সমালোচনার কঠিন জবাব সৌম্য-মোসাদ্দেকের ব্যাটে
পোস্টটি ৩৭১৩ বার পঠিত হয়েছেইংল্যান্ডের মাটিতে বিশ্বকাপের জন্য ১৫ সদস্যের স্কোয়াড ঘোষণার পরে সমালোচনার ঝড় উঠে সৌম্য-মোসাদ্দেকের জায়গা নিয়ে। যেখানে গুটিকয়েক সমর্থক ইমরুল কায়েসকে যোগ্য মনে করেন সৌম্য অথবা লিটনের পরিবর্তে। আর বাকি মৌসুমি ভক্তরা তাল মিলিয়ে দলের বিশ্বকাপ প্রস্তুতি ঘোলাটে করে তুলে। আবার মোসাদ্দেক দলে রাখার দরকার কি এমন বিতর্কিত প্রশ্ন উঠতেই থাকে। অন্যদিকে বোলিংয়ে তাসকিন আহমেদকে না রেখে আবু জাহেদ রাহীকে চমক হিসেবে স্কোয়াডে রাখে বিসিবি। যিনি বাংলাদেশের হয়ে এখনো কোনো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ খেলেনি।
বাংলাদেশের প্রথম শিরোপা জিতেছে দীর্ঘ নয় বছরের জলাঞ্জলি দিয়ে। ছয়বার বাংলাদেশের ফাইনাল খেলেও ছোঁয়া হলোনা একবারও ট্রফি। শিরোপা খরা আর ফাইনালে এমন নিদারুণ হেরে যাওয়ায় অনেকেই মেসির আর্জেন্টিনার সাথে তুলনা করে ফেলেছিল। কিন্তু সে আক্ষেপ ঘুচেছে আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজ জিতে। পুরো টুর্নামেন্টে ও. ইন্ডিজ এবং আয়ারল্যান্ডকে মোটেও ছাড় দিয়ে কথা বলেনি বাংলাদেশ। বলতে গেলে একতরফা খেলে ফাইনালে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। দারুন উজ্জীবিত বাংলাদেশ ফাইনাল জিতে নিবে এইবার ক্রিকেট আবহাওয়া যেন বলে দিচ্ছে। কিন্তু ডাবলিনের আকাশে সেদিন মেঘের কান্নার দিন ছিল। ফাইনালে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশি বোলারদের কচুকাটা করে ২০.১ ওভারে বিনা উইকেটে ১৩১ রান তুলে ফেলেছিল উইন্ডিজ ওপেনিং জুটি। পরে এর চেয়েও কঠিন অবস্থায় ফেলে দিল বৃষ্টি। ঝুম বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ থেকেছে বেশ কয়েক ঘন্টা। বৃষ্টি যখন থামল ম্যাচের দৈর্ঘ্য কমিয়ে করা হলো ২৪ ওভার। উইন্ডিজ দলের স্কোর দাঁড়ালো ১৫২/১। আর তাতেই বাংলাদেশের ওপর ডিএল ম্যাথোডের নিয়ম নেমে এলো। উইন্ডিজ ২৪ ওভারে ১৫২ করলেও ডিএল ম্যাথোডে বাংলাদেশের টার্গেট দাঁড়ালো ২৪ ওভারেই ২১০। ম্যাচটা যেন ৫০ ওভারের ছিলো না! ফাইনাল ম্যাচে ও. উইন্ডিজ দলের কোচ হয়তো সারারাত তামিম, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ সিনিয়রদের কিভাবে আটকানো যায় তা নিয়ে নকশা করেছিলেন। কিন্তু কে জানে সেদিন যে তরুন সৌম্য-মোসাদ্দেকের ব্যাট জ্বলে উঠবে। টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ৬৬ রানের দুর্দান্ত ইনিংসে তামিম ইকবালের সাথে দলের শুভসূচনা করে দেন সৌম্য সরকার। ১৩ বলে ১৮ রান করে তামিম ইকবাল আউট হয়ে গেলে রান সংগ্রহ করাটা অনেকটাই কঠিন হয়ে যায়। এরপর তিন নম্বরে ব্যাটিং করতে নামেন সাব্বির রহমান। কিন্তু তার ব্যাট থেকে যেমনটা আশা করেছিল টিম ম্যানেজমেন্ট তা মোটেও দিতে পারেনি সাব্বির রহমান। শুন্য রানের খাতা নিয়ে লেগ বিফোরের শিকার হয়ে সাজঘরে ফেরেন। সাকিব আল হাসানের অভাবটা স্বাভাবিক ভোগাবেই। চারে মুশফিকুর রহিম ব্যাট করতে নেমে বড় রানের ইনিংস করতে পারেনি। নিয়মিত বিরতিতে মিথুনের উইকেট পরার পরে। দলের অন্তিম মুহূর্তে আবির্ভাব ঘটে এক কাল্পনিক মোসাদ্দেকের। এক সময়ে ৩ ওভারে বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ২৭ রান। ফ্যাবিয়ান অ্যালেনের এক ওভার থেকে ২৫ রান নিয়ে মোসাদ্দেক দলকে নিয়ে যান জয়ের প্রান্তে। বাকিটা সারেন দায়িত্বশীল ব্যাটিং করা মাহমুদউল্লাহ। বাউন্ডারিতে শেষ করে আসেন স্বপ্নের ফাইনাল ম্যাচ। ডাকওয়ার্থ ও লুইস পদ্ধতিতে ৫ উইকেটে জিতেছে বাংলাদেশ। ২১০ রানের লক্ষ্য পেরিয়ে গেছে ৭ বল বাকি থাকতেই। ২৭ বলে পাঁচ ছক্কা ও দুই চারে ৫২ রানে অপরাজিত থাকেন মোসাদ্দেক, ১৮ বলে ১৯ রানে মাহমুদউল্লাহ। আহ, ইতিহাস গড়া ফাইনাল কতই না মধুর! অভিনন্দন বাংলাদেশ।
ফাইনাল ম্যাচে সৌম্যের ৬৬ রানের দুর্দান্ত ইনিংস
আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজের পর থেকে দলে কে আছে বা নেই এমন কোনো বিতর্কিত প্রশ্ন আর দেখা যাচ্ছে না। আয়ারল্যান্ডের উদ্যেশ্যে বাংলাদেশ দল বিমানে উঠার আগেই সৌম্য সরকার ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে আবাহনীর হয়ে শেখ জামালের বিপক্ষে ডাবল সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েছেন। যা প্রথম কোনো বাংলাদেশি লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে ডাবল সেঞ্চুরির মাইলফলক। ২০১৭ সালে এই রেকর্ড ১৯০ রানের ইনিংস খেলে তুলে রেখেছিল মোহামেডান তারকা রকিবুল ইসলাম। সৌম্য সরকারের ঢাকা লিগে ডাবল সেঞ্চুরির প্রতিফলনে আয়ারল্যান্ডে ইমরুল কায়েসের যাওয়া নিয়ে আর কোনো কথাই উঠতে দেখা যায়নি সমর্থকদের মধ্যে। সমালোচকদের জবাব আরো কঠিন দিতে দেখা যায় ত্রিদেশীয় সিরিজে টানা তিনটি ম্যাচে হাফসেঞ্চুরি দিয়ে। বিশ্বকাপের আগে দুরন্ত ফর্মের ইঙ্গিত দিয়ে রাখলেন সৌম্য সরকার। পাশাপাশি বিশ্বকাপে তামিম ইকবালের ওপেনিং সঙ্গী হওয়ার ক্ষেত্রেও নিজেকে এগিয়ে রাখলেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান।
২০ বলে অর্ধশত রানে নতুন রেকর্ড গড়েছেন মোসাদ্দেক
ভয়ডরহীন দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলের বাংলাদেশের প্রথম শিরোপা জয়ে নায়ক মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। ৫২ রানের হার না মানা ইনিংসটি খেলেন মাত্র ২৪ বলে ২ চার ও ৫ ছক্কায়। যা তার ২৬ তম ম্যাচ ক্যারিয়ারে দ্বিতীয় হাফ সেঞ্চুরি। অথচ এই মোসাদ্দেক কেন দলে ছিল তা নিয়ে ছিল ব্যপক সমালোচনা। মোটেও বাংলাদেশকে বুঝতে দেননি অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের অভাব। বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে কম বলে (২০ বল) অর্ধশত রানের রেকর্ড গড়েছেন। পূর্বে এই রেকর্ডটির মালিক ছিল মোহাম্মদ আশরাফুল। অর্ধশত রান করতে তিনি খেলেছিলেন ২১ বল। তাই মোসাদ্দেকের এই পারফরম্যান্স সমালোচকদের মুখে কড়া জবাব হিসেবে উল্লেখ্য। প্রতিটি শট দেখে সম্ভবত সমালোচকরাও বাহ বাহ বলেছিল।
[Note : All photos are collected from Getty Images & other news sources]
- 0 মন্তব্য