• ক্রিকেট

প্রতিবাদহীনতায় চারদিক স্তব্ধ!

পোস্টটি ৫০৪১ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

ঘুম ঘুম রাত যায়, ঘুম ঘুম দিন

ঘুম ঘুম দিন যায়, ঘুম ঘুম রাত।

আকাশের তারাগুলো জ্বলে জ্বলে নিভে যায়

সকালের সোনা রোদ ঢেকে যায় কুয়াশায়

সব মুখ চুপচাপ কোথাও নেই শব্দ

প্রতিবাদহীনতায় চারদিক স্তব্ধ!

 

-মাহমুদুজ্জামান বাবু

 

*****

 

সমাজটা কেমন যেন পঁচে গেছে আজকাল। দূষণে-গলনে উৎকট দুর্গন্ধ বেরুচ্ছে বুঝি! দূষিত সমাজটার বিকট-বীভৎস ঘ্রাণে টেকা দায়! তবুও বেঁচে আছি আমরা, সামাজিক হয়ে। সব নীরবে সয়ে। চুপচাপ, বাকহীন নীরব শ্রোতা আর দর্শক আমরা, যেনো-বা ক্লীব কিংবা কোনো জড় পদার্থ বুঝি!

নষ্ট সমাজের নোংরামি তাড়ানোর দায় পুরোপুরি হয়তো আমাদের নয়, সে দায় অনেকাংশেই বর্তায় হয়তো সমাজ সংস্কারদের উপর, কিংবা সমাজপতি বা সমাজের মোড়ল বা মাথাদের উপর।

কিন্তু এই সমাজের ক্রিকেট-অংশে যে পঁচন ধরেছে তা নিয়ে কথা বলার খানিক দায় আমাদের থেকেই যায়। সে দায় মেটাতেই এই লেখা। দায়মুক্তির জন্যেই অসাড় জেনেও খানিকক্ষণ বকবক করা। আপনার বিরক্তির উদ্রেক ঘটবে মেনে এবং বিপজ্জনক বুঝেও ভীষণ অপছন্দের এই কাজে হাত দেয়া।

ক্রিকেট দর্শক হিসেবে, ক্রিকেট সমর্থক হিসেবে, বাংলাদেশ ক্রিকেটের একজন গভীর অনুরাগী হিসেবে, এই ক’টা কথা না বললে বিবেকের যে দংশন, বোধের যে দহন, তা থেকে নিস্তার পাওয়ার আর উপায় কী?

 

*****

 

সমর্থক হিসেবে বেশ অদ্ভুতই বলা চলে আমাদের। ক্ষ্যাপাটে বা পাগলামিতে আমরা হয়তো একশো-তে একশোই পাবো। কিন্তু সত্যিকার ক্রিকেট সমর্থক হিসেবে আমাদের বিচার করলে, তাতে কতো পাবো বলা কঠিন আসলে! ক্রিকেটের জন্য, ক্রিকেটারের জন্য, আমাদের উন্মাদনা বা ক্ষ্যাপাটেপনা নজিরবিহীন হতে পারে, তবে তা দিয়ে আমাদের ‘ক্রিকেটের শুভাকাঙ্ক্ষী’ তকমা দেয়া যাবে না নিশ্চয়!

ভিরাট কোহলি কাজ করছেন ‘ভিরাট কোহলি ফাউন্ডেশন’ নিয়ে। ভারতে তিনি স্পোর্টস কালচার গড়ে তুলতে চান। “আমি চাই, যে মানুষগুলো টেস্ট ম্যাচ দেখতে আসবে তাঁরা যেনো ক্রিকেটটাকে সত্যিকার অর্থেই বুঝে-জেনে তারপর আসে। একজন যখন ডিফেন্স করবে তখন যেন কেউ ‘আরে কেনো সে চার মারছে না, ছয় মারছে না’ বলে না-চেঁচিয়ে ওকে বাহবা দেয় এই বলে যে, ‘দারুণ ডিফেন্স করলো কিন্তু ছেলেটা!’ লোকে যেনো বুঝে ছেলেটা দলকে বাঁচাতে খেলছে।” বলেছিলেন স্পোর্টস কালচার গড়ে তোলার স্বপ্নে-বিভোর ভিরাট কোহলি।

এই বোধটা আমাদের ক’জনের আছে? এই কালচারের অভাবটা কী নেই আমাদের? ক্রিকেট-সংস্কৃতির অভাবে উদ্ভট সব কর্মকান্ড কী হরহামেশা চোখে পড়ে না আমাদের?

নিশ্চয় পড়ে। আমার, আপনার, আমাদের সবারই চোখে পড়ে।

ব্যথায় কাতর, অজানা-ভবিষ্যৎ মাথায় নিয়ে বিদেশ বিঁভুইয়ে পাড়ি জমানো সাকিব আল হাসানের কমেন্ট বাকশো-টা কী-সব মন্তব্যে ভরে উঠে। স্বর্গ থেকে সদ্যই নেমে আসা তাসকিনের বাচ্চার ছবির নীচে কী-সব কথা আসে। আরো আগের নাসির-মুশফিকদের কথা না-হয় আপাতত তোলা থাক।

ক্রিকেট সংস্কৃতির অভাববোধ প্রতিনিয়তই আছে এখানে, কিন্তু ভিরাটের মতো করে ভাবার মানুষ মনে হয় কেউ নেই!

 

*****

 

আমাদের এখানে একজন ক্রিকেটারকে দলে নেয়ার জন্য, চাপ আসে নিম্ম থেকে উচ্চ মহল পর্যন্ত সবখান থেকে। কিন্তু একজন ক্রিকেটারকে বিশ্রাম দিতে কোনো চাপ দূরে থাক, টুঁ শব্দটি পর্যন্ত কেউ করে না। কেউ বলে না। উলটো কেউ যদি ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত হয়ে নিজ থেকে বিশ্রাম চেয়েই বসেন, তবে সমালোচনার সাগর বইয়ে দিতে এতটুকু অনাগ্রহ নেই আমাদের।

নান্নু, মাশরাফি, তামিমদের নিয়ে দলে-ফেরানো নিয়ে কত আলোচনার পাহাড় এই দেশের ক্রিকেটে, কিন্তু ইঞ্জুরি-জর্জর সাকিব-মাশরাফিদের বিশ্রাম দিতে, তাদের সুস্থ রাখতে কোনো আলোচনার শিশির-বিন্দু নেই এখানে। মিছিল-সমাবেশ-মানববন্ধন সে তো বহু দূরের কথা।

অদ্ভুত! ভীষণই অদ্ভুত, আমাদের এই ক্রিকেট-প্রেম! ক্রিকেটারদের প্রতি আমাদের উজার করা ভালোবাসাটাও কেমন যেন!

 

*****

 

একজন মানুষ দিনের পর দিন স্বেচ্ছাচার করেই যাচ্ছেন। তাঁর মতো করে যাকে-তাকে বলির পাঁঠা বানিয়েই যাচ্ছেন। ইচ্ছে মতো যা-তা বকেই যাচ্ছেন। আমরা চুপ। স্পিকটি নট।

কোনো নিয়মের বালাই নেই, সিস্টেমকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো চলছেই। যেমন-তেমন, যা খুশি তা, যেনো বাংলাদেশ ক্রিকেট দলটা কোনো ফ্র্যাঞ্জাইজি প্রতিষ্ঠান; আর তিনি সেই ফ্র্যাঞ্জাইজির মালিক।

সাকিব আল হাসান অপারেশন করাতে চাইলেন, কোচও সায় দিলেন, কিন্তু চাইলেন না তিনি। তিনি সাকিবকে এশিয়া কাপে চাইলেন। আমরাও ‘হৈ হৈ রৈ রৈ’ করে বলে উঠি- সমস্যা নেই। সাকিব খেলুক। অপারেশন পরে করবে।

আমাদের কাছে একজন ক্রিকেটারের সুস্থতার চেয়ে বড় হয়ে উঠল, ক্রিকেটীয় সাফল্য! আনফিট তাঁকে নিদাহাস ট্রফির মাঝপথে ডাকা হলো, আমরা চুপ। কেউ জোর গলায় প্রতিবাদ করিনি। কোনো মিছিল-সমাবেশ করে তাঁর যাওয়া আটকাতে যাইনি। কোনো মানববন্ধনের স্লোগান লিখিনি- ‘আমরা সাকিবের ব্যাটিং-বোলিং নয়, আগে তাঁর সুস্থতা চাই।’

আমরা সোনার ডিম পাড়া হাসটার পেট কেটে ফেলতে চাই। হাস মরলো কী বাঁচলো তা দেখতে বয়েই গেছে আমাদের। আমাদের ক্ষণিকের হাসিটাই মূখ্য। আমাদের সাময়িক সাফল্যটাই বুঝেছি আমরা শুধু।

 

*****

 

চিরদিনের জন্য আঙুল ভালো না-হওয়ার আশংকার খবর আমরা জেনেছি। তারপরও কোনো আওয়াজ তুলিনি। যথেচ্ছাচারের কোনো উত্তর খুঁজিনি। স্বেচ্ছাচারের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলিনি। কী দরকার? সাকিব যাবে, আরেকজন আসবে। আমরা সেই আরেকজনকে নিয়েই মেতে উঠবো না-হয়!

 

মাহমুদুজ্জামান বাবু’র সেই গানের দু’লাইন দিয়েই শেষ করছি আজকের এই অসাড় আলেখ্য।

 

ক্ষয়ে যাওয়া সমাজের ক্ষয়ে যাওয়া মুখ

দেখেও তবু কারো জ্বলে না বুক...

 

*সমাজ অংশে ‘ক্রিকেট’ শব্দটা ব্যবহার করলেই, একদম খাপে খাপ।