• আন্তর্জাতিক ফুটবল
  • " />

     

    ২৯ বছর বয়সে জার্মানিকে বিদায় বললেন ওজিল

    ২৯ বছর বয়সে জার্মানিকে বিদায় বললেন ওজিল    

    খবরটা চমকে দেওয়ার মতো। কিন্তু গুঞ্জন ডালপালা ছড়িয়েছিল আগেই। পরে সত্যি হলো সেটাই। ২৯ বছর বয়সে জাতীয় দলকে বিদায় বলেছেন জার্মান মিডফিল্ডার মেসুত ওজিল। বিশ্বকাপে জার্মানির প্রথম রাউন্ড থেকে বিদায়ের পর তাকে একরকম বলির পাঠা করা হয়েছিল। তার আগেই নিজ দেশে শত্রু বনে গিয়েছিলেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেসিপ তায়েপ এর্দোয়ানের সঙ্গে ছবি তুলে। ফুটবল আর রাজনৈতিক সবকিছুর প্রভাবেই ওজিল অবসরে গেছেন বলে ধারনা করা হচ্ছে। 

    ২০০৯ সালে জার্মানির হয়ে খেলা শুরুর পর ৯৩ ম্যাচে, ওজিল করেছেন ২৩ গোল। সঙ্গে আছে ৪০ টি অ্যাসিস্টও। পরিসংখ্যানটা তাই এখানেই থেমে থাকবে ওজিলের। অবসরের সিদ্ধান্ত জানাতে ওজিল দিয়েছেন বিশাল এক বিবৃতি। তাতে খোলাখুলিভাবেই জানিয়েছেন নিজের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা।




    মে মাসে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এর্দোয়ানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার পর থেকেই জার্মানিতে মুন্ডুপাত চলছিল ওজিলের। তুরস্ক জার্মানির রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে সেটা যোগ করেছিল নতুন মাত্রা। এর্দোয়ানের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সফল করতেই ওজিল ও ইলকে গুন্ডোয়ান তুরস্কের প্রেসিডেন্ট হাউজে গিয়েছিলেন বএল অভিযোগ ওঠে। বিশ্বকাপের আগে প্রস্তুতি ম্যাচগুলোতেও ঘরের সমর্থকেরা ওই দুই খেলোয়াড়কে দুয়ো দিয়ে গেছেন। আর বিশ্বকাপ ব্যর্থতার অনেকটুকু দায় পড়েছে ওজিলের ঘাড়ে। দ.কোরিয়ার কাছে হেরে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নেওয়ার পর গ্যালারির সমর্থকদের সঙ্গে বাদানুবাদেও জড়িয়ে পড়েছিলেন ওজিল। কিন্তু এতোদিনেও তার কাছ থেকে এই ঘটনা সংক্রান্ত কোনো বিবৃতিই আসেনি। বিদায় বলার সময়ই মন খুলে কথা বলেছেন আর্সেনাল মিডফিল্ডার।




    "আমি দুঃখের সাথে জানাতে চাই যে  গত কিছুদিনের ঘটনার কারণে আমি আর জার্মানির জার্সি গায়ে না চড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমার মনে হয়েছে আমি বর্ণবাদী আচরণের শিকার হয়েছি, আমাকে অসম্মান করা হয়েছে। আমি অনেক গর্ব নিয়ে জার্মানির জার্সি গায়ে চড়াতাম, কিন্তু এখন আর সেরকম মনে হচ্ছে না।"

    জার্মানিতে জন্ম হলেও ওজিলের বাবা মা তুরস্কের। সেই সূত্রেই ওজিলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল এর্দোয়ানের সঙ্গে দেখা করতে। জার্মানির হয়ে খেলার আগে তুরস্কের হয়েও খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন ওজিল। কিন্তু জার্মানিকে  বেছে নিতে চান বলে তুরস্ককে না করে দিয়েছিলেন ২০০৬ সালে। এরপর ২০০৯ সালে জার্মানির হয়ে অনূর্ধ্ব-২১ বিশ্বকাপ জেতেন তিনি। পরের বছর খেলতে যান বিশ্বকাপ। সেখানেই তারকাখ্যাতি জোটে, ২০১৪ বিশ্বকাপে জার্মানির সোনালী প্রজন্মের অংশও ছিলেন ওজিল। ২০১০ থেকে সবগুলো প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে শুরু থেকেই দলে থাকলেও সুইডেনের বিপক্ষে এবারই প্রথম বাদ পড়েছিলেন দল থেকে। বিশ্বকাপে ওই একটা ম্যাচেই জিতেছিল জার্মানি।  



     

    এর্দোয়ানের সঙ্গে ওজিলের ছবি নিয়ে সমালোচনা হওয়ার পর তুরস্কের পক্ষ থেকে বিবৃতিতে জানানো হয়েছিল বিশ্বকাপ সামনে রেখেই তাদের আমন্ত্রণ জানানোর কথা। কিন্তু ওজিল এবারই প্রথম আত্মপক্ষ সমর্থন করলেন, "আমি জানি আমাদের ছবি নিয়ে জার্মান মিডিয়ায় ঝড় বয়ে গেছে। এটার কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যই ছিল না। এর সঙ্গে নির্বাচন বা রাজনীতির কোনো সম্পর্ক নেই। আমি কেবল আমার বাবা মায়ের দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ের অফিসের আমন্ত্রণকে সম্মান জানিয়েছি।"

    এই মাসের শুরুতে জার্মান ফুটবল ফেডারেশনের প্রধান রেইনহার্ড গ্রিন্ডেল ওজিলের জবাবদিহি করা উচিত বলে মন্তব্য করেছিলেন। তখন বিশ্বকাপ পরবর্তী ছুটিতে ছিলেন ওজিল। অবসরের সিদ্ধান্ত জানাতে দেওয়া বিবৃতিতে গত কয়েকদিনের ঘটনার ব্যাখ্যাও করেছেন তিনি, "গত কয়েক সপ্তাহ আমাকে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করেছে। আমি তুর্কি বাবা মায়ের সন্তান। আমার জন্ম জার্মানিতে। এর মানে আমার দুইটি স্বত্ত্বা। একটা জার্মান, আরেকটা তুর্কি। ছোটবেলা থেকেই নিজের শেকড় না ভোলার শিক্ষা দিয়েছেন আমার মা।"

    "যদিও জার্মান মিডিয়া ব্যাপারটাকে অন্যভাবে তুলে ধরেছে। একজন প্রেসিডেন্টের আমন্ত্রণকে সম্মান না জানানো হলে আমার আদিপুরুষদের অসম্মান করা হত। কে প্রেসিডেন্ট সেটা ব্যাপার ছিল না, প্রেসিডেন্টের আমন্ত্রণটাই ব্যাপার ছিল। রাজনৈতিক অফিসের প্রতি সম্মান দেখানোর রীতি নিশ্চিতভাবেই সবাই মেনে চলে। রানী আর প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে যখন এর্দোয়ানকে লন্ডনে আতিথ্য দিয়েছিল তারাও সেটাই মেনে চলেছে। প্রেসিডেন্ট যে দেশেরই হোক, সেটা জার্মান বা তুর্কি আমার আচরণ তাদের প্রতি একইরকম থাকত।"

    "গ্রিন্ডেলের মতে যখন আমি জিতি তখন আমি জার্মান, কিন্তু হেরে গেলে আমি অভিবাসী। কর পরিশোধ করে, জার্মানির স্কুলে দান করে, এমনকি জার্মানিরর হয়ে ২০১৪ তে বিশ্বকাপ জেতার পরও আমাকে সমাজে আলাদা করে  দেখা হয়।

    "২০১০ সালে আমি জার্মান বাম্বি পুরস্কার জিতেছি। জার্মান সমাজে মানিয়ে নিতে পারার জন্য। ২০১৪ তে পেয়েছি সিলভার লরেল লিফ, জার্মান সরকারের কাছ থেকে। ২০১৫ তে আমি জার্মান ফুটবলের দূত ছিলাম। তবুও আমি জার্মান নই?

    "পুরোপুরি জার্মান হওয়ার কি কোনো মাপকাঠি আছে?

    "আমার বন্ধু মিরোস্লাভ ক্লোসা আর লুকাস পোডলস্কিকে তো জার্মান-পোলিশ ডাকা হয় না। তাহলে আমি কেন জার্মান-তুর্কি? দেশটা তুরস্ক বলে? নাকি আমি মুসলিম বলে? আমার জন্ম আর শিক্ষা সব জার্মানিতে। লোকে কেন মেনে নিতে পারে না যে আমি জার্মান?"