প্রিথবি শ; যার ব্যাটিংয়ে চোখ শান্তি পায়
পোস্টটি ২২৩৩ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না।
ব্লগের নীতিমালা
ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।
প্যাশনেট আর গ্রামাটিক্যাল ক্রিকেটার দেখলেই 'প্রেমে' পড়ে যাই। এ জীবনে অনেক ক্রিকেটারের প্রেমেই পড়েছি। স্পেসিফিকালি বলাটা টাফ। যাঁরা খেলে অবসর নিয়েছেন,তাঁরা যেমন আছেন পছন্দের তালিকায়। বর্তমানে যাঁরা খেলছেন তাঁরাও আছেন। আর নতুন যারা আসছেন,তাঁদের মধ্যে থেকেও বেশ কিছু খেলোয়াড় চলে এসেছে পছন্দের তালিকায়। নতুন যারা আসছেন, তাঁদের মধ্যে থেকে পছন্দের তালিকায় একদম প্রথমেই আছেন 'প্রিথবি শ'। প্রথমেই যেটাতে মুগ্ধ হয়েছি, সেটা হচ্ছে তার ব্যাটিং স্টাইল। এরপর তার ফুটওয়ার্ক, শট, স্টান্স সবকিছুতে মুগ্ধ হয়েছি।
তাকে প্রথম দেখা গত আইপিএলে। দিল্লীর হয়ে ওপেন করতে এসে চমৎকার কিছু শট আর ব্যাটিং স্কিল দেখিয়ে গেল। তখন থেকেই পছন্দ করি তাকে। অনেকদূর যাবে, সেই আশাও করি। ১৯৯৯ সালে জন্ম গ্রহন করেন প্রিথবি। ৪ বছর বয়সেই তার মা মারা যায়। এরপর থেকে বাবার প্রচেষ্টায় এবং নিজের ইচ্ছায় ক্রিকেটের প্রতি নিজেকে নিবেদন করা। সকাল সাড়ে চারটায় ঘুম থেকে তোলা, নাস্তা করানো, ব্যাগ গুছিয়ে বান্দ্রার এমআইজি মাঠে প্রাকটিসের জন্য নিয়ে যাওয়া এর সবই করতেন প্রিথবির বাবা পংকজ। প্রতিদিন প্রায় ৯০ মিনিট ছেলেকে নিয়ে ট্রেনে যাতায়াত করতেন পংকজ।
এভাবেই ক্রিকেট জীবন শুরু করে ভারতের মহারাষ্ট্র প্রদেশে জন্ম নেওয়া প্রিথবি। ডানহাতি ওপেনিং ব্যাটসম্যান প্রিথবি। বর্ন ট্যালেন্টই বলতে হবে প্রিথবিকে। মাত্র ১৪ বছর বয়সে স্কুল ক্রিকেটের সর্বোচ্চ রান করে রেকর্ড গড়েন প্রিথবি। ৩৩০ বলে, ৮৫ চার আর ৫ ছক্কায় তিনি রান করেন ৫৪৬। এই অকল্পনীয় স্কোর তিনি করেন শচীনের অবসরের পরপরই। এরপর থেকেই প্রিথবি সবার লাইমলাইটে আসেন। প্রিথবি শ তার ব্যাটিং দক্ষতা দেখিয়ে জয় করে নেন সবার মন আর নিজেকে নিয়ে যেতে থাকেন স্বপ্নের শেখড়ে। রঞ্জি ট্রফি আর দুলীপ ট্রফিতে নিজের ডেব্যু ম্যাচেই শতক হাঁকিয়ে বসেন এই ওপেনিং ব্যাটসম্যান। এ পর্যন্ত ১৩ টি প্রথম শ্রেণীর ম্যাচে ৬০.৭৮ গড়ে ১৩৯৮ রান করেছেন প্রিথবি। ১৮৮ রানের সর্বোচ্চ ইনিংস,সাথে ৭ টি শতক এবং ৫ টি হাফ সেঞ্চুরি রয়েছে ১৮ বছর বয়সী এই ব্যাটসম্যানের। এছাড়াও ২০১২ সালে ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টারে খেলার আমন্ত্রণ পান প্রিথবি। ২ মাস সেখানে থাকেন তিনি আর এই দুইমাসে খেলা ম্যাচগুলো থেকে তিনি সংগ্রহ করেন মোট ১৪৪৬ রান।
আইসিসিসহ বেশ কিছু মাধ্যম ইতিমধ্যেই তাকে 'নেক্সট শচীন' আখ্যায়িত করে বিভিন্ন ফিচার বের করছে। প্রিথবির নিজের আইডলও শচীন। দেশের হয়ে বিশ্বকাপ জেতার স্বপ্নও ইতিমধ্যে মনে গেঁথে ফেলেছেন। এই বয়সেই তার ম্যাচিউরিটিও মুগ্ধ করার মত। ভারতের মহারাষ্ট্র প্রদেশের প্রিথবি হয়তো জন্ম গ্রহণ করেননি সোনার চামচ মুখে নিয়ে, কিন্ত নিজেকে ঠিকই চিনেছিলেন তিনি। এই বয়সেই তাকে সহ্য করতে হচ্ছে আকাশসম চাপ। এরপরেও তিনি নিজের কাজ করে যাচ্ছেন ঠিকঠাকভাবেই।
একজন জাত ক্রিকেটারের প্রথম ধ্যানজ্ঞানই হওয়া চাই ক্রিকেট। নিজের পারফরমেন্স বাড়ার সাথে সাথে, বাড়বে চারপাশের বিভিন্ন চাপ কিন্তু সেগুলো ম্যানেজ করে নিজের খেলা, নিজের কাজটা বুঝতে পারাটাই জাত ক্রিকেটারের বৈশিষ্ট্য। যেটা ইন্ডিয়ান ক্রিকেট কালচারে বহু আগে থেকেই হয়ে আসছে। কেউ হয়তো এডুকেটেড না,কেউ হয়তো জন্মেছে দূরের কোন প্রদেশে, কেউ হয়তো ওয়েল-নোন ফ্যামিলি থেকে আসেনি। কিন্ত যখন তাঁরা ক্রিকেট খেলতে এসেছে, তখন ক্রিকেটটাই খেলেছে, স্টার তকমা-মিডিয়া কাভারেজ হাই হয়ে যাবার পরেও পরিশ্রম, পারফরমেন্স সবই করেছে। ইন্ডিয়ান ক্রিকেট বহু স্টার ক্রিকেটারের জন্ম দিয়েছেন,তারা খেলেছেন, খেলবেন কিন্ত কখনো ক্রিকেটের সাথে বাহিরের কোনকিছু নিয়ে তাঁদের কম্প্রোমাইজ করতে দেখিনি। আর এজন্যই তারা একেকটা পিওর 'ক্রিকেটার' পাচ্ছে। প্রিথবিও আগাচ্ছে ঠিক সেদিকেই।
- 0 মন্তব্য