• ক্রিকেট

২০১৯ বিশ্বকাপ - ‘চোর্কাস বা দুর্ভাগা’ দল দক্ষিণ আফ্রিকা

পোস্টটি ৩২৭৬ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

D4bo0JuX4AAOQQA

স্বাগতিক ইংল্যান্ডের সাথে লন্ডনের কেনিংটন ওভালে আগামী ৩০ মে উদ্ভোধনী ম্যাচ দিয়ে শুরু হবে দক্ষিণ আফ্রিকার সেরা হবার বিশ্বকাপ মিশন। নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, বাংলাদেশ, ইংল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কার পর অষ্টম দেশ হিসেবে বিশ্বকাপের জন্য ১৫ সদস্যের দল ঘোষণা করেছে প্রোটিয়ারা। সম্প্রতি অফ-ফর্মে থাকা হাশিম আমলা বিশ্বকাপ স্কোয়াডে জায়গা হবে কিনা তা নিয়ে ছিল অনেক আলোচনা। দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট বোর্ড ভরসা রেখেছেন এই অভিজ্ঞ ওপেনার ব্যাটসম্যানের উপর। দক্ষিন আফ্রিকার বিশ্বকাপের জন্য দল ঘোষণায় নেই বড় কোনো চমক। তবে, জায়গা হয়নি হেন্ডরিক্স ও ক্রিস মরিসের।

 

প্রোটিয়ারা এবার ‘চোর্কাস বা দুর্ভাগা’ তকমা মুছে ফেলতে পারবে?    

বৈশ্বিক আসর শুরু হলেই প্রোটিয়াদের নামের পাশে ‘চোর্কাস’ শব্দটি লেখা হয় স্পষ্ট করে। দক্ষিণ আফ্রিকা আজ পর্যন্ত বিশ্বকাপ জিততে পারেনি। চারবার সেমিফাইনালের আসর থেকে বিদায় নিতে হয়েছে তাদের। ২০১৫ বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের কাছে সেমিফাইনালে হেরে বিদায় নিতে হয়েছিল আসরের অন্যতম ফেবারিট দল দক্ষিণ আফ্রিকাকে। সেই অ্যালান ডোনান্ড থেকে শন পোলক, এবি ডি ভিলিয়ার্স থেকে হাশিম আমলা বিশ্ব ক্রিকেটে তারকার অভাব কখনোই ছিল না প্রোটিয়া দলে। শিরোপা খরা কাটিয়ে প্রোটিয়ারা এবার ‘চোকার্স’ তকমা মুছে ফেলতে বদ্ধপরিকর। 

গত এক বছরে ওডিআই ফরম্যাটে কোনো সিরিজ না হারা দক্ষিণ আফ্রিকা স্বপ্ন দেখছে বিশ্বকাপ জিতার। শ্রীলঙ্কা, জিম্বাবুয়ে, পাকিস্তান ও অস্ট্রেলিয়ার সাথে সিরিজগুলো জিতেছিল। অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসিস বিশ্বকাপ সাফল্যের লক্ষ্যে নিজেদের নীল নকশা হিসেবে ছয়জন বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান, সাত নম্বর পজিশনে একজন অলরাউন্ডার, তিনজন ফাস্ট বোলার এবং একজন স্পিনারের কথা উল্লেখ করেছিলেন। অধিনায়কের পাশাপাশি এ নিয়ে টানা ৩য় বিশ্বকাপে খেলতে যাচ্ছেন হাশিম আমলা, জে পি ডুমিনি, ইমরান তাহির ও ডেল স্টেইন। কুইন্টন ডি কক ও ডেভিড মিলারের জন্য এটা দ্বিতীয়। ইমরান তাহির ও জে পি ডুমিনির জন্য এটাই শেষ বিশ্বকাপ তা আগেই ঘোষণা দিয়েছেন দুজনেই।   

দক্ষিন আফ্রিকার স্কোয়াডের শক্তিমত্তা   

D4c8n-vXkAEFp2X

বিপক্ষ দলের জন্য পাহাড় সমান রান করার ক্ষেত্রে  মূল ভূমিকা রাখেন উদ্ভোধনী জুটি। এক্ষেত্রে প্রোটিয়াদের দলে রয়েছে অভিজ্ঞ দুইজন অপেনার, হাশিম আমলা ও কুইনটন ডি কুক। ইংল্যান্ডের মাটিতে আমলার ব্যাটিং গড় ৬৩.৪৪। প্রোটিয়ায়দের আস্থার অনেকটাই জুড়ে থাকবে এই জুটি। টপ অর্ডারের তিন ও চার নাম্বার ব্যাটসম্যান হিসেবে অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসিস ও র‍্যাসি ভ্যান ডার ডুসেনের জায়গা নিশ্চিত। অধিনায়ক হওয়ার সাথে তিনি বর্তমান প্রোটিয়া দলের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান। মিডল-অর্ডারে পাঁচ ও ছয় নম্বর পজিশনে দেখা যাবে দক্ষিণ আফ্রিকার সেরা দুইজন খেলোয়াড় জে পি ডুমিনি এবং ডেভিড মিলারকে। ১৪ বছরের ক্যারিয়ারে এবারের বিশ্বকাপ খেলেই ওয়ানডে ফরম্যাট থেকে অবসরে যাবেন এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান জে পি ডুমিনি। অন্যদিকে প্রোটিয়াদের মিডল-অর্ডারে আস্থার আরেক নাম ডেভিভ মিলার। কুইংটন ডি ককের অনুপস্থিতিতে উইকেটরক্ষকের ব্যাকআপ হিসেবে রাখা হয়েছে মিলারকে। 

ডুমিনির পাশাপাশি অলরাউন্ডার হিসেবে এবার পেখুয়ায়োই প্রোটিয়াদের মূল ভরসা।  এই পজিশনের জন্য আরেকজন খেলোয়াড় লড়তে পারতেন, ক্রিস মরিস। ঘরোয়া লিগে দারুণ পারফর্ম করে জাতীয় দলে এলেও এই হার্ডহিটার অলরাউন্ডার কখনোই নিজের সেরাটা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দিতে পারেননি। প্রোটিয়াদের পেস বোলিং এট্যাকে থাকবে বিশের অন্যতম দুইজন বোলার ডেল স্টেইন ও কাসিগো রাবাদা। গতির ঝড় তোলা ডেল স্টেইন নিজের শেষ বিশ্বকাপ ঘরে তুলতে সর্বোচ্চ চেস্টা করবেন ইঞ্জুরিতে জর্জরিত থাকা সত্বেও। ডেল স্টেইনের সাথে দলকে পেস বলে নেতৃত্ব দিবেন ২৩ বছর বয়সী কাসিগো রাবাদা। তরুন এই খেলোয়াড়ের অভিষেক হবার পর থেকে টেস্ট, ওডিআই ও টি-টোয়েন্টি তিনটি ফরম্যাটে সমান উজ্জ্বল। তৃতীয় পেসার হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম পছন্দ লুঙ্গি এনগিডি, ২০১৯ সালে পাঁচটি ওডিআই ম্যাচ খেলে নিয়েছেন ৮ উইকেট।

দক্ষিন আফ্রিকার শিবিরে রয়েছে ৪০ বছর বয়সী ইমরান তাহির। বয়সে ভার হলেও ক্যারিয়ারে ভাটা পড়েনি এই লেগ স্পিন বোলারের। প্রোটিয়াদের হয়ে বাইশ গজে ঘূর্ণি ধরাতে প্রস্তুত ইমরান তাহির। ব্যাকআপ হিসেবে দলে থাকবেন বাঁহাতি স্পিনার তাবরাইজ শামসি। তাহিরের বিশ্রামের বদৌলতে যে কয়টা ম্যাচে শামসি সুযোগ পেয়েছেন সেসব ম্যাচে অবশ্য ভালোই খেলেছেন। সেদিক থেকে প্রোটিয়াদের স্পিন অ্যাটাক বেশ শক্তিশালী বলা চলে।

প্লেয়ার টু ওয়াচ   

কুইন্টন ডি কক :   

দক্ষিণ আফ্রিকার ১২ নম্বর জার্সি পরিহিত খেলোয়াড় উইকেট-কিপার এবং টপ-অর্ডারের ব্যাটসম্যান। জোহানেসবার্গে জন্মগ্রহণকারী দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটার কুইন্টন ডি কক অ১৯ দলে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। বিশ্বে গুটিকয়েক খেলোয়াড় মুগ্ধ করেন সবাইকে, তন্মধ্যে কুইন্টন ডি কক একজন। যাকে অস্ট্রেলিয়ার সাবেক উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান এডাম গিলক্রিস্টের সাথে তুলনা করা হয়। উইকেটের পিছনে গ্লাভসবন্ধী ডি কক দক্ষিন আফ্রিকার ২০১৭ সালের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছেন। 

DVbFa92X0AEVG0x

এবি ডি ভিলিয়ার্সের সাথে ডি কক (বামে)

দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে জন্মগ্রহণকারী কুইন্টন ডি কক ২০১২ সালে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত অ১৯ বিশ্বকাপে নিজের প্রতিভার কদর দেখিয়েছেন। টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান স্কোরার ছিলেন তিনি। এবি ডি ভিলিয়ার্সের বিশ্রামের পরিপ্রেক্ষিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি স্কোয়াডে জায়গা করে নেয়। এক বছর পর ভারতের বিপক্ষে টানা তিনটি সেঞ্চুরি করে বিশ্ব সেরাদের স্থান দখল করে নেন।

১০৬ ওয়ানডে ক্রিকেট ক্যারিয়ারে ১৪ টি সেঞ্চুরি ও ২১ টি হাফসেঞ্চুরিতে ৪,৬০২ রানের মাইলফলক।     দুর্ভাগ্যবশত ইঞ্জুরিতে পড়ায় খেলা হয়নি ২০১৫ বিশ্বকাপ। প্রোটিয়াদের হয়ে শিরোপা ছুঁয়ে ধরতে বিভোর হয়ে আছেন এই মুগ্ধকর খেলোয়াড়। 

(Note: Most of the photos are collected from Twitter official and other news sources)