• ক্রিকেট

লঙ্কান ক্রিকেটে দুঃসময়

পোস্টটি ৭৩২০ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

সাঙ্গাকারা, জয়াবর্ধনে, দিলশানদের বিদায়ের পর থেকেই দুঃসময় চলছে লঙ্কান ক্রিকেটে। তবে পরিস্থিতি তলানিতে পৌঁছেছে ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ের কাছে হারে। দুর্দশার কারণ হিসাবে খেলোয়াড়দের ব্যর্থতার চেয়ে বোর্ডের অদূরদর্শিতা আর নির্বাচকদের হঠকারিতাই বড় হয়ে উঠছে।

 

২০১১ থেকে এখন পর্যন্ত আটজন কোচ নিয়োগ করেছে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট বোর্ড। ট্রেভর বেলিস, স্টুয়ার্ট ল, পল ফ্যাব্রিগাস, শেষ গ্রাহাম ফোর্ড, অনেক বড় নাম রয়েছে এই তালিকায়। তবে এদের অধিকাংশের বিদায় বোর্ডের সাথে বিবাদে জড়িয়ে। ২০১৩ র ডিসেম্বরে মাত্র ৪ মাস দায়িত্ব পালন করেই পদত্যাগ করেন জিওফ মার্শ। সাবেক লঙ্কান গ্রেট মারভান আতাপাত্তুও বোর্ডের সাথে দ্বন্দ্বে সরে দাঁড়ান ২০১৫ র সেপ্টেম্বরে।

 

তরুণ দল নিয়ে ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়াকে হোয়াইট ওয়াশ করা গ্রাহাম ফোর্ডের পদত্যাগের পিছনেও রয়েছে বোর্ডের ভূমিকা। সাউথ আফ্রিকা সফরে হারের পর ক্রিকেট বিশ্বে বিরল ক্রিকেট ম্যানেজার নিয়োগ করে লঙ্কান বোর্ড। দল নির্বাচনসহ সবখানেই এই ম্যানেজার গুরুসিনহার হস্তক্ষেপ মানতে পারেননি ফোর্ড।

 

প্রধান নির্বাচক জয়সুরিয়া দায়িত্ব নেবার পর এক বছরে ওয়ানডে দলে সুযোগ পেয়েছেন ৩৯ জন। সম্ভাবনা দেখিয়েও উধাও দাসুন সানাকা, সাচিথ পারিথানা, অলরাউন্ডার মিলিন্দা সিরিবর্ধনের মতো তরুণরা। প্রতিটি সিরিজেই অভিষেক হয়েছে কমপক্ষে একজনের।

 

ক্যারিয়ারের প্রথম ৩ বছর সাঙ্গাকারার গড় ছিল প্রায় ২৬। আর প্রথম ৭০ ম্যাচে ১৬ গড়ে মোটে ৯২৬ রান করেন জয়সুরিয়া। প্রথম ফিফটি পান ৪০তম ম্যাচে, সেঞ্চুরি আরও ৩১ ম্যাচ পর। কিন্তু নির্বাচক হিসাবে তরুণদের এই সুযোগই দিচ্ছেন না লঙ্কান কিংবদন্তি। ৯ টেস্টে ৪১ গড়ে ২ সেঞ্চুরি করা ধনঞ্জয়া ডি সিলভা নেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে চলতি টেস্টে। গত বছর অস্ট্রেলিয়া বধের আরেক নায়ক লক্ষণ সান্দাকানও একাদশে নিজের জায়গা পাকা করতে পারেননি।

 

 

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হারের সিরিজেও নাটক কম হয়নি। বর্তমান টেস্ট অধিনায়ক, ২০১৬তে দলের সর্বোচ্চ ওয়ানডে স্কোরার চান্দিমাল বাদ পড়লেন শেষ তিন ওডিআই থেকে। স্কোয়াডে থাকা সত্ত্বেও গুরুত্বপূর্ণ চতুর্থ ম্যাচে কুলাসেকেরার মতো অভিজ্ঞের পরিবর্তে অভিষেক হল, আসিথা ফার্নান্দোর। অতীতে ভালো করার পরও সেকুগে প্রসন্নর পরিবর্তে অভিষেক হয় হাসারাঙ্গার মতো আনকোরা খেলোয়াড়ের।

 

সীমিত ওভারের ক্রিকেট এখন লঙ্কান অধিনায়ক উপুল থারাঙ্গা, ওয়ানডে ক্রিকেটে ওপেনিং এ যার ১৩টি সেঞ্চুরি। জয়সুরিয়া, জয়াবর্ধনে, সাঙ্গার পর দেশের পক্ষে সর্বোচ্চ। অথচ তাকেই তিন বছর দলের বাইরে রেখেছিলেন নির্বাচকরা। গত বছর যদিও বা ফিরলেন, কিন্তু এখন তার ঠিকানা মিডল অর্ডার। টেস্ট অধিনায়ক চান্দিমালকে ২০১৪ তেই করা হয়েছিল টি টোয়েন্টি ক্যাপ্টেন। সেবার টুর্নামেন্টের মাঝপথেই তাকে বহিষ্কার করে বোর্ড।

 

 

জয়সুরিয়া, জয়াবর্ধনে বা সাঙ্গার শুন্যতা দ্রুত পূরণ সম্ভব নয়। কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে তরুণদের সুযোগ না দিলে ভালো ফল সম্ভব নয়। ইতিমধ্যে নির্বাচকদের হেয়ালিদের হারিয়ে গেছেন এক সময়ের ‘ভবিষ্যৎ সাঙ্গাকারা’ লাহিরু থিরিমান্নে। সন্দেহ নেই এভাবে চলতে থাকলে দ্রুতই হারিয়ে যাবেন গুনাথিলাকারা, ধনঞ্জয়ারাও। মাঠের বাইরে সঠিক পরিকল্পনা আর সুস্থ ব্যবস্থাপনায় না ফিরলে লঙ্কান ক্রিকেটে দুর্দশা আরও বাড়বে সন্দেহ নেই।