এবারও সেল্টাকে হারানো হলো না বার্সার
লা লিগার সব দলের সঙ্গে পারলেও এক সেল্টা ভিগোই বার্সেলোনার কাছে থেকে গেল অপরাজিত। ন্যু ক্যাম্প ফিরে আসলো আর বালাদিওসেও। সেই ম্যাচের মতো আজও দুই দলের খেলা শেষ হলো ২-২ গোলে। আজ অবশ্য ম্যাচে উত্তেজনা ছড়ালো আরেক কাঠি বেশি। মাঠে নামার দশ মিনিটের মধ্যে লাল কার্ড দেখে মাঠ ছেড়েছিলেন সার্জি রবার্তো। পরে দশ জনের দলের বিপক্ষেই ম্যাচে দ্বিতীয়বারের মতো সমতায় ফেরে সেল্টা।
গত দুইবার সেল্টার মাঠ থেকে বার্সেলোনা ফিরেছে খালি হাতে। বালাদিওসে খেলাটা সহজ হবে না জেনেও বার্সা কোচ এর্নেস্তো ভালভার্দে একটা কঠিন সিদ্ধান্তই নিয়েছিলেন আজ। পরের সপ্তাহে কোপা ডেল রের ফাইনালের কথা মাথায় রেখে নামিয়েছিলেন দ্বিতীয় সারির এক দল। অধিনায়ক মার্ক আন্দ্রে টের স্টেগানের সঙ্গে নিয়মিত একাদশের ফিলিপ কুতিনিয়ো আর পলিনিয়ো বাদে বাকি সবাই শুরুর একাদশের অনিয়মিত চেহারা। অধিনায়কের আর্মব্যান্ড পরে মাঠে নামা স্টেগান আজও ছিলেন দুর্দান্ত। প্রথমার্ধে বেশ কয়েকটি দারুণ সেভ করেছিলেন তিনি। সেল্টা অবশ্য চাইলেই আরও বেশ কয়েকবার স্টেগানের পরীক্ষাটা নিতে পারত।
ব্রেইস মেন্ডেজই প্রথমার্ধে পেয়েছিলেন গোল করার দারুণ দুটি সুযোগ। প্রথমবার মেরেছেন বারপোস্টের বাইরে দিয়ে, পরেরবার টপ কর্নারেই শট করেছিলেন, কিন্তু স্টেগান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। ফরোয়ার্ড গোমেজও দুইবার শট চালিয়েছিলেন ডিবক্সের ভেতর থেকে। প্রথমবারে সহজেই তাঁকে ফেরান স্টেগান। পরে ডিফেন্ডার ইয়েরে মিনা দারুণভাবে শট ব্লক করায় আর স্টেগান পর্যন্তও যাওয়া হয়নি তার। সেল্টার আক্রমণের বিপরীতে অবশ্য ম্যাচে প্রথমে এগিয়ে গিয়েছিল বার্সাই। ২৫ গজ দূর থেকে উসমান ডেম্বেলে হাফভলিতে করেন লা লিগায় নিজের প্রথম গোল। ৩৬ মিনিটে ডেম্বেলের গোলের আগ পর্যন্ত বার্সার আক্রমণের সেরা সুযোগগুলো অবশ্য পাচ্ছিলেন পলিনিয়ো। ম্যাচের একদম শুরুতেই লুকাস ডিনিয়ের ক্রসে ঠিকমতো মাথা ছোঁয়াতে পারেননি ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার, দ্বিতীয় সুযোগও পেয়েছিলেন হেডে। কর্নার থেকে এবার ঠিকঠাক হেড করলেও তাকে ফিরতে হয়েছিল বারপোস্টে বাধা পেয়ে।
প্রথমার্ধের শেষদিকে চোট পেয়েছিলেন আন্দ্রে গোমেজ। বিরতির জন্যই হয়ত অপেক্ষা করছিলেন তিনি। কিন্তু তার ঠিক আগেই মাঝমাঠে দিলেন একটা ভুল পাস। সেখান থেকে পজেশন হারালো বার্সাও। সেখান থেকে বল পেয়ে গোমেজ করতে না পারলেও করালেন এবার। ডানদিক থেকে করা ক্রসে বল জালে জড়িয়ে দলকে সমতায় ফিরিয়েছিলেন জনি কাস্ত্রো।
সেল্টার প্রথম গোলের পর আর কিক-অফ করার সুযোগ পায়নি বার্সা। দ্বিতীয়ার্ধ থেকেই তাই শুরু হয় খেলা। বিরতির আগে পাওয়া প্রথম গোলে আরও উজ্জীবিত হয়েই মাঠে নেমেছিল সেল্টা। প্রথম ১৫ মিনিটে তাদের খেলায় ছিল সেই ছাপও। ৫৩ মিনিটে ডিবক্সের ভেতর থেকে হোযাবেদের নেওয়া শট অল্পের জন্য বাইরে দিয়ে চলে গেলে গোলবঞ্চিত হয় সেল্টা। অন্যপাশে অবশ্য এর দুই মিনিট আগেই ডেনিস সুয়ারেজও গোল করার সুযোগ পেয়েছিলেন। সবকিছু ঠিকঠাক করলেও শেষ শটে গোলরক্ষক সার্জিও আলভারেজকে ফাঁকি দিতে পারেননি তিনি।
ম্যাচে সেল্টা ভিগোর আধিপত্য ভাঙতে একসঙ্গে দুইজন খেলোয়াড় নামান ভালভার্দে। ম্যাচ ঘন্টার কাঁটা ছোঁয়ার কিছুক্ষণ আগে লিওনেল মেসির সঙ্গে নামেন রবার্তোও। এরপর মাঠে নেমেই বার্সাকে বলের দখল ফিরিয়ে দিয়েছিলেন মেসি একাই। তার দলও সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে গোল করেছিল চার মিনিটের মধ্যেই। ৬৪ মিনিটের গোলটায় অবশ্য পলিনিয়োর অবদান বেশি থাকলেও শেষ মুহুর্তে পায়ের টোকায় সেটা নিজের নামে নিয়ে গেছেন পাকো আলকাসের। তাঁকে অবশ্য হ্যারি কেইনের মতো অপেক্ষা করতে হয়নি সিদ্ধান্তের জন্য, টিভি রিপ্লেতেই স্পষ্ট হয়েছে গোলটা স্প্যানিশ স্ট্রাইকারেরই!
পিছিয়ে পড়েও অবশ্য মনোবল হারায়নি সেল্টা। আর মেসির এনে দেওয়া বলের দখলও বেশিক্ষণ স্থায়ী করতে পারেনি বার্সা। রবার্তোর গল্পটাও একইরকম। মাঠে তিনি ছিলেন মাত্র দশ মিনিটই। থ্রু বল থেকে ইয়াগো আসপাস গোলের দিকেই এগুচ্ছিলেন। তাঁকে ডিবক্সের ঠিক আগে ফাউল করে আটকে দিয়ে রেখে সরাসরি লাল কার্ড দেখেন রবার্তো। নিশ্চিত গোলের দিকে এগুতে থাকা আসপাসকে অবশ্য খুব বেশিক্ষণ আটকে রাখতে পারেনি বার্সা। আর্মব্যান্ড খুলে স্টেগানও যেন বদলে গেলেন কিছুটা! ৮২ মিনিটে এমরে মুরের ক্রসটা ঠিকমতো ধরতে পারেননি তিনি। সেখান থেকেই সমতায় ফেরে সেল্টা। গোল করেন সেই আসপাসই।
শেষদিকে ১০ জনের দল নিয়ে আর আক্রমণে তেমন কিছুই করা হয়নি বার্সার। উলটো সেল্টাকে প্রতিরোধ করাই ছিল মূল উদ্দেশ্য, শেষ পর্যন্ত সেটা করতে পারলেও এই ফল স্বস্তি যোগানোর কথা নয় বার্সা সমর্থকদের।