• লা লিগা
  • " />

     

    রিয়ালের গোলবন্যায় ভেসে গেল সেল্টা ভিগো

    রিয়ালের গোলবন্যায় ভেসে গেল সেল্টা ভিগো    

    ঘড়ির কাঁটা ৯০ মিনিটে পৌঁছাতেই শেষ বাঁশি বাজালেন রেফারি। দ্বিতীয়ার্ধে বদলি হওয়া তিনি শেষ বাঁশির পর ঢুকলেন মাঠে। বদলি হওয়ার সময়ও মাদ্রিদ সমর্থকদের থেকে পেয়েছিলেন দাঁড়ানো অভিবাদন, জোর করতালি। ম্যাচ শেষে এমন অভ্যর্থনা পেলেন আবারও। সতীর্থ, প্রতিপক্ষের ফুটবলারদের সাথে হাত মেলালেন। হাসিমুখে হাত নেড়ে জবাব দিলেন সমর্থকদের। এরপর একবার সান্তিয়াগো বার্নাব্যুটা মাথা ঘুরিয়ে দেখে নিলেন। রিয়ালের জার্সি গায়ে শেষবারের মত কি বার্নাব্যুতে খেললেন? সেটাই হলে অন্তত শেষ 'হোম' ম্যাচটা আজীবন মনে রাখবেন গ্যারেথ বেল। এই মৌসুমে বার্নাব্যুতে নিজেদের শেষ ম্যাচে তার জোড়া গোলেই সেল্টা ডি ভিগোকে ৬-০ গোলে বিধ্বস্ত করেছে রিয়াল মাদ্রিদ। মূল তারকা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে ছাড়াই ‘কিয়েভ মহড়া’র পথে বিশাল এক জয় দিয়েই মৌসুম শেষ ‘হোম’ ম্যাচটা স্মরণীয় করে রাখল জিনেদিন জিদানের দল।

    গত সপ্তাহে সেভিয়ার বিপক্ষে প্রায় দ্বিতীয় সারির দল নামালেও আজ আর সেই ঝুঁকি নেননি জিদান। নাভাস, ক্রুস, মদ্রিচ, কাসেমিরো, মার্সেলোদের নিয়ে প্রায় পূর্ণশক্তির দলই নামিয়েছিলেন ফ্রেঞ্চ কিংবদন্তী। মূল একাদশের ফুটবলারদের মধ্যে বিশ্রাম পেয়েছিলেন কেবল অধিনায়ক সার্জিও রামোস। আর ইনজুরির কারণে ছিলেন না দানি কারভাহাল এবং ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। তবুও সেল্টা ভিগোর বিপক্ষে ম্যাচের শুরু থেকেই চড়াও হয়েছিল রিয়াল। আক্রমণভাগে বেল-বেনজেমার বোঝাপড়া, আর মাঝমাঠ থেকে ক্রুস-মদ্রিচ-ইস্কোর সুযোগসন্ধানী পাসের পসরা- সব মিলিয়ে ম্যাচের শুরু থেকেই বেশ খাপছাড়া হয়ে পড়ে সেল্টা। দিশেহারা প্রতিপক্ষের বিপক্ষে লিড নিতেও সময়ে নেয়নি রিয়াল।

    ১৩ মিনিটে মদ্রিচের দুর্দান্ত এক থ্রু পাসে সেল্টা গোলরক্ষক সার্জিও আলভারেজকে একা পেয়ে যান বেল। ডিবক্সের ভেতর থেকে বেলের বাঁ-পায়ের নিচু শট পোস্টে লেগে জড়ায় সেল্টার জালে। ম্যাচের শুরু থেকেই রিয়ালের আক্রমণের জোয়ারে ভেসে গেলেও মিনিট চারেক পরই সমতায় ফিরতে পারত সেল্টা। ডানপ্রান্ত থেকে রাইটব্যাক হুগো মায়োর মাইনাসে শট নিতে যাওয়া স্ট্রাইকার ম্যাক্সি গোমেজকে ডিবক্সে ফেলে দেন কাসেমিরো। ফিরতি বল মিডফিল্ডার ড্যানিয়েল ওয়াস রিয়ালের জালে পাঠালেও অফসাইডের কারণে বাতিল হয় গোলটি। কিন্তু গোমেজকে করা ফাউলের কারণেও পেনাল্টির বাঁশি দেননি রেফারি। প্রথমার্ধে এই একবারই রিয়ালের রক্ষণভাগ কাঁপিয়ে দিতে পেরেছিল সেল্টা।

     

     

     

     

    প্রথমার্ধের বাকিটাকেবলই রিয়ালের আক্রমণভাগের। ৩০ মিনিটে দুর্দান্ত এক গোলে ম্যাচে নিজের এবং রিয়ালের দ্বিতীয় গোল করেন বেল। ইস্কোর লম্বা পাস থেকে চমৎকার এক প্রথম টাচেই মার্কারকে ছিটকে ফেলে ডিবক্সে ঢুকেই বাঁ-পায়ের বাঁকানো শটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন বেল। বেলের দ্বিতীয় গোলটা এসেছে তার পাস থেকেই। ৩২ মিনিটে অন্য উইং থেকে বেলের গোলের রীতিমত ‘কার্বন কপি’তে ব্যবধান ৩-০ করেন ইস্কো। বেলের মতই হয়ত শেষবার বার্নাব্যুতে মাঠে নামলেন আজ ইস্কোও। কিয়েভে রিয়ালের মূল একাদশে জায়গা করে নেওয়ার ‘মহড়ায়’ নিজের সামর্থ্যের জানানটা দিয়ে রাখলেন স্প্যানিশ মিডফিল্ডার।

    প্রথমার্ধের মত দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেও রিয়ালের সামনে পাত্তাই পায়নি সেল্টা। মাঝমাঠের চকিত পাসিং, আক্রমণভাগের সাথে রিয়ালের মিডফিল্ডারদের নিখুঁত বোঝাপড়া এবারও ঠেকাতে পারেনি তারা। ৫২ মিনিটে রিয়ালের ৪ নম্বর গোল করেন তরুণ রাইটব্যাক আশরাফ হাকিমি। বেনজেমার সাথে দারুন এক ওয়ান-টু করে ডিবক্সে ঢুকেই ডানপায়ের শটে লক্ষ্যভেদ করেন মরক্কোর ডিফেন্ডার। প্রথমার্ধের প্রথম গোলের মতই দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম গোলের পর বাকিটা সময় ছিল রিয়াল আক্রমণভাগেরই।

    ৫৭ মিনিটে হ্যাটট্রিকটা পেয়ে যেতে পারতেন বেল। কিন্তু মার্সেলোর ক্রসে তার হেড লাইন থেকে দুর্দান্তভাবে রুখে দেন আলভারেজ। ফিরতি বলে বেনজেমার শট জালে জড়ালেও অফসাইডের বাঁশি দেন রেফারি। তবে অফসাইডে বেল বা বেনজেমার কেউই ছিলেন না, ছিলেন ইস্কো। কিন্তু বেনজেমার শট ইস্কোর গায়ে না লাগলেও ইস্কো পরোক্ষভাবে খেলায় প্রভাব ফেলার কারণেই গোল বাতিল করেন রেফারি। দ্বিতিয়ার্ধে হ্যাটট্রিক করার সুযোগ বেশ কয়েকবার পেয়েছিলেন বেল। কাজে লাগাতে পারেননি একবারও।  ৫৯ এবং ৬৫ মিনিটে মদ্রিচের পাসে গোলরক্ষককে একা পেয়েও কাজের কাজটা করতে পারেননি ওয়েলশ ফরওয়ার্ড।

     

     

    তবে তাই বলে আবার দ্বিতীয়ার্ধে রিয়ালের গোলোৎসব থেমে থাকেনি। ৭৪ মিনিটে বদলি খেলোয়াড় মার্কো আসেন্সিওর ক্রস ক্লিয়ার করতে গিয়ে বল নিজ জালে ঠেলে দেন সেল্টা ডিফেন্ডার সার্জি গোমেজ। মিনিট পাঁচেক পর আবারও আসেন্সিওর পাস থেকে আরেক বদলি খেলোয়াড় বোর্হা মায়োরালের শট দারুণভাবে ফিরিয়ে দেন আলভারেজ। গোলবন্যায় ভেসে গেলেও আলভারেজ না থাকলে আরও বড় ব্যবধানে জিততে পারত রিয়াল। ৮১ মিনিটে মায়োরালের পাস থেকেই সেল্টার কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেন টনি ক্রুস। ৮৪ মিনিটে মদ্রিচের শট বারপোস্টে প্রতিহত হলে ৬-০ ব্যবধান নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় রিয়ালকে। রোনালদোকে ছাড়াও গোলোৎসব- কিয়েভের জন্য লিভারপুলকে কি একটা বার্তাই দিল রিয়াল মাদ্রিদ?