এক রাশিয়ান ঈগলের গল্প
পোস্টটি ৮০২৯ বার পঠিত হয়েছে
২৩ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৭
রাশিয়ার দাগেস্তান অঞ্চলে নয় বছরের এক পিচ্চি লড়ছে ভাল্লুকের সাথে। বাবা আবদুল মানাপ ছেলেকে ফ্রি-স্টাইল রেস্লিং শেখানোর জন্যই লড়াই করতে দিয়েছেন ভাল্লুক শাবকের সাথে। আর সেই লড়াইয়ে পিচ্চি ছেলেটা ধ্বস্তাধস্তি করতে করতে এক পর্যায়ে কাবু করে ফেলছে ভাল্লুকটিকে। এই ভিডিওটি ইউএফসি’র ইতিহাসে সবচেয়ে সফল ফাইটার হাবিব নুরমাগোমেদভের শৈশবকালের। আল্টিমেট ফাইটিং চ্যাম্পিয়নশিপের রিংয়ে হাবিব যখন একের পর এক বিশ্ব তারকাদের ধরাশায়ী করে যাচ্ছিলেন, তখনই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয় ভিডিওটা। শৈশব থেকে ভাল্লুকের সাথে লড়াই করে বড় হওয়া ছেলেটার কাছে শক্তির জোরে মানুষকে হারানো তো বেশ সহজই বটে!
ছোটবেলা থেকেই এমন শক্তি আর সাহসের কারণে বন্ধুবান্ধবের যেকোনো বিপদেই মারামারি করতে দাঁড়াতে হতো হাবিবকে। ঝগড়ার কারণ না জেনেও প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করে বাসায় ফিরেছেন বহুবার। আবার কখনো বড়সড় কোনো ঝগড়ার মিটমাট হতো ওয়ান-টু-ওয়ান ফাইটের মাধ্যমে। ঠিক যেমনটা করেছিলেন ‘ট্রয়’ মুভির নায়ক অ্যাকিলিস। পুরো সৈন্যবাহিনী লড়াই না করে মারামারির মিটমাট হয়েছিল গ্রিক আর্মি আর থেসালিদের মধ্য থেকে একজন প্রতিনিধি দিয়ে। আর সেই লড়াইয়ে জিতেছিলেন অ্যাকিলিস চরিত্রে অভিনয় করা ব্রাড পিট। দাগেস্তানে মারামারির সময় বন্ধুদের কাছেও হাবিব ছিলেন ‘ব্রাড পিট’। বহুবার সবার পক্ষে একাই লড়াই করে ঝগড়া শেষ করেছেন তিনি।
ছেলের এমন সাহসী হলেও কোনো এক অজানা কারণে বাবা আবদুল মানাপ চান নি হাবিব মিক্সড মার্শাল আর্ট খেলুক। কিন্তু ২০০৫ সালে রাস্তায় ছেলের এক মারামারি দেখে তিনি বুঝে যান নুরমাগোমেদভ বংশের সবচেয়ে বড় ফাইটার হতে যাচ্ছে হাবিব। ফলে ছেলেকে নিয়ে ২০০০ ফিট উচু পর্বতের উপর শুরু করেন অমানুষিক প্রশিক্ষণ। ভাল্লুকের সাথে লড়াই, পাহাড়ের পর পাহাড় দৌড়ে ছুটে চলা কিংবা বরফ গলা নদীর মাঝেই ডুব সাতার দেয়ার মত কঠিন কাজগুলোই দৈনিক করতে হতো হাবিবকে। শরীরে ব্যথা সহ্য করতে তাঁর অসম্ভব সব ট্রেনিং দেখলে গায়ে কাটা দিয়ে উঠবে যে কারোরই। আর এভাবেই দিনের পর দিন পরিশ্রমের ফলেই সাহসী এক যোদ্ধা হয়ে উঠেন হাবিব নুরমাগোমেদভ।
বাবার কাছ থেকে জুডো, সাম্বো, প্যানক্রাটন, কুস্তি ছাড়াও হাতে-হাতে লড়াইয়ের না কৌশল শিখেছিলেন হাবিব। সাম্বোতে দুইবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ এবং রাশিয়ার জাতীয় প্রতিযোগীতার চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন তিনি। জুডোতে জিতেছেন ব্ল্যাকবেল্ট। বাবার কাছ থেকে বিশদ প্রশিক্ষণ নেয়ার পর কিক-বক্সিং শিখতে পাড়ি জমান আমেরিকায়। সেখানে তিনি যোগ দেন আমেরিকান কিক-বক্সিং একাডেমিতে। একাডেমীর জিমে প্রথমদিনই রিংয়ে প্রতিপক্ষ সবাইকে কুপোকাত করে দেন হাবিব। আর তা দেখেই একাডেমীর কোচ জ্যাভিয়ের মেন্ডেজের বুঝতে বাকি থাকেনি যে এই ছেলে বিশ্ব জয় করতে এসেছে। নিজের প্রশিক্ষণের কোনো স্পারিং সেশনেও কখনো হারতেন না হাবিব। অথচ আমেরিকান কিক-বক্সিং একাডেমীর রিংয়ে তিনি নিয়মিতই মুখোমুখি হতেন ইউএফসি’র সাবেক চ্যাম্পিয়ন ড্যানিয়েল কর্মিয়ের, লুক রকহোল্ড এবং কাইন ভেলাস্কুয়েজদের মত তারকাদের।
২১ জানুয়ারি, ২০১২
প্রথমবারের মত ইউএফসি’র রিংয়ে উঠলেন হাবিব নুরমাগোমেদভ। তাঁর প্রতিপক্ষ প্রিন্স অফ পার্সিয়া খ্যাত ইরানিয়ান মিক্সড মার্শাল আর্ট তারকা কামাল শালোরাস। নিজের প্রথম বিজয় ছিনিয়ে নিতে রাশিয়ান ঈগলের প্রয়োজন হলো কেবল তিন রাউন্ড। তৃতীয় রাউন্ডের ২ মিনিট ৮ সেকেন্ডেই সাবমিশনের মাধ্যমে হার মেনে নেন কামাল। একই বছর নিজের দ্বিতীয় খেলায় গ্লেইসন টিবাওকে হারান হাবিব।
ছবি: নিজের অভিষেক ম্যাচেই কামাল শালোরাসকে কুপোকাত করে দেন 'দ্য ঈগল'
পরের বছর জানুয়ারিতে থিয়াগো তাবারেজকে হারানোর পর হাবিব মুখোমুখি হন অ্যাভেল ট্রুহিল্লোর। এই আমেরিকান ফাইটারকেও খুব সহজভাবেই হারিয়ে দেন রাশিয়ান ঈগল খ্যাত হাবিব। এই ম্যাচে এই অনন্য রেকর্ড গড়েন তিনি। ট্রুহিল্লোকে মোট ২১ বার মাটিতে ফেলে দেন এই রাশিয়ান। একই বছর লাইট ওয়েট বিভাগে প্যাট হিলিকেও হারান তিনি। ফাইটিং রিংয়ে প্রতিপক্ষকে কুস্তি লড়াইয়ে নাজেহাল করা কিংবা অনবরত ঘুষি দিয়ে কুপোকাত করা তাঁর জন্য হয়ে উঠেছিলো নিয়মিত ব্যাপার। পরের বছরের শুরুতেই রাফায়েল দস আনহোসকে হারান তিনি। কিন্তু ইনজুরির কারণে এর পরের বছর খেলা হয়নি তাঁর। প্রায় দুই বছর পর ইউএফসি তে ফিরেন তিনি। প্রত্যাবর্তন ম্যাচে অনেক কিছু প্রমাণ করার ছিলো তাঁর। আমেরিকান ড্যারেল হর্চারকে নক-আউটে হারিয়ে নিজের আগমনী বার্তার জানান দেন এই রাশিয়ান। একই বছর মাইকেল জনসনকেও হারান তিনি। জনসনের সাথে ম্যাচের শুরুতে এক ঘুষি খেয়ে কিছুটা খেই হারিয়ে ফেলার পর যেভাবে ফিরেছিলেন হাবিব তা মিক্সড মার্শাল আর্টের ভক্তরা মনে রাখবেন আজীবন। তাঁর একের পর এক ঘুষি খেয়ে এক পর্যায়ে সাবমিশনে পরাজয় মানতে বাধ্য হন আমেরিকান ফাইটারটি।
ছবি: মাইকেল জনসনকে ধরাশায়ী করার মুহূর্তে
মাইকেল জনসনকে হারানোর পরই রিংয়ের পাশে বসা ইউএফসি প্রেসিডেন্ট ড্যানা হোয়াইটকে বলেছিলেন এবার তিনি টাইটেলের জন্য ফাইট করতে চান। পরের বছর সেই চ্যালেঞ্জের দিকে অগ্রসর হতেই হাবিব মুখোমুখি হন ব্রাজিলিয়ান এডসন বার্বোসার। শক্তিশালী এডসনকেও ধরাশায়ী করেন এই রাশিয়ান। এরপরেই আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ।
৮ এপ্রিল, ২০১৮
প্রথমবারের মত চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য লড়াই করতে নামেন হাবিব নুরমাগোমেদভ। আমেরিকান আল আয়াকুইন্তার মুখোমুখি হন তিনি। আয়াকুইন্তাকে নিচে টেনে কুস্তির কৌশল দিয়ে কুপোকাত করে দেন হাবিব। তাঁর অপরিমেয় শক্তি আর দুরন্ত টেকনিকে মুগ্ধ হন সবাই। পাঁচ রাউন্ডের খেলায় বিচারকদের ডিশিশনে এবারই প্রথম চ্যাম্পিয়ন বেল্ট পড়েন দ্য ঈগল খ্যাত এই রাশিয়ান।
ছবি: প্রথম ইউএফসি টেইটেল জেতার পথে..
তবে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর হাবিবের চ্যাম্পিয়ন বেল্টের জন্য চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন আরেক ফাইটার কনর ম্যাকগ্রেগর। এমনকি এর কিছুদিন আগেই হাবিবের বাসে ভারী এক বস্তু ছুড়ে কয়েকজনকে আহত করেন এই আইরিশ ফাইটার। এই ঘটনার জন্য আদালতেও যেতে হয়েছিল ম্যাকগ্রেগরকে। এই আইরিশের সাথে হাবিবের এমন সাপে-নেউলে অবস্থা দেখে জলদিই আরেকটি চ্যাম্পিয়নশিপ ম্যাচের আয়োজন করে ইউএফসি। এই ম্যাচকে বলা হয়ে থাকে ইউএফসি’র ‘ম্যাচ অফ দ্য সেঞ্চুরি’। কনর ম্যাকগ্রেগরের সাথে হাবিবের এই খেলাটি অনুষ্ঠিত হয় আমেরিকায়। খেলার আগে ম্যাকগ্রেগর হাবিবকে তাঁর ধর্ম, পরিবার নিয়ে বেশ কিছু কটুক্তি করে। এর জবাবে হাবিব নুরমাগোমেদভ কেবল বলেছিলেন, “তোমার সাথে আমার রিংয়ে কথা হবে”। আর ম্যাকগ্রেগরের সমর্থকদের প্রতি তাঁর কথা ছিলো, “আলহামদুলিল্লাহ্। আমি জানি তোমরা এই শব্দটা পছন্দ করো না। তবে আমি কাল তোমাদের ছেলেটাকে চূর্ণ বিচূর্ণ করে দিবো”।
৭ অক্টোবর, ২০১৮
লাস ভেগাসের টি-মোবাইল এরেনায় মিক্সড মার্শাল আর্টের শতাব্দীর সেরা ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হলো। এই একই ভেন্যুতে ফ্লয়েড মেওয়েদারের বিপক্ষে এক বছর আগে বক্সিংয়ে হেরেছিলেন ম্যাকগ্রেগর। সেই ভেন্যুতে এই আইরিশ ফিরেছিলেন তাঁর হারানো চ্যাম্পিয়নশিপ টাইটেল ফিরে পাওয়ার জন্য। কিন্তু হাবিব এসেছিলেন নিজেকে প্রমাণ করতে। তাঁর চিরায়ত দাগেস্তানি উলের টুপি ‘পপাখা’ পরেই উঠলেন ফাইটিং রিংয়ে। এরপর বিশ্ব দেখলো ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ মার্শাল মিক্সড আর্ট ফাইটারের সেরা পারফর্ম্যান্সটি। প্রথম রাউন্ডের শুরু থেকে চতুর্থ রাউন্ড পর্যন্ত নিজের আধিপত্য বিস্তার করে গেছেন এই দাগেস্তানি ফাইটার। চার রাউন্ডের মধ্যে একটি রাউন্ড টেকনিক্যালি ম্যাকগ্রেগর জিতলেও ম্যাচে মোটেই স্বস্তিতে নিঃশ্বাস ফেলার সুযোগ পায়নি এই আইরিশ। তাঁকে রীতিমত চূর্ণবিচূর্ণ করে দেয় দ্য ঈগল। ম্যাচ পূর্ববর্তী প্রেস কনফারেন্সে ম্যাকগ্রেগরকে দেয়া কথাটাই রেখেছিলেন হাবিব নুরমাগোমেদভ। এই আইরিশ বক্সার ও মিক্সড মার্শাল আর্ট ফাইটারকে ধরাশায়ী করে তারপর বলেছিলেন, “এইযে আমি কথা বলছি। চল, এখন কথা বলি”।
ছবি: ম্যাচ অফ দ্য সেঞ্চুরি - হাবিব বনাম ম্যাকগ্রেগর!
ম্যাকগ্রেগর তৃতীয় রাউন্ডের শেষদিকেই নিজের পায়ে দাঁড়ানোর মত অবস্থায় ছিলেন না। কোনোমতে সেই রাউন্ড শেষ করলেও পরের রাউন্ডের তিন মিনিটের মাথায় হার মানতে বাধ্য হন। ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ ম্যাচ জিতে হাবিব নিজেকে নিয়ে যান অনন্য এক পর্যায়ে। তবে ম্যাচ শেষ হলেও খেলার রেশটা তখনো কাটেনি টি-মোবাইল এরেনায়। ম্যাকগ্রেগরের উস্কানিতেই হাবিব ও তাঁর টিম মেম্বারদের সাথে ঝামেলার সৃষ্টি হয় ম্যাকগ্রেগরের টিম ও সমর্থকদের। এক পর্যায়ে হাতাহাতিও শুরু হয়ে তাঁদের মধ্যে। পরবর্তীতে এই ঘটনার জন্য ছয় মাস নিষেধাজ্ঞাসহ ৫০ হাজার ডলার জরিমানা গুনতে হয়েছিলো কনর ম্যাকগ্রেগরকে।
৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯
আইরিশ ফাইটার ম্যাকগ্রেগরকে হারানোর পর হাবিবের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয় ইউএফসি’র আরেক সফল ফাইটার ডাস্টিন পইরিয়ের। এই আমেরিকান বক্সারকে হারাতে হাবিবের প্রয়োজন হয় কেবল তিন রাউন্ড। পুরো ম্যাচে আধিপত্য করেছেন এই রাশিয়ান। তৃতীয় রাউন্ডের ২ মিনিটের মাথায় সাবমিশনে হার মানতে বাধ্য হন পইরিয়ের। ম্যাচ জেতার পর হাবিব ডাস্টিনের দাতব্য ফাউন্ডেশন ‘গুড ফাইট’ এর জন্য নিজের টি-শার্টটি উপহার দেন। তাছাড়া নিজের প্রতিপক্ষের ফাউন্ডেশনকে এক লাখ ডলারও দান করেন এই মুসলিম ফাইটার। ম্যাচের শেষে সেই ম্যাচ নিয়ে ইন্টারভিউ দেয়ার সময় পইরিয়েরের কাঁধে হাত দিয়েই কথা বলছিলেন তিনি। এই রাশিয়ান ঈগল শুধু রিং এর ভিতরেই আধিপত্য করেন নি, করেছেন মানুষের মনেও!
ছবি: এরপরেই হার মানতে বাধ্য হন পইরিয়ের
২৫ অক্টোবর, ২০২০
হাবিব নুরমাগোমেদভ ইউএফসি’র এর রিংয়ে উঠেছিলেন এক বছরেরও বেশি সময় পর। এই এক বছরে জীবন বদলে গেছে অনেক। কোভিড-১৯ এর থাবায় থমকে গেছে পৃথিবী, হাবিব হারিয়েছেন তাঁর সবচেয়ে কাছের মানুষটাকে। কিছুদিন আগেও হয়ত কল্পনা করেননি বাবাকে ছাড়াই আল্টিমেট ফাইটিং চ্যাম্পিয়নশিপের কোনো ম্যাচে নামতে হবে তাঁকে। হাবিব এর আগেও কয়েকবার বাবাকে ছাড়া খেলেছেন। আমেরিকার সরকার বেশ কয়েকবার হাবিবের ম্যাচের সময় ভিসা দেয়নি এই দাগেস্তান কোচকে। তবে ছেলের ম্যাচ স্ট্র্যাটেজি সবসময় নির্ধারণ করেছেন ইউক্রেনের সাবেক সাম্বো চ্যাম্পিয়ন এবং ফ্রি-স্টাইল রেসলিংয়ের জাতীয় মাস্টার আবদুল মানাপ নুরমাগোমেদভ। তাই বাবাকে ছাড়া হাবিবের মিক্সড মার্শাল আর্টের এই দীর্ঘ সফর ছিলো অসম্ভব এবং অকল্পনীয়। প্রিয় বাবা এবং কোচকে ছাড়াই আবুধাবির ফ্ল্যাশ ফোরাম এরেনায় ফাইটিং রিংয়ে উঠেছিলেন হাবিব ‘দ্য ঈগল’ নুরমাগোমেদভ। জাস্টিন গাথজের সাথে ম্যাচ টিকলো কেবল ৬ মিনিট ৩৪ সেকেন্ড। অথচ ম্যাচ শেষে ইউএফসি প্রেসিডেন্ট ড্যানা হোয়াইট জানালেন কয়েক সপ্তাহ আগেই নাকি পা ভেঙেছিলেন হাবিব। ভাঙ্গা পা নিয়েই ফাইটিং রিংয়ে লড়েছেন বীরের মত। আবুধাবির ফ্ল্যাশ ফোরাম এরেনায় ডানা মেলে ঠিকই উড়েছিল এক রাশিয়ান ঈগল।
ছবি: শেষবারের মত লড়াইয়ে দ্য ঈগল
দুই রাউন্ডেই চ্যাম্পিয়নশিপ নিশ্চিত করার পর সৃষ্টিকর্তাকে কৃতজ্ঞতা জানাতে ভুলেন নি তিনি। হাবিব হচ্ছেন প্রথম মুসলিম অ্যাথলেট, যিনি ইউএফসি শিরোপা জিতেছেন। সৃষ্টিকর্তার ওপর অগাধ আস্থা তার। শেষ ম্যাচেও সেই আবেগ ঝরিয়ে বলেছেন, “যখন আল্লাহ তোমার সাথে থাকে, পৃথিবীর কেউ তোমাকে কখনো হারাতে পারবে না। তোমার এটি বিশ্বাস করতে হবে।”
এরপরই জানিয়ে দিলেন অবসরের কথা। বাবাকে ছাড়া ফাইটিং রিংয়ে উঠতে নিষেধ করেছেন তাঁর মা। আর তাই এই রাশিয়ান ঈগলের মিক্সড মার্শাল আর্টের সফরটা থামলো ২৯-০ স্কোরেই। বাবার প্রতি হাবিবের শ্রদ্ধা ছিল অসীম। বাবাকে ছাড়াই আমেরিকায় ম্যাকগ্রেগরের বিপক্ষে ম্যাচ জেতার পর সমর্থকদের সাথে মারামারি জড়িয়ে পড়ার পর নিজের ভুল বুঝতে পেরে হাবিব বলেছিলেন যে তাঁর এমনটা করা ঠিক হয়নি। তাঁরা বাবা এটাতে অনেক হতাশ হবেন এবং তাঁকে মেরেই ফেলবেন এমন কিছু করার জন্য। আবদুল মানাপকে ছাড়া হাবিবের এইভাবে হয়ত 'হিরো' হয়ে উঠা হতো কখনো। ২০১৪ সালের পর বারবার ইনজুরিতে পড়ে এবং তিনবার সার্জারি করার পর হাবিব একপর্যায়ে এমএমএ ছেড়ে কথা ভাবছিলেন। কিন্তু তাঁকে তখন লড়াই করে যাওয়ার অনুপ্রেরণা দিয়েছেন তাঁর বাবাই। নিজের রোলমডেল বাবার কথাতেই ইনজুরির বাধা পেরিয়ে আবারো স্বমহিমায় ফাইট করেছেন হাবিব। তাঁর বাবাকে পাশে নিয়ে ফাইটিং রিং-এ যাওয়া নিয়ে তিনি একবার বলেছিলেন। "ফাইট করতে যাওয়ার সময় যখন আমার বাবা পাশে থাকে, তখন আমার মনে হয় আমি একজন সিংহকে সাথে নিয়ে ফাইট করতে যাচ্ছি"। তাঁর সেই আদর্শ, মেন্টর, কোচ, পথপ্রদর্শক বাবা আর নেই। তাই মিক্সড মার্শাল আর্ট ফাইটিং রিংয়েও আর থাকছেন না হাবিব নুরমাগোমেদভ। অথচ চাইলে আরো কয়েক বছর সেরাদের কাতারে থেকেই নিজের লিগ্যাসিটাকে আরো দীর্ঘায়িত করতে পারতেন তিনি।
ছবি: কোচ, মেন্টর, প্রশিক্ষক বাবা আবদুল মানাপ নুরমাগোমেদভ
তবে ক্যারিয়ারটি শেষ করার আগে ইউএফসি’র ইতিহাসে নিজের অবস্থান ঠিকই করে গেছেন। হাবিব নুরমাগোমেদভ তাঁর ক্যারিয়ারের শেষ তিন ম্যাচ খেলেছেন ইউএফসি’র কিংবদন্তির তালিকায় জায়গা করে নেয়ার মত তিন ফাইটারের বিপক্ষেই। অথচ এই তিন ফাইটারই সাবমিশনে হার মানতে বাধ্য হয়েছেন হাবিব ‘দ্য ঈগল’ নুরমাগোমেদভের কাছে। এই রাশিয়ান ফাইটার তাঁর বাবাকে কথা দিয়েছিলেন তিনি এমন জায়গায় গিয়ে ক্যারিয়ার শেষ করবেন যা দেখে তাঁর বাবা আবদুল মানাপ গর্বিত হবেন। ১২ বছরের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে আল্টিমেট ফাইটিং চ্যাম্পিয়নশিপ (ইউএফসি) এর ১৩ ম্যাচের একটিতেও হারেননি হাবিব। আর মিক্সড মার্শাল আর্টের ২৯ খেলায় তাঁর স্কোর ২৯-০। ক্যারিয়ারে কোনো ম্যাচ না হারা এই দাগেস্তান ফাইটারের এমন পারফর্ম্যান্স দেখে তাঁর কোচ, মেন্টর, প্রশিক্ষক বাবা নিশ্চয়ই গর্ব বোধ করছেন...
- 0 মন্তব্য