২০১৯ বিশ্বকাপ - দক্ষিণ এশিয়ার যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ আফগানিস্তান
পোস্টটি ৩৪৩১ বার পঠিত হয়েছেক্রিকেট বিশ্বে নতুন শক্তির উত্থান আফগানিস্তান ক্রিকেট দল। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির মানুষের ভয়ভীতিতে রাতের ঘুম ঝাপসা আসলেও সকালে ঘুম ভাঙে বোমা অথবা গোলাগুলির শব্দে। ভয়ংকর এই রণক্ষেত্রের দামামায় নেই পর্যাপ্ত খাদ্য, উচ্ছিষ্ট বাসস্থান, চাকরি এবং নেই নিরাপত্তা। জীবনের মৌলিক অধিকার যেখানে মূল্য নেই সেখানে আবার বিলাসিতা বা উপভোগ করার জন্য খেলাধুলা, যা আকাশকুসুম ব্যাপার। বর্তমানে এই যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের ক্রিকেট দল লড়াই করে যাচ্ছে বিশ্বের সেরা দেশ গুলোর সাথে। চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিচ্ছে তাদের সাথে মোকাবেলা করার জন্য। ভীতিকর দেশের খেলোয়াড়েরা ছাড় দিচ্ছে না এক চুলও কোনো দেশকে। বর্তমানে এই আফগানিস্তানই ক্রিকেট বিশ্বে এক শক্তির নাম।
আফগানিস্তানের ক্রিকেট দলের কথা মুখে নিলেই মাথায় চলে আসবে রশিদ খান, মুজিবুর রহমান, শেহজাদ, হজরত-উল্লাহ জাজাই এবং মোহাম্মদ নবীদের কথা। যারা বর্তমানে ও. উইন্ডিজ দলের খেলোয়াড়দের মতো কাঁপাচ্ছে বিভিন্ন দেশের লিগ গুলোতে। এমনকি জাতীয় দলের হয়ে প্রতিপক্ষ দলের অবস্থা দেয়ালে পিঠ দেখাবার মতো করে দেয়। যদিও দলটির উত্থান হয়েছে বেশিদিন হয়নি। কিন্তু কম সময়ে কতটা শক্তিশালী দলে পরিনত হয়েছে তা বিশ্ব ক্রিকেটে জানান দিয়েছে শুরুতেই। তবে সাম্প্রতিক সময়ে এমন ভাঙা আফগানিস্তানকে জোড়া লাগাচ্ছে শুধু একটা জিনিস। সেটা ক্রিকেট।
ক্রিকেট বিশ্বে আফগানিস্তান প্রথম চমক দেখায় বাংলাদেশের বিপক্ষে ২০১৪ সালের এশিয়া কাপে। যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানের ক্রিকেটে আজকের এই সাফল্য সত্যিই রূপকথার মতো। মাত্র পাঁচ বছরের (২০১৩ সালে আইসিসি’র সহযোগী সদস্যপদ লাভ করেন) ব্যবধানে ক্রিকেটের সর্বোচ্চ স্তরে জায়গা করে নিয়েছে দেশটি। যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশের জন্য মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যে একদিনের ক্রিকেটের বিশ্বকাপে জায়গা করে নেয়াটা অনেক বড় অর্জন।
বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের ১৫ সদস্যের স্কোয়াড
বিশ্বকাপে কতটা শক্তিশালী হবে আফগানিস্তান!
আসন্ন ২০১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপকে সামনে রেখে ১৫ সদস্যের স্কোয়াড ঘোষণা করেছে আফগানিস্তানের ক্রিকেট বোর্ড (এসিবি)। এই বিশ্বকাপে ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলতে চায় আফগান বাহিনী। দল ঘোষণার পর প্রধান নির্বাচক দৌলত আহমেদজাই জানিয়েছেন, বিশ্বকাপে লড়াকু মানসিকতা প্রদার্শন করতে চান তারা। বিশ্বকাপের ঠিক আগে ওয়ানডে ফরম্যাট থেকে আসগর আফগানকে সরিয়ে গুলবাদিন নাইবকে অধিনায়ক করা হয়েছে। এ নিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে আফিগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড। জানা গেল মূল কারণ, ২০২৩ সালের বিশ্বকাপ সামনে রেখে এমন পরিকল্পনা করেছে দেশটির ক্রিকেট বোর্ড। ওই বিশ্বকাপের আগে অধিনায়ক হিসেবে ২৮ বছর বয়সী গুলবাদিনকে পরিপক্ব করে তুলতে চায় এসিবি।
অভিজ্ঞদের প্রাধান্য দিয়ে গড়া এ দলে চমক হিসেবে অন্তর্ভুক্তি ঘটেছে পেসার হামিদ হাসানের। ২০১৬ সালের ১৪ জুলাই সর্বশেষ একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেললেও বিশ্বকাপের দলে জায়গা পেয়েছেন তিনি। তার অন্তর্ভুক্তিতে নিজের সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন আফগানদের প্রধান নির্বাচক। একইসাথে জানালেন বিশ্বকাপে তার খেলার বিষয়টি নির্ধারণ হবে ফিটনেস ও প্রস্তুতি ম্যাচগুলোর ফলাফলের পরই।
হামিদ ফেরায় মূল্য চোকাতে হয়েছে শাপুর জাদরানকে। পেস আক্রমণের অন্যতম বাঁহাতি এ সদস্য বাদ পড়েছেন। পেস আক্রমণে দৌলত জাদরানের সঙ্গে আছেন আফতাব আলম ও নায়েব। যথারীতি দলে আছেন আইপিএল খেলা তিন সুপারস্টার রশিদ খান, মোহাম্মদ নবি ও মুজিব-উর রহমান। দলের ব্রেক থ্রো কিংবা বড় রান সংগ্রহ করতে বিশেষ ভূমিকা রাখবেন অলরাউন্ডার মোহাম্মদ নবী৷ ব্যাটিংয়ের অন্যতম ভরসা মোহাম্মদ শাহজাদ ও হযরতউল্লাহ জাজাইয়ের সঙ্গে আছেন নূর আলি জাদরান ও সামিউল্লাহ শেনওয়ারি। কতটা শক্তিশালী দল তা স্কোয়াডের উপর চোখ বুলিয়ে দেখলেই ঠাহর করা যাচ্ছে পরিস্কারভাবে।
আফগানিস্তানের বিশ্বকাপ স্কোয়াড : গুলবাদিন নায়েব (অধিনায়ক), মোহাম্মদ শাহজাদ (উইকেটরক্ষক), নূর আলি জাদরান, হযরতউল্লাহ জাজাই, রহমত শাহ, আসগর আফগান, হাসমতউল্লাহ সাহিদি, নাজিবুল্লাহ জাদরান, সামিউল্লাহ শেনওয়ারি, মোহাম্মদ নবি, রশিদ খান, দৌলত জাদরান, আফতাব আলম, হামিদ হাসান এবং মুজিব-উর রহমান।
প্লেয়ার টু ওয়াচ
রশিদ খান : আফগানিস্তান ক্রিকেটের বিস্ময় বালক
আফগানিস্তানের বোলিং এট্যাকে রশিদ খান যেকোনো দলের জন্য হুমকিস্বরূপ হয়ে দাঁড়াতে পারেন। তার নিখুঁত লক্ষ্যে করা ঘূর্ণায়মান স্পিন বল প্রতিপক্ষ দলের জন্য বিপর্যয় ঘটে যাবে। তাই আফগান বোলিং ইউনিটের অন্যতম একজন খেলোয়াড় রশিদ খান। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের লিগ গুলোতে ব্যাটসম্যানদের কাবু করে খ্যাতি ছড়িয়েছে। তাই যথেষ্ট অভিজ্ঞতা অর্জন করে বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
বল হাতে যেমন ভয়ংকর ঠিক ব্যাট হাতেও অনন্য। নিজ দেশ ও আইপিএলের কয়েকটি ম্যাচে অলরাউন্ডারের ভূমিকাটি পালন কিরতে দেখা যায়। ৫৭ টি ওয়ানডে ম্যাচে ১২৩ উইকেট শিকার করেন এই বিস্ময়কর বালক। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ৩৮ ম্যাচে তুলে নেন ৭৫ উইকেট এবং দুইটি টেস্ট ম্যাচে নয়টি উইকেটের পতন ঘটায় বিশ বয়সী লেগ স্পিনার। তাই বিশ্বকাপের স্পটলাইটে নিশ্চয়ই থাকবেন আফগান দলের অন্যতম খেলোয়াড়টি।
[Note : All photos are collected from Getty Images & other news sources]
- 0 মন্তব্য