ব্যালন ডি'অর জিতার জন্য এগিয়ে যে ৫ ফুটবলার
পোস্টটি ৯৫০১ বার পঠিত হয়েছেইউরোপীয়ান ফুটবলে সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কারের নাম হলো ব্যালন ডি'অর। পুরো মৌসুম জুড়ে ইউরোপের সেরা খেলোয়াড়কে পুরস্কৃত করা হয়। মেসি-ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর দশ বছরের একচ্ছত্র আধিপত্যের পর গতবছর এই সম্মানজনক পুরস্কারে ভাগ বসান রিয়াল মাদ্রিদের ক্রোয়েট তারকা মদ্রিচ। এবার এই পুরস্কারে ভাগ বসাতে এগিয়ে নেই তিনি। গতমাসেই শেষ হলো ইউরোপীয় সব লিগের ম্যাচ। জুনের প্রথম সপ্তাহে চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনাল ম্যাচ হয়ে গেলো। এদিকে মৌসুম শেষে শুরু হয়েছে একাদিক আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট। প্রথমবারের মতো আয়োজন করা ইউরোপিয়ান নেশন্স লিগের সেমিফাইনাল ও ফাইনাল শেষ হলো। অন্যদিকে শুরু হয়েছে লাতিন আমেরিকার সবচেয়ে জমজমাট আসর কোপা আমেরিকা আর আফ্রিকা অঞ্চলের আফ্রিকা নেশন্স কাপ। সবমিলিয়ে মৌসুম শেষে সব খেলোয়াড় নিজ দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করতে ব্যস্ততায় রয়েছে।
সবকিছু চাপিয়ে এখন মুল আলোচনার হিড়িক হচ্ছে ব্যালন ডি'অর জিততে যাচ্ছেন কে? আবারো কি দশ বছর আধিপত্য করা সে মেসি-রোনালদোর ঝুলিতে যাবে! তবে সত্যি বলতে গেলে মেসি কিংবা রোনালদোর চেয়েও অনেকেই এইবার এগিয়ে আছে এই পুরস্কার জিতে নিতে। আজকের আর্টিকেলে থাকবে কোন ৫ জন প্লেয়ার এগিয়ে আছে।
৫. ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো
বর্তমান সময়ে ইতিহাসের সেরা তারকা খেলোয়াড় ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। গত মৌসুমে স্পেনের জায়ান্ট ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ ছেড়ে পাড়ি জমান ইতালির সেরা ক্লাব জুভেন্টাসে। লা লিগা ছেড়ে সিরিআ লিগে গিয়ে তেমন সুবিধা করতে পারেনি এই পর্তুগিজ তারকা। এমনটা হবারই কথা, নতুন কোথায়ও নিজেকে মানিয়ে নেওয়া সময়ের ব্যাপার রয়েছে। তবে ক্লাবে যোগ দেওয়ার প্রথম বর্ষে কম সাফল্য অর্জন করেনি। সিরিআ লিগে ৩১ ম্যাচ খেলে ২১ গোল করেছেন এবং ৮ গোলের যোগান দেন। নির্বাচিত হয়েছেন ইতালিয়ান লিগের বর্ষসেরা ফুটবলার। এছাড়াও চ্যাম্পিয়নস লিগে নয় ম্যাচে ছয় গোল এবং ২টি অ্যাসিস্ট রয়েছে তার।
জুভেন্টাসের হয়ে প্রথম মৌসুমে জিতেছেন একাধিক শিরোপা। তবে সবকিছু গত ৯ জুন জাতীয় দল পর্তুগালের হয়ে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে দারুন লড়াই করে শিরোপা জিতেছেন নেশন্স কাপের। পুরো টুর্নামেন্টে মাত্র দুটি ম্যাচ খেলে ৩ গোল করে জিতেছেন এই শিরোপা আর এটাই বছরের সবচেয়ে সেরা প্রাপ্তি ক্রিস্টিয়ানোর। তাই পরিসংখ্যানের হিসেবে ব্যালন ডি'অর জিতার সম্ভাবনা রয়েছে সি আর সেভেনের।
৪. মোহাম্মদ সালাহ
প্রিমিয়ার লিগে রাজত্ব করছে মিশরীয় তারকা খেলোয়াড় মোহাম্মদ সালাহ। ইয়ুর্গেন ক্লপের হাতে উঠে আসা প্রতিভাবান অসাধারণ একজন খেলোয়াড়। লিভারপুল ক্লাবে নিজের প্রথম মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগে গোল্ডেন বুট জিতে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল। খেলার ধারাবাহিকতা বজায় ছিল এই মৌসুমেও। লিগে ৩৮ ম্যাচে ২২ গোল এবং ৮ অ্যাসিস্ট করে সাদিও মানে ও অউবামেয়াং এর সাথে যথাক্রমে ভাগ করে নেয় আবারও গোল্ডেন বুট। যদিও প্রিমিয়ার লিগের বড় আক্ষেপ ছিল ১ পয়েন্টের। মাত্র এক পয়েন্টের জন্য লিগ শিরোপা হাত ছাড়া হয়েছে তার দল লিভারপুলের।
প্রিমিয়ার লিগ না জিতা হলেও জুতে নিয়েছেন ইউরোপের সেরা লিগ টাইটেল চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা। চ্যাম্পিয়নস লিগে ১২ ম্যাচে করেছেন ৫ গোল। সকল প্রতিযোগিতা মিলিয়ে মোট ২৭ গোল করে ব্যালন ডি'অর জিতার জন্য নিজেকে অনেক এগিয়ে রেখেছেন। তবে সম্ভাবনার ভিত্তি আরো শক্ত করতে হলে চলতি আফ্রিকা নেশন্স জিততে হবে।
৩. সাদিও মানে
ইয়র্গেন ক্লপের হাতে উঠে আসা আরেকজন প্রতিভাবান খেলোয়াড় সাদিও মানে। দিদিয়ার দ্রগবার পরে এই প্রজন্মে দ্বিতীয় আফ্রিকান হিসেবে সেনেগালের সাদিও মানেকে ধরা হয়। আফ্রিকা থেকে ইউরোপ পাড়ি জমিয়ে বেশ সুনাম কুড়িয়েছেন। ২০১৬ সালে জুন মাসে ৬৩ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে পাঁচ বছরের চুক্তিতে লিভারপুলে আসে সাদিও মানে। কিন্তু তার পজিশনে তখন থেকে খুব ভালো পারফরম্যান্স করে একাদশে জায়গা করে নিতেন ব্রাজিলের পিলিপ কুতিনহো। গত মৌসুমে কুতিনহো বার্সেলোনায় যেতে চাইলে কোচ তাকে বিদায় দিয়ে ভরসা রাখেন মানের উপর। এরপর থেকেই দুর্দান্ত খেলে ক্লপের শুরুর একাদশে জায়গা করে নিচ্ছেন। সাদিও মানের সতীর্থ হিসেবে লিভারপুলের শক্তিশালী এট্যাকে থাকছেন মোহাম্মদ সালাহ ও রবার্তো ফিরমিনোর সাথে।
২০১৭-১৮ মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগে ১১ গোল করেন সাদিও মানে। সে মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদের কাছে হেরে পরের মৌসুমে জিতে লিভারপুলের দীর্ঘদিনের শিরোপা খরা কাটায়। অন্যদিকে প্রিমিয়ার লিগে ২২ গোল করে গোল্ডেন বুটে যৌথভাবে ভাগ করে নেয় সতীর্থ মোহাম্মদ সালাহ ও অউবামেয়াং এর সাথে। আসন্ন আফ্রিকা নেশন্স কাপ সেনেগালের হয়ে জিততে পারলে সাদিও মানের ব্যালন ডি'অর জিতার সম্ভাবনা অনেকটাই নিশ্চিত বলা যাবে।
২. লিওনেল মেসি
বিশ্বের অন্যতম একজন খেলোয়াড় লিওনেল মেসি। ইউরোপের সর্বোচ্চ গোল স্কোরার এই বার্সেলোনা তারকা। শেষ মৌসুমে অসাধারণ পারফরম্যান্স উপহার দিয়ে জিতেছেন ইউরোপিয়ান গোল্ডেন বুট। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদ৷ লা লিগা ছেড়ে চলে যাওয়ার পর স্প্যানিশ লিগ লা লিগায় একাই বাজিমাত করছেন মেসি। যদিও গতবার লিগ শিরোপা ব্যাতিত আর কোনো শিরোপা জিতেনি তার দল বার্সেলোনা। তবে প্রচুর সম্ভাবনা ছিল এইবার চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতে ইউরোপে রাজত্ব করার। সেমিফাইনালের প্রথম লেগে লিভারপুলকে ৩ - ০ গোলে হারিয়ে ফাইনালে এক পা দিয়ে রেখেছিল। কিন্তু দ্বিতীয় লেগে এনফিল্ডের মাঠে ৪ - ০ গোলের লজ্জাজনক হার হার বাদ যেতে হয় চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে। অন্যদিকে কোপা দেল রে'র ফাইনালে ভ্যালেন্সিয়ার কাছে হেরে আবারো শিরোপা বঞ্চিত হয় লিওনেল মেসির বার্সেলোনাকে।
একাধিক ডোমেস্টিক শিরোপা জুততে না পারায় লিও মেসির ব্যালন ডি'অর জিতার মারপ্যাঁচ একটু কঠিন সমীকরণে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। তবে সম্ভাবনা মাত্রা সম্পুর্ন মেসির দিকে ঘুরে যেতে পারে যদি তার দল আর্জেন্টিনা কোপা আমেরিকা জিতে নেয়। তাহলে নিশ্চিত বলা যায় সকল ‘যতি - কিন্তুর’ অবসান ঘটে যাবে। তবে কোপা আমেরিকার গ্রুপ পর্ব পার হতে আর্জেন্টিনাকে খেতে হয়েছে অনেক নাকানিচুবানি।
১. ভার্গিল ভ্যান ডাইক
বর্তমান সময়ের সবচেয়ে সফল সেন্টার-ব্যাক নিঃসন্দেহে ডাচ ফুটবল দলের ক্যাপ্টেন ও প্রিমিয়ার লিগের লিভারপুল দলের একজন নান্দনিক ফুটবলার ভার্গিল ভ্যান ডাইক। শিরোপা খরা লিভারপুলের চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতার পেছনের মুল কারিগর ছিলেন ডাইক। সাফল্যের সেরা সময়ে রয়েছে নেদারল্যান্ডসের তারকা ফুটবলার। গত মৌসুমে তিনিই একমাত্র ডিফেন্ডার যাকে কোনো খেলোয়াড় সফল ড্রিবলিং করতে পারেনি। প্রিমিয়ার লিগের সেরা তারকা ছাড়াও চ্যাম্পিয়নস লিগের সুবাদে মেসি, ক্রিস্টিয়ানো, নেইমার, লেওয়ান্ডস্কি ও এমবাপ্পেদের মতো খেলোয়াড়ও পারেনি তাকে পরাস্ত করতে। লিভারপুলের রক্ষনে থেকে নিজের শতভাগ উজাড় করে খেলেছেন। একজন ডিফেন্ডার হয়েও সকল প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৬টি গোল করতে সক্ষম হয়েছেন।
২০০৫ সালের পর লিভারপুল জিতেছে চ্যাম্পিয়নস লিগ। দীর্ঘ ১৩ বছর পর ইউরোপীয় রাজত্ব ফিরে পাওয়া সম্ভব হয়েছে ডাইকের সেরা পারফরম্যান্স দিয়েই। যদি উপরের বাকি চারজন কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে তবে ভ্যান ডাইক ব্যালন ডি'অর পেতে যাচ্ছে এটা নিশ্চিত বলা যায়। ২০০৬ সালে ফ্যাবিও ক্যানাভারোর পর আর কোনো ডিফেন্ডার যে ফুটবলের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ অ্যাওয়ার্ডটি হাতে তুলতে পারেননি। ক্যানাভারোর পর হয়তো ডিফেন্ডারদের সর্বোচ্চ পুরস্কারের ক্যানভাস আবার লিখতে যাচ্ছেন ভ্যান ডাইক।
- 0 মন্তব্য