সুপারসাকিবে অপ্রতিরোধ্য বাংলাদেশ
পোস্টটি ৫৩১১ বার পঠিত হয়েছেএমন অপ্রতিরোধ্য বাংলাদেশকে শেষ কবে দেখেছিলাম আমরা? গত কয়েক মাসের বিভীষিকা শেষে একটা জয় খুবই দরকার ছিল, আর সেটা আসল ২০১৮ সালের প্রথম ম্যাচেই, জিম্বাবুয়েকে খড়কুটোর মত উড়িয়ে দিয়ে। সহজ একটা জয়ই প্রত্যাশিত ছিল, কিন্তু এতটা সহজে আসবে সেটা বোধহয় কেউ ভাবেনি। নতুন বছরের শুরুটা তাই শুভই হল বাংলাদেশের জন্য, বাঘের ডেরায় বাঘকে মোকাবেলা করা কতটা কষ্টসাধ্য সেটা ভালভাবেই টের পেল জিম্বাবুয়ে!
টস থেকে শুরু করে ম্যাচের ফল, প্রত্যেকটিই আজকে বাংলাদেশের পক্ষে! এমন দিনে বাঘকে রুখে দেয়ার সাধ্য কার! পুরো দল হিসেবেই ক্লিনিক্যাল ক্রিকেট খেলেছে বাংলাদেশ, টিমের গেমপ্ল্যান প্রপারলি এক্সিকিউট করার ফলটাই হাতেনাতে পাওয়া গেল। সাকিব ছিলেন দূর্দান্ত, স্পট বোলিংয়ে মুগ্ধ করেছেন মুস্তাফিজ। নিজেদের ব্যাটিংয়ে পুরোটাই তামিম ইকবালের গল্প, তামিম যেন দিনকে দিন আরো বেশি শাণিত, আরো বেশি পরিণত।
জয়োৎসবের শুরুটা যথারীতি সাকিবকে দিয়ে। বাংলার ক্রিকেটের পোস্টারবয় আরেকবার আবির্ভূত হলেন সুপারম্যানের ভূমিকায়! যা করে চলছেন সাকিব, সেটা বোধহয় টিভির পর্দায় সুপারম্যানেই এতদিন দেখে এসেছি আমরা। ব্যাটিংয়ে নামলেন তিনে, বোলিংয়ের ওপেনটাও সাকিবের হাত ধরে। ম্যাচের একদম শুরুর ওভারে বল হাতে নিয়েই সাকিবের বাজিমাত, লেগস্ট্যাম্পের সামান্য বাইরে ওয়াইড দিতে ভারসাম্য হারাতে বাধ্য করলেন সলোমন মায়ারকে, উইকেটের পিছনেও মুশফিকের গ্লাভসওয়ার্ক ছিল দেখার মত। সেই ওভারেই আবারো সাকিবে কাটা পড়লেন আরভিন, মিড উইকেটে ক্যাচ প্র্যাকটিস সাব্বিরের! ফিল্ডিংয়েও দুরন্ত সাকিব, দারুন এক থ্রোতে রান আউট করে ফিরিয়েছেন জিম্বাবুয়ের একমাত্র ভরসা রাজাকে। ব্যাটিংয়ে অবশ্য চাপ ছিলনা, যখন নেমেছেন তখন জয়টা কেবল সময়ের ব্যাপার। তারপরেও ক্রিকেট বড্ড অনিশ্চিত, মোমেন্টামটা হারিয়ে ফেললে হয়ত বিপদেই পড়তে হত বাংলাদেশকে। সাকিব তা হতে দেননি, রাজার বলে এল্বিডব্লিউ হওয়ার আগে ৪৬ বলে করেছেন ৩৭, তামিমের সাথে ৭৮ রানের জুটি গড়ে জয়টা নিশ্চিত করেই তবে ফিরেছেন। দারুন সব কাট আর ড্রাইভে অফসাইডে হাঁকিয়েছেন পাঁচটি চার, অমন পারফরম্যান্সের পর ম্যাচসেরা তাই সাকিবই।
অমন দুরন্ত এক শুরুই যথেষ্ট ছিল ম্যাচের পুরো নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশের হাতে তুলে দেয়ার জন্য। মাসাকাদজা চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু মাশরাফির অফস্টাম্পের বাইরের সামান্য আউটসুইং করা এক ডেলিভারিতে পর্যদুস্ত তিনিও। মাশরাফি ছিলেন বরাবরের মতই অসাধারণ, উইকেট মাত্র একটি পেলেও স্পট বোলিংয়ে আটকে রেখেছেন প্রতিপক্ষকে, নয় ওভার বল করেও ইকোনমিটা মাত্র ২.৭৭।
ম্যাচের সবচেয়ে রোমাঞ্চকর দিক মুস্তাফিজের বোলিং। অনেকদিন পর যেন সেই আগের মুস্তাফিজকে দেখা গেল, চেনা মিরপুরে নিজেকে চেনা রূপেই তুলে ধরলেন মুস্তাফিজ। পুরো দশ ওভার বল করে রান দিয়েছেন ২৯, পেয়েছেন টেইলর আর মুজারাবানির উইকেট। ৬০ টি বলের মধ্যে ডট দিয়েছেন ৪১ টি, মাত্র দুটি বাউন্ডারি হজম করেছেন। এই পরিসংখ্যানও বোধহয় বোঝাতে পারছে না কতটা ভয়ংকর ছিলেন মুস্তাফিজ, কতটা দুর্বোধ্য হয়ে উঠেছিলেন জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যানদের জন্য। ওভার দ্যা উইকেটে কাটারগুলো একেকটি কাঁটা হয়ে বিঁধছিল জিম্বাবুইয়ানদের জন্য, এই মুস্তাফিজকেইতো কতকাল ধরে খুজছিল বাংলাদেশ। ওভার দ্যা উইকেটে এসে স্ট্যাম্পে পিচ করে বেশিরভাগ ডেলিভারিই করেছেন কাটার, অনেকগুলো বল লেগস্ট্যাম্পে পিচ করে বেরিয়ে গিয়েছে অফস্ট্যাম্পের বাইরে দিয়ে। এমন একটা বলেই কট বিহাইন্ড করেছেন টেইলরকে, রাউন্ড দ্যা উইকেটে এসে কাঁটারে তুলে নিয়েছেন মুজারাবানিকে। একটা সময় বল করেছেন তিন স্লিপ আর দুই গালি নিয়ে, এটাতেই স্পস্ট কতটা আধিপত্য বিস্তার করেছেন মুস্তা!
সানজামুল আর রুবেলও উইকেট পেয়েছেন, বোলিংটাও ছিল সারুন। পরপর দুই বলে দুই ইয়র্কার করে রুবেল ভেঙ্গে দিয়েছেন চাতারা আর মুরের উইকেট। সানজামুল পুরো দশ ওভারই নিয়ন্ত্রিত বল করে গিয়েছেন, পুরস্কার ওয়ালারের উইকেট। পুরো বোলিং ইউনিট দারুন বল করেছে, শুরুতেই এরকম মোমেন্টামটা দরকার ছিল। কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন, বাকি ম্যাচগুলোতেও ধারাবাহিকতাটা বজায় রাখা।
বোলাররা এরকম পারফর্ম করলে স্বাভাবিকভাবেই ব্যাটসম্যানদের কাজটা অনেক বেশি সহজ হয়ে যায়। তামিম- বিজয়ের দারুন শুরুতে যেটুকু চাপ ছিল সেটাও একদম উবে গেল। অনেকদিন পর ফিরে বিজয়ের উপর চাপ ছিল রান করার, বড় ইনিংস খেলতে না পারলেও সক্ষমতাটা বুঝিয়ে দিয়েছেন ১৪ বলের ইনিংসেই। আগের থেকে অনেক বেশি আগ্রাসী, আরো বেশি পরিণত বিজয়! প্রথম বলেই চোখ জুড়ানো এক স্ট্রেইট ড্রাইভে চার মেরেছেন, তারপর ফ্লিক, স্কয়ার কাট আর স্লগ সুইপে মারা চারগুলো বিজয়ের পক্ষেই কথা বলবে। হয়ত আজকে বড় ইনিংস খেলতে পারেননি, কিন্তু সময়তো শেষ হয়ে যায়নি!
বোলিংয়ে যদি নায়ক সাকিব, তবে ব্যাটিংয়ে সেটা তামিম ইকবাল। শুরুটা করেছেন স্থির, শান্তভাবে। কিন্তু তারপরেই চওড়া তামিমের ব্যাট। আম্পায়ারের ভুলে একবার আউট হলেও রিভিউ নিয়ে রক্ষা পেয়েছেন, ৯৩ বলে ৮৪ রানের ইনিংসটা সাজানো ৮ চার আর এক ছয়ে! অমন এক ইনিংস খেলে অপরাজিত থেকেই দলকে নিয়ে গিয়েছেন জয়ের বন্দরে!
শুভসূচনা, প্রত্যাশিতভাবেই! বাকি ম্যাচগুলোতেই রঙিন হোক উৎসবের রঙ!!!
- 0 মন্তব্য