রোডস বনাম হাথুরু
পোস্টটি ৪৪৩৬ বার পঠিত হয়েছেনিউজিল্যান্ডের ম্যাচে পিচকে ভুল রিড করা নিয়ে বিতর্কটার শুরু, কিন্তু মিঠুনকে খেলানোর ব্যাপারে কোচের একগুঁয়ে মনোভাবে বিতর্কটা আরো বেগ পেয়েছে। একটা বছরে স্টিভ রোডসকে দেখে যা বুঝা গিয়েছে, চান্ডিকা হাথুরুসিংহের সাথে তাঁর পার্থক্যটা আকাশ পাতাল। চান্ডিকার রগচটা স্বভাব অপছন্দের হতে পারে, ক্রিকেটারদের সাথে ব্যাবহার নিয়ে হাজারো প্রশ্ন থাকতে পারে, দেশের ক্রিকেটের সিস্টেমটা নস্ট করার অন্যতম কারিগর হতে পারেন কিন্তু ম্যাচ জেতার ট্যাকটিক্সের ব্যাপার হাথুরুর সাথে রোডসের যথেস্ট পার্থক্য আছে। হাথুরুকে কখনোই সুবিধের মনে হয়নি, কিন্তু কয়েকটা কারনে তাকে কিছু ক্ষেত্রে বস মানতেই হবে।
১. র্যাংক টার্নার তৈরি করে যে টেস্ট ম্যাচ জেতার ব্যাপার, সেটা হাথুরুর আমলেই শিখেছিল বাংলাদেশ। এর আগে কখনোই এটা করেনি বাংলাদেশ, ২০১৬ র ইংল্যান্ড সিরিজেই এটার সাফল্যটা হাতেনাতেই পেয়েছে বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষের শক্তিমত্তা অনুযায়ী পিচ বানানোর স্ট্র্যাটেজিটার বাস্তবায়ন হাথুরুই করে গিয়েছেন, যেটার সাথে দ্বিমত পোষনের কোন সুযোগই দেখছিনা। জেতার জন্য এথিকসকেও পাত্তা দিতে রাজি না হাথুরু, আর এখানেই তিনি বড় একটা ক্ষতি করে গিয়েছেন। নিজের ক্যারিয়ারকে সমৃদ্ধ করতে দেশের ক্রিকেটের ভবিষ্যতের কথা না ভেবেই যেকোন মূল্যে জিততে চেয়েই সিস্টেমকে কলুষিত করে গিয়েছেন, কখনো কখনো সত্যিকারের ডেভেলপমেন্টকে বাধাগ্রস্ত করেছেন।
২. স্টিভ রোডসের থেকে হাথুরু যথেস্ট আগ্রাসী ছিলেন এটা মানতেই হবে, জুবায়েরের ব্যাপারে সিলেকশন প্যানেলের সাথে রীতিমতো যুদ্ধ করেছিলেন, এখনো আমার বিশ্বাস জুবায়েরকে টিকিয়ে রাখতে পারলে আমাদের দলটা দেশের বাইরে বড় দলগুলোর সাথে আরো ভাল করতে পারতাম। আবার তানভীর হায়দার, শুভাশিস রয়ের মত ক্রিকেটারদের নিয়ে হাস্যরসের জন্মও কম দেননি ওই হাথুরু! তবে সৌম্য, লিটনদের দলে নেয়া হাথুরুর আমলেই, মিরাজকে খেলিয়ে ইংল্যান্ডকে ধসিয়ে দেয়ার পরিকল্পনাও ওরই। কিন্তু দেশের বাইরে উন্নতিটা খুব একটা করে দিয়ে যেতে পারেননি হাথুরু, তার বেশিরভাগ পরিকল্পনাই আসলেই দীর্ঘমেয়াদের দলের ক্ষতিই করে গিয়েছে। ক্রিকেটারদের সাথে সাপে নেউলে সম্পর্কই ছিল তার, এসেই সাকিবকে নিয়ে যেই কান্ড করেছিলেন, কিংবা মুশফিক মাশরাফীর সাথে সময়ে সময়ে যেই বিরোধ তৈরি করেছেন, সেগুলো একটা কোচের কাছ থেকে কাম্য নয়।
রোডসের সাথে কখনোই হাথুরুকে মেলানো যাবেনা। হাথুরু যখন এসেছিলেন, তখনো আমরা মিনোজ হিসেবেই ছিলাম। বড় দলের বিপক্ষে যেকোন মূল্যে জেতার ব্যাপারটাই জরুরি ছিল। সেটা করে যেতে পেরেছেন, অবশ্য বিদেশে ভাল করার টোটকাটা দিতে যেতে পারেননি। তাঁর সময়ে নিউজিল্যান্ডে, সাউথ আফ্রিকাতে বাজেভাবে হারতে হয়েছে। ঘরোয়া ক্রিকেটকে হাথুরু কখনোই পাত্তা দেননি, কিন্তু এক্ষেত্রে রোডস কিন্তু ঘরোয়া ক্রিকেটের প্রতি যথেস্টই মনযোগী।
সাইফুদ্দিন, মিঠুন একারনেই কোচের প্রিয়পাত্র হয়ে উঠতে পারেন, ফজলে রাব্বিরা দলে ঢুকে যান, বহুদিন পরে ফরহাদ রেজা দলে সুযোগ পান। ক্রিকেটার সিলেকশনের ক্ষেত্রে একটূ মধ্যমপন্থী এই রোডস, মিডিওকোর ক্রিকেটাররা ম্যাচ উইনারদের থেকে তার বেশি পছন্দের। তবে হাথুরুর থেকে তিনি বেশি মিষ্টভাষী , দলের ক্রিকেটার থেকে শুরু করে পত্রিকার সাংবাদিক - কারো সাথে কখনো লাগতে গিয়েছেন বলে শোনা যায়নি এখন পর্যন্ত। তিনি প্রাপ্য ক্রেডিট ক্রিকেটারদের দিতে যানেন, সাকিবকে যথেস্ট গুরুত্ব দিচ্ছেন, ক্রিকেটারদের প্রশংসাটা করতে কখনোই এতটুকু কুণ্ঠাবোধ করেন না। দলের সিনিয়র থেকে তরুন- কারোর সাথেই তার বিরোধ আছে বলে কোন সংবাদ আসেনি এখনো! তবে রুবেলকে বসিয়ে সাইফুদ্দিনকে প্রমোট করা, মিঠুনকে বাদ দিতে না চাওয়া- এগুলোও দলের জন্য খুব ভাল কিছু নয়।
আমরা এখন যেই মানের দল হয়ে উঠছি, তাতে রোডস একটু ব্যাকডেটেড তো অবশ্যই। আবার হাথুরুর মত কোচও কখনো কোন দেশের জন্য কাম্য না। রোডসের মিডিওকর ক্রিকেটারদের প্রমোট করার ব্যাপারটা একটু ভোগাচ্ছে তো বটেই, সাহসের কমতি তো আছেই এই ব্রিটিশের মনে। পিচ ভুল বোঝার ব্যাপারে অবশ্য তাকে দোষ দেওয়াটা ঠিক হবেনা, পিচ বোঝার কাজটা শতভাগ নিখুঁত কোন মানুষের পক্ষেই করা সম্ভব নয়।
আক্রমন আর রক্ষনের মধ্যে ব্যালেন্সটা করা খুব গুরুত্বপূর্ণ, সেটা যেমন রোডসের ক্ষেত্রে, সেটা হাথুরুর ক্ষেত্রেও।
- 0 মন্তব্য