• ক্রিকেট

টাইগারদের নিউজিল্যান্ড ট্যুরের ময়নাতদন্ত

পোস্টটি ১১৩৮ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

নিউজিল্যান্ডে আরো একটা হতাশাজনক সফর শেষ করেছে বাংলাদেশ। ওয়ানডে - টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে ৬ টা ম্যাচ খেলে হেরেছে সব কয়টাতেই। একের পর এক হারে ব্যর্থতা আর অসহায় আত্মসমর্পণ সফরজুড়েই, আত্মবিশ্বাস ঠেকেছে তলানিতে। 

 

 

সিরিজজুড়ে হতাশা জাগানো বাংলাদেশ দল প্রতিরোধ গড়তে পেরেছিল কেবল দ্বিতীয় ম্যাচটাতেই। কিন্তু জয়ের খুব কাছে গিয়েও হারাতে হয়েছে সেই সুযোগটা। সফরের সেরা প্রাপ্তি বলা যেতে পারে তাসকিন আহমেদের ফিরে আসাকে। লকডাউনে কঠোর পরিশ্রম করার সুফল পেতে শুরু করেছেন তাসকিন। তবে পরিসংখ্যান দিয়ে পুরোপুরি যাচাই করা যাবে না তাসকিনকে। পুরো সফরেই রীতিমত আগুন ঝরানো বোলিং করেছেন তাসকিন।  প্রথম ম্যাচে নিয়েছেন গাপটিলের গুরুত্বপূর্ণ উইকেটটা, পরের ম্যাচে দারুণ বল করেও ছিলেন উইকেটশূন্য। তাসকিনের বলে উইকেটের পেছনে সহজ ক্যাচ ফেলেছেন মুশফিক। তৃতীয় ম্যাচে ছিলেন সবচেয়ে বেশি ধারালো। আগের চেয়ে অনেক বেশি পরিণত আর ডিসিপ্লিনড ছিলেন তাসকিন। লাইন, লেন্থ, বাউন্স, গতি আর শুরুর দিকে উইকেটে থাকা মুভমেন্টের সর্বোচ্চ ব্যবহারটা করেছেন তাসকিন আহমেদ। কিন্ত দুর্ভাগা তাসকিনকে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে কেবল একটা উইকেট নিয়েই। তাসকিনের বলে ক্যাচ ড্রপ হয়েছে সেদিনও। শেষ দুই টি-টোয়েন্টি খেলার সুযোগ পেয়ে নিংড়ে দিয়েছেন নিজের সর্বোচ্চটা। পুরো সফরে কেবল তাসকিনের বলেই ক্যাচ ড্রপ হয়েছে ৭-৮ বার। অন্যথায় নিঃসন্দেহে তাসকিন হতে পারতেন সফরের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী। তবে তাসকিনের এই প্রত্যাবর্তন ভালো কিছুর ইঙ্গিতই দিচ্ছে। নিজের পারফরম্যান্স এর ধারাবাহিকতা তাসকিন বজায় রাখুন এটাই এখন প্রত্যাশা সকলের। 

 

 

তাছাড়া অভিষিক্ত নাসুমও ভালো বল করেছেন। ইকোনোমিক্যাল বোলিংয়ের পাশাপাশি ৩ ম্যাচে উইকেট ২ টা। কন্ডিশন আর প্রতিপক্ষ বিবেচনায় খুব বেশি খারাপ বলা যাচ্ছে না। 

 

 

তাসকিন আর নাসুমকে বাদ দিলে পুরো সফরটাই ছিল বাংলাদেশের জন্য হতাশাজনক। সবচেয়ে বেশি চোখে লেগেছে ভয়াবহ রকমের বাজে ফিল্ডিং। একের পর এক ক্যাচ মিসের মাশুল দিতে হয়েছে টাইগারদের। কিপার মুশফিককে নিয়েও আছে নানা কথা। ক্যাচ মিস, রান আউট মিস আর অনেক বাই রান দেওয়া মুশফিকের কিপিং ছিল এক্কেবারে যাচ্ছেতাই। মুশফিকের এমন হতচ্ছাড়া কিপিংয়ের কারণে আগেও অনেক ম্যাচ হেরেছে বাংলাদেশ। কিপার মুশফিক তাই একেবারেই অগ্রহণযোগ্য।

 

 

তাছাড়া তরুণদের ভয়াবহ রকমের বাজে পারফরম্যান্স অব্যাহত ছিল এই সিরিজেও। সৌম্য, লিটন, শান্ত, আফিফ কিংবা মুস্তাফিজ কেউই আশানুরূপ পারফরম্যান্স দেখাতে পারে নি। ভবিষ্যৎের জন্য এটি মোটেও ভালো দিক নয়। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রায় ৪-৫ বছর বা তারও বেশি সময় কাটিয়ে ফেলার পরেও এখনো জাতীয় দলে থিতু হতে না পারাদেরকে নিয়ে দেশের ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ যে একেবারেই অন্ধকার সেটা আঁচ করা যাচ্ছে। 

 

 

 

তাছাড়া সিরিজজুড়ে একের পর এক ইঞ্জুরির আঘাত ত ছিলই। শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে পঞ্চপাণ্ডব ছাড়া প্রায় ৫০০০ এরও বেশি দিন পর খেলতে নামে বাংলাদেশ, সে ম্যাচে অধিনায়কত্ব করেছিলেন লিটন দাস। সবকিছু মিলিয়ে টাইগারদের এমন বাজে পারফরম্যান্স এর কারণ বাজে ফিল্ডিং, অনেক বেশি ক্যাচ মিস, মুশফিকের বাজে কিপিং এবং ব্যাটসম্যানদের দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যাটিং। 

 

 

নিউজিল্যান্ডে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এখনো পর্যন্ত একটা ম্যাচও জিততে পারে নি বাংলাদেশ। এবারও ভুলে যাওয়ার মত একটা সফরই কাটলো তাদের। দেশের ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ যে কতটা ভঙ্গুর তার আভাসও মিলেছে। ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্স এর এমন বেহাল দশা থেকে উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই। নাহয় দেশের ক্রিকেটে নেমে আসবে ভয়াবহ দুর্যোগ।