পুরনো রোগেই শয্যাশায়ী বাংলাদেশ
পোস্টটি ৮১৬৭ বার পঠিত হয়েছেশেষবার যখন বাংলাদেশ দশ উইকেটে কোন ওয়ানডে হেরেছিল, সেটা ঠিক নয় বছর আগের গল্প। করাচীতে ২০০৮ এশিয়া কাপের ম্যাচে মাত্র ১১৫ রানে অলআউট হয়ে পাকিস্তানের কাছে হেরেছিল বাংলাদেশ। সেই দিনের পর নয় বছরে বাংলার ক্রিকেট এগিয়েছে বহুধাপ, কিন্তু আবারো সেই পুরনো রোগেই যেন আক্রান্ত মাশরাফির বাংলাদেশ!
১১৫ করে দশ উইকেটে হারাটা খুব বড় ব্যাপার ছিলনা, কিন্তু ২৭৮ করেও যখন দশ উইকেটে হারতে হয় সেটা কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলতে বাধ্য। বিশেষ করে বিদেশের মাটিতে যখন পেসাররা ক্রমাগত ব্যার্থ, এক বছরেরও বেশি সময় ধরে কোর্টনি ওয়ালশের কোচিং দক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। এই এক বছরে পেসাররা মাত্র ৫২ টি উইকেট নিয়েছেন, কারোর ইকোনমিই ৫.৩ এর নিচে নয়। সবচেয়ে কম গড় মুস্তাফিজের, ৩০.৫৫!নিজেকে হারিয়ে খুঁজতে থাকা ফিজই সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী,১৮ টি। ২০১৫ তে যেই পেসাররা রীতিমতো বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলেছিলেন, ঠিক তাঁরাই যেন গত বার মাসে একদমই সাদামাটা। একজন, দুইজনের ব্যর্থতা হয়ত ইনডিভিজুয়াল সমস্যার কারনে হতে পারে, কিন্তু পুরো ইউনিট যখন একসাথে ক্রমাগত ব্যার্থ, সেটার দায় কি ওয়ালশের নয়?
পুরনো রোগের কথা বলছিলাম, ব্যাটিংয়ে শুরু এবং শেষের দশ ওভার ধুঁকতে থাকার রোগটা তো আজকের নয়। ২০১৭ সালে এসে ওয়ানডে ম্যাচ জিততে হলে শুরু এবং শেষের দশ ওভার আক্রমণ করার কোন বিকল্প নেই আপনার সামনে। হ্যাঁ, এই ম্যাচটা হয়ত খুব বড় মার্জিনে হেরেছি বলে ব্যাটসম্যানদের ব্যার্থতা সামনে আসবেনা। কিন্তু এই ধরনের উইকেটে এখনো তিনশ করার সক্ষমতাটা না থাকাও আমাদের সামনে এগোনোর অনেক বড় একটা বাধা। শুরুটা ভাল করতে পারতেন ইমরুল আর লিটন, কিন্তু ওইযে রোগ! সেট হয়ে উইকেটটা বিলিয়ে দিয়ে আসলেন দুজনেই! ইমরুলকে একদম নাচিয়েই ছেড়েছেন রাবাদা, কখনোই মনে হয়নি ইমরুল খুব একটা স্বস্তিতে আছেন। ইমরুলকে এখনকার সময়ের ওয়ানডে ওপেনার মনে হয়না ঠিক, স্লো অ্যান্ড শেকি টাইপ ওপেনার শুরুতেই দলের আত্নবিশ্বাসটা নাড়িয়ে দিয়ে যাবে!
সাকিব হুট করে ওয়ানডাউনে নেমে রান করে দিবে এটা আশা করাটা ছিল বোকামি। কিন্তু সেট হয়ে সাকিব ইনিংসটাকে বড় করতে পারেননি, যখন খোলস থেকে বেরিয়ে আসছিলেন তখনই তাহিরের রং’আন! আহা, লেগি! আমাদের ক্রিকেটের আফসোস! এই ধরনের উইকেটে ফিঙ্গার স্পিনে বাজিমাত করাটা খুবই কঠিন, কিন্তু রিস্টি যদি থাকত আমাদের একটা! সিস্টেমের বড় একটা রোগ একটাও কার্যকর লেগি না থাকাটা!
মাহমুদুল্লাহ, সাব্বির সবাই শুরুটা করেছিলেন, কিন্তু শেষটায় থাকলেন না কেউ। এই রোগটা যদি না থাকত আমাদের ক্রিকেটে, শুরু আর শেষের ফারাক! শেষে থাকলেন একজন, মুশফিকুর রহিম!
ক্যাপ্টেন মুশফিকের হাজারো সমালোচক থাকতে পারে! কিন্তু ব্যাটসম্যান মুশফিকের সমালোচক কি পাওয়া যাবে! টেস্টে হারার পর যেভাবে সমালোচনার তীর একের পর এক ধেয়ে আসছিলো তাঁর দিকে, সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে অনন্য, অসাধারণ এক কাব্য লিখলেন ডায়মন্ড ওভালে! হয়ত জেতাতে পারেননি, কিন্তু যেভাবে খেলেছেন সেটাই বা কম কীসে!
সবচেয়ে বড় কথা, ইনিংসটা শেষ করেই ফিরেছেন। তাহিরকে যেভাবে সুইপ আর রিভার্সে আক্রমণ করেছিলেন, হীরার খনির শহর কিম্বার্লিতে যেন হীরার টুকরোই সেগুলো! অভিনন্দন মিস্টার ডিপেন্ডেবল!
এমন দূর্দান্ত একটা ইনিংসের বড় খুঁত টিম টোটালটাকে ৩০০ পার করাতে না পারাটা! এই ধরনের উইকেট যেখানে ৩২০ ও খুব একটা নিরাপদ নয়, সেখানে ২৭০-২৮০ করে ম্যাচ জেতানোটা বোলারদের জন্য খুবই কঠিন। হারের দায়টা ব্যাটসম্যানদের নেয়াহেত কম নয়। ৩০০ করার সক্ষমতাটা না আসলে ২০১৭ সালে এসে ম্যাচ জেতার আশা করাটাই কঠিন। বোলাররা প্রতিদিন ম্যাচ জিতিয়ে দেবেন না, নিয়মিত বিরতিতে ৩০০ করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ন।
পেসাররা ক্রমাগতই হতাশ করে যাচ্ছেন। এই পিচে একটা পারফেক্ট লেংথে ক্রমাগত হিট করে যাওয়া ছাড়া কোন উপায়ই নেই। সেখানে তাঁরা টানা দুটো বল একজায়গায় ফেলতে ব্যার্থ। ২৮০ চেজ করে জেতাতে না পারেন, উইকেট না পাওয়াটাতো খুব ভাল কোন লক্ষণ নয়। দিনদিন আমাদের পেস বোলিংয়ের মানটা নিন্মমুখীই হচ্ছে, এখন থেকে সতর্ক না হলে সামনে আরো বড় বিপর্যয়ই আসতে যাচ্ছে।
পুরোনো রোগগুলোই ফিরে আসছে বারবার। ব্যাটসম্যানেরা সেট হয়ে উইকেট ছুড়ে দিয়ে আসছেন, প্রচুর ডট বল খেলছেন। শুরুতে রান করতে পারছেন না, যেটা পুরো ইনিংসটাকেই চাপে ফেলে দিচ্ছে। সিঙ্গেলসেও খুব একটা আগ্রহী নই আমরা। সব চাপ গিয়ে পড়ছে শেষ দশ ওভারে, আর সেখানেই বারবার খেই হারাচ্ছি আমরা। প্রত্যেক ম্যাচেই অন্তত দশ বিশ রানের একটা আক্ষেপ থাকছেই আমাদের, শেষমেশ সেটাই ম্যাচ হারিয়ে দিচ্ছে আমাদের। বোলিংয়ে উইকেট নেয়ার সক্ষমতাটাও যেন কই মিলিয়ে গিয়েছে। সাকিবের সাথে কোয়ালিটি স্পিনার নেই, তাসকিন-মুস্তার নিজেদের হারিয়ে খোঁজা, রুবেলের ধারাবাহিকতার অভাব- মাশরাফিকেই পেস ডিপার্ট্মেন্টের সব দায়িত্বটা নিয়ে নিতে হচ্ছে।
২০১৫র সেই সিরিজটা কথা মনে আছে? প্রথম ম্যাচে ৯ উইকেটে হেরে যেয়ে পরের দুই ম্যাচে বাংলার রূপকথা! আশাটা হারাচ্ছিনা, যদিও সেবারের থেকে অন্তত কয়েকশগুন বেশি কঠিন কাজগুলো।
পার্ল আর ইস্ট লন্ডন থেকে সম্মানটুকু নিয়ে ফেরার আশাটা তো করাই যায়!
- 0 মন্তব্য