সিডনি বার্নস; ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ বোলার!
পোস্টটি ৩২২৮ বার পঠিত হয়েছেসিডনি ফ্রান্সিস বার্নস। ইংরেজীতে Sydney Barnes!
১৯ এপ্রিল, ১৮৭৩ সালে ইংল্যান্ডে জন্ম নেওয়া সিডনি বার্নসের ডাক নাম ছিল বার্নি।বাবা রিচার্ডের পাঁচ সন্তানের মধ্যে সিডনি ছিলেন দ্বিতীয়। বাবার ক্রিকেট খেলার অভ্যাস ছিলনা। ভাইদের মধ্যে সিডনিই ব্যাট কিংবা বল নিয়ে নাড়াচাড়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। ক্রিকেটে বাইরে সিডনি কেরানির চাকুরীও করতেন।ক্রিকেট সাথে কেরানির চাকুরী। সবকিছু মিলিয়ে ক্রিকেটটাকেই বেশি প্রাধান্য দিয়েছিলেন তিনি।
সিডনি বার্নস কি একজন সিমার?
সিডনি বার্নস কি একজন স্পিনার?
এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দেওয়া খুবই কঠিন। তবে সিডনি নিজে নিজেকে স্পিনার হিসেবে দাবি করতে পছন্দ করতেন।বিখ্যাত ক্রিকেট লেখক নেভিল কার্ডাস সিডনির সাপের মতো ফণা তোলা ডেলিভারিগুলোর নাম দিয়েছিলেন ‘বার্নস-বল’।
সিডনি বার্নসের প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে শুরুটা হয়েছিল ১৮৮৮ সালে,স্মেথউইক ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে।ডানহাতি অফ স্পিনার হিসেবে শুরু করলেও,লেগ স্পিনের হাতটাও বেশ দারুণ ছিল বার্নসের। ১৮৯৪ সালে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক,ওয়ারউইকশায়ারের হয়ে। ততদিনে সিডনি বার্নস ফাস্ট বোলারের তকমা পেয়ে গেছেন। ওয়ারউইকশায়ারের অপেশাদারি আচরণে মাত্র তিন ম্যাচ খেলেই কাউন্টি চুক্তি বাতিল করেছিলেন তিনি।
১৮৯৫ সালে ল্যাঙ্কাশায়ার লীগের রিশটনে যোগ দেন সিডনি বার্নস। ১৮৯৯ সাল পর্যন্ত সেখানেই কাটিয়েছেন তিনি। রিশটন টিমের হয়ে ৩৮ ম্যাচে ৪১১ উইকেট লাভ করে নেন। এভাবেই আস্তে আস্তে একদিন বার্নসের টেস্ট অভিষেক হয়ে যায়।সালটা ছিল ১৯০১। বিপক্ষ ছিল অস্ট্রেলিয়া। বেশ নাটকীয়তার মধ্যেই দলে ডাক পেয়ে যান সিডনি বার্নস। সিডনি বার্নস তার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ারে মোট ২৭ টি ম্যাচ খেলেছেন। উইকেট পেয়েছেন ১৮৯ টি। বোলিং গড় ১৬.৪৩। ইনিংসে পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২৪ বার। ম্যাচে দশ উইকেট পেয়েছেন ৭ বার। ১০৩ রান দিয়ে ৯ উইকেট প্রাপ্তি,তার সেরা বোলিং ফিগার।
সিডনি বার্নস তাঁর ক্যারিয়ারের শেষ সিরিজটি খেলেছিলেন ১৯১৪ সালের মার্চে, স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। ৪ টেস্টে ৩ বার ১০ উইকেটসহ মাত্র ১০.৯৩ গড়ে বার্নস একাই নিয়েছিলেন ৪৯ উইকেট! টেস্টে এক সিরিজে সর্বাধিক উইকেট প্রাপ্তির রেকর্ড এটিই; যে রেকর্ড আজ পর্যন্ত ভাঙ্গা সম্ভব হয় নি। ঐ সিরিজে বার্নস মোট ৮ ইনিংসে বল করে, ৭ বারই পেয়েছিলেন ৫ বা তার বেশি উইকেট। বার্নসের ক্যারিয়ার সেরা বোলিং পারফরম্যান্সটা এসেছিল জোহানেসবার্গে, সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে। ১৫৯ রান খরচায় নিয়েছিলেন ১৭ উইকেট! টেস্ট ইতিহাসের সেরা ম্যাচ ফিগারের তালিকায় যার অবস্থান দ্বিতীয়।
সিডনি বার্নসকে কেন ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ বোলার বলা হয়?
সিডনি বার্নস ছিলেন একজন পরিপূর্ণ বোলার। বোলিংয়ের বেসিক স্কিল যতগুলো আছে অর্থাৎ সুইং, সিম এবং স্পিন—একাধারে তিনটিতেই পারদর্শী ছিলেন তিনি! তিনি ফাস্ট বোলিংয়ের সুইং ভ্যারিয়েশনে যেমন পারদর্শী ছিলেন। তেমনি ছিল তার স্পিনের মুগ্ধ করার মতো হাত। ইনসুইং, আউটসুইং সাথে লেট সুইং।যেরকম ইচ্ছে তিনি বলের সুবিধা আদায় করে নিতে পারতেন। সিম এবং স্পিন, এই দুই মিলিয়ে তার বোলিং লেভেলটা ছিল ভীষণ রকম রহস্যময়। যার ফলে প্রচুর পরিমাণে উইকেট শিকার করতে পারতেন। একটা কথা তিনি বারবার বলতেন, তার সাফল্যের রহস্য আসলে স্পিন।
উইজডেন বলছে,“Barnes was creative, one of the first bowlers really to use the seam of a new ball and combine swing so subtly with spin that few batsmen could distinguish one from the other.”
বস্তুতই সিডনি বার্নস ছিলেন সেসময়ের একজন অসাধারণ ক্রিকেটার,অসাধারণ বোলার। তিনি ঐ সময়ে যা করেছেন, সেগুলো আজ অতুলনীয় হয়ে আছে। আজ তাকে বেশি সংখ্যাক মানুষ শ্রেষ্ঠ বোলারের কাতারে ফেলেন। ইতিহাসের সেরা বোলার নিয়ে আলাপচারিতায় সিডনি বার্নস চলে আসেন দ্বিধাহীনভাবে। সে যুগের স্বল্প আয়োজনে সিডনি বার্নসরা যা করে গেছেন।সেটা নিয়েই আজ আমরা আলোচনা করে যাই। ভাবতেও অবাক লাগে। বার্নসদের স্যালুট।
- 0 মন্তব্য