• অন্যান্য

বিশ্বকাপে ‘চোর্কাস বা দুর্ভাগা’ খ্যাত দক্ষিণ আফ্রিকা

পোস্টটি ৩৭৩৪ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

বিশ্বকাপের আসরের কথা শুনলেই যেন আফ্রিকা মহাদেশের দক্ষিনাঞ্চলের এই দেশের ভিতরে শুরু হয় আরেকটি শেষ মুহূর্তের হতাশার দৃশ্য দেখার জন্য। বৈশ্বিক মঞ্চে অংশগ্রহণ করে বিশ্বের সবচেয়ে সেরা দলগুলো। লড়াই করে নিজেদের শ্রেষ্ঠ প্রমাণ করার লক্ষ্যে। সে মঞ্চে প্রতিটি ম্যাচই গুরুত্বপূর্ণ এবং হার মানা যাবেনা সে দৃঢ় প্রত্যাশা নিয়েই মাঠে নামে দলগুলো। কিন্তু প্রোটিয়াসদের বেলায় এটা যেন পুরোই উল্টো। শেষ পর্যন্ত লড়াই করার মন-মানসিকতা যেন একদমই নেই তাদের। বৈশ্বিক আসর শুরু হলেই প্রোটিয়াদের নামের পাশে ‘চোর্কাস’ শব্দটি লেখা হয় স্পষ্ট করে। দক্ষিণ আফ্রিকা আজ পর্যন্ত বিশ্বকাপ জিততে পারেনি। চারবার সেমিফাইনালের আসর থেকে বিদায় নিতে হয়েছে তাদের। শেষ ২০১৫ বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের কাছে সেমিফাইনালে হেরে বিদায় নিতে হয়েছিল আসরের অন্যতম ফেবারিট দল দক্ষিণ আফ্রিকাকে। সেই অ্যালান ডোনান্ড থেকে শন পোলক, এবি ডি ভিলিয়ার্স থেকে হাশিম আমলা বিশ্ব ক্রিকেটে তারকার অভাব কখনোই ছিল না প্রোটিয়া দলে। শিরোপা খরা কাটিয়ে প্রোটিয়াস দল ২০১৯ বিশ্বকাপে ‘চোকার্স’ তকমা মুছে ফেলতে বদ্ধপরিকর।

25SA_92scoreboard

সিডনিতে ১ বলে ২২ রানের করুন দৃশ্য 

১৯৯২ বিশ্বকাপ : বৃষ্টি আইনে বাঁধা সেমিফাইনাল  

রঙিন পোশাক, সাদা বল, ফ্লাডলাইটের আলোয় খেলা- বিশ্বকাপের রঙটাই যেন বদলে গিয়েছিল ১৯৯২ বিশ্বকাপে। সবই ঠিক ছিল, কিন্তু বৃষ্টি আইনই ভজকট পাকিয়ে দিল ইংল্যান্ড-দক্ষিণ আফ্রিকার সেমিফাইনালে। তবে আইনটি ছিল ইংল্যান্ডের জন্য জয়জয়কার, দক্ষিন আফ্রিকার জন্য হাহাকার। সিডনির আকাশে দশ মিনিটের মেঘের কান্নায় ভেসে যায় দক্ষিন আফ্রিকার ২২ বছর পর নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে প্রথম বিশ্বকাপে সেরা হবার স্বপ্ন। ১৯৭৫ সাল থেকে আইসিসি বিশ্বকাপ আয়োজন করে আসলেও বর্ণবাদের রোষে নিষেধাজ্ঞায় থাকে দক্ষিণ আফ্রিকা।  

সেমিফাইনাল ম্যাচ শুরু হবার পূর্বেই হানা এনেছিল বৃষ্টি। ম্যাচ ৪৫ ওভারে হবার ঘোষণা আসে প্যাভিলিয়ন থেকে। সেমিতে দক্ষিন আফ্রিকা মুখোমুখি হয় ইংল্যান্ডের সাথে। প্রথমে নেমে ইংল্যান্ড ছয় উইকেটে ২৫২ রানের টার্গেট দেয় দক্ষিণ আফ্রিকাকে। জবাব দিতে নেমে জয়ের পথেই এগিয়ে যায় প্রোটিয়াস দল। একপর্যায়ে তাদের প্রয়োজন ছিলো ১৩ বলে ২২ রান। মাঠে সেট দুইজন ব্যাটসম্যানদের পক্ষে রান সংগ্রহ করা অসম্ভব ছিলো না। দশ মিনিটের বৃষ্টি এসে খেলার মোড় পালটে দেয়। স্টেডিয়ামের টিভিতে তখনকার সময় রিভাইসড টার্গেট নিয়ম অনুযায়ী লেখা উঠে ১ বলে দরকার ২২ রান। হতভম্ব হয়ে এভাবেই নিয়তির কাছে আত্মসমর্পণ করে এবং শুরু হয় দক্ষিণ আফ্রিকার দুর্ভাগ্য।

25SA_96lara

করাচিতে ব্রায়ান লারার ১১১ রানের দুর্দান্ত ইনিংস    

১৯৯৬ বিশ্বকাপ : ব্রায়ান লারার কাছে  বিদায় কোয়ার্টার ফাইনালে     

আইসিসির ষষ্ঠ বিশ্বকাপ আসর বসে উপমহাদেশে যৌথভাবে ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কায়। ভারতে ১৭টি পৃথক স্টেডিয়ামে ১৭ ম্যাচ, পাকিস্তানে ৬টি স্টেডিয়ামে ১৬ ম্যাচ এবং শ্রীলঙ্কার ৩টি স্টেডিয়ামে ৪ ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। পাকিস্তানের লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ফাইনাল ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে পরাজিত করে সহঃ স্বাগতিক দল শ্রীলঙ্কা প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ জয় করে। সে বিশ্বকাপে ফেবারিট দল হয়েও কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নিতে হয় দক্ষিন আফ্রিকাকে।

পাকিস্তান, নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ড এবং প্রথমবার বিশ্বকাপে খেলতে আসা সংযুক্ত আরব আমিরাত ও নেদারল্যান্ডসের সাথে গ্রুপ ‘বি’ তে জায়গা হয় দক্ষিন আফ্রিকার। গ্রুপের ৫টি ম্যাচে একতরফাভাবে জয় পেয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে যায় দক্ষিন আফ্রিকা। অন্যদিকে পাঁচ ম্যাচে দুইটি কষ্টার্জিত জয় নিয়ে প্রতিপক্ষ দল হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সেখানেই ধস হয়ে দাঁড়ায় দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য ব্রায়ান লারা। আগে ব্যাট করতে নেমে লারার ১১১ রানের দুর্দান্ত ইনিংসে ও. ইন্ডিজ ২৬৪ রানের টার্গেট দেয়। এই রানের টার্গেট তাড়া করা দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য সম্ভব ছিলো। কিন্তু প্রোটিয়াসরাই তা অসম্ভব করে নেয় ২৪৫ রানে অলআউট হয়ে। ব্রায়ান লারার দিনে বিদায় নিতে হয় ছিয়ানব্বই’র বিশ্বকাপ থেকে দক্ষিণ আফ্রিকাকে।   

১৯৯৯ বিশ্বকাপ :  সুপার সিক্স ও সেমিফাইনালে ভাগ্যবিপর্যয়  

25SA_99waugh

স্টিভ ওয়াহ’র দুর্দান্ত একটি ছক্কা হাঁকানোর দৃশ্য  

সুপার সিক্স

ইংল্যান্ডের মাটিতে চতুর্থবার ক্রিকেট বিশ্বকাপের মঞ্চ বসে ১৯৯৯ সালে। বরাবরের মতোই হট ফেবারিট দল দক্ষিণ আফ্রিকা। এবারের আসরে দুইবার ভাগ্যবিপর্যয়ে পড়তে হয় অস্ট্রেলিয়ার কাছে। গ্রুপ পর্যায়ে জিম্বাবুয়ের কাছে একটি ম্যাচ বাদে বাকি চারটি ম্যাচে স্বাগতিক ইংল্যান্ড, ভারত, কেনিয়া ও শ্রীলঙ্কাকে বধ করে উঠে যায় সুপার সিক্সে। এখান থেকেই যেন স্বয়ং বিধাতাও দক্ষিন আফ্রিকার বিপক্ষে অবস্থান নেয়। অন্যদিকে অজিদের সেমিফাইনাল নিশ্চিত করতে হলে সুপার সিক্সে দক্ষিন আফ্রিকাকে হারাতেই হবে। নিয়ম অনুযায়ী অস্ট্রেলিয়া জিতলে সেমিফাইনালেও মুখোমুখি হবে দক্ষিন আফ্রিকার সাথে। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ২৭১ রান করে দক্ষিন আফ্রিকা। বিশাল এই পাহাড় সমান রান তাড়া করে টুর্নামেন্টে অন্যকোনো দলের জিতার রেকর্ড নেই। ‘ডু অর ডাই’ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া দলে আলাদিনের চেরাগের দৈত্য হয়ে আসে স্টিভ ওয়াহ। ১২০ রানে অপরাজিত থেকে শেষ ওভারে অস্ট্রেলিয়াকে সেমিফাইনালে উঠালেন স্টিভ ওয়াহ। 

 

সে ম্যাচে দক্ষিন আফ্রিকার বিপর্যয়ের প্রধান কারণ ছিলো হার্শেল গিভস। অস্ট্রেলিয়ার জয়ের নায়ক স্টিভ ওয়াহ ব্যক্তিগত ৫৬ রান থাকা অবস্থায় লেগ সাইডে ক্যাচ উঠে যেখানে ছিল প্রোটিয়াস দলের অন্যতম ফিল্ডার হার্শেল গিভস। কিন্তু তিনি নিশ্চিত ক্যাচ ধরতে গিয়ে উল্লাস করতেই ড্রপ করলেন মাটিতে। এই উইকেটটা নিলেই দক্ষিণ আফ্রিকার জয় একপ্রকার নিশ্চিত বলা যেত।

11SA1999

অজিদের আনন্দ এবং শন পোলকের  ছেলেমানুষী দৌড়  

সেমিফাইনাল 

সুপার সিক্সের ম্যাচে হতাশাজনক হারে ক্ষোভে দক্ষিন আফ্রিকা প্রস্তুত সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে বিদায় করতে। স্টিভ ওয়াহ নতুন জীবন পেয়ে অনেকেই বলেছিলেন ভাগ্যে জোরে জিতেছিল আস্ট্রেলিয়া। সেমিতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ৪৯.২ ওভারে মাত্র ২১৩ রান করেই গুটিয়ে গেলো অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু মাত্রার ভিতরের সামান্য রানকেই তাড়া করতে এলোমেলো ফিনিশিং দক্ষিণ আফ্রিকার। পুরো ম্যাচে হতভাগা দক্ষিণ আফ্রিকার দরকার শেষ ওভারে ৯ রান, শেষ উইকেটের পার্টনারশিপ। ওভারের প্রথম দুই বলে ডর-ভয়হীন ব্যাটে দুটি চার মেরে ম্যাচটিকে নিজেদের আয়ত্তে আনলেন ল্যান্স ক্লুজনার। এক রান পিছিয়ে ফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করতে। অস্ট্রেলিয়ার সব ফিল্ডার চলে এলো বৃত্তের ভিতরে। এতেই যেন ভীত হয়ে পড়লো দক্ষিণ আফ্রিকা। ওভারের চতুর্থ বলে পাগলাটে দৌড় দিলেন ল্যান্স ক্লুজনার। ডোনাল্ড প্রথমে রান নিতে মানা করেছিলেন, যখন দেখলেন ক্লুজনার অনেকটাই এগিয়ে এসেছেন তখন বাধ্য হয়ে তিনিও দৌড় দিলেন। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ান উইকেটরক্ষক এডামস গিলক্রিস্ট তার আগেই উইকেট ভেঙে ডোনাল্ডকে রান আউট করে দিলেন। ফলাফল ম্যাচ টাই, আর টুর্নামেন্টের নিয়ম অনুযায়ী মুখোমুখি লড়াইতে এগিয়ে থাকার জন্য অস্ট্রেলিয়া চলে গেল ফাইনালে।

11ShaunPollock

শন পোলকের গণিতের ভুল, বিষন্নতা প্যাভিলিয়নে   

২০০৩ বিশ্বকাপ : হিসেবে ভুল,  মাশুল গ্রুপ পর্বে বিদায়   

আইসিসির ওয়ানডে বিশ্বকাপের অষ্টম আসরের পর্দা উঠে দক্ষিণ আফ্রিকায়। স্বাগতিক দেশ হয়ে জন্ম দিয়েছে বরাবরের মতো আরেকটি বিপর্যয়ের ইতিহাস। ঘরের মাঠে বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্ব পেরুতে প্রতিপক্ষ দল হয় শ্রীলঙ্কা। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে শ্রীলঙ্কা সংগ্রহ করে ২৬৮ রান। সে ম্যাচে লংকা ওপেনিং ব্যাটসম্যান এমএস আকাপাত্তু ১২৪ রানের দুর্দান্ত একটি ইনিংস খেলেন। সেদিনের ম্যাচে বৃষ্টির বিড়ম্বনায় ৪৫ ওভারে করে দেওয়া হয় দক্ষিণ আফ্রিকাকে। কীভাবে তারা বিদায় নিয়েছিল সেটি কোনো দিন ভুলতে পারবেন না ক্রিকেটপ্রেমীরা। অধিনায়ক শন পোলক ডাক-ওয়ার্থ লুইস পদ্ধতির হিসাব ভুল করেছিলেন। সেই ভুল ছিল অমার্জনীয়। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বৃষ্টি-বিঘ্নিত ম্যাচে ডাক-ওয়ার্থ লুইসের হিসাবে প্রোটিয়াদের লক্ষ্যমাত্রা দাঁড়ায় ৪৫ ওভারে ২৩০। কিন্তু পোলক মাঠে বার্তা পাঠান ৪৫ ওভারে লাগবে ২২৯ রান। মুরালিধরনকে ছক্কা মেরে দলকে ২২৯ রানে পৌঁছে দেন মার্ক বাউচার। জয় হাতের মুঠোয় এসে গেছে ভেবে মুরালির শেষ বলটি কোনোমতে ব্লক করে প্যাভিলিয়নে চলে যান মার্ক বাউচার ও ক্লুজনার। ড্রেসিংরুমে এসে জানতে পারেন ম্যাচ জেতার জন্য তাদের প্রয়োজন ছিল ২৩০ রানের, ২২৯ রান করাতে ম্যাচটা ড্র হয় এবিং ডিএল মেথডে ম্যাচটি জিতে যায় শ্রীলঙ্কা। শুধুমাত্র হিসেব ভুলের মাশুল দিতে বাদ পড়তে হয়েছে নিজ দেশের মাটিতে হওয়া বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব থেকে।    

25SA_071

ম্যাকগ্রার বলে আউট করে অজিদের উদযাপন 

  ২০০৭ বিশ্বকাপ : ম্যাগ্রার তোপে সেমিফাইনালে বিদায় 

এবি ডি ভিলিয়ার্স, হার্শেল গিভস, জ্যাক ক্যালিস ও শন পোলকের মতো এক জাক তারকা খেলোয়াড় নিয়ে প্রস্তুত বিশ্বকাপের ট্রফি ছোঁয়ার জন্য। ২০০৭ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে আগের বিশ্বকাপে সুপার সিক্স ও সেমিফাইনালে যাদের কাছে বিদায় নিয়েছিল, সেই অস্ট্রেলিয়া। গ্রুপ "এ" থেকে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়ে সুপার এইট নিশ্চিত করে চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া, অজিদের কাছে হারলেও স্কটল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে জয় তুলে নিয়ে অজিদের সঙ্গী হয় দক্ষিণ আফ্রিকা। গ্রুপ পর্বের খেলায় অস্ট্রেলিয়ার দেয়া ৩৭৮ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ২৯৪ রান করে হেরে যায়। কিন্তু সেমিফাইনালে হিসেবটা হাতে-কলমে বুঝিয়ে দিতে চায় দ. আফ্রিকা। 

সেমিফাইনাল ম্যাচ শুরু হবার পরেই সেই পুরোনো দ. আফ্রিকার এলোমেলো খেলাই দেখা যায়। টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং করতে নামে প্রোটিয়াস দল। ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে একাই হিংস্র হয়ে উঠে ম্যাকগ্রার ঘূর্ণায়মান বোলিং। মাত্র ২৭ রান দিয়ে পাঁচ উইকেট নিয়ে ১৪৯ রানে অলআউট হলো দক্ষিণ আফ্রিকা। অস্ট্রেলিয়া ম্যাচটি জিতেছিল মাত্র একত্রিশ ওভার তিন বল খেলে।

25SA_11a

আউটের পর  কিউইদের  উপর ক্ষেপাটে  ফাফ ডু ফ্লেসিস

২০১১ বিশ্বকাপ : কোয়ার্টার ফাইনালে বাঁধা নিউজিল্যান্ড 

আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপের ১০ম প্রতিযোগিতা ভারত, শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশে এই বিশ্বকাপ আয়োজিত হয়েছিল। শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে ভারত এই বিশ্বকাপে জয়ী হয়। এই বিশ্বকাপেই বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো আয়োজক দেশ হওয়ার সুযোগ পায়। সেরা দল হয়েও প্রতিবারের ন্যায় প্রোটিয়াদের ধস দেখা যায় ২০১১ বিশ্বকাপে। গ্রুপ পর্যায়ে ছয়টি ম্যাচে পাঁচ জয় ছিনিয়ে দারুণ উজ্জ্বীবিত দ. আফ্রিকা। গ্রুপ চ্যাম্পিয়নস হয়ে পরের ধাপ এগিয়ে যেতে বাধা হয়ে দাঁড়ায় নিউজিল্যান্ড। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে কিউইদের সংগ্রহ ২২১ রান। টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ভালোভাবে শুরু করে প্রোটিয়ারা। চব্বিশ ওভার শেষ স্কোরলাইন ১০৮ রান। আট উইকেট হাতে রেখে বাকি ছাব্বিশ ওভারে দরকার ১১৪ রান। কিন্তু পরের ওভারের প্রথম বলেই দক্ষিণ আফ্রিকার অলরাউন্ডার ব্যাটসম্যান জ্যাক ক্যালিস আউট হয়ে যায়, এতেই যেন প্রোটিয়াসদের ধসে পড়া শুরু হয়। বাকি অর্ধেক রানের তাড়া করতে গিয়ে ১৭২ রানে থেমে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। বিদায় ঘন্টা বেজে উঠে কোয়ার্টার ফাইনালে বিশ্বকাপে তাদের ষষ্ঠ আসর থেকে। পরিস্কার হতে থাকে প্রোটিয়াসদের ‘চোর্কাস’ ডাকার তকমা। বড় আসরের তারা হেলেদুলে পড়বেই এটা নিশ্চিত এক প্রকার সবাই। বিশ্বকাপ জিতবে দক্ষিণ আফ্রিকা, একথার উপর কেউই হয়তো বাজির ধরবেন না। 

24ABMissedRunOut

অকল্যান্ডে একটি সহজ রান আউট মিস করছেন এবি ডি ভিলিয়ার্স   

২০১৫ বিশ্বকাপ : এবার সেমিফাইনালে বাঁধা কিউইরাই   

দক্ষিণ আফ্রিকার শেষ দুটি বিশ্বকাপের দেয়াল হয়ে দাঁড়ায় নিউজিল্যান্ড। সেমিফাইনালের ম্যাচে প্রোটিয়াসদের ক্যাচ মিস, রান আউটে ব্যর্থতায় বিদায় নিতে হয়। কথার চলে বলা হয় ‘ক্যাচ মিস তোহ ম্যাচ মিস।’ যার প্রতিফলন ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে দক্ষিন আফ্রিকা স্পষ্ট দেখিয়ে দেয়। দুর্দান্ত ফিল্ডার হিসেবে পরিচিত এবি ডি ভিলিয়ার্স কোরি এন্ডারসনের সহজ রান আউট মিস করেন, যিনি পরবর্তীতে গ্র্যান্ড এলিয়টের সাথে শতরানের পার্টনারশিপ করেন। এছাড়া উইকেট কিপার ডি কক আরেকটি সহজ রান আউট মিস করেন। এগুলো ছাড়াও ম্যাচে আরো কিছু ক্যাচ মিসের ঘটনা ঘটে। দক্ষিণ আফ্রিকা টসে জয়ী হয়ে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। উভয় দলের ইনিংস ৪৩ ওভারের হয়। বৃষ্টির কারণে নিউজিল্যান্ডের জয়ের লক্ষ্যমাত্রা ২৯৮ ধার্য করা হয়। শেষপর্যন্ত শেষ ২ বলে যখন ৫ রানের প্রয়োজন ছিল, তখন সময়ের সেরা বোলার ডেল স্টেইনের বলে এলিয়ট এক বল হাতে রেখেই দুর্দান্ত একটা ছক্কা মেরে আবারও প্রমাণ করেন যে, দক্ষিণ আফ্রিকা বড় টুর্নামেন্টে আসলেই ‘চোকার্স’। দক্ষিণ আফ্রিকা দল বিশ্বকাপের সবগুলো সেমি-ফাইনালে চতুর্থবারের মতো পরাজয় বরণ করে।

সামর্থ্য থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ, তবে এর চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সামর্থ্যের প্রয়োগ ঘটিয়ে সর্বোচ্চ সফলতা অর্জন করা। সেই কাজটা নিঃসন্দেহে এখন পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকা করতে পারেনি। এই না করতে পারার জন্যেই দক্ষিণ আফ্রিকাকে ক্রিকেটের ‘চোকার্স’ বলা হয়। এই খেতাব দূর করার জন্য দক্ষিণ আফ্রিকা দলটিকে শুধু একটা কাজই করতে হবে- প্রয়োজনের দিনে নিজেদের স্বরুপে ফেরা। জ্বলে উঠার দিনে সেরা খেলা আর ভুলভ্রান্তি থেকে সতর্কতা অবলম্বন করে জয় ছিনিয়ে ‘চোর্কাস’ তমকা মুছে ফেলতে বদ্ধপরিকর দক্ষিণ আফ্রিকা।

[Note : All photos are collected from Getty Image & other news sources]