• ক্রিকেট

লংকা দ্বীপে, রাবণ বেশে!

পোস্টটি ৩৩১৭ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।
দিন কত দ্রুতই না বদলে যায়! বাংলাদেশ- শ্রীলংকা সিরিজ নিয়ে লিখতে বসে, নস্টালজিয়া এতই পেয়ে বসেছে, হাত থেকে কিছু বেরই হচ্ছে না। সিরিজের প্রিভিউ না হয়ে যদি একটি স্মৃতিচারণ প্রবন্ধ হয়ে যায়, লেখক সে দোষে দুষ্টু নন। শ্রীলংকার মাটিতে খালেদ মাহমুদ সুজন গিয়ে বলছেন, আমরা যদি সামর্থ্যানুযায়ী খেলতে পারি, আমরাই ফেভারিট, বছর দুয়েক আগে বললেও তা কেউ বিশ্বাস করতেন??? এখন কেবল বিশ্বাস নয়, বাস্তবতা বলেই মনে হচ্ছে। ২০০১ সালের টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে শুরু করে সর্বশেষ টেস্ট, কিছু অবিশ্বাস্য মুহূর্ত বাদ দিলে, একটি দৃশ্য বেশ নিয়মিত ছিলো, দিলশান, সাঙ্গাকারা অথবা জয়াবর্ধনে ব্যাট করে চলেছেন, বাংলাদেশের ফিল্ডাররা বল কুড়োচ্ছেন, কখনো কখনোবা এর ব্যাপ্তি এক ছাড়িয়ে দেড় দিনেও পড়েছে। এই তিন ত্রয়ী বাংলাদেশকে কতটা ভুগিয়েছেন, তা বোঝাতে এই তথ্যটি স্মরণ করা যেতে পারে, ১৫ টেস্টে ৪০৭০ রান। ১৫ টেস্ট যদি আপনার চোয়াল প্রসারিত না-ও করে, তবে শুনুন, এই ১৫ টেস্টের সর্বোচ্চ ২১ ইনিংসেই তাদের মাঝে অন্তত একজনের ব্যাট হাতে নামার সৌভাগ্য হয়েছে। এই দৃশ্য গত হয়েছে বেশ কিছুদিন। এখন শ্রীলংকার টপ অর্ডার ভীতি তো ছড়ায়ই না, উল্টো স্বস্তি বিলায়। খালেদ মাহমুদের ফেভারিট তত্ত্ব এই তিনের অবসরেই। তবুও কথা থাকে। খেলাটাই যে গৌরবময় অনিশ্চয়তার। আর বর্তমানের প্রেক্ষাপটে, সফরকারী দেশ এসে নিজেদের ফেভারিট বলছে, বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। শ্রীলঙ্কার মাটিতে কথাটি আরো বেশিই সত্যি। যে যায় লঙ্কায়, সেই নাকি রাবণ হয়, প্রবাদ এই কথা বললেও বাস্তবে তা কতটা সত্যি কিংবা আদৌ সত্যি কিনা, যথেষ্ট সংশয় আছে। টেস্ট ক্রিকেটে শ্রীলংকার আজ পর্যন্ত জয়ের সংখ্যা ৮০ টি। ৫৭ জয়ই এসেছে নিজ ডেরায়। লঙ্কার রাবণ তো লঙ্কানরাই। আবারো নস্টালজিয়া পেয়ে বসেছে। এই জয়গুলি অধিকাংশই যে এসেছিলো জয়া- সাঙ্গা নামের দুই মহিরূহের ব্যাটে চড়ে। এবার যে তারা নেই। জয়া- সাঙ্গা যদি কোনোদিন বা ব্যর্থ হতেনও, মুরালির ঘূর্ণি জাদু ছিলোই। বাংলাদেশের সাবেক ক্রিকেটাররাও সে সম্পর্কে কম বেশি জানাতে পারবেন, ৮৯ বার উইকেট যে তার পকেটেই দিয়ে এসেছেন। তার শূন্যতা যদিওবা অনেকাংশেই পূরণ করেছেন, রঙ্গনা হেরাথ নামের এক বাঁহাতি, যিনি এই সিরিজে দলকে নেতৃত্বও দেবেন। কিন্তু, ওই তিন বটবৃক্ষের অভাব লঙ্কান বোর্ড যে দুই বছরেও ভুলতে পারেনি। কিছুদিন আগের ভারত সফরে কমেন্ট্রি বক্সে আতাহার আলী খান বলেছিলেন, everything has a starting point, right? শ্রীলঙ্কার এত নেই, নেইয়ের ভিড়ে বাংলাদেশও পারে, এক নতুন যাত্রার সূচনা করতে। লংকার মাটিতে টেস্ট জয় এর আগে কখনোই দেখা হয়নি, লঙ্কার মাটি বলছি কেন, শ্রীলংকার সাথেই টেস্ট জয়ের সৌভাগ্য হয় নি এর আগে। সেই অপ্রাপ্তি ঘোচানোর সেরা সুযোগ এবারই। মুশফিকুর রহিম আছেন দারুণ ফর্মে, তামিম ইকবাল কিছুদিনের রানখরা কাটিয়ে প্রস্তুতি ম্যাচে দিয়েছেন ফর্মে ফেরার ইঙ্গিত, মিরাজ কিংবা সাকিবও আছেন ছন্দে। সাথে ফিজ যদি প্রত্যাবর্তনকে স্মরণীয় করে রাখতে পারেন দারুণ কিছু করে, রাবণ বেশেই দেশে ফিরবেন টাইগারেরা, তা একরকম নিশ্চিত। এসবই কাগজেকলমের হিসেব। খেলা শেষে যদি দেখেন, আমার এই লেখা জলে ভেসেছে, তার জন্য অগ্রিম ক্ষমা প্রার্থনা করে নিচ্ছি। নতুন জয়া বা সাঙ্গার আবির্ভাব এই সিরিজেই হবে না, তা কে বলতে পারে। after all, cricket is a funny game, right!