বাংলার করুণ দশা
পোস্টটি ৩৫২১ বার পঠিত হয়েছেযতদিন আমাদের ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটকে গুরুত্ব না দেয়া হবে, ততদিন এই দেশের ক্রিকেট এভাবেই মুখ থুরড়ে পরবে। বিসিবির কাছে এই টেস্টের কাছে প্রিমিয়ার লীগের গুরুত্ব বেশি, তাই বোর্ডের দল আবাহনীর হয়ে খেলতে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে সানজামুল আর মোসাদ্দেককে, যারা রাজ্জাক আর সাব্বিরের থেকে সবদিক থেকেই বেটার ক্রিকেটার। রাজ্জাককে নিয়ে শুরুতে উচ্ছ্বসিত ছিলাম, কিন্তু ওভালওল তাঁর অবস্থা খুবই ভয়ানক!
মিরপুরের উইকেট নিয়ে আপত্তি করছিনা। চট্টগ্রামের মত হাইওয়ে রোড বানিয়ে বিরক্তিকর ক্রিকেটের থেকে এখানে দুই দিনে হেরে যাওয়া ভালো। ড্রয়ের জন্য না গিয়ে দল যে জেতার চিন্তা করেছে সেটা ইতিবাচক। জেতার জন্য এই পিচ বানানো ছাড়া অন্যকোন অপশন দেখছিনা। মিরপুরের উইকেট চাইলেই ফাস্ট বাউন্সি করে তোলা সম্ভব না, আর সেটা করলে আমাদের হেরে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। ওদের দলে লাকমল, লাহিরু কুমারারা ছিল, আমাদের ব্যাটসম্যানেরা স্পিনের থেকে পেসেই বেশি দূর্বল। অপশন থাকল স্পোর্টিং পিচ, কিন্তু আমাদের যেই বোলিং লাইন আপ, তাঁদের পক্ষে ক্র্যাকসে ভরা উইকেট ছাড়া বিশ উইকেট নেয়া পসিবল না। শুধুমাত্র এই ধরনের পিচেই বাংলাদেশের জেতার সম্ভাবনা বেশি, শ্রীলঙ্কার স্পিন আক্রমণ আমাদের থেকে ভাল, তবুও। টসে জিতলে ম্যাচের চিত্র ভিন্ন হলেও হতে পারত, যেটা অস্ট্রেলিয়া ইংল্যান্ডের সাথে হয়েছিল। প্রতিপক্ষের স্ট্রেংথ নিয়ে পড়ে থাকার চেয়ে নিজের স্ট্রেংথ অনুযায়ী পরিকল্পনা করেছে ম্যানেজমেন্ট, পিচ নিয়ে অন্তত আপত্তির কিছু দেখিনা।
কিন্তু এই ম্যাচে আমাদের অ্যাপ্রোচ খুবই বিরক্তিকর ছিল! এই পিচে বোলিং করলেই উইকেট আসবে, কিন্তু ওভারে দুই তিনটা বাউন্ডারি খেয়ে যদি উইকেট নেন তাহলে সেটা খুবই কস্টলি। শ্রীলঙ্কার প্রথম ইনিংসে প্রচুর শর্ট- ওয়াইড বল দিয়েছে মিরাজ আর রাজ্জাক, যেইটা আল্টিমেটলি ম্যাচে পার্থক্য গড়ে দিয়েছে। উইকেট নিলেও রান আটকানো যায়নি, রাজ্জাককে আপাতত টেস্টের জন্য ফিট মনে করছিনা। তাঁর মত বোলারের কাছ থেকে এই উইকেটে প্রত্যাশাটা আরো বেশি ছিল, কিন্তু তিনি বেশিরভাগ বলই ঠিক লাইনেই ফেলতে পারেননি। প্রচুর শর্ট বল করেছেন, আর লেগের উপর বল দেয়ার যেই চিরায়ত অভ্যাস সেটা এখনো যায়নি। ফিটনেসের অবস্থাতো হরিবল, এই ফিটনেস নিয়ে টিকে থাকা সম্ভব না। শুধু এইরকম উইকেট বলেই তিনি পাঁচটা উইকেট পেয়েছেন, কিন্তু লাইন লেংথের যেই অবস্থা তাতে খুব একটা আশাবাদী হচ্ছিনা এখনই। তবে ফিটনেসের উন্নতি খুবই জরুরী, এইটা ঠিক করতে পারলে তাঁর মাপের বোলারের দলে জায়গা কখনোই হারিয়ে যেত না।
সাকিবের অভাবটা প্রচন্ডভাবে অনুভুত হয়েছে এই টেস্টে, এই উইকেটে এক সাকিবই পার্থক্য গড়ে দিতে সক্ষম। দারুন লাইন লেংথে বোলিং আর পরিণত ব্যাটিং, ঢাকায় সাকিবকে বড্ড দরকার ছিল বাংলাদেশের। আগে ব্যাটিং করতে পারলে আর সাকিব থাকলে এই ম্যাচে বাংলাদেশকে আটকানো সম্ভব হতনা শ্রীলঙ্কার।
তবে বাকি সিনিয়রদের দায়িত্বজ্ঞানহীনতা ভাবাতে বাধ্য। তামিম দরকারের সময় খুব কম সময়ই রান করতে পেরেছেন, ত্রিদেশীয় সিরিজের ৩ ম্যাচে রান পেয়েছিলেন তাঁর বড় কারন বোধহয় আরেকপাশ থেকে সাকিবের নির্ভরতা। ঠিক আগের টেস্টেই পেরেরার এইরকম ভেতরে ঢোকা একটা বলে আউট হয়েছিলেন, সেবার বোল্ড আর আজকে এলবিডব্লিউ, অতীত থেকে কি একটু শিক্ষা নিতে পারতেন না দলের বড্ড প্রয়োজনের সময়ে! মুশফিকের আর কবে পরিণত হবেন সেটা তিনিই ভালো বোঝেন! এইরকম ভাঙ্গা উইকেটে স্টেপ আউট করে বেরিয়ে আসার সাথে যে মাথাটাও খাটানো লাগে সেটা বোধহয় ভুলে গিয়েছিলেন। টার্নে পরাস্ত, বডিলাইন থেকে অনেক দুরের বল, এই উইকেটে হেরাথের টসড আপ বল ডাউন দ্যা উইকেটে খেলার আগে বলের পিচিংটা বিচার বিবেচনা করে নেওয়াই উত্তম ছিল, সেরা ব্যাটসম্যানের কাছ থেকে এমন ভুল মেনে নেওয়া যায়না। মাহমুদুল্লাহকে কেমন জানি অস্থির মনে হচ্ছিল, আকিলার বিরুদ্ধে নড়বড়ে মাহমুদুল্লাহ এবার আউট হলেন উইকেট থেকে বেরিয়ে বলে খোঁচা দিয়ে!
সবচেয়ে বড় হতাশার জায়গাটা সাব্বির! মোসাদ্দেককে বাদ দিয়ে তাঁকে নেওয়াটাই বিতর্কিত, তিনি যে টেস্টের জন্য কোনভাবেই যোগ্য নন সেটা হাতে কলমে বুঝিয়ে দিয়ে গিয়েছেন। স্লিপে বেশকয়েকটা ক্যাচ ফেলেছেন, দুই ইনিংস মিলিয়ে তাঁর ব্যাটিং গড় আধা। সাব্বিরের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ, ঠিকমত প্র্যাকটিসে না আসা, কোচদের কথাকে গুরুত্ব না দেয়া ইত্যাদি! সাব্বির কি তবে হারিয়েই যাবেন!!! এখানে নির্বাচকদের যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠবে, তাঁকে টেস্ট দলে নেয়ার পেছনে প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন বলেছিলেন টিটোয়েন্টির জন্য প্রস্তুত করে তুলতে সাব্বিরকে টেস্ট দলে নেয়া হয়েছে। এরকম দায়িত্বশীল একজন যখন এইরকম নির্বোধের মত কথা বলেন, তখন প্রশ্ন তোলাই যায় কাদের হাতে বাংলাদেশের ক্রিকেট, পাপন- সুজন কিংবা নান্নু যারা জাতীয় স্বার্থের থেকে নিজের স্বার্থকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন তাঁদের হাতে কি নিরাপদ আমাদের ক্রিকেট?
দক্ষিন আফ্রিকার ভূত এখনো তাড়া করছে, এখনো ঘরের মাটিতে এভাবে ধুঁকতে হচ্ছে আমাদের, এভাবে চললে ঘরের মাঠে সত্যিকারের বাঘ তকমাটা মুছে যেতে বেশিদিন লাগবেনা। এখনই সময় সতর্ক হওয়ার, খুব সম্ভবত শেষ সময়!!
- 0 মন্তব্য