বাংলার ফুটবল মুক্তির ৬-দফা (৬ষ্ঠ পর্ব); পেশাদার লীগে নয়, সমাধান ফ্র্যাঞ্চাইজি লীগে
পোস্টটি ১১৯৯ বার পঠিত হয়েছে
অর্থনীতিতে একটা টার্ম আছে- দারিদ্রের দুষ্টচক্র। কি করে একটি দুর্বল অর্থনীতি চক্রাকারে দুর্বলতর হতে থাকে। ফুটবলসহ যেকোন খেলার সার্বিক উন্নতির পথে অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সেই খেলাটিকে ঘিরে গড়ে ওঠা দুষ্টচক্রটিকে ফেঙ্গে ফেলা। যখন কোন দেশ ধারাবাহিকভাবে খারাপ খেলতে থাকে, তখন সেই দেশের ক্রীড়ানুরাগী জনগণ ও সমর্থকেরা খেলাটি থেকে বা নির্দিষ্ট দলটি থেকে ধীরে ধীরে মুখ ফিরিয়ে নেয়। যার প্রভাবে খেলাটিকে ঘিরে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ সমানুপাতে কমতে থাকে। আয় কমে গেলে খেলাটির আর্থিক সক্ষমতাও কমে যায়। অবকাঠামো উন্নয়ন বাঁধা পায়। পেশাদারিত্ব কমে যায়। ফলে খেলাটিতে সেই দেশের পারফরমেন্সের ক্রম অবনতি চলতে থাকে। ফলাফল, আরও বেশি মানুষ মুখ ফিরিয়ে নেয়। বিনিয়োগ আগ্রহ হয় আরও কম। এভাবে চক্রটি চলতেই থাকে চুড়ান্ত ধবংসের আগ পর্যন্ত। কেনিয়ার ক্রিকেট এই চক্রের বৃত্তাকার পথে আবর্তিত হয়েই কেন্দ্রমুখে বিলীন হয়েছে। বাংলাদেশ ফুটবল সেই পথ ধরেই হাঁটছে। যদিও কেনিয়ার ক্রিকেটের মত বাংলাদেশের ফুটবল হয়তো কখনোই চুড়ান্তভাবে হারিয়ে যাবেনা। ফিফা, এএফসির অর্থ সাহায্য, দেশের জনগনের বৈশ্বিক ফুটবলের প্রতি প্রবল আগ্রহ, রক্তে থাকা ফুটবল প্রেম- এসব নানাবিধ কারণে হয়ত কৃত্রিম লাইফ সাপোর্টে জীবনামৃত হয়ে বেঁচে থাকবে দেশের ফুটবল। যেমনটা আছে দীর্ঘ দেড় যুগ বা তারও বেশি সময় ধরে। চক্র ভাঙ্গা ছাড়া মুক্তি নেই।
একটা সময়ে আবাহনী-মোহামেডান দ্বৈরথকে ঘিরে দেশের জনগণের আবেগ-উন্মাদনা নিয়ে নতুন করে কিছু বলার প্রয়োজন নেই। যে ভাষাতেই বলা হোক না কেন, নতুন প্রজন্ম, যারা দেখেনি, তারা কখনোই সেই উন্মাদনা কল্পনা করতে পারবেনা। এটা এমন এক অনুভূতি যা কেবলমাত্র আশি আর নব্বই দশকের তরুণ প্রজন্ম অনুভব করতে পারেন। যুদ্ধবিধ্যস্ত, গণতন্ত্রহীন, দুর্ভিক্ষপীড়িত, অপসংস্কৃতির গোবরে অন্যতম পদ্মফুল হয়ে ফুটবল মাঠে আবাহনী-মোহামেডানের দ্বৈরথ ফুটেছিল সাতের দশকে শেষ ভাগে। পৃথিবীর দরিদ্রতম দেশের সংক্ষিপ্ততম তালিকায় থাকা নতুন এই দেশটি আশির দশকে অবকাঠামোগত দুর্বলতাকে বৃদ্ধাংগুলি দেখিয়ে এশিয়ার উদীয়মান ফুটবল দেশগুলোর সাথে চোখে চোখ রেখে লড়াই করতো, তার ফুটবলীয় রশদের কাঁচামাল যোগান দিত এই আবাহনী-মোহামেডানই। সেই দিন হারিয়ে গেছে। প্রেক্ষাপট বদলে গেছে। তাই সেই দিন ফিরিয়ে আনার কোন উপায় নেই। সেই প্রেক্ষাপটে চার বছর পর পর এক বিশ্বকাপ ছাড়া বাকি সময় অন্য কোন বৈশ্বিক ফুটবল টেলিভিশনের পর্দায় উপভোগের সুযোগ ছিলনা। তাই রক্তে থাকা ফুটবলটাকে ভালবাসতে হলে আবাহনী বা মোহামেডান, কোন একটা দলকে আকড়েই থাকতে হত। এখনকার ফুটবল প্রজন্ম ইউরোপের প্রথম সারির লীগগুলোর পাশাপাশি চ্যাম্পিয়ন্স লীগ, ইউরোপা লীগ আর আন্তর্জাতিক ব্রেকে ইউরোপ-ল্যাটিন অঞ্চলের বিশ্বকাপ বাছাই, নেশনস লীগের মত মনোমুগ্ধকর ফুটবল দেখছে পুরো মৌসুম জুড়েই। চক্র শেষে কোন কোন বছর মৌসুম শেষে বোনাস হিসেবে থাকছে ইউরো বা কোপা আমেরিকার মত মহাদেশীয় আসর। একটা মৌসুম শেষ হতে না হতেই শুরু হয়ে যাচ্ছে পরবর্তী মৌসুম ঘিরে নতুন স্বপ্ন, নতুন উত্তেজনা। সেই সর্বোচ্চ মানসম্পন্ন ফুটবল দেখতে অভ্যস্ত ফুটবলানুরাগীদের ঢিমে তালে চলা অপরিকল্পিত ফুটবল দিয়ে আবাহনী-মোহামেডানের গণজাগরণ সম্ভব নয়।
চিত্রঃ আশির দশকে গ্যালারীতে তিল ধারনের জায়গা নেই আবাহনী মোহামেডান ম্যাচ চলছে, মার্চ ০৬, ১৯৮৭; Image Source: Abahani Limited’s Facebook Page
তবে আবেগ উত্তেজনা যে শুধু বিশ্বমানের ফুটবল ঘিরেই আবর্তিত হয়, তা নয়। র্যাংকিং এর পিছন দিকে থাকা এশিয়া ও আফ্রিকার অনেক দেশেই ঘরোয়া ফুটবল লীগের জনপ্রিয়তা আছে। এমন নয় যে তারা ইউরোপীয়ান লীগগুলোতে চোখ রাখেনা। তবে নিজ দেশের লীগকে উপেক্ষা করে নয়। এপাড়ের বাঙালিরা তাদের ফুটবল প্রেম দিয়ে নিজেদের প্রিয় ক্লাবগুলোর সাথে আত্মিক বন্ধনে অনুজ প্রজন্মকে বাঁধতে ব্যর্থ হলেও ওপাড়ের বাঙ্গালিরা প্রায় সমমানের ফুটবলে দিয়েই তাদের ক্লাবগুলোকে ঘিরে উন্মাদনা হারিয়ে যেতে দেয়নি। ওপাড়ে ঐতিহ্যবাহী চিরপ্রতিদ্বন্দী- ইস্ট বেঙ্গল আর মোহনবাগানের মুখোমুখি হওয়ার আবেদন আজও অমলিন। আই লীগে ইস্ট বেঙ্গল আর মোহনবাগানের মুখোমুখি হওয়ার দিন কলকাতার সল্টলেকের যুবভারতী স্টেডিয়ামের সত্তর হাজার আসনের প্রতিটি দর্শকে পূর্ণ হয়ে যায়। শুধু ইস্ট বেঙ্গল আর মোহনবাগানের ম্যাচের দিনই নয়, সমর্থকদের চোখ থাকে তাদের নিজ দলের প্রত্যেকটি ম্যাচেই। এই সমর্থন বিশ্বমানের চোখ ধাঁধানো ফুটবল দেখতে নয়, নিজ দলের প্রতি অকৃত্রিম ভালবাসা থেকেই এসেছে ভারতীয়দের। এ দুটি দলের মত বড় না হলেও, ভারতের সর্বোচ্চ স্তরে অংশগ্রহণ করা প্রত্যেকটি দলেরই রয়েছে নিজস্ব সমর্থক গোষ্ঠী। এদিক থেকেও ভারত এক কাঠি উপরেই ছিল। খোদ আশি নব্বুইয়ের দশকেও আবাহনী-মোহামেডান ছাড়া তৃতীয় কোন ক্লাব নিজস্ব পরিমন্ডলের বাইরে এসে সমর্থক গোষ্ঠী তৈরি করতে পারেনি। এখনকার প্রেক্ষাপটে কাজটা অসম্ভবের কাছাকাছি। হালের বসুন্ধরা সিটি সেই চেষ্টা করেও সুবিধা করতে পারেনি। এর প্রধানতম কারণ এদেশের বর্তমান ফুটবল অনুরাগী প্রজন্ম বার্সেলোনা-রিয়েল, জুভেন্টাস-মিলান কিংবা ম্যানচেস্টার-লিভারপুল এর মত ক্লাবগুলো থেকে বেছে নিয়েছে নিজের প্রিয় দল। সোস্যাল মিডিয়াতে এসব ক্লাবের বাংলাদেশী সমর্থকদের গ্রুপে সদস্য সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। হাজার মাইল দূরের সেই ক্লাবগুলোর প্রতি এদেশের সমর্থকদের আবেগ দেখলে চমকে যাবার কিছু নেই। দেশের ক্লাবের প্রতি আবেগ ধারণের জন্য শুন্যস্থান সেখানে নেই।
তবে শুন্যতার জায়গা অবশ্য একটা আছে। পূরণের চেষ্টা বাফুফে কর্তা ব্যক্তিরা কখনো করেছেন বলে মনে হয়না। মার্কেটিং শাস্ত্রে একটা টার্ম আছে- Niche Market। শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দীদের পাশ কাটিয়ে সীমিত সামর্থ্য প্রয়োগ করে নিজের পণ্যকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করে অপেক্ষাকৃত ছোট বাজার ধরা, যে বাজারের ক্ষুদ্রতা শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দীর আগ্রহ তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছে অথবা তার নজর এড়িয়ে গেছে। Niche Market হচ্ছে সেই ছোট বাজার।
রাজধানী ও বড় বড় দুই একটি শহরকেন্দ্রিক সমাজের অভিজাত অংশই পাশ্চাত্য ফুটবল সংস্কৃতির দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এদেশে ফুটবলের সবচেয়ে বড় বাজার। বড় এই বাজারটিকে পাশ কাটিয়ে দেশ বিস্তৃত অঞ্চল হচ্ছে ফুটবলের সেই Niche Market। নিজ অঞ্চলের প্রতি টান এ দেশের প্রত্যেক অঞ্চলের মানুষের একটি অতি স্বাভাবিক প্রবণতা। বন্ধু আড্ডায় নিতান্ত রসিকতা করা থেকে বিয়ের জন্য পাত্রী নির্বাচনের মত গুরুগম্ভীর সিদ্ধান্ত গ্রহণে, নিজ অঞ্চলের প্রতি জাত্যাভিমানের প্রকাশ সর্বোত্র। দুজন অপরিচিত ইংরেজ পরিচিত হতে কথা শুরু করে সেই দিনটির আবহাওয়া নিয়ে। আর অপরিচিত দুজন বাঙালি প্রথম আলাপে সবচেয়ে বেশি যে কথাটি জানতে চায় তা হচ্ছে- “আপনার বাড়ি কোথায়?” অর্থাৎ কোন জেলায়। ইংরেজদের প্রথম আলাপের আবহাওয়া চর্চা আলাপ শুরুর একটি সৌজন্যতা হলেও বুদ্ধিমান বাঙ্গালির “বাড়ি কোথায়” প্রশ্নের মধ্যে লুকিয়ে থাকে অনেক হিসাব নিকাশ। অপরিচিত লোকটির স্বভাব চরিত্রের প্রত্যেকটি দিক যেন লুকিয়ে আছে তার উত্তরে। এই অঞ্চল প্রীতি কাজে লাগিয়ে প্রতিবেশী ভারত ক্রিকেটের পাশাপাশি ফুটবল, হকি আর কাবাডিতেও গণবিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। ভারতের অনুকরণে বাংলাদেশের ক্রিকেটও সেই পথে হেঁটে সফলতা কুড়িয়েছে। ফুটবলের পাশাপাশি ক্রিকেটেও আবাহনী মোহামেডানে জৌলুস হারিয়েছিল বহু আগেই। এরপর ঘরোয়া ক্রিকেটের আসর মানে শেরে বাংলার খাঁ খাঁ করা শুন্য গ্যালারী দখল করে বসে থাকা কয়েকটা কাক। সারা বছর ধরেই চলতে থাকা টাইগারদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ নিয়ে দেশে আগ্রহের কমতি না থাকায় বিসিবির ঘরোয়া প্রতিযোগীতার দর্শক অনাগ্রহকে খুব একটা গুরুত্ব দেয়না। তারপরও ক্রিকেটের মরা গ্যালারী দর্শকে ভরে উঠে বিপিএল নামের অঞ্চলভিত্তিক ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট লীগে। অর্থ আয়ের নতুন এক খনিই আবিস্কার করেছে ক্রিকেট। তারপরও প্রায় এক যুগ কেটে গেছে। বাফুফের কুম্ভকর্ণের ঘুম এখনো ভাঙ্গেনি। অথচ ফুটবলে গণজোয়ার ফেরাতে, আর্থিক সক্ষমতা বাড়াতে, দেশব্যপি ফুটবলের বিস্তার বাড়াতে, অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য মাছের তেলে মাছ ভাজতে ফুটবলেরই বেশি দরকার এ ধরনের আয়োজন।
৮ টি বিভাগীয় শহরের নামে ৮ টি দল নিয়ে হোম এন্ড এওয়ে ভিত্তিক ফ্র্যাঞ্চাইজি লীগ আয়োজন করলে ঢাকা নিয়ে হালকা সন্দেহ থাকলেও বাকি ৭ টি বিভাগীয় শহরের স্টেডিয়ামগুলোয় যে দর্শক উপচে পড়বে, এ বিষয়টি বোধকরি স্বতঃসিদ্ধই। তাছাড়া ঢাকা ও চট্টগ্রাম ক্লাব ভিত্তিক প্রতিযোগীতায় দর্শক আকর্ষণ করতে ব্যর্থ হলেও বিপিএল ক্রিকেট বলছে এ ধরনের ফুটবল আয়োজন দর্শক ফেরাবে বঙ্গবন্ধু আর এম এম আজিজেও। ঢাকা ও চট্টগ্রামের বাইরে ক্লাব ভিত্তিক ফুটবল দর্শক সমাগমে কখনো নিরাশ করেনা। যদিও সেই সব অঞ্চলেও ক্লাব ভিত্তিক সমর্থক গোষ্ঠী গড়ে ওঠেনি, নিজ দলকে অনুসরণ করার সংস্কৃতি সেখানে এখনো অজানা। তারপরও বড় শহরগুলোতে উপেক্ষিত ক্লাব ফুটবল থেকে সুস্থ বিনোদনের ক্ষেত্র খুঁজে ফেরা ছোট শহরগুলো বিমুখ হয়নি। এ সু্যোগ বেশি দিন থাকবেনা। বার বার দর্শক সমাগম দেখেও বাফুফে সেই শুন্যতা পূরণে আশাব্যঞ্জক কোন পদক্ষেপ নেয়নি। সময় গেলে আর সাধন হবেনা।
চিত্রঃ কানায় কানায় পরিপূর্ণ সিলেট বিভাগীয় স্টেডিয়ামে খেলতে নামছে বাংলাদেশ। Image Curtesy: Faisal Caesar, Sports Blogger
অথচ প্রায় একযুগ আগে শুরু হওয়া ক্রিকেটের ফ্র্যাঞ্চাইজি লীগ আয়োজনে বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতা আছে যা ফুটবলের নেই। ক্রিকেটে ফুটবলের মত প্রতি মাসে একটি সপ্তাহে আন্তর্জাতিক বিরতির সিস্টেম নেই। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে রয়েছে চলমান এফটিপি (ফিউচার ট্যুর প্ল্যান)। সেই এফটিপি অনুযায়ী আন্তর্জাতিক সিরিজ চলাকালে ঘরোয়া ফ্র্যাঞ্চাইজি লীগ চালানো সম্ভব না। তাই এফটিপির সাথে সমঝোতা করে ফ্র্যাঞ্চাইজি লীগ বরাদ্দ পায় খুব কম সময়। সেই সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে হোম এন্ড এওয়ে ভিত্তিক ম্যাচ আয়োজনের সক্ষমতা নেই ক্রিকেট বোর্ডের। কম সময়ে বেশি ম্যাচের জন্য আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন উইকেট তৈরি করাও অনেকাংশে অসম্ভব। বিপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজি দলগুলোতে অংশ নেয়া আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারদের জন্য আইসিসির প্রটোকল অনুযায়ী নিরাপত্তা ও আবাসন সুবিধা, আধুনিক ক্রিকেট অনুশীলনের পর্যাপ্ত আনুসাংগিক ব্যবস্থা, উড়াল পথে যোগাযোগ ব্যবস্থাও নেই কিছু বিভাগীয় শহরে। তাই অঞ্চল ভিত্তিক প্রতিযোগিতার জনপ্রিয়তা বাড়াতে সবচেয়ে কার্যকর যে হোম এন্ড এওয়ে ভিত্তিক ব্যবস্থা, সেটি ছাড়াই ক্রিকেটের এই সাফল্য নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। অন্যদিকে ফুটবলের ক্ষেত্রে হোম এন্ড এওয়ে ভিত্তিক আয়োজনে এত জটিলতা নেই। ক্রিকেটের মত সীমিত সময়ের বাধ্য বাধকতা না থাকায়, আয়োজনের জন্য পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যাবে। তাছাড়া ক্রিকেট পিচের ও পয়নিস্কাশন ব্যবস্থার মত টেকনিকাল চ্যালেঞ্জ নেই ফুটবলে। শুধু ঢাকার বঙ্গবন্ধু আর চট্টগ্রামের এম এ আজিজের মত বাকি ছয়টি বিভাগীয় স্টেডিয়ামকে ফুটবল উপযোগী আউটফিল্ড আর গ্যালারিগুলোকে ঘসে মেজে বসার উপযোগী করাটাই মূল চ্যালেঞ্জ। বিভাগীয় শহরগুলোতে দুটি ক্লাবের খেলোয়ার-কর্মকর্তাসহ বাফুফে প্রতিনিধি আর টিভি সম্প্রচারের জন্য ভ্রমণরত জনাকয়েক টেকনিশিয়ানকে উন্নত হোটেল সুবিধা দেয়ার মত অবকাঠামোগত সুবিধা ইতিমধ্যে দেশের সবকটি বিভাগীয় শহরেরই আছে। ফিফার হোম এন্ড এওয়ে ম্যাচের নিয়ম মেনে দেশের আটটি বিভাগীয় শহরকে নিজ ও প্রতিপক্ষের মাঠে মুখোমুখি করিয়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি ভিত্তিক একটি বার্ষিক লীগ আয়োজন সামর্থ্যের মধ্যেই আছে। আঞ্চলিকতার প্রতি সহজাত টান থাকায় দর্শককে মাঠে আনার জন্য বা দলগুলোকে জনপ্রিয় করার জন্য বাড়তি কিছু না করলেও চলবে। টিভি সম্প্রচার, ধারাভাষ্য আর উপস্থাপনার মান একটু বৃদ্ধি করতে পারলে সম্প্রচারকারী চ্যানেলের টিআরপি উপরের দিকে থাকার ব্যাপারে নিশ্চয়তা দেয়াই যায়। এই ফ্র্যাঞ্চাইজি লীগকে ঘিরে দেশব্যপী উত্তেজনা আর আগ্রহকে কাজে লাগাতে, ফ্র্যাঞ্চাইজি হিসেবে আটটি শিল্পগ্রুপ প্রতিষ্ঠান আর স্পন্সরশীপের অংশীদারদের খুঁজে নেয়া কঠিন হওয়ার কথা নয়। ফ্র্যাঞ্চাইজি লীগ চালু হলে খেলোয়ারদের পাশাপাশি রেফারিসহ ফুটবল সংশ্লিষ্ট পেশায় আয়ের ক্ষেত্র সম্প্রসারিত হবে। খেলোয়ারদের আর্থিক নিরাপত্তা সুনিশ্চিত হলে ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন দেখা কিশোর-তরুণদের সংখ্যা বাড়বে। ফুটবল বিস্তৃত হবে দেশের প্রতিটি প্রান্তে। ম্যাচের টিকেট বিক্রির অর্থের একটি অংশ সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থাগুলোকে ফুটবল উন্নয়নে কাজে লাগানোর শর্তসাপেক্ষে প্রদান করলে ফুটবলের পেশাদারিত্ব রাজধানীর বাইরেও ছড়াবে। ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোকে নিজেদের হোম গ্রাউন্ড হিসেবে সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় স্টেডিয়ামগুলো ব্যবহারের সুযোগের বিনিময়ে স্টেডিয়ামগুলো বছরব্যপী সংস্কারের দায়িত্ব দিলে বছরের অধিকাংশ সময়ে গোচারণভূমিতে পরিণত হওয়া স্টেডিয়ামগুলো বারো মাস ফুটবল চর্চায় ব্যস্ত থাকতে পারবে।
আবাহনী-মোহামেডানের সেই হারানো উত্তেজনা অন্যভাবে ফিরে আসবে সার্বিক উন্নতির ক্ষেত্র সাথে নিয়ে। আবাহনী-মোহামেডানকে কেন্দ্র করে আবর্তিত ফুটবলের সোনালী যুগেও যা ছিলনা। বাংলার ফুটবলে প্রচুর বিনিয়োগ আর বিসিবির মত বাফুফেরও নিজস্ব আয়ের পথ উন্মোচিত হবে। সবচেয়ে বড় কথা, রবার্টো কার্লোসের গতিতে করা ফ্রি কিকে ফুটবলে দারিদ্রের দুষ্টচক্রে বড়সর একটা ধাক্কা দেয়া যাবে। সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্তই আছে। শুধু বাফুফেকে চোখ মেলে দেখতে হবে। আর মেধার চর্চা বাড়াতে হবে আরেকটু।
Special thanks to Freeflagicons.com for allowing me to use the wonderful thumbnail in this blog article
- 0 মন্তব্য