মালাগাকে হারিয়ে তিনে উঠে এল রিয়াল
গত মৌসুমে মালাগার মাঠ লা রোসালেদাতে ৫ বছর পর লা লিগা জয়ের উদযাপনে মেতেছিল রিয়াল মাদ্রিদ। বছরখানেক পর দৃশ্যপট একেবারেই ভিন্ন। লা লিগার শিরোপা ধরে রাখার রেস থেকে রিয়াল ছিটকে গেছে অনেক আগেই। ওদিকে গত মৌসুমে ইউরোপা লিগের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বীতা করা মালাগার দ্বিতীয় বিভাগে অবনমনটাও যেন সময়ের ব্যাপার। গতকাল ন্যু ক্যাম্পে ভ্যালেন্সিয়া হেরে যাওয়ায় টেবিলের তিন নম্বরে উঠে আসার দারুণ এক সুযোগ পেয়ে যায় রিয়াল। মালাগাকে হারিয়ে আজ সে মিশনে সফলই হয়েছে তারা। মালাগাকে ২-১ গোলে হারিয়েছে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, গ্যারেথ বেল, লুকা মদ্রিচহীন রিয়াল। গোল করেছেন ইস্কো এবং কাসেমিরো।
আগামী সপ্তাহে বায়ার্ন মিউনিখের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়নস লিগ সেমিফাইনাল প্রথম লেগের ম্যাচ। সে কথা চিন্তা করেই হয়ত মূল একাদশে বেশকিছু পরিবর্তন এনেছিলেন জিনেদিন জিদান। মদ্রিচ, টনি ক্রুসদের জায়গায় মাঝমাঠে নেমেছিলেন ইস্কো, মাতেও কোভাচিচ। রোনালদো, বেলের পরিবর্তে নেমেছিলেন লুকাস ভাজকেজ, মার্কো আসেন্সিও। শুরু থেকেই রিয়ালের খেলোয়াড়দের মাঝে বোঝাপড়ার অভাবটা ছিল সুস্পষ্ট। গোলের প্রথম সুযোগের জন্য ১৬ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় তাদের। ডানপ্রান্ত থেকে ভাজকেজের ক্রসে কোভাচিচের হেড দারুণভাবে রুখে দেন মালাগা গোলরক্ষক রবার্তো হিমেনেজ। এর মিনিট পাঁচেক পর ডিবক্সে রবার্তোকে একা পেয়েও গোল করতে ব্যর্থ হন ভাজকেজ। তবে ২৯ মিনিটে আর রিয়ালকে দমিয়ে রাখতে পারেনি মালাগা। ডিবক্সের সামান্য বাইরে ফ্রিকিক পায় জিদানের দল। রোনালদো, বেলের অনুপস্থিতিতে ‘সেটপিস’-এর দায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলে নেন ইস্কো। প্রায় ২০ গজ থেকে জোরাল এক শটে রিয়ালকে লিডটাও এনে দেন তিনিই। এই মালাগার যুব একাডেমিতেই ফুটবলে হাতেখড়ি হয়েছিল ইস্কোর। গোলের পরই দুহাত উঁচিয়ে লা রোসালেদায় উপস্থিত প্রায় হাজার বিশেক সমর্থকের কাছে রীতিমত ক্ষমাই চেয়ে নেন তিনি। যেন জানিয়ে রাখলেন, ক্লাব ছাড়লেও নাড়ির টানটা এখনও ভুলতে পারেননি, হয়ত পারবেনও না কখনই। গোল হজম করেও ‘ঘরের ছেলে’র জন্য দাঁড়িয়ে অভিবাদন জানিয়ে মালাগা সমর্থকেরাও যেন জানান দিলেন, ইস্কোকে মনে রেখেছেন তারাও। গোলের পর নিজেদের গুছিয়ে নিলেও দ্বিতীয় গোলের দেখা পাওয়ার আগ পর্যন্ত স্বস্তিতে ছিল না রিয়াল। সেই সুযোগে আরেকটু হলেই সমতায় ফিরতে পারত মালাগা। ৪৪ মিনিটে কাসেমিরোর ভুলে ডিবক্সে কেইলর নাভাসকে একা পেয়ে যান ইতুরা। কিন্তু রিয়াল গোলরক্ষকের দক্ষতায় লিড নিয়েই প্রথমার্ধ শেষ করে ‘লস ব্লাঙ্কোস’রা।
প্রথমার্ধের মতই দ্বিতীয়ার্ধেও মালাগার রক্ষণভাগকে ফাঁকি দিতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে রিয়ালকে। তবে ৬৩ মিনিটে ঠিকই দ্বিতীয় গোলের দেখা পেয়ে যায় রিয়াল। এবারও গোলের উৎস ইস্কোই। বেনজেমার পাস থেকে ডিবক্সের বাঁপ্রান্তে বল পান এই স্প্যানিয়ার্ড। রবার্তোকে এগিয়ে আসতে দেখে ফাঁকায় দাঁড়ান কাসেমিরোর দিকে পাস বাড়ান ইস্কো। গোলের একেবারে সামনে থেকে বাঁ-পায়ের আলতো টোকায় বল জালে জড়ান কাসেমিরো। পুরো মৌসুমে এবারই প্রথম একই ম্যাচে গোল এবং অ্যাসিস্ট করলেন ইস্কো। গোলের কিছুক্ষণ পরেই ইস্কোকে উঠিয়ে বোরহা মায়োরালকে নামিয়ে দেন জিদান। মাঠ ছাড়ার সময় পুরো স্টেডিয়াম দাঁড়িয়ে অভিবাদন জানাচ্ছিল ইস্কোকে। করতালি দিয়ে বারবার বুক চাপড়ে ইস্কো যেন আবারও মনে করিয়ে দিলেন, মালাগাকে কখনোই ভুলবেন না তিনি। জয় নিশ্চিত জেনে ম্যাচের বাকিটা সময় গা বাঁচিয়েই খেলেছে রিয়াল। এই সুযোগে দ্বিতীয়ার্ধের যোগ করা সময়ের শেষ মিনিটে এক গোল শোধ করে মালাগা। কিন্তু ততক্ষণে দেরী হয়ে গেছে। ঐ গোলের পরই শেষ বাঁশি বাজান রেফারি। ২-১ গোলের জয়ে ভ্যালেন্সিয়াকে টপকে ৭১ পয়েন্ট নিয়ে তিনে উঠে আসল জিদানের দল।