দুই মাদ্রিদের ড্রতে এগিয়ে গেল বার্সাই
সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের হারটাই যেন রীতি হয়ে গিয়েছিল একটা সময়ে। গত কয়েক বছরে সমীকরণ গেছে উলটে। নিজেদের মাঠেই অ্যাটলেটিকোকে হারাতে ভুলে গেছে রিয়াল মাদ্রিদ! আজও এগিয়ে গিয়ে জেতা হয়নি রিয়ালের, অ্যাটলেটিকোর সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করেছে জিনেদিন জিদানের দল। ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর আঁতোয়া গ্রিযমানের গোলে সমতায় ফেরে অ্যাটলেটিকো। দুই দলের পয়েন্ট ভাগাভাগিতে উলটো লাভ হয়েছে বার্সেলোনারই। শীর্ষে থাকা বার্সেলোনার সঙ্গে পয়েন্ট ব্যবধান বেড়েছে অ্যাটলেটিকোর। ১১ পয়েন্টে এগিয়ে লা লিগার শীর্ষে আছে বার্সা।
মাদ্রিদ ডার্বিতেও দলে বেশকিছু পরিবর্তন এনেছিলেন জিদান। জুভেন্টাসের বিপক্ষে খেলা কাসেমিরো, ইস্কো, মদ্রিচ, বেনজেমাদের কেউই ছিলেন না আজ। তাদের জায়গায় নেমেছিলেন কোভাসিচ, আসেনসিও, বেল, ভাসকেজরা। নতুন স্ট্রাইকিং পার্টনার নিয়েও অবশ্য রোনালদোর খুব একটা সমস্যা হচ্ছিল না। ১০ মিনিটে কর্নার থেকে গোলটা পেতে পেতেও পাওয়া হয়নি পর্তুগিজের। কর্নার থেকে নিজের থাই দিয়ে গোল করার চেষ্টা করেছিলেন সে দফায়। এর ১০ মিনিট পর আবারও ডিবক্সের বাইরে থেকে শট করেছিলেন, সেবারও বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন গোলরক্ষক। রোনালদো তো বটেই প্রথমার্ধে আসলে গোল আর রিয়ালের মাঝে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন অ্যাটলেটি গোলরক্ষক ইয়ান অবলাকই। ৬ গজ বক্সের ভেতর থেকে করা রাফায়েল ভারানের শটও ঠেকিয়েছিলেন তিনি ম্যাচের প্রথম আধ ঘন্টা না পেরুতেই। তবে শুধু অবলাকই নয়, রিয়ালের এগিয়ে যাওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল বার পোস্টও। বিরতির দুই মিনিট আগে মার্সেলোর নেওয়া শট বারের কোণায় লেগে ফেরত আসলে গোলবঞ্চিত হয় রিয়াল। ফিরতি বলে কারভাহালও শট করেছিলেন, সেসময় আরও একবার অ্যাটলেটিকোকে রক্ষা করেন অবলাক।
রিয়ালের আক্রমণের তুলনায় অন্যপাশে ডিয়েগো কস্তারা ছিলেন নিষ্প্রভই। প্রথমার্ধে একবারই গোল শট নিতে পেরেছিল অ্যাটলেটিকো। কস্তার নেয়ার পোস্টে নেওয়া শট সহজেই ঠেকিয়ে দেন কেইলর নাভাস। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেও গল্পটা ছিল একইরকম। কিন্তু এবার আর রিয়ালকে আটকাতে পারলেন না অবলাক, আসলে আটকাতে পারলেন না রোনালদোকে। ৫৩ মিনিটে বাঁ দিক থেকে ক্রস করেছিলেন বেল, দূরের পোস্টে অপেক্ষায় ছিলেন রোনালদো। ডান পায়ের ভলিতে গোল করে বার্নাব্যুতে স্বস্তি ফিরিয়ে এনেছিলেন তিনিই। আজকের পর শেষ ১০ ম্যাচে রিয়ালের জার্সিতে রোনালদোর গোল দাঁড়াল ২০!
গোল খেয়েই যেন হুশ ফেরে অ্যাটলেটিকোর। এর আগ পর্যন্ত রিয়াল গোলরক্ষক নাভাসকে তেমন পরীক্ষা দিতে হয়নি। সাউল নিগুয়েজ শট করে জানান দিয়েছিলেন পিছিয়ে পড়লেও ম্যাচে টিকে আছে অ্যাটলেটিকো। কিছক্ষণ পর নিগুয়েজের দেওয়া ইঙ্গিত বাস্তবে পরিণত করলেন আঁতোয়া গ্রিযমান। ভিতোলোর পাস থেকে গোল করে ডার্বি ম্যাচে সমতা ফিরিয়ে আনেন ফ্রেঞ্চ ফরোয়ার্ড। এর দুই মিনিট পরই দারুণ এক আক্রমণ থেকে এগিয়েও যেতে পারত অ্যাটলেটিকো। কিন্তু নাভাসের দুর্দান্ত এক সেভে বার্নাব্যুতে স্বপ্নের গোলটা পাওয়া হয়নি কোকের।
সমতায় থাকা ম্যাচে ৬৩ মিনিটেই রোনালদোকে তুলে নেন জিদান। লা লিগায় শিরোপা জয়ের সম্ভাবনাটা কেবল টিকে আছে কাগজে কলমেই। দলের সেরা খেলোয়াড়কে বিশ্রাম দিয়ে হয়ত আরও বড় কিছু পাওয়ার আশায়ই তুলে রাখলেন রোনালদোকে। কিন্তু মদ্রিচ আর ইস্কোকে এরপর খুব বেশিক্ষণ বসিয়ে রাখতে পারলেন না। ম্যাচের ৭০ মিনিট পার হওয়ার পরই দুইজনকে একসঙ্গে নামিয়ে দেন রিয়াল ম্যানেজার। চেষ্টা চালিয়েও অবশ্য শেষ পর্যন্ত আর জেতা হয়নি রিয়ালের। ৭৭ মিনিটে কারভাহালের ক্রসে ভালো জায়গা থেকেও বেল বাইরে দিয়ে হেড না করলে এগিয়েও যেতে পারত রিয়াল। সেই আফসোসটা অবশ্য আরও বড় হতে পারত। ৮১ মিনিটে গ্রিযমানের ক্রসটা জায়গামতো নাগালে পেলে জয় ছিনিয়ে নিতে পারত অ্যাটলেটিকোও।
শেষদিকে রামোসের ফ্রি কিকটাও ঠেকিয়ে দিয়ে দলকে বিপদের হাত থেকে বাঁচান অবলাকই। সঙ্গে একটা রেকর্ডও ছুঁয়ে ফেলে অ্যাটলেটিকো। ১৯৭৪ সালে বার্সার পর এই প্রথম টানা ৫ ম্যাচ বার্নাব্যুতে অপরাজিত থাকল কোনো দল।