ব্রায়ান লারা সেদিন মিরাকল ঘটিয়েছিলেন!!!
পোস্টটি ৭৫৬০ বার পঠিত হয়েছে১.
একটা কাল্পনিক টেস্টম্যাচের পরিস্থিতি বর্ণনা করি।
চতুর্থ ইনিংসের খেলা চলছে। উইকেট পড়ে গেছে ৮টা, হাতে আছে আর মাত্র ২ উইকেট।
জেতার জন্য এখনও প্রয়োজন ১০০ রান, সময় আছে ৫ম দিনের টি’র পরের সময়টুকু, বড়জোর ২০-২৫ ওভার। ক্রিজে আছেন শুধুমাত্র একজন স্বীকৃত ব্যাটসম্যান, বাকিরা টেলএন্ডার। প্রশ্ন হচ্ছে, সেই স্বীকৃত ব্যাটসম্যান হিসেবে আপনি কাকে চাইবেন?
সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যান বলা হয় স্যার ডন ব্র্যাডম্যানকে। আমি তাঁর অনেক বড় একজন ফ্যান। কিন্তু সেই স্বীকৃত ব্যাটসম্যান হিসেবে আমি ডনকে চাইব না। ব্যাপারটা এমন নয় যে, স্যার ডনের চাপের মুখে ইনিংস খেলার ক্ষমতা নেই অথবা টেলএন্ডারদের নিয়ে ম্যাচ জেতাতে পারতেন না। অবশ্যই পারতেন, ডনের ব্যাটিং ক্ষমতা নিয়ে আমার কোনওই সন্দেহ নেই। তবে এটাও ঠিক, ক্যারিয়ারে প্রায় সবসময় অসাধারণ দল পাওয়াটা চাপের মুখে ডনকে খেলতে দিয়েছে সামান্যই। ডনকে বিপদ থেকে রক্ষার জন্য সবসময়ই ম্যাককেব, ফিঙ্গলটন, আর্থার মরিস কেউ না কেউ ছিলেন। অথবা ভারতের ক্রিকেট ঈশ্বর শচীন টেণ্ডুলকার। ইনিও আমার খুব পছন্দের। কিন্তু অনেক খুঁজেও এক ইংল্যান্ডের সাথে চতুর্থ ইনিংসে করা ১০৩ ছাড়া অন্যকোনও ম্যাচ পেলাম না যেখানে ভারত জিতেছে। তাই আমার কাছে সেই স্বীকৃত ব্যাটসম্যান হিসেবে এই দুজনই বাদ, আমার কাছে সেই ব্যাটসম্যান একজনই, ক্রিকেটের বরপুত্র লারা।
ব্রায়ান চার্লস লারা।
২.
অনেক বড় ভূমিকা হয়ে গেল। ফেরা যাক আসল প্রসঙ্গে, ১৯৯৯ সালের ফ্রাঙ্ক ওরেল ট্রফিতে। সিরিজে ১-১ সমতা নিয়ে তৃতীয় টেস্ট শুরু হলো বার্বাডোজের কেনসিংটন ওভালে। এই টেস্টের কথা বলার আগে আগের ২ টেস্ট ঘুরে আসা যাক একটু।
প্রথম টেস্ট হয়েছিল পোর্ট অফ স্পেনে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ হারল ৩১২ রানে। তা হারতেই পারে, কিন্তু সমস্যা করল ওয়েস্ট ইন্ডিজের হারার ধরণ। ৩৬৪ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে মাত্র ৫১ রানে অলআউট হলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ, সমালোচনার ঝড় বয়ে গেল পুরো দলের ওপর দিয়ে। দ্বিতীয় টেস্ট শুরু হলো কিংস্টনে, প্রথম ইনিংসে লারা করলেন ২১৩। এটা সেই টেস্ট, যে টেস্টের আগে নেটে ব্যাটিং প্র্যাকটিস করতে এসে লারা দেখেন সকল নেট দখল করে প্র্যাকটিস করছে অস্ট্রেলিয়ানরা। বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পরে লারা রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে মাঠ ছাড়লে স্টিভ ওয়াহ বলেছিলেন, ‘কাজটা ভালো হলো না।’ এবং সেই ঘটনার পরেই লারার ২১৩। চ্যাম্পিয়নদের অ্যারোগ্যান্সি থাকাটা খুবই দরকার, কারণ তারা যে চ্যাম্পিয়ন তার একটা বড় কারণ অ্যারোগ্যান্স।
যাই হোক, সেই টেস্টে ১০ উইকেটে জিতেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সিরিজ হয়ে গেল ১-১।
৩.
কেনসিংটন ওভালে টস করলেন ব্রায়ান লারা এবং স্টিভ ওয়াহ। সিরিজে টানা তৃতীয়বারের মতো টসে জিতলেন স্টিভ, জিতে ব্যাট করতে নামল অস্ট্রেলিয়া। নেমেই অ্যামব্রোসের তোপের মুখে পড়ল অস্ট্রেলিয়া, স্ল্যাটার আর ‘ছোট’ ওয়াহকে তুলে নিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে বানিয়ে দিলেন ৩৬/৩। ল্যাঙ্গার আর ‘বড়’ ওয়াহ স্টিভের ১০৮ রানের জুটিতে প্রাথমিক বিপর্যয় সামাল দেয়া গেল, দলীয় ১৪৪ রানে ল্যাঙ্গার ফিরলে ক্রিজে এলেন রিকি পন্টিং, স্টিভের সাথে ২৮১ রানের জুটি গড়ে দলকে নিয়ে গেলেন বেশ ভালো অবস্থানে। এরপরই আঘাত হানলেন পেরি, দলীয় ৪২৫/৪ থেকে হয়ে গেল ৪২৯/৭। পন্টিঙের সেঞ্চুরি হয়ে গিয়েছিল আগেই, কিন্তু কপাল পুড়ল স্টিভের, আউট হলেন ১৯৯ রানে। এরপরে ওয়ার্ন, গিলেস্পি আর ম্যাকগ্রা’র কিছু রানে অস্ট্রেলিয়া থামল ৪৯০ এ।
ব্যাটিঙে নেমে ওয়েস্ট ইন্ডিজের অবস্থা হলো ভয়াবহ। একপ্রান্তে ওপেনার শেরউইন ক্যাম্পবেল আত্মবিশ্বাস নিয়ে খেলে যাচ্ছিলেন ঠিকই, কিন্তু অন্যপ্রান্তে মড়ক লেগেছিল যেন রীতিমতো। আগের টেস্টের ডাবল সেঞ্চুরিয়ান লারা করলেন ৮, একপর্যায়ে স্কোর হলো ৯৮/৬। এই অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়ানো শুরু করল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ক্যাম্পবেল আগে থেকেই ছিলেন, তার সাথে যোগ দিলেন রিডলি জ্যাকবস, দুজন গড়লেন ১৫৩ রানের জুটি। ২৫১ রানে গেলেন জ্যাকবস, ২৬৫ রানে গেলেন সেঞ্চুরিয়ান ক্যাম্পবেল। তারপরেও যে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংস ৩২৯ পর্যন্ত গেল তার কৃতিত্ব পেরি, অ্যামব্রোস আর ওয়ালশের। এই তিনজন মিলে করলেন ৬৪। ওয়েস্ট ইন্ডিজ থামল ৩২৯ এ, অস্ট্রেলিয়া পেল ১৬১ রানের লিড।
প্রথম ইনিংসে ওয়ালশের বোলিং ফিগার ছিল ৩৮ - ৮ - ১২১ -২। খুব খারাপ অবশ্যই না, তবে তাঁর মতো একজন বোলারের জন্য খুব ভালোও না। দ্বিতীয় ইনিংসে বোলিং করার সময় সুদসহ আসল তুলতে শুরু করলেন তিনি। ৩৯ রানে ৫ উইকেট নিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে ধ্বসিয়ে দিলেন, অলআউট হওয়ার আগে অস্ট্রেলিয়া করল ১৪৬। তবে এত কম স্কোরের পিছনে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানদের দায়ও কম না। অহেতুক রান নিতে গিয়ে রানআউট হলেন স্ল্যাটার, নবিসের মতো ভুল করে বোল্ড হলেন স্টিভ। ১৪৬ এর সাথে ১৬১ মিলে হলো ৩০৭, জয়ের জন্য ওয়েস্ট ইন্ডিজের সামনে টার্গেট ৩০৮।
৪.
চতুর্থ ইনিংসে কত রান চেজেবল? এ ব্যাপারে আমার একটা থিওরি আছে। পৃথিবীর যে মাঠেই খেলা হোক না কেন, রান যদি ২০০’র মধ্যে থাকে তবে জয়ের সম্ভাবনা বেশি চতুর্থ ইনিংসে ব্যাট করা দলটির। কিন্তু যদি টার্গেট হয় ২০০-২৫০’এর মধ্যে, তবে সম্ভাবনা হয়ে যাবে ৫০-৫০। আর যদি টার্গেট ২৫০ ছাড়িয়ে যায়, তবে ব্যাট করা দলটি ‘শ্যাষ’। শ্যাষ মানে শ্যাষ। দাঁড়ি নয়, কমা নয়, একদম ফুলস্টপ।
টার্গেট যেখানে ৩০৮, চারদিন খেলা হওয়ার পরে পিচ যেখানে ফেটে চৌচির, প্রতিপক্ষ দলে যেখানে আছেন ম্যাকগ্রা, গিলেস্পি, ওয়ার্ন, ম্যাকগিলের মতো বোলাররা, জয় সেখানে অসম্ভব। তবে নেপোলিয়ন তো বলেই গিয়েছেন, ‘অসম্ভব বলে কোনও শব্দ নেই।’ আর অসম্ভবকে সম্ভব করা যাবে না, তাও তো নয়।
৩০৮ রানের টার্গেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজের শুরুটা হলো খুবই ভালো। বিনা উইকেটে ৭২ তুলে ফেললেন ক্যাম্পবেল আর আদ্রিয়ান গ্রিফিথ। এই সময়ে ক্যাম্পবেলকে ফেরালেন ম্যাকগ্রা, ৭৭ রানে ব্যাটসম্যান ডেভ জোসেফকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেললেন ম্যাকগিল, এর প্রায় সাথে সাথেই গিলেস্পি তুলে নিলেন নাইটওয়াচম্যান পেদ্রো কলিন্সকে। ৩ উইকেট পড়ার পর নামলেন লারা। গ্রিফিথের সাথে দিনের বাকি সময়টুকু কাটিয়ে ড্রেসিংরুমে যখন ফিরছেন তখন স্কোর ৮৫/৩। জিততে তখনও লাগে ২২৩। হাতে আছে পুরো ১ দিন, সবচেয়ে বড় কথা, ক্রিজে তখনও আছেন ব্রায়ান চার্লস লারা। জেতার আশা তো করাই যায়!!!!
কেনসিংটন ওভালের দর্শকরা তখনও জানে না, পরদিন এমন এক ঘটনার সাক্ষী তারা হবে, যা নিয়ে আজীবন নাতিপুতিদের কাছে গল্প করতে পারবে।
৫.
পরদিন খেলা শুরু হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই ফিরে গেলেন গ্রিফিথ, কয়েক ওভার পর তার পথ ধরলেন কার্ল হুপার। স্কোর ১০৫/৫। অস্ট্রেলিয়ার জয় সময়ের ব্যাপার মাত্র।
খেলার এই অবস্থায় ক্রিজে আসলেন জিমি অ্যাডামস। আগের টেস্টেই ৩২২ রানের জুটি গড়েছেন লারা - অ্যাডামস। তাহলে কি এবারও……?
অত বড় জুটি হলো না। তবে যা হলো পরিস্থিতি বিবেচনায় সেটাকে অনেক বড় বলাই যায়। ১৬১/৫ নিয়ে লাঞ্চে গেল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এখনও অনেকটা পথ বটে, তবে লারাও তো আছেন!!!
লাঞ্চের পরে হাত খোলা শুরু করলেন লারা। ওয়ার্নকে আছড়ে ফেললেন গ্রিনিজ - হেইন্স স্ট্যান্ডের ছাদে, হাফসেঞ্চুরি হয়ে গেল লারার। ম্যাকগিলকে পাঠালেন মাঠের বাইরে। এসব দেখে নতুন বল নিলেন স্টিভ, তুলে দিলেন ম্যাকগ্রার হাতে।
বল করতে এসেই বাউন্সার দিলেন ম্যাকগ্রা। লারা ছাড়তে চাইলেন কিন্তু সফল হলেন না পুরোপুরি, বল লাগল হেলমেটের পিছনে। ব্যালেন্স সামলে নিয়ে ১ রান নিলেন লারা। এই রানটা আসলে হওয়া উচিৎ ছিল হেডবাই, কিন্তু হেডবাই বলে যেহেতু কিছু নেই, তাই হলো লেগবাই। :D
রান নিয়ে ম্যাকগ্রার দিকে এগিয়ে গেলেন তিনি। দুজন দুজনের দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকালেন, অশ্রাব্য কথা চালাচালিও হলো নিশ্চয়। টেস্ট ক্রিকেট পুরুষের খেলা, পৌরুষই এখানে মুখ্য, কেউ কাউকে এক ইঞ্চি জায়গাও ছেড়ে কথা বলবে না। কে যেন একবার বলেছিলেন, ‘লারাকে কখনও আক্রমণ করতে যাবেন না, কারণ ও যে মুহূর্তে বুঝবে আপনি ওকে আক্রমণ করছেন, সেই মুহূর্তে আপনি শেষ।’
এর প্রমাণ পাওয়া গেল ম্যাকগ্রার পরের ওভারে। আবারও বাউন্সার দিলেন তিনি, এবার আর ছাড়ার চেষ্টাও করলেন না লারা। ব্যাট চালালেন, মিডউইকেট দিয়ে সোজা বাউন্ডারির বাইরে।
গিলেস্পি এলেন, ফ্রন্টফুটে গিয়ে বাউন্ডারি মারলেন লারা, মারলেন ব্যাকফুটেও। এলেন ওয়ার্ন। মিডঅন দিয়ে বাউন্ডারি। সেঞ্চুরি হয়ে গেল লারার। হাফসেঞ্চুরি করেছিলেন ১১৮ বলে, সেঞ্চুরির সময় বলের সংখ্যা ১৬৯। পরের ফিফটি করলেন মাত্র ৫১ বলে। দলের স্কোর ২৩৪/৫, জয়ের জন্য দরকার আর ৭৪ রান।
এই সময়েই লারা ক্যাচ দিলেন ওয়ার্নের কাছে। ওয়ার্ন ধরলেনও, কিন্তু ধরেও ফেলে দিলেন। লারার ইনিংসের কলঙ্ক বলতে পারেন, কিন্তু এটাও তো ঠিক যে ভাগ্য সাহসীদেরকেই সাহায্য করে থাকে।
দলীয় ২৩৮ রানে জিমি অ্যাডামসকে বোল্ড করে জুটি ভাঙলেন ম্যাকগ্রা, ১৩৩ রানের জুটিতে জিমির অবদান মাত্র ৩৮। ২৩৮ থেকে ২৪৮ এই ১০ রানের মধ্যে একটা ছোটখাটো ঝড় বইয়ে দিলেন ম্যাকগ্রা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ হয়ে গেল ২৪৮/৮। দৃষ্টিসীমায় থাকা জয়টাকে হঠাৎ করেই মনে হতে লাগল সুদূরের কোনও লাইটহাউজ।
লারা তখনও আছেন কিন্তু অ্যামব্রোস অথবা ওয়ালশ কাউকে তাঁর সাথে থাকতে হবে।
৬.
অ্যামব্রোস থাকলেন। তাঁকে স্ট্রাইক থেকে যতটা সম্ভব দূরে রেখে নিজে খেলতে লাগলেন ব্রায়ান লারা। ওভারের শেষ বলে ফিল্ডাররা ঘিরে ফেলল লারাকে, সিঙ্গেল যেন না হয়। আর গালিগালাজ যে চলছিল সে তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না। লারার তাতে থোড়াই কেয়ার। মাথা ঠাণ্ডা রেখে খেলতে লাগলেন, অ্যামব্রোসের সাথে ৫৪ রানের জুটি গড়ে দলকে নিয়ে গেলেন ৩০২ এ।
এমনিতেই থ্রিলার মুভি চলছিল মাঠে। মুভিতে আরও থ্রিল আনতে এই সময়ে আউট হয়ে গেলেন অ্যামব্রোস।
ম্যাচটা এখানেই শেষ হয়ে যেতে পারত যদি এর ঠিক ১ রান আগেই গিলেস্পির বলে লারার ব্যাটে লাগা বলটা ধরতে পারতেন ইয়ান হিলি। লারার ব্যাট আলতোভাবে স্পর্শ করে যাওয়া বলটা ধরেও ধরে রাখতে পারলেন না হিলি। হিলির ক্যাচ মিসে উন্মাতাল হয়ে গেল কেনসিংটন ওভালের গ্যালারি।
শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে উইকেটে এলেন কোর্টনি ওয়ালশ। ব্যাটিঙে যার ‘দক্ষতা’ সর্বজনবিদিত। অ্যামব্রোস আউট হন গিলেস্পির ওভারের ৩য় বলে। ওয়ালশকে খেলতে হলো বাকি ৩ বল। প্রত্যেকটা বল ঠেকানোর সাথে সাথে গর্জন উঠতে লাগল গ্যালারি থেকে। ওভার হতেই স্ট্রাইকে চলে গেলেন লারা। গিলেস্পির একটা নো-বলের কারণে স্কোর ৩০৩/৯। ম্যাকগ্রার ওভারের প্রথম বলে ২ রান নিয়ে স্কোরটাকে নিয়ে গেলেন ৩০৫ এ।
সেদিন ম্যাকগ্রার প্রায় ৪০ ওভার বোলিং করা হয়ে গিয়েছিল, শরীর আর চলছিল না। এ কারণেই বোধহয় এই ক্রুশিয়াল মোমেন্টে একটা ওয়াইড দিয়ে ফেললেন। স্কোর ৩০৬/৯। ম্যাচ টাই হতে লাগে ১ রান, জিততে লাগে ২ রান।
ওভারের পঞ্চম বলে গায়ের জোরে মারলেন লারা। বাউন্ডারি হলে খেলা ওখানেই শেষ। কিন্তু না, হলো মাত্র ১। ওয়ালশ স্ট্রাইকে গেলেন বটে কিন্তু স্কোর সমান হয়ে গেল, ওয়েস্ট ইন্ডিজ হারবে না আর।
শেষ বলে অফস্ট্যাম্পের বাইরে একটা লোভনীয় বল দিলেন ম্যাকগ্রা, উদ্দেশ্য ওয়ালশকে একটা খোঁচা মারার জন্য প্রলোভিত করা। কিন্তু কীভাবে নিজেকে সংবরণ করে নিলেন ওয়ালশ, ব্যাট এগিয়ে দিয়ে সরিয়ে নিলেন সময়মতো। :D ম্যাকগ্রার ওভার শেষ হওয়ার সাথে সাথে কেনসিংটন ওভালের দর্শকেরা একসাথে যে হাঁফ ছাড়ল তাতে একইসময়ে সবচেয়ে বেশি কার্বন ডাই অক্সাইড ছাড়া হলো কিনা এ ব্যাপারে গিনেজ কর্তৃপক্ষ একটা আলাদা রেকর্ডের ক্যাটাগরি খুলে ফেলতে পারতেন।
লারারও সম্ভবত আর এই স্নায়ুচাপ ভালো লাগছিল না। এমনিতেই মাঠে খেলতে হচ্ছে, সাথে হার্টের উপরে প্রেশার আর কতক্ষণ ভালো লাগে? তাই গিলেস্পির ওভারের প্রথম বলেই বাউন্ডারি মেরে দিলেন, জিতে গেল ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
১৯৯৯ সালের ৩০শে মার্চের পড়ন্ত বিকালে ব্রায়ান লারা হয়ে গেলেন সর্বকালের সেরা চেজের নায়ক।
৫ ঘণ্টা ৫৪ মিনিট, ২৫৬ বল, ১৯ চার, ১ ছয়, অপরাজিত ১৫৩।
একজন ব্রায়ান লারা।
লারা বাউন্ডারি মারার সাথে সাথে পাগল হয়ে গেল স্টেডিয়ামের দর্শক, মাঠে ঢুকে পড়ল তারা। পরদিন বার্বাডোজের খবরের কাগজ ডেইলি নেশনে হেডলাইন হলো, ‘ম্যাচ অফ দ্য সেঞ্চুরি’। স্টিভ ওয়াহ বললেন, এটা তাঁর খেলা সেরা টেস্ট।
সবচেয়ে মজার কথা বললেন ওয়ালশ। তাঁর মতে, ‘লারার অল্প একটু সাহায্য নিয়ে ম্যাচটা আমিই জিতিয়েছিলাম।’
রসিকতা আর কাকে বলে!!! অবশ্য এক অর্থে ঠিকও আছে। ওয়ালশ ওই ৫ বল না ঠেকাতে পারলে তো ট্র্যাজিক হিরো হয়েই মাঠ ছাড়তে হয় ব্রায়ান চার্লস লারাকে।
- 0 মন্তব্য