পোস্টমর্টেম- ত্রিদেশীয় সিরিজের বাংলাদেশ দল
পোস্টটি ৩৬২১৯ বার পঠিত হয়েছেহাথুরু গেলেন, সেই সাথে সম্ভবত টিম সিলেকশন নিয়ে যে বাজে বিতর্ক, সেগুলোকেই সাথে করে নিয়ে গেলেন। সৌম্য, তাসকিন, লিটনরা সবসময়ই হাথুরুর প্রশ্রয় পেয়ে আসতেন, এটা বাংলার ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় ওপেন সিক্রেট। হাথুরু আমাদের প্রসেসটাকে একরকম অকার্যকর বানিয়ে দিয়ে গিয়েছিলেন, পারফর্ম্যান্সের থেকেও তাঁর কাছে বড় ছিলো কে তাঁর প্রতি বেশি আজ্ঞাবহ। আর তাঁদেরকে হাথুরু টিকিয়ে রেখেছিলেন প্রতিভাধর, সম্ভাবনাময় ইত্যাদি তকমা দিয়ে। কিন্তু দিনশেষে পারফর্ম্যান্সটাই মুখ্য, কার কত প্রতিভা কিংবা সে কত বেশি সুশ্রী – সেটা দিয়ে কিছু আসে যায়না। স্টিভ স্মিথের ব্যাটিং হয়ত দেখতে খুব একটা এলিগ্যান্ট না , কিন্তু সে রান করছে এবং রান করাটাই আসল ব্যাপার, কিভাবে রান করলেন সেটা খুব বেশি ম্যাটার করেনা।
সৌম্য যে ২০১৭ সালে দলে টিকলেন, সেটাই ছিল বড় বিস্ময়ের! বাদ তাঁকে পড়তেই হত, এবং সেটা পড়লেন। তাসকিন বোলিং অ্যাকশন শুধরিয়ে ফেরার পর থেকেই সপ্রতিভ নন, ইকোনমিটা খুবই পুওর। ব্যাক টু ডমেস্টিক ক্রিকেট, গ্র্যাব সাম উইকেটস, গেইন ইওর কনফিডেন্স। তাসকিন এই মুহুর্তে বাংলাদেশ দলে জায়গা ডিজার্ভ করেন না, কিন্তু যেটা বললাম- বিসিএল আছে এই মাসে, ফেব্রুয়ারিতে প্রিমিয়ার লিগ, কামব্যাক করার যথেষ্ট সুযোগ তাসকিনের সামনে।
বিজয়কে যেভাবে ওয়ানডে স্কোয়াড থেকে বাদ দেয়া হয়েছিল, সেটা কোন ক্রিকেটারের জন্য সুখকর নয়। দেশের জন্য খেলতে গিয়ে ইনজুরিতে পড়ে দল থেকেই বাদ, এটা যেকোনো স্পোর্টস্ম্যানের জন্যই খুব বাজে একটা অভিজ্ঞতা। বিজয়কে ভাবা হচ্ছিল বাংলাদেশ ক্রিকেটের ফিউচার, মাঝে ট্র্যাকের বাইরে চলে গেলেও, আবারো সুযোগ বিজয়ের পাকা করে নেয়া জায়গাটা। ডমেস্টিকে রানের বন্যা বইয়েই ফিরছেন এবার, যেকোনো ক্রিকেটেই রান করলে একটা ব্যাটসম্যানের জন্য কাজগুলো খুব সহজ হয়ে যায়। শুরুতেই খুব বেশি কঠিন প্রতিপক্ষ নয় সামনে, সুযোগটা এবার দুহাত ভরেই নেয়ার সময় বিজয়ের সামনে।
ফিরছেন মিথুনও, খেলেছেন দুটো ওয়ানডে, ব্যাট করার সুযোগ পেয়েছেন মোটে একটাতে। হাথুরু আসার পর থেকে ব্রাত্য মিথুনও ফিরছেন ডমেস্টিক ক্রিকেটের দারুন কিছু পারফরম্যান্স দিয়ে। বিপিএলে চ্যাম্পিয়ন করেছেন রংপুরকে, প্রায় প্রতি ম্যাচেই রান পেয়েছেন। ১৫ ম্যাচে প্রায় ৩০ গড়ে ৩২৯ রান করেছেন, যা দেশীয়দের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। গত প্রিমিয়ার লিগেও ১৬ ম্যাচে ১০২.৭৬ স্ট্রাইক রেটে করেছেন ৩৩৫ রান, যেটা নিশ্চিতভাবেই নির্বাচকেরা বিবেচনায় এনেছেন।
সানজামুল গত কয়েক বছর ধরেই ডমেস্টিকে পারফর্ম করছেন, হাই পারফরম্যান্স স্কোয়াডেও ছিলেন, গত শ্রীলংকা সফর থেকেই জাতীয় দলে। সাউথ আফ্রিকায় কন্ডিশনের জন্য বাদ পড়েছিলেন, কিন্তু ঘরের মাঠে তাঁকে না রাখার কোন কারন ছিলনা। বিপিএলে দল খারাপ খেললেও তিনি ভাল বল করেছিলেন, সুতরাং তাঁকে নিতে সিস্টেম ব্রেক করতে হত। সানজামুল গত কয়েকদিন ধরেই গড়ে তোলা হচ্ছে, এবার নিজেকে প্রমানের পালা। বোলিংয়ের সাথে স্লগে তাঁর ব্যাটিংটাও দারুন কার্যকর হতে পারে।
রাজুর ইনক্লুশন একটা চমক হতে পারে অনেকের জন্য, কিন্তু বিপিএলের ডিসেন্ট পারফরম্যান্স আর নির্বাচকদের সুইং বোলারের খোঁজে রাজুর জাতীয় দলে ঢোকা। বিপিএলে স্লগে দারুন বল করেছেন, সুইং নিয়েও যথেষ্ট কাজ করেছেন। স্লগে আমাদের বাজে বোলিংয়ের ইতি টানার মত অস্ত্র আছে তাঁর ভান্ডারে, স্লোয়ার দিয়ে রান আটকে রাখতে পারবেন বেশ ভালভাবেই।
ওয়ানডেতে ২০১৭ সালে ঠিক আপটু দ্যা মার্ক ছিলনা বাংলাদেশ, ২০১৮ তে ত্রিদেশীয় সিরিজ দিয়ে আবার সেই অপ্রতিরোধ্য বাংলাদেশকেই দেখতে চাইবো!
- 0 মন্তব্য