হ্যা,ওনার কথাই বলছি।বাংলায় একটা প্রবাদ আছে,"দাঁত থাকতে দাঁতের মর্ম বোঝে না"।কথাটা আমাদের ক্ষেত্রেও সত্য।যখন আমাদের সাথে ছিলেন,প্রশংসা অবশ্যই করতাম।কিন্তু যখন চলে গেলেন,তখনও বুঝিনি, আমরা কি হারাতে চলেছি!!আজ অনেক কিছু শেষ হওয়ার পর আমরা আসলেই নিশ্চিত হয়েছি,তিনি কে ছিলেন...
ছিলেন আমাদের মতই ক্রিকেট ওয়ার্ল্ডের তখনকার আন্ডাররেটেড তথাকথিত পুচকে জিম্বাবুয়ের মত দেশের প্লেয়ার।সেই দেশের হয়েই এন্ডি ফ্লাওয়ার-গ্রান্ট ফ্লাওয়ারদের সাথে বিশ্বকে নিজেদের ক্ষমতার জানান দিয়েছেন।জিম্বাবুয়ের মত দলে খেলেই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন সময়ের অন্যতম সেরা পেস বোলিং অলরাউন্ডার হিসেবে।
যখন বিশ্ব ক্রিকেটে কোচিং পেশায় ঢুকলেন,একসময় পরিচয় হল আমাদের সাথে;ইনজুরি আক্রান্ত মাশরাফি,তখনও তরুণ তাসকিন,আল আমিন,রুবেলদের সাথে,দেখা পেলেন মুস্তাফিজ নামক রহস্যের।"
ভাল প্লেয়ার নাকি ভাল কোচ হয় না"-এই প্রবাদকে ভুল প্রমাণ করলেন।যতটা ভাল প্লেয়ার ছিলেন,কোচ হিসেবে তার থেকে বিন্দুমাত্র কম যাননি।বিশ্বকাপে তার শিষ্যেরা তার প্রতিফলনও ঘটিয়েছিল।সৌরভ গাঙ্গুলি তাসকিন-রুবেলদের বোলিং দেখে সোজাসুজি তাসকিনের বোলিংয়ের সময়ই মন্তব্যই করেন,"হি ইজ বোলিং নট এট গুড পেস,বাট হি ইজ বোলিং এট সিরিয়াস পেস"।ইংল্যান্ডের সাথে ম্যাচে ডেথে রুবেল হোসেনের ডেডলি ইয়োর্কার,কিংবা হাশিম আমলার স্ট্যাম্প উড়িয়ে ফেলা ;এগুলোর পেছনে এই মানুষটির জাদু ধরতে আমরা দেরিই করেছলাম।কারণ আমরা সাধারণ মানুষ কিনা!আর আল আমিনের আন অর্থাডক্স বোলিংও হয়ে উঠেছিল ম্যাচ উইনিং উইপন।ম্যাশ নতুন বলে দুর্দান্ত ছিলেন।তাসকিন গতির ঝড়ের সাথে অসাধারণ ইনসুইং করাতেন।কাপিয়ে দিতেন বাঘা বাঘা ব্যাটসম্যানদের।মুস্তাফিজ নামক মিডিয়াম পেস রহস্যকে ক'দিনেই শাণিত করে বানালেন ফাস্ট বোলার,যে কিনা ১৪০ এর উপরেই রেগুলার বল করবে,যার ফলে তাঁর ইয়োর্কার হয়ে উঠেছিল বিপজ্জনক।কাটার-
স্লোয়ার হয়ে গেছিল লিথাল।সময়ে-অসময়
ে দিক নির্দেশনা দিতে পানির বোতল হাতে ছুটে আসতেন মাঠে।
তাঁর আন্ডারে বাংলাদেশ পরিণত হয়েছিল এশিয়ার সেরা পেস ব্যাটারিতে;বাংল
াদেশি পেস বোলিং সাধারণ মামুলি সংগ্রহ নিয়েই যে কোন পিচে যে কোন দলকেই চ্যালেঞ্জ দিতে পারত শর্টার ভার্সনে।এমনকি এশিয়ান পিচেও ১৩০ এর আশপাশে রান করেই টি-টোয়েন্টি ম্যাচ পর্যন্ত জিতেছি।
সেই বোলাররা টিভিস্ক্রিনের সামনে আজও ভেসে বেড়ায়।সবারই পেস হারিয়ে গেছে,সুইং আজকাল ভুলেই গেছে সবাই,টানা বোলিং ব্যর্থতায় অনেকে জাতীয় দলের রেস থেকেও ছিটকে গেছেন।খুব মায়া লাগে,তরুণ রাব্বি-শুভাশুষ- রনি-এবাদত-খালেদ-হোসেন আলী-হাসান মাহমুদ-কাজী অনিক-মেহেদী হাসান রানা-শরিফুলদের জন্য।এতগুলো সম্ভাবনাময় তরুণ;সঠিক গাইডেন্স এর অভাবে হারিয়ে যাবে না তো ওরা??
জানি,কোন এক সময়ে অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবেই আমাদের সাথে তার সম্পর্কচ্ছেদ হয়েছিল।নিজ দেশে সম্মান পাবার বদলে হয়েছেন চাকরিচ্যুত,অপমানিত।যতদূর শুনেছি,বড় কোন দায়িত্বেও তিনি এখন নেই।আর বিশ্বকাপে আমাদের পেস ব্যাটারীর দৈন্যদশা সমগ্র বিশ্বের কাছেই সুস্পষ্ট।এমন অবস্থায় ত্রাণকর্তা হিসেবে তাঁর চেয়ে ভাল আর কার কথাই বা ভাবতে পারি,বলুন??