• ফুটবল

রবার্তো কার্লোস - দ্যা মোস্ট অফেন্সিভ ডিফেন্ডার অফ মডার্ণ ফুটবল

পোস্টটি ১০০৫ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

প্রত্যেক কিংবদন্তি নিজের কিছু আলাদা সত্ত্বার  জন্য ইতিহাসের পাতায় নিজের নাম লিখিয়ে নেন।  তেমনি  ফুটবলের ইতিহাসে  "বুলেট ম্যান" নামে নিজের পরিচিতি  তুলে ধরেন।  নামটা শুনে সবার মনে প্রথম প্রশ্ন জাগবে  ফুটবল এর সাথে বুলেট এর কি সম্পর্ক? পদার্থবিজ্ঞানের গতি ও বল কে  কাজে  লাগিয়ে গোল পোস্টে তিনি ফুটবল নয়, ফুটবলের বুলেট মারতেন।  সে থেকেই তার উপাধি পায় বুলেট ম্যান।  যার আক্ষরিক নাম "রবার্তো কার্লোস"। নামটা শুনলেই প্রথমে মনে পড়ে যায়  ফ্রান্সের বিপক্ষে করা সেই বাকানো শর্ট যার জন্য দিতে হয়েছিলো পদার্থবিজ্ঞানীদের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা।  এইসব জাদুকরী ফ্রি কিক এর হাত ধরেই ইতিহাস লেখার গল্প শুরু হয় তার।  

 

ব্রাজিলিয়ান = দারিদ্র্য এবং সংগ্রাম। কথা দুইটি ওতপ্রোতভাবে জড়িত একজন ব্রাজিলিয়ান ফুটবলের সাথে প্রতিটা  প্লেয়ারের বায়োগ্রাফিতে জড়িত আছে শব্দ দুইটি কার্লোস তার ব্যতিক্রমী চরিত্র নয়। ১৯৭৩ সালে  গোববের মাঝে পদ্মফুল হয়ে জন্মগ্রহণ করে সে। জীবন সংগ্রামের তাড়নায় কাজ করেছেন কফির বাগানে কিংবা টেক্সটাইল কারখানায় ।  সাও পাওলো এলাকা ছিলো ফুটবল গঠনের কারিগর। তাই ফুটবল খেলাটা তার জন্য অভ্যাস ছিলো এক প্রকার কাজের ফাঁক পেলেই মেতে উঠতে খেলায়।ফ্রি কিকের জাদুমন্ত্রের দ্বারা নিজের ভাগ্যকে বদলানোর সুযোগকে হাত ছাড়ে করেন নি তিনি।  রাজ্যের এক ক্লাবের স্কাউটের আটকে ধরে তার ফ্রি কিকের দৃশ্য।  অফার করে বসলেন  "উনিয়া সাও জোয়াও" অংশগ্রহণ করার।  কিন্তু রাজ্যের ব্যবধান ছিলো অনেক। হার না মানা মনোভাব নিয়ে পায়ে হেটে যাত্রা শুরু করেন নিজের প্রাথমিক গন্তব্যে। শুরু করলেন ইতিহাস রচনার গল্প।  গোল করার চেয়ে নিজেকে ডিফেন্সেই প্রিয় করে তোলেন। ১৯ বছর বয়সে সুযোগ আসে অ্যাথলেটিকো মিনোরের বি দলে খেলার।  ধারবাহিক পার্ফম্যান্স এর জন্য এই বছরই তাকে পাঠানো হয় কোপা কনমেবোলে।  নিজের নামের পাশে প্রথম ট্রফির নাম লিখালেন কোপা জয়ের মাধ্যমে।  

 

জনপ্রিয়তা যত বৃদ্ধি পেতে থাকে সিড়ির এক এক ধাপ করেও এগিয়ে যায় কার্লোস। 

কোপা কনমেবোল জয়ের পরের  বছরই   পালমেইরাসে পা দেন কার্লোস। পালমেইরাস থেকে ইউরোপে ডুকতে  মাত্র দুই বছর সময় নিলেন।  ইন্টার মিলান দলে ভেড়ায় এই অ্যাটাকিং লেফট ব্যাককে। অভিষেকে  নিজের নামের পাশে গোল জড়ান।  কিন্তু নিজের ক্যারিয়ারের ভালো একটা মৌসুম পার করার পরেও ইতালি ক্যারিয়ার দীর্ঘায়িত করতে পারেনি। মিলান কোচ কোচ রয় হজসন চাচ্ছিলেন তাঁকে পাকাপাকিভাবে লেফট উইঙ্গার হিসেবে খেলাতে। কিন্তু পাকাপাকিভাবে লেফট উইংয়ে খেলার ইচ্ছে ছিল না তাঁর। ডিফেন্স থেকে দ্রুত উঠে যাওয়া, আবার ট্র্যাক ব্যাক করা তাঁর নিজ পছন্দ হলেও কোচ চাইতেন হয় ডিফেন্সে থাকবেন, নয়তো পাকাপাকি উইংয়ে। নিজের কথায় অনঢ়  ছিলেন  কার্লোস।  অন্য ক্লাবে তাই বিক্রির  খোজে ইন্টার মিলান।   তখনই এক প্রীতি ম্যাচে ৩৫ মিটার দূর থেকে নেওয়া ফ্রি কিক ফুটবল দর্শককে হতভম্ব করে দেয়।  গোল দেখে বোকা বনে যান ফ্যাবিও ক্যাপেলোও। যখন জানতে পারলেন, এই খেলোয়াড়কেই ইন্টার ছেড়ে দিচ্ছে নামমাত্র মূল্যে, দেরি করেননি। সঙ্গে সঙ্গে ব্রাজিলিয়ান লেফট ব্যাককে রিয়াল মাদ্রিদে টেনে আনেন তৎকালীন রিয়াল কোচ ফাবিও ক্যাপেলো। ফুটবল বিশ্বে তৈরি হয় আধুনিক ফুলব্যাকের নতুন ব্যাখ্যা।  

 

শতাব্দীর সেরা ক্লাবে যোগদানের মাধ্যমে ফ্যাবিও ক্যাপেলো তাঁকে স্বাধীনতা দেন তার নিজের মত করে খেলার দায়িত্ব দেন শুধু ডিফেন্স ঠিক রাখার । ৩ নম্বর জার্সি গায়ে  পুরো ফুটবল বিশ্বকে অবাক করার প্রস্তুতিও নেন৷  পরপর দুই বছরে নিজের  নামের পাশে যোগ করেন কয়েকটি দলগত এবং ব্যাক্তিগত অর্জন সমূহ ।  প্রথম বছরেই ফ্যাবিও ক্যাপেলোর অধীনে লা লিগা জয় করে নেন। পরের বছর জার্মান কোচ ইয়ুপ হেইকেন্সের অধীনে চ্যাম্পিয়নস লিগ। ১৯৯৮ সালে  ব্রাজিলের অন্যতম সেরা দল এর মধ্যে নিজেকে জায়গায় করে নেন। কিন্তু ফাইনালে এক জিদানের ফ্রান্সের কাছে হার আনতে হয় ব্রাজিলকে।  

 

তার সময়ে বদল হয় রিয়াল মাদ্রিদের প্রেসিডেন্ট। দলকে তারকাপুঞ্জে ঢেলে সাজানোর দায়িত্ব নিলেও গোলরক্ষক আর লেফট ব্যাকের জায়গার মানুষ দুইটা  ছিলো তার পছন্দের ।  তাই এত ভীড়েও নিজেকে হারিয়ে যেতে হয় নি। একবিংশ শতাব্দীর প্রথম বছরেই গ্যালাক্টিকোসদের হয়ে ২য় বারের মতো জিতলেন উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ। পাওলো মালদিনির সাথে তাকেও ইতিহাসের সেরা লেফট ব্যাক হিসেবে পরিগণিত করা হয়। আক্রমণভাগেও তার দুর্দান্ত ফর্ম তাকে পরিচিত করে ফুটবলের সবচেয়ে আক্রমন্মুখো ডিফেন্ডার হিসেবে। একজন ডিফেন্ডার হয়েও তার গোল সংখ্যা ১১৭। এছাড়াও তার বল কিক করার গতি অবিশ্বাস্য প্রতি ঘন্টায় ১৬৯ কি.মি.! 

 

তার ক্যারিয়ারের সৌন্দর্যমন্ডিত সময় ছিলো ২০০২।    একই সাথে বিশ্বকাপ এবং উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের তিনি ছোঁয়া পেয়েছেন। এছাড়া সেই বছরেই ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপ ও উয়েফা সুপার কাপ জেতায় জায়গা পেয়েছিলেন উয়েফা টিম অফ দ্য ইয়ারে। উয়েফা ডিফেন্ডার অফ দ্য ইয়ার হিসেবেও নির্বাচিত হয়েছিলেন কার্লোস।

 

এরপর যোগ দেন তুরস্কের ক্লাব ফেনেরবাখে।  ৩ বছর পরে এই ক্লাব থেকে ফিরে আসেন নিজের দেশের ক্লাব "করিন্থিয়ান্সে" কিন্তু সময় সংখ্যা ছিলো ১ বছরেরও কম।  আবার ফিরে যান ইউরোপে এরপর ক্যারিয়ার খুব একটা দীর্ঘ হয় নি রাশিয়ান ক্লাব আনঝি মাখাচকালার হয়ে  ফুটবল থেকে অবসর গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন তিনি ।  

 

অবসর গ্রহণের আগে নিজের নামের পাশে জড়িয়ে যান ট্রফির।  (সোর্স : উইকিপিডিয়া) 

 

১× ওয়ার্ল্ড কাপ

২× কোপা আমেরিকা  

৩× চ্যাম্পিয়নস লীগ 

২× ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপ  

৪× স্পানিশ চ্যাম্পিয়ন 

৩× স্পানিশ সুপার কাপ 

২× তুর্কিস সুপার কাপ