• ক্রিকেট

যারা থাকতে পারতেন বিশ্বকাপের স্কোয়াডে!

পোস্টটি ৫৭৩০ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

ক্রিকেট বা ফুটবলের মতো স্পোর্টসে সবচেয়ে বড় আসরটি হয় বিশ্বকাপ। যেটি চার বছর পর পর ফিরে আসে। একটি দলের প্রতিটি সদস্যরই ইচ্ছে থাকে বিশ্বকাপের মত মঞ্চে নিজেদের মেলে ধরতে। কারো স্বপ্ন পূরণ হয়, কারো স্বপ্ন অধরাই থেকে যায়। শেষ পর্যন্ত দলে ডাক পাওয়া হয়ে ওঠে না অনেকেরই। ক্যামেরার সামনেই তখন কারো কারো আবেগ প্রকাশ পেয়ে ওঠে। নিজেকে ধরে রাখা দায় হয়ে যায়। দর্শক, বোর্ড, পরিবার সবাই হয়তো সান্ত্বনার বাণীটুকুই দিতে পারে কিন্ত একজন স্পোর্টসম্যানের দল থেকে ছিটকে যাওয়ার কষ্টটা সে নিজেই সবচেয়ে ভাল বুঝতে পারে। সবচেয়ে বেশি কষ্ট লাগে তখনই,যখন খুবই আশাবাদী থাকার পরও একজন দলে টিকতে পারেনা।

২০১৯ বিশ্বকাপের জন্য প্রায় প্রতিটি দল তাদের স্কোয়াড ঘোষণা করেছে। যারা নিজ নিজ দলে থাকতে পেরেছেন তারা অবশ্যই অনেক খুশি এবং নিজেকে প্রমাণ করতে উদ্গ্রীব। আবার এরকমই কয়েকজন ক্রিকেটার, যারা নিজেদের দল থেকে ছিটকে পড়েছেন কিন্ত ভাগ্যবিধাতা চাইলেও তারা দলে থাকতে পারতেন। সাধারণ দর্শকরা সম্ভবত প্রশ্নটিও তুলতো না তাতে। ভাবতো, হ্যা ও তো দলে থাকার মতোই পারফর্মার। কিন্ত দূর্ভাগ্যই তাদের,যে তারা শেষ পর্যন্ত দলে টিকতে পারেননি।সেই কয়েকজন কারা এবং তারা কি আসলেই স্কোয়াডে থাকার মত যোগ্য ছিলেননাঃ

 

257949

পিটার হ্যান্ডসকম্ব- ২৭ বছর বয়সী এই অস্ট্রেলিয়ান এ পর্যন্ত ১৬ টি টেস্ট ও ২১ টি ওয়ানডে খেলেছেন।২০১৬ সালে হ্যান্ডসকম্বের টেস্ট ডেব্যু হয়। এবং এর পরের বছরই ২০১৭ সালে তার ওডিআই ডেব্যু হয়ে যায়। ২০১৯ বিশ্বকাপই হতে পারতো তার একটা স্বপ্ন পূরণের জায়গা। দেশের হয়ে প্রথম বিশ্বকাপ খেলার ইচ্ছাটা অবশ্যই ছিল হ্যান্ডসকম্বের। কিন্ত ভাগ্যবিধাতও চায়নি। তার স্বপ্নটিও অধরাই থেকে যায়।হ্যান্ডসকম্বের পারফর্মেন্স দ্বারা তাকে বিচার করলেও সে সুযোগটা পেতেই পারতো। অস্ট্রেলিয়ার লাস্ট সিরিজ অর্থাৎ পাকিস্তানের সাথে হওয়া সিরিজে হ্যান্ডসকম্বের বলার মতো ইনিংস নেই সত্যি। শুধু একটি ৪৭ আর একটি অপরাজিত ৩০ ছাড়া। কিন্ত তার আগের সিরিজ অর্থাৎ ইন্ডিয়ার সাথে হওয়া সিরিজে তার ১১৭ রানের একটি ইনিংস ছিল। ছিল ৫২ ও ৪৮ রানেরও দুটি ইনিংস। ২০১৯ সালে খেলা মোট ১৩ ওডিআইতে হ্যান্ডসকম্ব প্রায় ৪৪ এভারেজে ব্যাটিং করে ৪৭৯ রান সংগ্রহ করেছিল। এ সময়ের মধ্যেই সে তার ক্যারিয়ার বেস্ট ১১৭ রান করে। এই ধরনের পারফর্ম করবার পর হ্যান্ডসকম্ব বিশ্বকাপের দলে থাকার দাবি বা আশা করতেই পারেন। কিন্ত শেষ পর্যন্ত যে কারণেই হোক নির্বাচকরা তাকে দলে রাখেননি। ফলে হয়েও ওঠেনি এবছরই তার প্রথম বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্ন।

 

 

GettyImages-689291684-980x530

মোহাম্মদ আমির-   বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে যে মোহাম্মাদ আমির বাজির ঘোড়া হতে পারেন, সেই প্রমাণ সে দিয়েছে গত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে। মোট ৪ টি ম্যাচ খেলে টোটাল ৫ উইকেট শিকার করে নেন তিনি। যার তিনটি উইকেটই ছিল চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে। নিষেধাজ্ঞা থেকে ক্রিকেটে ফেরার পর ২০১৬ সালে আমির ওয়ানডেতে উইকেট সংগ্রহ করেন ১২ টি। ২০১৭ সালে পাকিস্তানের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জেতার বছরে আমির উইকেট শিকার করেন ১৮ টি। ২০১৮ সাল আমিরের জন্য দূর্ভাগ্যই বলতে হয়। ১০ টি ম্যাচ খেলে, উইকেট পেয়েছেন মাত্র ৩ টি। এবং এই বছরে ৪ ম্যাচ খেলে ২ উইকেট। আমিরের বর্তমান ফর্মহীনতাই সম্ভবত তাকে দলে জায়গা দিতে পারেনি। এছাড়া আমিরের মত এগ্রেসিভ বোলার বিশ্বকাপের মত মঞ্চে যেকোনো দলই চাইবে। যাই হয়ে থাকুক না কেন, ১৫ সদস্যের স্কোয়াডে আমিরের জায়গাটা হলেও হতে পারতো।

 

 

 

dineshchandimal-1529575038

দিনেশ চান্দিমাল-   ২০১৮ থেকে এ পর্যন্ত ১২ টি ম্যাচ খেলে, ১০ ইনিংসে ব্যাট করে ৩৪ এভারেজে ৩১১ রান সংগ্রহ করেছেন দিনেশ চান্দিমাল। এর মধ্যে নয়টি ম্যাচেই সে নিজে ক্যাপ্টেন্সি করেছেন বাকি তিন ম্যাচে অন্য কারো অধীনে ছিলেন। ক্যারিয়ারে টোটাল ১৪৬ ওয়ানডে খেলা চান্দিমালকে বিশ্বকাপের দল থেকে বাদ দেওয়াটা কেউই ভাল চোখে দেখেনি। শ্রীলংকার পুরো টিমই বেশ কয়েকদিন যাবতই এলোমেলো হয়ে আছে। তাদের কোন পরিকল্পনাই ঠিকভাবে আঁচ করা যাচ্ছেনা। তাই বলে বিশ্বকাপের মত মঞ্চে চান্দিমালের মত খেলোয়াড়কে স্কোয়াডে না রাখাটা বেশ চোখে পড়ে।    

 

 

 

Rayudu-Kesavan

আম্বাতি রাইডু-   ২০১৩ সালে ওয়ানডে ডেব্যু হওয়া আম্বাতি রাইডু মোট ৫৫ ম্যাচ খেলে ১৬৯৪ রান সংগ্রহ করেন।যেখানে তার সর্বোচ্চ স্কোর ১২৪ এবং রয়েছে বলার মতো ব্যাটিং এভারেজ। তার ব্যাটিং এভারেজ ৪৭। সাথে রয়েছে ৩ টি শতক ও ১০ টি অর্ধশতক। রাইডু ২০১৯ সালে খেলা ১০ ওয়ানডেতে মোট ২৪৭ রান সংগ্রহ করেন ৩১ ব্যাটিং এভারেজ নিয়ে। যেখানে তার সর্বোচ্চ ছিল ৯০ রান। ভারতের বিশ্বকাপ স্কোয়াড ঘোষণা হবার পর, অনেকের চোখেই আম্বাতি রাইডুর না থাকাটা চোখে পড়েছে। ভারতের মত দলের জন্য বিশ্বকাপের জন্য ১৫ জন সেরা খেলোয়াড় বাছাই করা হয়ে দাঁড়ায় মধুর সমস্যা। সে সমস্যা সাথে নিয়েই তাদের সেরা দলটি ঘোষণা করতে হয়।তারপরেও আম্বাতি রাইডুর অন্তর্ভুক্তি অনেকেই আশা করেছিল বলতেই হয়। 

 

 

 

Taskin_daily-sun

তাসকিন আহমেদ-  গত ১৬-ই এপ্রিল বিসিবি বাংলাদেশের ওয়ানডে স্কোয়াড ঘোষণা করে।অনেকের ভাবনার সাথে বিসিবির দেওয়া স্কোয়াডের অধিকাংশ মুখ মিলে যাবে। আবার অনেকেই আশা করেছিল তাসকিন আহমেদ হয়তো থাকবেন এই স্কোয়াডে। কিন্ত শেষ পর্যন্ত দলে থাকতে পারেননি তাসকিন।দীর্ঘদিন ছিলেন ইনজুরি আক্রান্ত। সেই ২০১৭ সালের দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে ইনজুরিতে পড়েন তাসকিন।এরপর সর্বশেষ শেষ হওয়া বিপিএলে নিজের পারফর্মেন্স বেশ ভালোই জানান দিয়েছেলেন তিনি। কিন্ত এরপর আবার ইনজুরি। বিশ্বকাপের স্কোয়াড ঘোষণার আগে আগে চোট থেকে ফিরে সম্প্রতি শেষ হওয়া ঘরোয়া লীগে একটি ম্যাচ খেলেন তাসকিন। স্বাভাবিকভাবেই  চোট থেকে ফিরতে সময় লাগে। সে ম্যাচে তেমন কিছু করতে পারেননা তিনি। শেষ পর্যন্ত দল থেকে ছিটকেই পড়েন। কিন্ত ৩২ ওয়ানডে খেলে ৪৫ উইকেট পাওয়া তাসকিন খুব সহজেই থাকতে পারতেন স্কোয়াডে। ২০১৫ বিশ্বকাপে ছিলেন বাংলাদেশের হয়ে সেরা পারফর্মারদের কাতারে। কিন্ত সেখানে ২০১৯ বিশ্বকাপে এসে তার ফিটনেস বা ধারাবাহিকতার অভাব, যেটাই হোক, স্কোয়াডে থাকা আর হয়ে ওঠা হলোনা  শেষ পর্যন্ত।