• ক্রিকেট

মুশফিকের কিপিংয়ের ময়নাতদন্ত

পোস্টটি ১৩৭০ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

মুশফিকুর রহিম- ১৫ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার। দেশের বর্তমান সময়ের অন্যতম সেরা এবং নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান। টেকনিক্যালি অনেক বেশি সলিডও। কিন্তু উইকেটকিপার মুশফিক সে তুলনায় একেবারে যাচ্ছেতাই। উইকেটের পিছনে মুশফিকের একের পর এক ভুল, চান্স মিস দেখা যাচ্ছে হরহামেশাই। আর সেই ভুলের মাশুল দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ দল। 

 

 

২০১৫ সাল, ভারতের সাথে হোম সিরিজ। দুই-দুইটা ক্যাচ ছেড়ে দিয়েছিলেন মুশফিক, পরে সেই ম্যাচ বাংলাদেশ জিতে যাওয়াতে আর তেমন আলোচনা সমালোচনা হয় নি। কিন্তু মুশফিকের উইকেটকিপিংয়ের উন্নতিও হয় নি। 

 

২০১৯ বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের সাথে ম্যাচ, মনে থাকার কথা সবার। তামিমের দারুণ থ্রো স্টাম্প বরাবরই ছিল, সোজা গিয়ে স্টাম্পেই হয়ত লাগত। কিন্তু সেই বল ধরতে গিয়েছিলেন মুশফিক, তাও আবার স্টাম্পের সামনে হাত দিয়ে। স্টাম্পের পেছন থেকে যে বল ধরতে হয় উইকেটকিপিংয়ের এই বেসিকটাও হয়ত জানা নেই মুশফিকের। সেই টুর্নামেন্টেই সাউথ আফ্রিকার সাথে ক্যাচ ছেড়ে দিয়েছিলেন একটা, কিন্তু পরে রান আউট করে ফেলাতে সেটা নিয়ে আর তর্কবিতর্কে যায় নি কেউ। 

 

 

২০১৭ সালে হায়দারবাদে ভারতের বিপক্ষে একমাত্র টেস্ট ম্যাচ। রিদ্ধিমান সাহাকে স্টাম্পিং করার সহজ সুযোগ মিস করেন মুশফিক। কিপার মুশফিকের দৃষ্টিকটু ভুলের সমাপ্তি এখানেই নয়। গত কয়েক বছরে যতগুলো দৃষ্টিকটু ভুল করেছেন কিপার মুশফিক, সে তুলনায় ভালো ডিসমিসাল নেই বললেই চলে। বরং মুশফিকের ভুলগুলোই বারবার এসেছে চোখের সামনে। উইকেটের পেছনে হরহামেশাই বল ছেড়ে দিচ্ছেন মুশফিক। স্টাম্পিং ও মিস করছেন। ফলস্বরূপ উইকেট নিতে পারছে না বাংলাদেশ, অতিরিক্ত রান যোগ হচ্ছে প্রতিপক্ষের বোর্ডে। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে মুশফিকের এসব মিস ম্যাচ থেকেও ছিটকে দিচ্ছে বাংলাদেশকে। সবশেষ নিউজিল্যান্ডের সাথে ম্যাচেও জিমি নিশামের ক্যাচ ফেলে দিয়েছেন মুশফিক। সেখানে ক্যাচটা নিতে পারলে ম্যাচের মোমেন্টাম ঘুরে যেতে পারত বাংলাদেশের দিকে। কে জানে? হয়ত ফলও। পরিসংখ্যান বলছে কিপার মুশফিক চান্স মিস করেছেন ৮৬ টা, শতকরার হিসাবে যেটা ৩২%। বলার অপেক্ষা রাখে না, একেবারেই যাচ্ছেতাই পারফরম্যান্স। 

 

 

টেস্টে উইকেটকিপিংয়ের দায়িত্ব ছেড়েছেন মুশফিক, কিন্তু ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টিতে এখনো করে যাচ্ছেন কিপিং। সাম্প্রতিক সময়ে এসব বাজে ভুল কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছে কিপার মুশফিককে। এখনই হয়ত সেরা সময় কিপার মুশফিককে স্থলাভিষিক্ত করার। তবে এখানেও আছে অনেক যদি-কিন্তুর মারপ্যাঁচ। 

 

 

অনেকের মতেই বর্তমানে দেশসেরা কিপার নুরুল হাসান সোহান। সেক্ষেত্রে কিপার মুশফিকের বিকল্প হতে পারেন সোহান। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ওয়ানডে স্কোয়াডে সোহানকে দেখা যায় নি। ব্যাট হাতে পারফর্ম না করার কথাও শোনা যায়, কিন্তু ব্যাট হাতে সোহান যে একেবারেই ব্যর্থ, তাও কিন্তু নয়। ২ ওয়ানডের একটায় ৪০ ছাড়ানো ইনিংস আছে। ক্যারিয়ার গড় ৩৪, যতটুকু সুযোগ পেয়েছেন সে তুলনায় খুব কি খারাপ? 

 

তবে কথা আরো আছে। বর্তমান টিমের লিটন অথবা মিথুনও কিপিং করতে পারেন। এই দুইজনের যেকোনো একজনকে অন্তত গত কয়েকবছর ধরেই দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশের একাদশে। সেক্ষেত্রে লিটনকে কিপিংয়ের দায়িত্ব দিয়ে কেবল ব্যাটসম্যান হিসেবে মুশফিক ত খেলতেই পারেন, তাই না? 

 

 

ফিল্ডারদের সহায়তা ছাড়া কোনো ম্যাচ জেতা প্রায় অসম্ভব। বোলারদের তৈরি করা সুযোগ যদি হেলায় হারান ফিল্ডাররা, ভেঙ্গে যায় বোলারদের মনোবল, পালটে যায় ম্যাচের গতিপথ, অনেক সময় ফলও। আর সেটা যদি উইকেটকিপিং হয় তবে সেটা ত মহাগুরুত্বপূর্ণ। ক্যাচ মিস পার্ট অফ দ্য গেইম হয়ে থাকলে দারুণ সব ক্যাচ ধরাও ত পার্ট অফ দ্য গেইমই। বাংলাদেশের উইকেটকিপিংয়ে একটা পরিবর্তন তাই আসতেই পারে।