• ফুটবল

ফ্যান্টাসি প্রিমিয়ার লিগের আদ্যোপান্ত-১

পোস্টটি ৯৮১৫ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

Premiership-match-review-and-tactics-explained-5

 

[বি. দ্রঃ এই লেখাটি মূলত চার পর্বের একটি লেখা। কারণ ৩৮ ম্যাচ ধরে দল বানানো একেবারেই দুঃসাধ্য এবং এর চেয়ে ১০ ম্যাচ ধরে দল গঠন করলে অপেক্ষাকৃত ভাল ফল পাওয়া যায়। আর সেই সাথে ওয়াইল্ডকার্ড তো আছেই যা ব্যবহার করে খোলনলচে দল বদলে নিতে পারবেন মৌসুমে দুবার (আগস্ট-ডিসেম্বরে একটি এবং জানুয়ারি-মে পর্যন্ত অন্যটি)। আজ থাকছে প্রথম পর্ব যাতে প্রথম প্রত্যেক দলের প্রথম ১০ ফিক্সচার অনুযায়ী কাদের নিলে পয়েন্ট বেশি পাওয়া যাবে, তা নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করবো]

 

কি এই ‘এফপিএল’?:

‘ফ্যান্টাসি প্রিমিয়ার লিগ’ বা ‘এফপিএল’ মূলত একটি গেম যাতে প্রত্যেক প্রতিযোগীকে ১০০ মিলিয়ন পাউন্ড দেওয়া হয় যা দিয়ে তাকে ১৫ জনের স্কোয়াড গঠন করতে হয় যাতে গোলরক্ষক কিনতে হয় ২ জন, ডিফেন্ডার ও মিডফিল্ডার ৫ জন এবং স্ট্রাইকার ৩ জন। এটি প্রিমিয়ার লিগের অফিশিয়াল ফ্যান্টাসি গেম যা প্রত্যেক বছর নতুন প্রিমিয়ার লিগ মৌসুমের আগে চালু করা হয়।

 

লিগ এবং হেড টু হেডঃ

গত মৌসুম পর্যন্ত দুভাবে খেলা যেত ‘এফপিএল’; ক্লাসিক লিগ এবং হেড টু হেড লিগ। ক্লাসিক লিগে একটি লিগ থাকে বিশ্বের সব খেলোয়াড়দের নিয়ে, আরেকটি থাকে নিজ দেশের খেলোয়াড়দের নিয়ে। এছাড়া একজন খেলোয়াড় চাইলে ‘ক্রিয়েট আ লিগ’-এ যেয়ে যত খুশি লিগ বানাতে পারে। ৩৮ ম্যাচ শেষে প্রতি লিগের সর্বোচ্চ পয়েন্টধারী জিতে নেন ঐ লিগ।  

হেড টু হেড লিগ বানানোর নিয়মও একই। কিন্তু এখানে মূলত প্রতি সপ্তাহে প্রত্যেকে খেলেন প্রত্যেকের সাথে, মানে ম্যাচ হিসেবে। ঐ গেমউইকে যার পয়েন্ট বেশি আসে, সে ঐ ম্যাচের বিজয়ী। মৌসুম শেষে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ জয়ী হয়ে যান চ্যাম্পিয়ন।

 

‘এফপিএল’ ড্রাফট কি জিনিস?:

লিগ এবং হেড টু হেডের পাশাপাশি এবার থেকে নতুন চালু করা হয়েছে ‘এফপিএল ড্রাফট’। অনেকে একত্রে খেলা গেলেও ৭-৮ জন মিলে খেললে আসল মজাটা উপভোগ করা যায়। অতঃপর লিগ যে বানায়, সে একটি সময় নির্ধারণ করে দেয় যখন সবাই উপস্থিত থাকতে পারবে। অতঃপর শুরু হয় দল গঠন। প্রত্যেক ম্যানেজার ৩০/৬০/৯০ সেকেন্ড করে পাবেন একজন খেলোয়াড় নিতে, যা লিগ অ্যাডমিন দ্বারা শুরুতেই নির্ধারিত হয়ে যায়। অবশ্য কোনো ম্যানেজার উপস্থিত থাকতে না পারলে তার ‘ওয়াচলিস্ট’ (ওনার প্রিয় খেলোয়াড়দের তালিকা) বা ড্রাফটের ক্রমিক নম্বর অনুযায়ী খেলোয়াড় পাবেন তিনি। ড্রাফটের মূল আকর্ষণ হল, এখানে কোনো বাজেট নেই। তাই আপনার ভাগ্য ভাল হলে একই দলে পেতে পারেন কেন, লুকাকু, সানচেজদের। কোনো ক্যাপ্টেনও নেই ড্রাফটে। মানে গোল দিলে পয়েন্ট সবাই-ই সমান পাবে।

 

মনোযোগ দিন ডিফেন্সেওঃ

অধিকাংশ ‘এফপিএল’ ম্যানেজারই ডিফেন্সে খরচ করতে চান না। মোটামুটি একটা রক্ষণ নিয়ে মিডফিল্ড এবং স্ট্রাইকারদের কিনতে খরচ করার প্রবণতাটা অনেক বেশিই বলা চলে। কিন্তু ডিফেন্ডাররাও কোনো অংশে কম না। ক্লিনশীট, অ্যাসিস্টের পাশাপাশি অনেক ডিফেন্ডারকেই গোল দিতেও দেখা যায়। সেই সাথে মাঝেমধ্যে বোনাস পয়েন্টও ছিনিয়ে আনেন আক্রমণভাগের খেলোয়াড়দের থেকে।

প্রথম ১০ ম্যাচ বিবেচনা করলে সাউদাম্পটন, ওয়েস্ট ব্রম, আর্সেনালের ফিক্সচার বেশ সহজই বলা চলে। সেক্ষেত্রে গোলরক্ষক হিসেবে ফরস্টার (৫.০), চেক (৫.৫) এনে দিতে পারেন সর্বোচ্চ পয়েন্ট। এছাড়া ডি গেয়া এবং কর্তোয়াদের দলে গুনতে হবে ৫.৫ মিলিয়ন পাউন্ড। মাত্র ৪.৫ মিলিয়ন দাম হওয়ায় চাহিদাটা অনেক বেশি হার্ট ও ফস্টারের।

রক্ষণে সেড্রিক, ডওসন,  ড্যানিয়েলসকে পেতে পারেন মাত্র ৫ মিলিয়ন পাউন্ডে। ৫.৫ এ আছেন বার্ট্রান্ড, ভ্যান আনহল্ট, লিন্ডেলফ, দানিলোরা। আর ৬-৭ মিলিয়ন খরচ করে দলে আনতে পারেন বেলেরিন, কোলাসিনাচ, লুইজ, বেইন্স, অল্ডারওয়েরেল্ড (প্রত্যেকে ৬.০ মিলিয়ন), কাহিল, অ্যাজপিলিকুয়েতা, ভ্যালেন্সিয়া, ওয়াকার, মিলনারদের (প্রত্যেকে ৬.৫)। কেবলমাত্র চেলসির আলোন্সোর দাম ৭ মিলিয়ন। সেন্টারব্যাকের চেয়ে ফুলব্যাক কিনলে বেশি কাজে দিবে বলে মনে হয়। এভারটন, চেলসির ডিফেন্ডারদের শুরুর দিকের ফিক্সচার তেমন ভাল না হওয়ায় ক্লিনশীটের সম্ভাবনা বেশ কম।

 

মধ্যমাঠে কে?:

মধ্যমাঠের খেলোয়াড়দের নিতে গিয়ে যে ঠিক কি পরিমাণ সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগতে হয়, তা আর না-ই বলি।  দলে গোল, অ্যাসিস্টের অন্যতম বড় উৎসদের বাছাই করতে গেলে উইঙ্গার, অ্যাটাকিং মিডফিল্ডারদের দিকে ঝোঁকাটা অধিকতর ফলপ্রসূ। এক্ষেত্রে কান্তে, মাতিচদের মত ডিফেন্সিভ খেলোয়াড়দের নিয়ে লাভ হবে না মোটেও। ৫.৫ মিলিয়নে আছে ওয়ার্ড-প্রাউস, কাবায়ে, ওয়াল্টারস, অলব্রাইটন, ব্রেডি, প্রপার, অ্যালেন, মই, ফ্রেসার, ফের। ৬.০ মিলিয়নে আছেন ফিলিপস, শাকিরি, ইন্স, রিচি। ৬-৭ মিলিয়নে আছেন রেডমন্ড, তাদিচ, মিরালাস, আরনাউটোভিচ, লানজিনি, উইলিয়ান ,জাহাদের। ৮-১০ মিলিয়নে পাবেন ডি ব্রুইন, পগবা, মার্শিয়াল, মিখিতারইয়ান, সিলভা, পেদ্রো, স্টার্লিং, মানে, সিগুর্ডসন, আলি, এরিকসেন, সালাহ, ওজিলদের। সানচেজকে দলে ভেড়াতে হলে গুনতে হবে ১২ মিলিয়ন পাউন্ড। ইঞ্জুরি থেকে ফিরলে হ্যাজার্ডকে নিতে লাগবে ১০.৫ মিলিয়ন পাউন্ড।

মধ্যমাঠের খেলোয়াড়দের বাছাইয়ের ক্ষেত্রে যাদের গোল, অ্যাসিস্টের সম্ভাবনা বেশি, তাদের নেওয়াটাই শ্রেয়। সেই সাথে প্রাকমৌসুমের ফর্ম, দলে ভূমিকা, ইঞ্জুরি স্ট্যাটাস দেখা নেওয়া উচিত।

 

ভরসার নাম স্ট্রাইকারঃ

এখন আসি ফ্যান্টাসি খেলোয়াড়দের ‘প্রিয়পাত্র’দের নিয়ে। স্বাভাবিকভাবেই কেন, লুকাকুদের দলে নিতে পড়েছে হিড়িক। ফ্যান্টাসির অন্যতম সেরা এই দুই স্ট্রাইকারকে নিতে গুণতে হবে যথাক্রমে ১২.৫ এবং ১১.৫ মিলিয়ন। লুকাকুর সমান দামে পাবেন আগুয়েরোকেও। ১০-১০.৫ মিলিয়নে পাবেন লাকাজেত, হেসুসদের। চেলসির নতুন স্ট্রাইকার মোরাতার দাম ১০ মিলিয়ন পাউন্ড। ৭-৮.৫ মিলিয়নে পাবেন ফিরমিনো, গ্যাবিয়াডিনি, চিচারিতো, স্লিমানি, রাশফোর্ড, রুনি, ওয়েলবেক, কিং, বেন্টেকে, ভার্ডিদের। গেইল, অস্টিন, গ্রে, ডিনিদের পাবেন ৬.৫ মিলিয়নে। মিডফিল্ডারদের মত স্ট্রাইকারদেরও ফর্ম, ফিক্সচার দেখা নেওয়াটা হবে বুদ্ধিমানের কাজ।

 

কিছু কথাঃ

শেষদিকে একটা কথাই বলতে চাই, ফিক্সচার এবং ফর্ম বিবেচনা করে দল নিজের মত গঠন করুন। অন্যের কথায় প্রভাবিত হওয়াটা খুব একটা বুদ্ধিমানের কাজ নয়, কারণ ফ্যান্টাসি অনিশ্চয়তার খেলা। কেউই নিশ্চিতভাবে বলতে পারবে না কি ঘটতে যাচ্ছে। হ্যারি কেন যে আবার গোলবন্যায় ভাসিয়ে দেবে প্রতিপক্ষকে, তার গ্যারান্টি যেমন নেই; তেমনি পগবাও যে বেশি গোল করতে পারবেন না- এমনটাও কেউ বলতে পারবেন না নিশ্চিতভাবে। তাই নিজের মত বিবেচনা করে দল বানান আর অংশ নিন চমৎকার অনিশ্চয়তার এই খেলায়।

 

হ্যাপি ফ্যান্টাসিং...