হারিয়ে যাই নি তবু এটাই জরুরি খবর: তাসকিন আহমেদ
পোস্টটি ২৩৬৭ বার পঠিত হয়েছেবাংলার ক্রিকেটে স্পিডস্টার তাসকিন আহমেদের আগমনটা বেশ জোরেশোরেই। ২০১৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে মাশরাফির ইঞ্জুরিতে সুযোগ মিলেছিল একটা ম্যাচ খেলার। সে ম্যাচে স্টাম্প উপড়ে ফেলেছিলেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের। এরপর আস্তেধীরে সুযোগ মিলতে শুরু করে। ওয়ানডে অভিষেকে ভারতের বিপক্ষে পাঁচ উইকেট নিয়ে বড়সড় একটা বার্তাই যেন দিয়ে ফেলেন। ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটারের উপর গতিসমৃদ্ধ বোলার দেশের ক্রিকেটে এসেছিলই বা কবে?
এরপর ভালোই চলছিল সবকিছু। '১৫ বিশ্বকাপে সুযোগ পেয়েও দারুণ বল করেছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করেই যেন মলিন হয়ে যেতে থাকেন তাসকিন। টেস্ট খেলানো হলেও আহামরি নজরকাড়া পারফরম্যান্স ছিল না সাদা পোষাকের ক্রিকেটে। এর পাশাপাশি সীমিত ওভারের ক্রিকেটেও নিজেকে হারিয়ে খুঁজছিলেন। লাইন লেন্থ ওলটপালট হয়ে যাওয়া আর প্রচুর রান দিয়ে ফেলা- অফফর্মে থাকা তাসকিন জায়গা হারালেন দল থেকে। ২০১৯ বিশ্বকাপেও সুযোগ পান নি। সমসাময়িক অনেক তারকা ক্রিকেটারদের মত তাসকিন আহমেদকেও মনে হচ্ছিল আরেক আফসোসের নামই হয়ত হয়ে থাকবেন দেশের ক্রিকেটে।
কিন্তু এবার প্রেক্ষাপট পালটে গেলো। করোনা ভাইরাসের কারণে লকডাউনে থেকে নিজের স্কিল, টেকনিক আর ফিটনেস নিয়ে যথেষ্ট কাজ করতে শুরু করলেন তাসকিন। নিজেকে ফিরে পাওয়ার এই লড়াইয়ে তাসকিন উজাড় করে দিয়েছেন সর্বস্ব। ফলটাও এলো হাতেনাতে। করোনার পরবর্তী ক্রিকেটের ফেরা ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট বিসিবি প্রেসিডেন্ট'স কাপ আর বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে ঝলক দেখালেন তাসকিন। উইকেট, পরিসংখ্যান এসব দিয়ে হয়ত মাপা যাবে না তাসকিনকে। লাইন, লেন্থ, এক্যুরেসি মেইনটেইন করে নিজের স্পিডের সর্বোচ্চ ব্যবহার করে ব্যাটসম্যানদের চাপে ফেলেছেন প্রতিনিয়ত। ঘরোয়া টুর্নামেন্টের এমন পারফরম্যান্স এর ফল ও পেয়েছেন হাতেনাতেই। আবারো জাতীয় দলে ডাক পেয়েছেন তাসকিন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে হোম সিরিজে সুযোগ পান নি খুব একটা। কিন্তু তাসকিন সবচেয়ে বড় কোপটা মেরেছেন নিউজিল্যান্ডের সাথে ওয়ানডে সিরিজে।
প্রথম ম্যাচের মামুলি টার্গেট তাড়া করতে নামা কিউইদের বড় নাম গাপটিলকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। দ্বিতীয় ম্যাচটাতেও দারুণ লাইন-লেন্থে বল করেছেন, কিন্তু দুর্ভাগা তাসকিন উইকেট পান নি। তাসকিনের বলে ক্যাচ ফেলে দিয়েছেন কিপার মুশফিক। শেষ ওয়ানডেতে আগুন ঝরানো বোলিং করেও উইকেট পেয়েছেন মোটে একটা। বিশেষ করে শুরুর স্পেলটা ছিল একদম অসাধারণ। ৭ ওভার ১ মেইডেনে ২৯ রান দিয়ে উইকেট নিয়েছেন একটা। কিন্তু কেবল পরিসংখ্যান দিয়ে পুরোপুরি বিচার করা যাবে না তাসকিনের বোলিং। কিউই ব্যাটসম্যানদের যথেষ্ট কষ্ট করতে হয়েছে তাসকিনের বলগুলো খেলতে, শরীরী ভাষাতেও বোঝা গেছে এই তাসকিন আগের চেয়ে অনেক বেশি পরিণত গোছানো। অসাধারণ লাইন লেন্থ আর পেইসের সাথে ডিসিপ্লিনড বোলিং করে গেছেন তাসকিন। কিন্তু ভাগ্যের ফেরে দুই দুইবার তাসকিনেরই বলে ক্যাচ ড্রপ হয়েছে। শেষমেশ ১০ ওভারে ৫২ রানে তাসকিনের উইকেট ১ টা।
পরিসংখ্যান দিয়ে পুরোপুরি ব্যাখ্যা করা যাবে না তাসকিনের বোলিং। নিউজিল্যান্ডের মাঠে নিউজিল্যান্ডেরই বিপক্ষে বাংলাদেশের কোনো বোলারের এমন আগুন ঝরানো বোলিং শেষ কবে দেখেছে কেউ? আদৌ দেখেছে বলে মনে পড়ছে না। তাসকিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রত্যাবর্তন রঙিনতর হতে থাকুক। দেশের পেস বোলিং আরো একটু সমৃদ্ধ হোক। আধুনিক ক্রিকেট বিশ্বে ছড়ি ঘোরানোর জন্য একজন তাসকিন আহমেদকে যে খুব দরকার বাংলাদেশের।
- 0 মন্তব্য