকটুকু। সেই কাজটা করলেন 'সুপারসাব' লিওনেল মেসি। ৮৯ মিনিটে ডিবক্সের বাইরে থেকে দারুণ এক শটে গোল করে বার্সাকে বাঁচিয়েছেন তিনি। স্টাদিও র্যামন সানচেজ পিযজুয়ানে সেভিয়ার সঙ্গে ২-২ গোলে ড্র করে তাই অপরাজিতই থাকল বার্সা। টানা অপরাজিত থাকার রেকর্ডটা ছুঁতে আর মাত্র একটা ম্যাচে হার এড়াতে হবে মেসিদের।
নিজের ক্যারিয়ারে মেসির প্রিয় প্রতিপক্ষ সেভিয়া। আজকের আগ পর্যন্ত তাদের বিপক্ষে মেসির গোল ছিল ২৯ টি। বার্সাও শেষ ২১ ম্যাচে মাত্র একবার হেরেছে সেভিয়ার কাছে। ইনজুরির শঙ্কায় থাকা মেসিকে ছাড়াই সেভিয়ার বিপক্ষে দল নামিয়েছিলেন এর্নেস্তো ভালভার্দে, হয়ত বিশ্রামই দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ম্যাচের এক ঘন্টা না পেরুতেই তাকে সিদ্ধান্ত বদলাতে হলো, ততোক্ষণে তার দল তো পিছিয়ে পড়েছে দুই গোলে! সেভিয়ার প্রথম গোলের উদযাপনটা মেসি দেখেছেন সাইডবেঞ্চে বসে, দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই দল যখন দ্বিতীয় গোল হজম করল, মেসি তখন অনুশীলন করছেন মাঠের পাশে। সেখানেই দাঁড়িয়ে দেখলেন সেভিয়ার উদযাপন। ৫৮ মিনিটে তিনি মাঠে নামার পর বদলে গেলো দুইদলের খেলার ধরনও। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তাই ম্যাচটা চলল একই তালে, উত্তেজনা আর রোমাঞ্চে।
ঘরের মাঠে শুরু থেকেই বার্সাকে চাপে রেখেছিল সেভিয়া, খেলছিল ভয়-ডর ছাড়াই। কিন্তু বেশকয়েকবার বার্সার রক্ষণে ভীতি ছড়িয়েও প্রথম গোলটা পেতে তাদের অপেক্ষা করতে হয়েছিল ৩৬ মিনিট পর্যন্ত। হোয়াকিন কোরেয়া, লুইস মুরিয়েলরা সহজ সুযোগ নষ্ট না করলে গোলটা আগেই পেত সেভিয়া। অবশ্য কোরেয়ার পাস থেকেই প্রথম গোলটা পেয়েছিল তারা। ডিবক্সের ভেতরে থেকে বাঁ পায়ের শটে ফ্রাংকো ভাসকেজ এগিয়ে দিয়েছিলেন দলকে।
পুরো ম্যাচে বার্সার রক্ষণ ছিল একেবারেই নড়বড়ে। প্রথম গোলটাও রক্ষণের গলদেই হজম করা বার্সার। নিজেদের রক্ষণ সামলানোর কাজটা ঠিকঠাক না করতে পারলেও অন্যপ্রান্তে গোলটা প্রায় শোধ দিয়ে ফেলেছিলেন স্যামুয়েম উমতিতি আর জেরার্ড পিকে মিলে। কিন্তু ৪৪ মিনিটে উমতিতির ক্রসটায় পা ছোঁয়াতে পারেননি পিকে। একেবারে শুরুর দিকে সুয়ারেজের কয়েকটি শট ছাড়া তেমন কোনো আক্রমণও সাজাতে পারেনি বার্সা, তাই পিছিয়েই থেকেই প্রথমার্ধ শেষ করে তারা।
বিরতির ঠিক পরপরই মুরিয়েলের ভালো একটা সুযোগ পেয়ে গিয়েছিলেন আবারও, কিন্তু সে দফায়ও ব্যর্থ হয়েছেন। অবশ্য খুব বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি আফসোস ঘোচাতে। ৫০ মিনিটে মার্ক আন্দ্রে টার স্টেগানের ভুলে চাপে পড়ে গিয়েছিল বার্সার রক্ষণ। সেখান থেকেই বার্সার জালে বল ঢুকিয়ে বার্সাকে দ্বিগুণ চাপে ফেলে দিয়েছিলেন মুরিয়েল। প্রথমে অবশ্য দারুণ এক সেভ করে ভুল শুধরে নিয়েছিলেন স্টেগান, কিন্তু ফিরতি বলে শট করে ফাঁকায় থাকা মুরিয়েল শাস্তিটা দিয়েই ছেড়েছেন।
দুই গোলে পিছিয়ে পড়ে আক্রমণে অনুমিতভাবেই জোর বাড়ায় বার্সা। সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলে সেভিয়ার প্রতি আক্রমণের ঝড়ও। শেষ পর্যন্ত অবশ্য আফসোসটা সেভিয়াকে সে কারণেই করতে হয়েছে, ভুরি ভুরি গোলের সুযোগ পেয়েও সেসব হেলায় হারিয়েছেন হেসুস নাভাস, মুরিয়েলরা। কখনও বাঁ বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন টের স্টেগানও। লড়াইটা পুরো ম্যাচ জুড়েই হয়েছে হাড্ডাহাড্ডি। স্কোরলাইনটাই তাই ম্যাচের প্রতিচ্ছবি। ৫৫ মিনিটে একবার নাভাসকে গোললাইন থেকে বল ক্লিয়ার করে গোলবঞ্চিত করেছিলেন পিকে। এর কয়েক মিনিট পর একই কাজটা করলেন সেভিয়া ডিফেন্ডার সাইমন কায়ের সুয়ারেজকে গোলবঞ্চিত করে, গোললাইন থেকে ফিলিপ কুতিনিয়োর ক্রস ক্লিয়ার করে। এরপর ৬০ থেকে ৮০ মিনিট পর্যন্ত অন্তত আরও প্রায় ৫ বার নিশ্চিত গোলের সুযোগ পেয়েও ব্যবধানটা বাড়াতে পারেনি সেভিয়া। সেই সুযোগটাই পরে কাজে লাগিয়েছেন মেসি, সুয়ারেজরা। মেসি মাঠে নামার আগ পর্যন্ত বার্সার আক্রমণ হাতে গোণা কয়েকটা। সেই চিত্রটা মাঠে নেমেই বদলে দিয়েছিলেন মেসি।
আজ শুরু থেকেই সেভিয়া তাদের রক্ষণে গড়ে তুলেছিল দুর্গ। সুয়ারেজ আর ইভান রাকিতিচও দুইবার বারপোস্টের কারণে হয়েছিলেন গোলবঞ্চিত। প্রতিপক্ষকে চাপে রাখার সুফলটা শেষদিকে এসেই পেয়েছে বার্সা। সেভিয়ার রক্ষণ ভাঙলো ক্ষণিকের মনযোগহীনতায়। ৮৮ মিনিটে কর্নার থেকে প্রথম গোল করে চাপে ফেলে দিয়েছিলেন সেভিয়াকে। সেই চাপেই কিছুক্ষণ পর আবারও গোল খেয়ে বসে তারা। প্রথম গোল হজম নিয়ে অবশ্য কিছুটা আফসোস থাকতে পারে সেভিয়া রক্ষণের, কিন্তু মেসির গোলটায় আর তেমন কিছুই করার ছিল না তাদের! বাঁ দিক থেকে দেওয়া ফিলিপ কুতিনিয়োর ক্রস ডিবক্সের ঠিক বাইরে থেকে বাঁকানো শটে গোলে পরিণত করেই ম্যাচের শিরোনাম হয়ে গেছেন মেসি।