• ফুটবল

ম্যারাডোনা বনাম ইংল্যান্ডঃ ১৯৮৬

পোস্টটি ২৩৮৬ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

পূর্বকথাঃ

১৯৮৬ সালের মেক্সিকো বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি আর্জেন্টিনা ও ইংল্যান্ড। ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে বিতর্কিত মুহুর্তগুলার একটা, "হ্যান্ড অব গড" এবং ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা গোলগুলোর একটা, "গোল অব দ্যা সেঞ্চুরী" সেদিন বিশ্ব দেখেছিলো, তাও মাত্র পাঁচ মিনিটের ব্যবধানে। ডিয়েগো আরমান্ডো ম্যারাডোনা, দুটি মুহুর্তই উপহার দিয়ে শেষ পর্যন্ত সেদিনের ম্যাচটা পরিণত করেছিলেন ম্যারাডোনা বনাম ইংল্যান্ড এ। কিন্তু বাকি ৮৫ মিনিট কি হয়েছিলো সেদিন?

গ্রুপ এ থেকে দক্ষিণ কোরিয়া এবং বুলগেরিয়া কে হারিয়ে এবং ইতালির সাথে ড্র করে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হিসাবেই দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠে আর্জেন্টিনা। সেখানে উরুগুয়ে কে হারায় ১-০ ব্যবধানে। অপরদিকে ইংল্যান্ড পর্তুগালের সাথে হেরে এবং মরক্কোর সাথে ড্র করে প্রথম রাউন্ড থেকেই বিদায়ের শংকা জাগালেও শেষ গ্রুপ ম্যাচে পোল্যান্ডকে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে পরের পর্বের টিকিট পায়। সেখানে প্যারাগুয়েকেও ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি হয় আর্জেন্টিনার।

১৯৮২ তে দুই দেশের মধ্যে ঘটে যাওয়া ৭৪ দিনব্যপী ফকল্যান্ড যুদ্ধের পর এটাই ছিলো তাদের মধ্যে প্রথম সাক্ষাৎ। কাজেই দুই দলের খেলোয়াড়দের মধ্যেই বিরাজ করছিলো বারুদে উত্তেজনা। তবে ফকল্যান্ড যুদ্ধে পরাজয়ের কারণেই কিনা আর্জেন্টাইন খেলোয়াড়রা হয়তো একটু বেশীই তেতে ছিলেন।

প্রি-ম্যাচ ইন্টারভিউ তে আমরা সবাইই বলেছিলাম, খেলা আর রাজনীতি সম্পূর্ণ ভিন্ন ব্যাপার”, পরে বলেছিলেন ম্যারাডোনা, “কিন্তু এটা ছিলো সর্বৈব মিথ্যা। এটা নিছকই আরেকটা ম্যাচ ছিলো না। এটা শুধুমাত্র একটা ম্যাচ জয় কিংবা ইংল্যান্ডকে নক-আউট করার ব্যাপার ছিলো না। আমাদের কাছে এটা ছিলো যুদ্ধ। আর্জেন্টিনার জনগণের সকল দুঃখ-দুর্দশার জন্যে আমরা ইংলিশ খেলোয়াড়দেরই দায়ী করছিলাম।

 

সেদিন ম্যারাডোনাঃ

ম্যারাডোনার সেদিনের পারফরম্যান্স ছিলো একটা কমপ্লিট প্যাকেজ- ঝরঝরে পাসিং, পাগলাটে স্কিল, নিখুঁত ড্রিবলিং আর এক চিলতে কমেডি।

প্রথমার্ধের মাঝামাঝি সময়ে ম্যারাডোনা কর্নার নিতে এগিয়ে যান। কয়েকজন ফটোগ্রাফার তার কর্নার নেওয়ার রান আপ ব্লক করে ছিলেন। ফলে ম্যারাডোনা কর্নার ফ্ল্যাগটি উপড়ে ফেলে দেন যাতে তূলনামূলক সোজা রান আপে কর্নার নিতে পারেন তিনি। কিন্তু বাধা দেন কোস্টারিকান লাইন্সম্যান বার্নি উশোয়া, ম্যারাডোনা কে বলেন যাতে ফ্ল্যাগটা আগের জায়গায় ফিরিয়ে রাখেন। ম্যারাডোনা প্রথমে ফ্ল্যাগ ছাড়া কেবল পোল রাখেন। কিন্তু যতক্ষন না সম্পূর্ণ কর্নার ফ্ল্যাগ ম্যারাডোনা আগের মত না রাখছেন, উশোয়া তাকে কর্নার নিতে দেন নি। এই কৌতুকময় কন্ট্রোভার্সিয়াল মুহুর্ত এখন হয়তো আর বেশীরভাগ মানুষেরই মনে নেই।

Maradona-1

ম্যারাডোনা সেদিন ছিলেন সবখানেই- একদম নিচে নেমে বল রিসিভ করা, প্রতিপক্ষের ডিফেন্স চিরে কম্পাসে মাপা নিখুঁত পাসে সতীর্থদের বল যোগান দিচ্ছিলেন, সার্জিও বাতিস্তার পায়ে বল থাকলে নিজে বিহাইন্ড দ্যা লাইন উঠে যাচ্ছিলেন, ফ্ল্যাংকে সরে গিয়ে ফাঁকা জায়গা খুঁজে নিচ্ছিলেন, সতীর্থদের সাথে ওয়ান-টু খেলে জায়গা বের করছিলেন। ইংলিশ ডিফেন্ডারদের নাভিশ্বাস তুলে দিয়েছিলেন একাই। সেদিন তার পায়ের কারুকাজ দেখে মুগ্ধ হওয়ার জন্যে ফুটবল বোদ্ধা হতে হয় নি কাউকে। বলে শুট নেওয়ার মধ্যেও রাজসিকতা ফুটে বেরোচ্ছিলো। দম্ভ ভরে যেন বলছিলো, এসো, কুর্নিশ করে যাও নতুন ফুটবল রাজকে।

লেফট চ্যানেল দিয়ে ক্রমাগত রান নিতে থাকা দ্রুতগতির ফরোয়ার্ড বুরুচাগার সাথে লিংক আপ ভালোই জমিয়ে তুলেছিলেন। মূল স্ট্রাইকার ভালদানোর সাথেও নিয়মিত ওয়ান-টু খেলে আক্রমণ বিল্ড আপের চেষ্টা চলছিলো। এরকম একটা অ্যাটেম্পট থেকেই প্রথম গোলের সূচনা। ম্যারাডোনা বক্সের বাইরে থেকে ভালদানোকে পাস দিয়েছিলেন। কিন্তু ভালদানোর ফার্স্ট টাচ বাজে হয়েছিলো। স্টিভ হজ বলটা ভালদানোর কাছ থেকে ক্লিয়ার করতে চেয়েছিলেন। উলটো বল তুলে দিলেন পিছন দিকে। গোলকিপার শিলটন বেরিয়ে এলেন, ম্যারাডোনাও দৌড়ে গেলেন। শিলটনের লাফ টা যে খুব ভালো ছিলো টা বলা যাবে না। কিন্তু তাও ম্যারাডোনা মাথা দিয়ে বলের ছোঁয়া পেতেন না। মুহুর্তের মধ্যে হাত দিয়ে বল ঠেলে দিলেন জালে।

রেফারি কিংবা লাইন্সম্যানের কেউই দেখলেন না বিষয়টা। হয়তো তারা নিজেরাও বুঁদ হয়ে ছিলেন ম্যারাডোনার খেলায়। আর ম্যারাডোনাও গোল হতেই স্ট্যান্ডে বসা তার বাবার দিকে ছুটে গেলেন সেলিব্রেট করতে। প্রথমে বাম হাত তুলেই উদযাপন করছিলেন, ভালদানো ছুটে গিয়ে বলার পর সেটা বন্ধ করলেন পাছে রেফারি খেয়াল করেন। ইংল্যান্ড ডিফেন্ডারদের শত আপত্তির মুখেও গোল বহাল রইলো।

 

সেরা মুহুর্তঃ

ফুটবলের সেরা গোলগুলি বিশ্লেষণ করে দেখবেন, চোখে পড়ার মত গোলগুলো সাধারণত তিন ক্যাটাগরিতে ভাগ করা যায়ঃ চমৎকার কোনো টিম মুভ, দর্শনীয় শুট এবং সলো ড্রিবল এর মাধ্যমে গোল। ১৯৭০ এর ফাইনালে ইতালির বিপক্ষে কার্লোস আলবার্তোর গোল, ২০১৪ তে উরুগুয়ের বিপক্ষে হামেস রদ্রিগেজের করা গোল, ১৯৮৬ এর সেই ম্যাচে ম্যারাডোনার দ্বিতীয় গোল এর আদর্শ উদাহরণ।

বলটা যখন পেয়েছিলেন, ম্যারাডোনা তখন নিজেদের অর্ধে, মুখ করে আছেন নিজেদের পোস্টের দিকেই। বল পাওয়ার সাথে সাথেই পিটার বিয়ার্ডসলি এবং পিটার রিড এর ডাবল প্রেস থেকে মুহুর্তেই নিজেকে মুক্ত করে ফেললেন ডাবল ড্র্যাগব্যাকের মাধ্যমে। এরপর যখন হাফওয়ে লাইনের দিকে এগিয়ে গেছেন, দর্শকদের গর্জন শুরু হয়ে গেছে। তারাও মনে হয় বুঝতে পেরেছিলেন, কিছু একটা হতে চলেছে। এরপরেই গতি পরিবর্তন করে টেরি বুচারকে ইনসাইড কাট এবং ফেনউইককে আউটসাইডে ড্রিবল করে, আগুয়ান গোলরক্ষক শিলটনকে পাশ কাটিয়ে গেলেন। প্রায় উড়ে এসে শেষ মুহুর্তে বুচার একটা চেষ্টা করেছিলেন বটে, কিন্তু ততক্ষণে পায়ের ছোঁয়ায় বল জালে।

চারজন ইংলিশ খেলোয়াড়কে কাটানোর পর শিলটনকে এত অনায়াসে কাটিয়ে যাওয়াটা তখন স্বাভাবিকই লেগেছিলো। কিন্তু ম্যারাডোনা পরে স্বীকার করেছিলেন, সেই সময় তার মাথায় ছয় বছর আগে ওয়েম্বলিতে ফ্রেন্ডলি ম্যাচের স্মৃতি ফিরে এসেছিলো। সেদিন আগুয়ান গোলরক্ষক রে ক্লেমেন্স এর পাশ দিয়ে মারতে গিয়ে পোস্টে রাখতে পারেননি বল। সেই ম্যাচের সন্ধ্যায় তার ছোট ভাই হিউগো তাকে ভর্ৎসনা করেছিলেন এই বলে যে, ক্লেমেন্সকে কাটিয়ে যাওয়ার মত জায়গা থাকা সত্ত্বেও কেনো শুট করতে গেলেন তিনি।

ম্যারাডোনা সেই সময় ১০ বছর বয়সী ভাই এর পন্ডিতিতে রেগে গেলেও, অর্ধযুগ পরে হিউগোর উপদেশই কাজে লাগিয়েছিলেন। বুচারের প্রেশার থাকলেও তাড়াহুড়া করে শুট না নিয়ে বরং কিপারকে ড্রিবল করে খালি নেটেই বল পাঠিয়ে দিলেন। ফুটবল দেখলো তার ইতিহাসের অন্যতম সেরা এক গোল।

 

আরো যা ঘটেছিলোঃ

ইংলিশ দৃষ্টিকোণ থেকে ম্যাচটা তাদের কাছ থেকে প্রতারণা করে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছিলো। কিন্তু সেই ম্যাচের কথা বলতে গেলে প্রায়ই যেটা উপেক্ষা করা হয় তা হলো ম্যারাডোনার বিপক্ষে ইংলিশ খেলোয়াড়দের চরম শারীরিক শক্তির প্রদর্শনী।

খেলা শুরুর দুই মিনিটের মধ্যেই সেন্টার সার্কেলের কাছে ম্যারাডোনা বল পান। সাথে সাথেই টেরি ফেনউইক বডি চার্জ করে বসেন, রেফারির নাকের ডগাতেই। আর্জেন্টিনা পজেশন হারায়নি বলে ফাউল দেননি রেফারি। ঠিক ৩০ সেকেন্ডের মাথায় আবার ফাউলের স্বীকার ম্যারাডোনা, রীডের দ্বারা। ম্যারাডোনার স্বভাবসুলভ ড্রিবলিং নির্ভর খেলার কারণে স্বাভাবিকভাবেই বেশী ফাউলের স্বীকার হতেন, কিন্তু এদিন ইংলিশ প্লেয়াররা কিছুটা বেশীই ফাউল করছিলেন। আট মিনিটের সময় ম্যারাডোনা একবার বুক দিয়ে বল রিসিভ করলেন, কেনি স্যামসনকে ইনসাইড ডজে কাটালেন, সেই সময়েই ফেনউইক দৌড়ে এসে আবারো ফাউল করেন। অথচ ফেনউইক তখন বলের কাছে ধারেই ছিলেন না।

Fenwick1-2

গ্রুপ পর্বে দুটি বুকিং এর জন্য সাসপেনশনে থাকা ফেনউইক ফিরে আসার মাত্র আট মিনিটের মধ্যে আবারো বুকড হন। পরবর্তী ৮২ মিনিট তিনি হলুদ কার্ড মাথায় নিয়ে তৎকালীন সময়ের সেরা ড্রিবলারের বিরুদ্ধে খেলছেন। কিন্তু এই ৮২ মিনিট আগের হলুদ কার্ড যেনো অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গিয়েছিলো। কারণ এই নয় যে, ফেনউইক সেদিন ম্যারাডোনার সাথে সমানে সমানে লড়েছিলেন। বরং এরপরে আরো অন্তত দুইবার সরাসরি লাল কার্ড দেখার হাত থেকে বেচে গিয়েছিলেন রেফারির বদান্যতায়।

অফ দ্যা বল, ম্যারাডোনা ক্রমাগত বিহাইন্ড দ্যা লাইন রান নিচ্ছিলেন। তাকে সামলাতে গিয়ে ফেনউইক একবার কনুই দিয়ে আঘাতও করে বসেন যা রেফারির চোখ এড়িয়ে যায়। ফিজিও থেকে চিকিৎসা নিয়ে ফেনউইকের কাছে গিয়ে এর ব্যাখ্যা চাইলে ফেনউইক ব্যাপারটা অনিচ্ছাকৃত বলে দাবী করেন। বলাই বাহুল্য এই ব্যাখ্যা ডিয়েগোর পছন্দ হয়নি।

Fenwick2-1

দ্বিতীয় ঘটনাটি ঘটেছিলো প্রথম গোলের ঠিক মিনিট দুয়েক আগে। আর্জেন্টাইন ডিফেন্স থেকে ক্লিয়ার হয়ে আসা একটি বল রিসিভ করতে ম্যারাডোনা ও ফেনউইক দুজনেই লাফিয়ে উঠেন। অথচ ফেনউইক লাফিয়ে উঠে হাত বাড়িয়ে দেন যাতে ম্যারাডোনা আঘাত পান। টেরি ফেনউইক কি ম্যারাডোনাকে কনুই দিয়ে আঘাতের উদ্দ্যেশ্যেই হাত তুলেছিলেন? নাকি হাত দিয়ে বল রিসিভ করতে চেয়েছিলেন? এবারও রেফারির চোখ এড়িয়ে যায় ঘটনা।

Fenwick3-1

সেদিন ম্যারাডোনাকে মার্কিং এর দায়িত্বে থাকা টেরি ফেনউইক প্রথম থেকেই যেরকম আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে খেলছিলেন, তাতে এই ঘটনার দুই মিনিট পরেই যে “হ্যান্ড অফ গড” ঘটেছিলো তার কি কোনো প্রভাব ছিলো? এরিয়াল চ্যালেঞ্জে ফেনউইকের হাত বাড়িয়ে বল রিসিভের চেষ্টা কিংবা কনুই এর ব্যবহার কি ম্যারাডোনাকে হাতের ব্যবহার করতে প্ররোচিত করেছিলো? হবে হয়তো।

খেলার ৬৭ মিনিটে একটি লং বল থেকে ভালদানো ফ্লিক করলে ম্যারাডোনা ও ফেনউইক বল চার্জ করতে যান। আবারো ফেনউইক কনুই চালিয়ে দেন ডিয়েগোর মুখে। ফলাফল, ফ্রি কিক এবং ম্যারাডোনার কিছুক্ষণের জন্যে আবারো মাঠের বাইরে চলে যাওয়া। এবারো রেফারীর নজরে এলো না কিছু।

Fenwick4-1

ফেনউইকই সেদিন একমাত্র ইংলিশ ডিফেন্ডার ছিলেন না ম্যারাডোনাকে আঘাত করার ক্ষেত্রে। বিয়ার্ডসলি এর জোড়া পায়ের ট্যাকল, ম্যারাডোনার স্কিলের কাছে হতবুদ্ধ হয়ে রীডের হার্ড ট্যাকল, স্টিভ হজের মৃদু ধাক্কার কারণে স্যামসন এর সাথে সংঘর্ষ এর সবকিছুই প্রমাণ করে সেদিন ইংল্যান্ড খেলোয়াড়রা ম্যারাডোনাকে আটকানোর জন্যে টেকনিক এর চেয়ে শারীরিক কৌশলকেই গুরুত্ব দিয়েছিলেন। এখনকার যুগে এত রাফ এন্ড টাফ ট্যাকল আপনার কাছে অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে কিন্তু আজ থেকে ৩৪ বছর আগের সব ম্যাচেই এরকম ট্যাকল করে পার পেয়ে যাওয়াটাও অনেকটাই কমন ব্যাপার ছিলো। আজকের দিনের মত VAR থাকলে হয়তো অনেক আগেই মাঠ ছাড়তে হতো টেরি ফেনউইককে। আবার VAR থাকলে হ্যান্ড অফ গড কিংবা গোল অফ দ্যা সেঞ্চুরির বিল্ড আপে ম্যারাডোনা বল পাওয়ার ৫ সেকেন্ড আগে সার্জিও বাতিস্তা যে গ্লেন হডল কে ট্যাকল করেছিলেন তাকে ফাউল ধরে দুটো গোলই হয়তো বাতিল হতো।

gif

 

শেষকথাঃ

সেই ম্যাচের পর বেলজিয়ামের সাথে সেমিতেও ম্যারাডোনার একক নৈপুণ্যে ২-০ তে জিতে ফাইনালে যায় আর্জেন্টিনা। যার একটি ছিলো আরেকটি অসাধারণ সলো গোল। সেই ম্যাচের পর বেলজিয়াম কোচ অসহায় কন্ঠে বলেছিলেন, “ম্যাচটা ফেয়ার হয়নি। এক ম্যারাডোনাকে আটকাতেই আমার ৫ জন লাগে। বাকি ১০ আর্জেন্টাইনের জন্যে আমার হাতে থাকে মাত্র ৬জন।” কি দুর্দান্ত ছিলেন সেদিন মাঠে ম্যারাডোনা কিছুটা কি আঁচ করা যায়?

ফাইনালে ৩-২ ব্যবধানে পশ্চিম জার্মানীকে হারিয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হলো আর্জেন্টিনা। একক প্রচেষ্টায় কোনো দলকে চ্যাম্পিয়ন করার এমন নজির আর বোধহয় হবে না। সেই বিশ্বকাপে ম্যারাডোনার পারফরম্যান্স কেমন ছিলো তা বুঝতে একটু পরিসংখ্যানে চোখ বুলিয়ে আসি। আর্জেন্টিনার ১৪ গোলের ১০টিতেই ম্যারাডোনা অবদান রেখেছিলেন। ৫ গোলের সাথে ছিলো ৫ এসিস্ট। পুরো টুর্নামেন্টে ৫৩ টি ড্রিবল সম্পন্ন করেছিলেন তিনি, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ড্রিবলকারী খেলোয়াড় থেকে মাত্র ৩৭ টি বেশী। অবধারিত ভাবে টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ ফাউলের শিকার হওয়া ব্যক্তিটিও ছিলেন ডিয়েগো।

i

শেষটা করি ৮৬ বিশ্বকাপে ডিয়েগো আরমান্ডো ম্যারাডোনার পারফরম্যান্স নিয়ে জোনাথন উইলসনের মন্তব্য দিয়ে।

His performances in 1986 remain the greatest by any individual at a World Cup. He didn’t just score goals, he didn’t just score brilliant goals, but scored brilliant goals with gambetas, the slaloming dribble characteristic of the pibe. He had come from the potreros, he still played the game of the potreros, and he had won a World Cup by doing so; even better, he had done it against England.

 

Disclaimer: লেখাটি “দ্যা অ্যাথলেটিক” এ প্রকাশিত মাইকেল কক্স এর “Reconsidered: Just how good was Diego Maradona against England in 1986?” থেকে ভাবানূদিত।

মূল লেখার লিংক