ক্রিকেটের অনিশ্চিত সৌন্দর্য্যের মোহনীয় সুর...
পোস্টটি ৩৯১০ বার পঠিত হয়েছেজগতে জীবিত থাকার মতো বড় সত্য নাকি আর কিছুতে নেই। বেঁচে থাকার মতো আনন্দদায়ক হতে পারে না আর কিছু। ‘জীবন মানে যন্ত্রণা’ জানার পরও এই আনন্দের উৎস আসলে কোথায়? বেঁচে থাকা এত গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার রহস্যই বা কিসে?
অনাগত ভবিষ্যতে ‘কি হবে না হবে’ এই অনিশ্চয়তাটাই কি প্রতিক্ষণে আনন্দের যোগানদাতা হিসেবে কাজ করে? জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে এই অননুমেয় অবস্থা-ই কি জীবনটাকে রঙে-ঢঙে চিত্রে-চরিত্রে এত উপভোগ্য, এত আনন্দদায়ক করে তোলে?
কে জানে! হবে হয়তো।
অনেকে ক্রিকেটের সাথে জীবনযাত্রার বেশ মিল খুঁজে পান। ক্রিকেটের অনিশ্চিত সৌন্দর্য্যও কি সেজন্যেই এত রোমাঞ্চকর হয়ে ধরা দেয়? পরের বলের গতিপথ সম্পর্কে ব্যাটসম্যানের মতো বোলারেরও অনিশ্চিত জ্ঞানটাই কি আনন্দের মূল? আগত ‘লোপ্পা’ ক্যাচটা ঠিকঠাক ফিল্ডারের তালুবন্দী হবে কি-না, এই রহস্যই কি এত রোমাঞ্চের যোগানদাতা?
এখানে প্রতিটি বলই যেন নতুন এক অভিজ্ঞতা, নতুন এক রোমাঞ্চ। এই বুঝি বেল পড়ল, এই বুঝি সীমানা ছাড়ালো। কখনো হয়তো বোঝাই গেল না, কি থেকে কি হয়ে গেল। পলে পলে অনিশ্চতার অদ্ভুত এক রোমাঞ্চ যেন ঘিরে থাকে এই খেলায়।
তাই কি বলা হয়, ক্রিকেট গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা?
যতবার ক্রিকেট তার অনিশ্চিত সৌন্দর্য্যের রোমাঞ্চকর পসরা সাজিয়েছে ততবারই খেলাটাতে লেগেছে অন্যমাত্রা, ভিন্ন রঙ।
কপিল দেবের সাদামাটা ভারতে যখন বিধ্বস্ত হলো লয়েডের বিশ্বজয়ী, বিশ্বত্রাসী ওয়েস্ট ইন্ডিজ, তখনই যেন মনে হয়েছে ক্রিকেট খেলাটা বড় সুন্দর। ‘বুড়ো’ ইমরান খানের ছন্নছাড়া পাকিস্তানও দেখিয়েছে ক্রিকেট কতটা রঙিন ও বর্ণময় হতে পারে। রানাতুঙ্গার নবীন শ্রীলংকাতেও ক্রিকেট পেয়েছে, অভাবনীয় ক্রিকেটের অমৃত এক স্বাদ। ব্রায়ান লারার ক্ষয়িষ্ণু শক্তির ওয়েস্ট ইন্ডিজও দেখিয়েছে অবিশ্বাস্য ক্রিকেটের চূড়ান্ত মাত্রা।
দু’দলের শক্তির তারতম্য যখন প্রকট, দূর্বলের উপর সবলের প্রাধান্য যখন নিশ্চিত, যখন খেলাটাকে বড্ড অনুমেয় মনে হয়, তখনই ক্রিকেট তার অননুমেয় রুপে হাজির হয়ে যেন জানিয়ে দেয়, এই খেলার সাথে অনিশ্চয়তার গৌরব জড়িত। সুতরাং আগে থেকে ভেবে রাখা চিত্রনাট্য অনুযায়ী খেলার চিত্র এখানে চিত্রায়িত হতে পারে না।
সরফরাজের পাকিস্তান যে ওভালের সমাপণী মঞ্চে, শ্বেত ব্লেজার জড়িয়ে মুখে-চোখে হাজার ওয়াটের হাসি ঝুলিয়ে, বিজয়োল্লাস করবে কে ভেবেছিল? শিরোপার দাবীদার তিন-তিনটি কঠিন প্রতিপক্ষ, দক্ষিন আফ্রিকা, ইংল্যান্ড ও ভারতকে যে ওভাবে ধুমড়ে মুচড়ে দেবে, তাই বা কে কল্পনা করেছিল? ক্রিকেট পন্ডিতদের কাঁচকলা দেখিয়ে, সুদূর কল্পনাকে হার মানিয়ে, পাকিস্তান যে একদম তলানি থেকে উঠে এসে অমন চূড়ায় পৌঁছে যাবে, কেই-বা অনুমান করেছিল?
ক্রিকেটের মাহাত্ম্যটা এখানেই। গৌরবটাও এখানে। অনিশ্চয়তার সৌন্দর্য্যটাও এখানে। এই ‘অননুমেয়’ ব্যাপারটাতেই যেন সব আবেদন, সব রহস্য, সব সৌন্দর্য্য এক হয়ে মিশে গেছে।
সেজন্যেই ক্রিকেট খেলাটা মাঝে মাঝে এত সুন্দর, এত আনন্দদায়ক, এত মনোমুগ্ধকর মনে হয়। ক্রিকেটের অনিশ্চিত সৌন্দর্য্যের মোহনীয় সুরটাই এমন যে, সর্বত্র ছড়িয়ে দেয় অদ্ভুত আনন্দদায়ক এক অনুভূতি।
বেঁচে থাক ক্রিকেট, বেঁচে থাক অনিশ্চয়তার গৌরবময় সৌন্দর্য্য।
- 0 মন্তব্য