গল্পে-কল্পে ঘরোয়া ক্ল্যাসিক ০৪ : ৯৭ বলের সাসপেন্স
পোস্টটি ১৬৫৫ বার পঠিত হয়েছেগল্পে-কল্পে ঘরোয়া ক্ল্যাসিক ০১
গল্পে-কল্পে ঘরোয়া ক্ল্যাসিক ০২
গল্পে-কল্পে ঘরোয়া ক্ল্যাসিক ০৩
টেকো মাথার ভদ্রলোক কঠিন সাধকের মতো সাধনায় লিপ্ত যেন! জগতের কোনো দিকে বুঝি খেয়াল নেই। তাঁর সঙ্গী-সাথী সবাই তাঁকে ‘একাকী’ রেখে ফিরে গেছেন, কিন্তু ভদ্রলোক নির্বিকার। নিঃসঙ্গ কবি হয়ে অমর এক মহাকাব্যের পথে দৌঁড়ে চলেছেন একটু একটু করে।
তাঁর গুরু বাংলাদেশ ক্রিকেট থেকে বিদায় নিয়েছেন বহুদিন। যদি থাকতেন এখনো, তাহলেও হয়তো তাঁর এই নিঃসঙ্গ-কাব্য সৃষ্টির সাক্ষী হতে পারতেন না। গুরুর যে প্রথম শ্রেণির ম্যাচ দর্শনে ছিল বড্ড অনীহা। গুরু নেট-অনুশীলনে ক্রিকেটার যাচাই করতেন। তেমনই এক নেট-সেশনে তাঁকে দেখে ভালো লেগে গিয়েছিল গুরুর। তখন হন্য হয়ে একজন লেগি খুঁজছে বাংলাদেশ। আদিল রাশিদ-রাশীদ খান-ইমরান তাহির-যুবিন্দর চাহাল ছড়ি ঘুরিয়ে চলেছেন বিশ্বজুড়ে, অথচ বাংলাদেশ ক্রিকেট জুবায়ের লিখনে আশাহত হয়ে, আর কাউকেই পাচ্ছে না খুঁজে।
চন্ডিকা হাথুরুসিংহের মনে হলো, এই ছেলে নিউজিল্যান্ড কন্ডিশনে বেশ কাজে দেবে তাঁর। যেই ভাবা সেই কাজ। রাতারাতি বিখ্যাত বনে গেলেন তানবির হায়দার। গুরু হাথুরুসিংহের আশীর্বাদ-পুষ্ট হয়ে উড়াল দিলেন নিউজিল্যান্ড। কিন্তু হায় নিয়তি! ২ ম্যাচ ও তিনদিনের স্বপ্নযাত্রা শেষেই মোহভঙ্গ।
সেই তানবির হায়দার লড়ে চলেছেন একা, একদম একা। মধ্যঞ্চলের দেয়া ৩৩০ রানের লক্ষ্য উত্তরাঞ্চলের হয়ে ছুটছেন তিনি, তাঁর সতীর্থ বন্ধুরা সবাই ছেড়ে গেছেন তাঁকে। এখন একদম শেষজন ক্রিজে। ২৮৮ রানে নবম উইকেটের পতন হয়ে ফিরে গেছেন তাসকিন। সালাউদ্দীন সাকিল কোনোমতে ব্যাট ধরতে জানেন হয়তো, তানবির তাঁকে সঙ্গে করেই পার করে দিয়েছেন সোয়া এক ঘন্টা। মধ্যমাঠে সাত ঘন্টারও বেশি সময় পার করে ফেলেছেন তিনি। খুব কাছে চলে এসেছেন, এই তো আরেকটু এগোনো গেলেই বিজয়ীর বেশে মঞ্চ ছাড়বেন নায়ক, মাত্র সাত দৌঁড় দূরত্বে তিনি, মধ্যঞ্চল তাঁকে বিজয়ের মহানায়ক হতে দেবে তো? নাকি ট্র্যাজেডির অসহায় নায়ক হওয়াই তাঁর পরিণতি?
*****
জাতীয় দলের বন্ধুরা গেছে পাকিস্তান, সেখানে ক্রিকেটের আবাদ হবে। সন্ত্রাস-ঘৃণা-হানাহানি-সংঘাত রুখে দিয়ে স্লোগান উঠবে শান্তি-প্রীতি-সৌহার্দ্যের।
নাইম ইসলাম উত্তরাঞ্চলের অধিনায়ক, তাঁর দলে আছেন পাকিস্তান না-যাওয়া, জাতীয় দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ—মুশফিকুর রহিম। মধ্যঞ্চলের নেতৃত্বে শুভাগত হোম। টস হারলেন তিনি। টসজয়ী নাইম পেসারদের সুযোগ দিতে ভুল করলেন না মোটেও, তাঁর বোলাররাও তাঁকে হতাশ করেননি। তাসকিন আহমেদের নেতৃত্বে প্রথম ঘন্টাতেই কোমড় ভেঙ্গে গেল মধ্যঞ্চলের। আধ-ঘন্টাতেই খোঁয়া গেল ৪ উইকেট। রাকিবুল হাসান ও অধিনায়ক শুভাগতর চেষ্টাতেও সুবিধা হলো না খুব একটা। লাঞ্চে গেল তাঁরা ৮৪ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে। রাকিবুল হাসান ৭০ রান করে ইনিংসটার আয়ু টি-ব্রেক পর্যন্ত বাড়ালেন, তাসকিনের ফাইফারে মধ্যঞ্চল গুটিয়ে গেল ১৭০-এ।
ঘন্টা কয়েকের হেরফেরে প্রায় দেড়-যুগ পর পাকিস্তানে শুরু হওয়া বাংলাদেশের প্রথম টেস্টটির শুরুটাও দুঃস্বপ্নের মতো। পাকিস্তান থেকে আগত সংবাদও ভালো নয়, ভালো নয় নিজেদের পারফরম্যান্সও। মধ্যঞ্চল বোলিংয়েই বাজিমাৎ-এর অপেক্ষা ছাড়া আর কী করতে পারে?
*****
রনি তালুকদার ও জুনাঈদ সিদ্দিকীর দুর্দান্ত সূচনার পরও শেষ বিকেলে ৩ উইকেট হারিয়ে বসল উত্তরাঞ্চল। পরদিন সকালের শুরুটা যেন আগের দিন বিকেলের শেষ থেকে হলো উত্তরাঞ্চলের। ১০১ রানে নেই ৬ উইকেট। লিড নেয়ার স্বপ্নটা কি উঁকি দিচ্ছিল শুভাগত হোমের মনে?
আরিফুল হকের ফিফটিতে মধ্যঞ্চলের কাছাকাছি গিয়ে থামল উত্তরাঞ্চল। শুভাগত হোম মুচকি হাসলেন কি? ৪ রানের লিড পেয়েছেন যে!
এবার আর কোনো ভুল করা চলে না। বোলিংয়ের আত্মবিশ্বাস কাজে লাগিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা প্রথমেই খেল ধাক্কা। তাসকিন দ্বিতীয় বলেই বোল্ড করে ফেরালেন নাইম শেখকে। নাইম প্রথম ইনিংসেও শূণ্য করেছিলেন, ফলে ‘পেয়ার’ বা চশমা প্রাপ্তি হলো তাঁর। ৫০ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকা দল, দিশে পেল অধিনায়কের ব্যাটে। সামনে থেকে নেতৃত্ব দিলেন শুভাগত। তাইবুর, আব্দুল মজিদ ও জাকের আলীকে সঙ্গে করে দলের লীড বাড়িয়ে নেন আড়াইশো পর্যন্ত। লেজের দিকের ব্যাটসম্যান নিয়ে স্কোর নিয়ে যান সোয়া তিনশো (৩২৫) পর্যন্ত। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হওয়ার আগে পরিসংখ্যানের খাতায় পুরে দেন স্ট্রোক ঝলমলে ১২২ রান। যাতে ১৩টি চারের সাথে ছিল ২টি ছয়ও।
উত্তরাঞ্চলের সামনে লক্ষ্যমাত্রা দাঁড়ায়—৩৩০। বাকি আছে আরো সাড়ে চার সেশন।
*****
তানবির হায়দার শুরুটা করেছিলেন সিলেটের হয়ে, ২০১০ সালে। পরে স্ব-বিভাগ রংপুরের হয়ে খেলতে শুরু করেন। লোয়ার অর্ডার থেকে টপ অর্ডারে বিভিন্ন পজিশানে ব্যাটিং করেও সাফল্য ধরা দিচ্ছিল না তাঁর, লেগ স্পিনেও কাজের কাজ কিছু করতে পারছিলেন না। প্রথম সেঞ্চুরিটা পান চট্টগ্রামের বিপক্ষে। সিলেটের মাঠে, রংপুরের হয়ে খেলতে নেমে যেন ফিরে পেয়েছিলেন নিজেকে। সে ২০১২ সালের কথা। তারপর জাতীয় দলে সৌভাগ্যের চাকা ঘুরলেও, বন্ধ হতেও সময় লাগেনি তা। মাঝারী মানের অলরাউন্ডার হিসেবে বেশ নাম-ডাক আছে। ঘরোয়া ক্রিকেটে নিজের একটা অবস্থানও গড়ে নিয়েছেন।
উত্তরাঞ্চলের হয়ে পর্বতপ্রমাণ ৩৩০ তাড়ায় তিনি নামলেন ওয়ান ডাউনে, প্রথম সেঞ্চুরিটাও পেয়েছিলেন এই পজিশানে খেলে। রনি তালুকদারের বিদায়ে নামার পর প্রথম বলেই দেখলেন, ওপ্রান্তে জুনায়েদ সিদ্দিকীর বেল ফেলে দিয়েছেন তরুণ মুকিদুল ইসলাম। মধ্যমাঠে আসলেন বহু লড়াইয়ের পরীক্ষিত যোদ্ধা—নাইম ইসলাম। এই লোককে বহুবার তিনি দেখেছেন সংযম আর নিবেদন দিয়ে তিল তিল করে গড়েছেন রানের সুবিশাল অট্টালিকা। কতবার দলের বিপদে দাঁড়িয়েছেন বুক চিতিয়ে। তিনি তাঁর রংপুর বিভাগেরও সতীর্থ-বন্ধু-বড় ভাই। যখন মনে হচ্ছে জমে গেছেন, টলানো যাবে না আর, ঠিক তখন শুভাগত হোমের অফস্পিনে ধরাশায়ী ক্যাপ্টেন। দেড়ঘন্টার সহযোদ্ধা বিদায় নিচ্ছেন, ৩১ রানে দাঁড়িয়ে থাকা তানবির তখন লম্বা দৌঁড়ের জন্য সিনা টানটান করছেন।
মধ্যমাঠের দিকে ছোট ছোট পা ফেলে হেঁটে আসছেন ছোটখাটো একজন। যাকে দেখলে তানবির ঠিক যতটা আস্থাশীলতা আর নির্ভরতা খুঁজে পান, ঠিক ততটাই অস্বস্তি মধ্যঞ্চল-শিবিরে। কারণ, সবাই জানে ছোটোখাটো ঐ ভদ্রলোক যতক্ষণ ক্রিজে থাকবেন, ততক্ষণ ধরে ধীরে ধীরে ফিকে হয়ে আসবে মধ্যঞ্চলের বিজয়-স্বপ্ন।
সেই মুশফিকুর রহিমও ঘন্টা খানেক পর ছাড়লেন মাঠ। মিনিট দশেক পর আরিফুলও আউট। শেষ বিকেলের ম্লান সূর্যটা হঠাৎ উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে মধ্যঞ্চলের জন্য। প্রমাদ গোণেন তানবির। এ কোন দুর্যোগ! প্রথম সারির পাঁচ ব্যাটসম্যানই প্যাভিলিয়নে। অঙ্কন—দারুণ প্রতিভাবান। সন্দেহ নেই। কিন্তু বড্ড ছোটো। তাঁকে নিয়ে এই সুবিশাল সমুদ্র পাড়ি দেবেন কীভাবে?
৫ উইকেট হারিয়ে ১৫৬ রান। তৃতীয় দিন শেষ। তানবির ৫৪ রানে অপরাজিত। টেকো মাথার ভদ্রলোকের মাথায় কি তখন খেলা করছে রাজ্যির দুশ্চিন্তা? অনুভব করছিলেন কি ভীষণ-কঠিন চাপ?
*****
শেষদিন সকালে ২২ গজের দিকে হেঁটে যেতে যেতে কি ভাবছিলেন তানবির? বড় ইনিংস খেলতে হবে তাঁকে, দলকে ভেড়াতে হবে জয়ের বন্দরে? নাকি যতটা পারি খেলব, টেনে নেব যতটা সম্ভব—ভাবনায় মগ্ন ছিলেন তিনি?
মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন—বয়স ভিত্তিক দল উঠে এসেছেন। দারুণ সম্ভাবনাময়ী। তানবির তাঁকে নিয়ে শুরু করলেন দুর্লঙ্ঘ্য পাহাড়-চূড়া বেয়ে উঠার কাজ। প্রথম একঘন্টা স্বচ্ছন্দে কাটিয়ে দিলেন দু’জন। ড্রিংকস ব্রেকের আগের ওভারে শুভাগত হোমের ওভার থেকে তিন চারে ১৬ রান নিলেন তানবির। ৭৮ থেকে একলাফে ৯৩-তে পৌঁছে গেলেন তিনি। হাতছানি দিয়ে ডাকছে ৭ম সেঞ্চুরি। জয়ের জন্য আরো দরকার ১১৫।
সেই শুভাগতকে আলতো টোকায় ঠেলে দিয়ে তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগার ছুঁলেন তিনি। শেষ রক্ষা হলো না অঙ্কনের, আরাফাত সানির বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়লেন। ২২৯ রানে পতন হলো ষষ্ঠ উইকেটের। ভাঙলো ৮৪ রানের জুটি, যাতে তানবিরেরই ৫৪। এনামুল জুনিয়ার মিনিট দশেকেই কুপোকাত। জয় থেকে তখনো ৯২ রান দূরে উত্তরাঞ্চল। তানবির অপরাজিত ১০৭ রানে।
সুমন খান লাঞ্চের পর টিকে গেলেন আধঘন্টারও বেশী। তাঁর ১৩ রানের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ তানবিরের সঙ্গে ৪২ রানের জুটির অংশীদার তিনি। নতুন বল হাতে মুস্তাফিজ ফিরেই পরপর দুই ওভারে নিলেন দুই উইকেট। সুমন ও তাসকিন। উত্তরাঞ্চল ৯ উইকেট হারিয়ে বসেছে ২৮৮-তে, ওপ্রান্তে তানবির দাঁড়িয়ে ১৪৪ রানে।
মধ্যঞ্চলের চাই মোটে ১ উইকেট। আর তানবিরের আরো ৪২ দৌঁড়!
*****
সালাউদ্দীন সাকিল ঠেকিয়ে দেন মুস্তাফিজের চারটি বল। হাঁপ ছেড়ে বাঁচেন তানবির। পরের ওভারে আবার সিঙ্গেল নেন, সাকিল ঠেকান আবার। মুস্তাফিজের পাঁচ বল খেলে সিঙ্গেল নেন তিনি, একটা বল ঠেকিয়ে দেন সাকিল। সহিদুল ইসলামকে গ্যালারীতে আছড়ে ফেলে দেড়শো ছাড়িয়ে যান তিনি, সেই ওভারের পঞ্চম বলে আবার সিঙ্গেল। মুস্তাফিজের পরের ওভারে আবার একই কান্ড। পঞ্চম বলে সিঙ্গেল। স্কোর হয়ে যায় ঠিক তিনশো। শুভাগত পরিকল্পনা বদলে নেন। সহিদুলকে সরিয়ে আক্রমণে আসেন আরাফাত সানি। সানির পঞ্চম বলে চার, আর ষষ্ঠ বলে এক রান। তানবির হায়দার আবার ক্রিজে!
পরের তিনটি ওভার, মুকিদুল-আরাফাত-মুকিদুল অনুসরণ করলো একই চিত্রনাট্য। ঠিক পঞ্চম বলে সিঙ্গেল, শেষ বলে সামলে নেন সাকিল। তানবির তখন পৌঁছে গেছেন ১৬৩-তে। জয়ের নোঙর ২২ কদম দূরে তখনো।
সাকিল আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছেন। তানবিরও আস্থাশীল হয়ে উঠেছেন সঙ্গীর প্রতি। পরের ওভারে সানির শেষ বলে চার মারলেন তানবির। গোটা একটা ওভারের সামনে পড়ে গেলেন সাকিল। এই তো চাইছিলেন শুভাগত, আক্রমণে এলেন নিজেই। তাঁর ছয়টি বলই ঠেকিয়ে দেন সাকিল। এবার ঠান্ডা মাথায় ধীরে চলো নীতি নেন তানবির। এক-এক করে এগোতে চান। আরাফাত সানির পঞ্চম বলে চার, আর শেষ বলে সিঙ্গেল নিয়ে পাঁচ নিয়ে ফেললেন। জয়ের রান সংখ্যা নেমে এলো সিঙ্গেল ডিজিটে। আর লাগে নয় রান। তানবির অপরাজিত ১৭৫ করে। মুকিদুল-আরাফাত দুজনেরই পঞ্চম বল থেকে সিঙ্গেল নিয়ে দুই ওভার থেকে আরো দুই রান যোগ করলেন স্কোর বোর্ডে।
তিনি যেনো কোনো ধ্যানী কবি। একটি একটি করে পংক্তি জুড়ছেন কোনো এক মহাকাব্যে। ইতিহাস হতে তানবিরের চাই আর মাত্র ৭ রান। আর কবির ধ্যান ভাঙতে মধ্যঞ্চলের অপেক্ষা একটি মাত্র উইকেটের। একটা মাত্র উইকেট-বল!
*****
মধ্যহ্নের সূর্য সমস্ত দাপট নিয়ে জ্বলজ্বল। শুভাগত হোম ইতিমধ্যে তাঁর সব বোলারের দ্বারস্থ হয়েছেন। মুস্তাফিজ-সহিদুল-মুকিদুল-আরাফাত। শুভাগত নিজেও চেষ্টার ত্রুটি রাখেননি। কিন্তু গোঁয়ারের মতো একা-হাতে লড়ে যাচ্ছেন মানুষটা। শ্রদ্ধা জাগলেও সময়টা সম্মান দেখানোর নয়। উত্তরাঞ্চলের ক্রিকেটাররা উত্তেজনায় কাঁপছেন রীতিমতো। কি অবিশ্বাস্য এক পরিণতির দিকে এই ম্যাচ! শেষ উইকেট ইতিমধ্যেই যোগ করেছে ৩৫ রান। কেটে গেছে সোয়া একঘন্টা। ১৫ দশমিক ৪ বল হয়ে গেছে, একটা উইকেট বল—একটা ম্যাজিক ডেলিভারি করতে পারেনি মধ্যঞ্চল।
মুকিদুল ইসলাম বোলিং এন্ড থেকে তিন স্ট্যাম্প ঘিরে থাকা দুর্দান্ত লড়াকুকে দেখছেন। ভাবছেন কি বল করা যায়? একটা বাউন্ডারি হলেই শেষ, সব শেষ। প্রথম বলটি করলেন, ঘটনাহীন। দ্বিতীয় বলটিও ঘটনাহীন। তৃতীয় বলটি, হ্যাঁ তৃতীয় বলটিতে ঘটল সমস্ত অপেক্ষার অবসান। বোল্ড। অবশেষে পরাস্ত করা গেছে দুর্দমনীয় মানুষটাকে। মুকিদুল উচ্ছ্বসিত হয়ে উড়বেন যেন! মধ্যঞ্চলের সবাই ঘিরে ধরে তাঁকে। হতাশায় নুয়ে পড়া মানুষটির দিকেও ছুটে যায় বাহবার করতালি। সপ্রশংস দৃষ্টিতে মিশে থাকে শ্রদ্ধা।
১৭৭ রানের ক্ল্যাসিক ইনিংসটা তাঁকে বিজয়ীর বেশে দাঁড় করায় না সত্যি, তবে দিনশেষে তাঁকে ঠিকই দেয় একজন বীরের সম্মান। মধ্যঞ্চলের ৯৭ বলের দীর্ঘ অপেক্ষার ৭০টি বলই তো সামলেছেন এই ভদ্রলোক। আত্মসংযম আর একাগ্রতার সমন্বয়ে মরে আসা স্বপ্নে দিয়েছেন রঙ। ফিকে হওয়া আশায় এনেছেন জাগরণী সংগীত। ৬ রান দূরত্বের সাধ্যি কি তাঁর প্রাপ্য মুকুট থেকে তাঁকে দূরে রাখে? মধ্যহ্নের সূর্য-তলে শেষ হওয়া এক ক্ল্যাসিকের নায়ক হয়েই তিনি বাঁচবেন, দূর্ভাগা হয়ে নয়। আছে কোনো দ্বিমত বা সংশয়?
মধ্যঞ্চল বনাম উত্তরাঞ্চল
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম, সিলেট; ৭ই ফেব্রুয়ারী-১০ই ফেব্রুয়ারী, ২০২০
বাংলাদেশ ক্রিকেট লীগ, ২০১৯-২০২০
মধ্যঞ্চল : ১৭০ ও ৩২৫
উত্তরাঞ্চল : ১৬৬ ও ৩২৩
ম্যাচসেরা—শুভাগত হোম
ফলাফল—মধ্যঞ্চল ৬ রানে জয়ী
- 0 মন্তব্য