• ফুটবল

মারিয়া মান্দা: গৃহপরিচারিকা থেকে ফুটবলার হওয়ার গল্প

পোস্টটি ২৮২৬ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

মারিয়া মান্দার জন্ম ২০০৩ সালের ১০ ই মে, ময়মনসিংহের ধোবাউরার কলসিন্দুরে। বাবা কী জিনিস সেটা বোঝার বয়স হওয়ার আগেই হারিয়েছেন বাবা বীরেন্দ্র মারাতকে, মা এনাতো মান্দার জীবনে নেমে আসল গভীর অন্ধকার। সহায়-সম্বল বলে ছিল না কিছুই। মারিয়াদের তিন বোন ও এক ভাইকে মানুষ করার জন্য মাকে কাজ নিতে হলো গৃহপরিচারিকার। মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাজ করতেন মারিয়ার মা, মাঝে মাঝে মারিয়া এবং তার বড় বোনকেও কাজে হাত লাগাতে হত। সীমাহীন কষ্টের মধ্য দিয়ে যেতে থাকা মারিয়ার জীবনে হাসি ফুটিয়েছে ফুটবল।

কলসিন্দুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষকের সহযোগিতায় শুরু হয় কলসিন্দুরের মেয়েদের ফুটবলের পথচলা। চলতে থাকে নিয়মিত অনুশীলন, ট্রেনিং সেশন। ইন্টারনেট থেকে ফুটবল ট্রেনিংয়ের বিভিন্ন কলাকৌশল নামিয়ে শিক্ষকের নেতৃত্বে চলত সেসব রপ্ত করার ক্রিয়াকৌশল। ২০১১ সালে বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্ট উপলক্ষে খালি পায়ে শুরু হয়েছিল মারিয়ার ফুটবল খেলা। ২০১৩ সালে সেই টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয় কলসিন্দুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তারপরই মারিয়ার পায়ে ওঠে বুট। আস্তে আস্তে বদলে যেতে থাকে মারিয়ার পৃথিবী। কিন্তু তখনো মা'র সঙ্গে পাশের বাড়িতে গিয়ে গৃহপরিচারিকার কাজ করতে হত মারিয়াকে।

২০১৪ সালে অনুর্ধ্ব-১৪ দলে ডাক পান মারিয়া। এএফসি অনুর্ধ্ব-১৪ আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়নশীপে চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ, সে দলের সহ-অধিনায়ক ছিলেন মারিয়া। ২০১৭ সালে ঢাকায় অনুর্ধ্ব-১৫ সাফে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ, মারিয়ার নেতৃত্বেই। পরের বছর এএফসি অনুর্ধ্ব-১৬ বাছাইপর্বেও অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়া বাংলাদেশ দলের সদস্য ছিলেন মারিয়া। জায়গা পেয়েছেন মূল জাতীয় দলেও। শিলিগুড়ি সাফে বাংলাদেশের রানার্সআপ হওয়ার পেছনেও ছিল মারিয়ার গুরুত্বপূর্ণ অবদান। মারিয়ার নেতৃত্বেই এশিয়ার সেরা আটেও জায়গা করে নিয়েছে বাংলার কিশোরীরা। বাংলার নারী ফুটবলের জাগরণের এক কার্যকরী সেনানী মারিয়া মান্দা। বয়সভিত্তিক ফুটবলে এশিয়ার বড় বড় দলকে চ্যালেঞ্জ জানানো বাংলার মেয়েদের লক্ষ্য বিশ্বকাপ ফুটবলে জায়গা করে নেয়া।

দরিদ্র পরিবারে জন্ম, পরিবারের জন্য কাজ করতে হয়েছে গৃহপরিচারিকারও, সকল বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে মারিয়া যেন লিখে চলেছেন রূপকথার গল্প। মারিয়ার কষ্টের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে ফুটবল। অদম্য কিশোরী মারিয়ার ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য রইল অনেক অনেক শুভকামনা। হয়ত কোনো একদিন বিশ্বকাপের মঞ্চে দেখা যাবে বাংলাদেশকে, দেখা যাবে মারিয়াকেও, সেইদিনের অপেক্ষায় আমরা সকলেই।