• ক্রিকেট

শুভসূচনার অপেক্ষায় বাংলাদেশ

পোস্টটি ৫৬২২ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

দেশের মাটিতে সর্বশেষ ত্রিদেশীয় সিরিজটা প্রায় ৮ বছর আগে, ভারত আর শ্রীলংকার সাথে ২০১০য়ের জানুয়ারীর সেই সিরিজে কোন ম্যাচই জিততে পারেনি সাকিবের বাংলাদেশ। ঠিক আট বছর পর দেশের মাটিতে আবারো ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলার অপেক্ষায় বাংলাদেশ, সেই শ্রীলংকার সাথে এবার প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়ে। গত আট বছরে বাংলাদেশের উন্নতির গ্রাফটা তরতরিয়ে উপরের দিকে উঠেছে, কিন্তু সেইসময়ের মহাপরাক্রমশালী শ্রীলংকা এখন সহজ শিকার টাইগারদের জন্য, আর জিম্বাবুয়ে আটকে আছে সেই আগের বৃত্তেই। তাইতো দাপটেই সাথেই ত্রিদেশীয় সিরিজটা জেতার দিকেই চোখ বাংলার কাপ্তান মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার।

 

প্রথম ম্যাচে প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়ে, যারা কিনা নিজেদের সর্বশেষ সিরিজেই হারিয়ে দিয়েছে শ্রীলঙ্কাকে। আর ২০১৫ বিশ্বকাপের পর দুরন্ত বাংলাদেশের ওয়ানডের গ্রাফটা ২০১৭ সালে কেমন যেন ফ্যাকাশে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভাগ্যগুণে সেমিফাইনালে ওঠা আর সাকিব- রিয়াদের সেই অতিমানবীয় পার্টনারশিপটা ছাড়া বছরজুড়েই রঙিন পোশাকে অধারাবাহিক টাইগাররা, যদিও এই এক বছর দেশের মাটিতে কোন ওয়ানডে সিরিজই খেলা হয়নি বাংলাদেশের। ২০১৬র অক্টোবরের পর এই প্রথম দেশের মাটিতে ওয়ানডে খেলতে নামছে বাংলাদেশ, ইংল্যান্ডের কাছে ২-১ এ সেই সিরিজটা হেরে গেলেও এর আগের টানা ছয়টি সিরিজেই অপ্রতিরোধ্য ছিল মাশরাফীর বাংলাদেশ!

                                                                           904788612

জিম্বাবুয়ের সাথে শেষ আট ম্যাচেই অপরাজিত বাংলাদেশ, দেশের মাটিতে সর্বশেষ হারটা সেই ২০১০ সালে। দেশের মাটিতে শেষ ১১ টা ম্যাচের সবগুলোতেই জয় বাংলাদেশের। পরিসংখ্যানের বিচারে ওঁদেরকে সবচেয়ে সহজ প্রতিপক্ষ মনে হলেও বাস্তবতা যে খুব সহজ সেটা নয়। দক্ষিন আফ্রিকা সফরে জঘন্য ক্রিকেটের পর নতুন করে শুরু করতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। অসংখ্য বিতর্কের জন্ম দেয়া হাথুরু সরে গিয়েছেন, নতুন টেকনিক্যাল ডিরেক্টর সুজনের সামনে নতুন  বছরের শুরুটা তাই চ্যালেঞ্জিংই হবে। ২০১৮ তে এক নতুন শুরুর অপেক্ষায়ই বাংলাদেশ।

এই সিরিজটা দিয়েই মূলত ২০১৯ বিশ্বকাপের দল প্রস্তুত করার দিকে লক্ষ্য স্থির করতে হবে টিম ম্যানেজম্যান্টকে। দক্ষিন আফ্রিকার ভরাডুবির পর দলের কম্বিনেশন, পরিকল্পনা সবকিছুই আবার নতুন করে ভাবতে হচ্ছে নিশ্চিতভাবেই, মনোযোগটা তাই শুধু শ্রীলংকা আর জিম্বাবুয়েতে স্থির না রেখে দেড় বছর পরের বিশ্বকাপের দিকেই রাখা উচিৎ। এখন থেকেই একটা চোখ ইংল্যান্ডে না রাখলে দেড় বছর পর কাজগুলো খুব একটা সহজ হবেনা আমাদের জন্য।

                                                                            904788880

সৌম্য, তাসকিন, লিটনরা ছিটকে গিয়েছেন দল থেকে, গত দুই- তিন বছরে দলের পরিচিত মুখদের বিদায়ে দলের গেমপ্ল্যানটাও বদলে যাচ্ছে। পরিকল্পনাটা বদলে যাওয়ার সবচেয়ে বড় কারন- হাথুরুর প্রস্থান! ব্যাটিং অর্ডারে আসছে বড় পরিবর্তন, প্রথম ম্যাচে তামিমের সাথে ওপেন করছেন বিজয়, এটা নিশ্চিত। সবচেয়ে বড় চমক, সাকিবের তিনে ওঠে আসা। পাওয়ারপ্লেটাকে ঠিকমত কাজে না লাগাতে পারাটা সবসময়ই আমাদের অন্যতম উইক পয়েন্ট, সেই দূর্বলটাকে কাটাতে সাকিবের ইতিবাচক ক্রিকেট সবচেয়ে বড় নিয়ামক হতে পারে। বাউন্ডারি খুঁজে নেয়ার থেকেও সাকিবের সবচেয়ে বড় শক্তি প্রচুর সিঙ্গেলস নেয়াটা, ওয়ানডাউনে তাই সবচেয়ে বড় ভরসা সুপারম্যানই!

চারে মুশফিক, সাউথ আফ্রিকার সাথে সেঞ্চুরির পর ব্যাটিংয়ে সবচেয়ে বড় ভরসা লিটল মাস্টারই। পাঁচে উঠে আসছেন মাহমুদুল্লাহ, মিডল ওভার্সে স্ট্রাইক রোটেট করে খেলার প্রত্যাশাই থাকবে। ছয়ে সাব্বির, সাতে নাসির- শেষ দশ ওভারের স্লগিংয়ের দায়িত্বটা এই দুইজনকেই নিতে হবে।

স্পিন অ্যাটাকে সাকিবের সঙ্গী হচ্ছেন সানজামুল, সাথে নাসিরের অফস্পিনটা দিনের আলোয় যথেষ্ট কার্যকর হতে পারে। পেস অ্যাটাকে মাশরাফীর সাথে মুস্তাফিজ নিশ্চিত, ফিট থাকলে থাকছেন রুবেলও। চেনা মাঠে সেই চেনা মুস্তাফিজকে ফিরে পাওয়াটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন, জিম্বাবুয়ের সাথে শেষ ওয়ানডেতেই পেয়েছিলেন পাঁচ উইকেট, যেটা কিনা দেশের মাটিতেও ফিজের শেষ ওয়ানডে।

জিম্বাবুয়ে দলে ডানহাতি ব্যাটসম্যানের আধিক্য বাড়তি সুবিধা হতে পারে সাকিব, মুস্তাফিজ আর সানজামুলের জন্য। প্রথাগতভাবেই স্পিনে দূর্বল জিম্বাবুয়েকে স্পিনেই ঘায়েল করতে চাইবে বাংলাদেশ, কিন্তু বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে বিকালের পর থেকেই ক্রমাগত শিশিরপাত। প্রচন্ড শীত আর কুয়াশা বিকালের পর বোলিং আর ফিল্ডিংয়ে যথেষ্ট সমস্যা সৃষ্টি করবে, তাই টসটা বড় একটা ফ্যাক্টর। টসে জিতলে বোলিং নেয়াটাই শ্রেয়তর, কিন্তু বড় রান তাড়া করাটাও খুব একটা নিরাপদ না। ক্রমাগত শিশিরপাত উইকেটকে পিচ্ছিল করে দিবে, যেটা ব্যাটসম্যানদের জন্য খুব একটা সুখকর নয়। দ্বায়িত্বটা দিতে হবে পেসারদের, এই কন্ডিশনে স্পিনারদের থেকে তাঁদের কাজটা অপেক্ষাকৃত সহজ।

বছরের প্রথম বিজয় উৎসবের অপেক্ষায় শেরেবাংলা!

একাদশঃ

বাংলাদেশঃ তামিম,বিজয়,সাকিব,মুশফিক, মাহমুদুল্লাহ,সাব্বির,নাসির,মাশরাফী, সানজামুল, রুবেল, মুস্তাফিজ

জিম্বাবুয়ে (সম্ভাব্য)ঃ মাসাকাদজা, মিরে, এরভিন, টেইলর, ওয়ালার, রাজা, মুর, ক্রেমার, জারভিস, মফু, চাতারা