• অন্যান্য

Raul Gonzalez - The Angel of Real madrid

পোস্টটি ১০৪৬ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

কাতালানদের মুখে রিয়াল মাদ্রিদ ফুটবলারের প্রশংসা কমই শোনা যায়। এর উল্টোটাও ঠিক। কারণ রাজনৈতিক। আমরা সেই প্রসঙ্গে যেতে চাই না। যা বলার তা হলো, পেপ গার্দিওলা খুব প্রশংসা করতেন রাউল গঞ্জালেসের। এক সময় দুজনেই স্প্যানিশ দলে খেলেছেন। বার্সেলোনাতে খেলার সময় পেপ ছিলেন রাউলের প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী। পরে কোচ এবং ফুটবল ট্যাকটিশিয়ান হিসেবেও জগদ্বিখ্যাত। তাই গার্দিওলার প্রশংসাকে আলাদা গুরুত্ব দিতেই হয়। টানা ১৫ বছর রিয়ালে খেলার পর রাউল যখন বুন্দেসলিগায় যাচ্ছেন, পেপ তখন বলেন ‘রাউলের প্রস্থান মানে স্প্যানিশ ফুটবলের সর্বকালের সেরা একজনের চলে যাওয়া। সংখ্যা তার হয়ে কথা বলে।’

সংখ্যা বরাবরই রাউলের হয়ে কথা বলেছে। রিয়ালে ১৫ মৌসুম খেলার পর জার্মান ক্লাব শালকেতে গিয়েও গোলসংখ্যায় নিজের কার্যকারিতার প্রমাণ দিয়েছেন। মাত্র দুই বছর খেলেছেন বুন্দেসলিগায়। সেই দুই বছরে করেছেন ৪০ গোল। রাউল চলে গেলে জার্মান ক্লাব শালকে তার সম্মানে ৭ নম্বর জার্সিটা তুলে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। মাত্র দুই মৌসুম খেলে যাওয়া কারও জন্য এমন সম্মান, সত্যি ভাবা যায় না। সিদ্ধান্তে অনেকে বিস্মিতও হয়েছিলেন। শালকে ক্লাব কিংবদন্তিদের অনেকে প্রতিবাদ করেন। তবুও সিদ্ধান্তে অটল ছিল ক্লাব কর্র্তৃপক্ষ। রাউল গঞ্জালেসের অবসরের পর শালকেতে ৭ নম্বর জার্সি গায়ে আজ পর্যন্ত কেউ মাঠে নামেননি।

২০১৫ সালের নভেম্বরে পেশাদার ফুটবল থেকে অবসর নেন রাউল। ছিলেন স্পেন ও রিয়াল মাদ্রিদের ইতিহাসে অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার। রাউল শেষ মৌসুম খেলেছেন নিউইয়র্ক কসমসে। রিয়াল মাদ্রিদের গ্যালাকটিকো যুগের অন্যতম তারকা রাউলের প্রাপ্তির খাতা সংখ্যায় ভরা। লস ব্লাঙ্কোসদের হয়ে ৭৪৭ ম্যাচে করেছেন ৩১১ গোল। ১৬ বার শিরোপা জিততে সাহায্য করেছেন। স্পেনের হয়ে কোনো বড় ট্রফি জিততে না পারলেও একশর ওপর ম্যাচ খেলেছেন। আজ তার ৪৩তম জন্মদিন।

১৯৭৭ সালের ২৭ জুন মাদ্রিদের সান ক্রিস্টোবালে জন্মেছিলেন রাউল। বড় হয়ে যিনি ‘এল অ্যাঞ্জেল দি মাদ্রিদ’ নামে পরিচিত হন। সত্যি সত্যিই তিনি ছিলেন মাদ্রিদের দেবদূত। খেলা শুরু করেন অ্যাথলেতিকো মাদ্রিদের ক্যাডেট দলে। এরপর ছোট ছোট ক্লাব ঘুরে চলে আসেন রিয়ালে। ১৯৯৪-৯৫ মৌসুমে রিয়াল মাদ্রিদ সি দলে অভিষেকের পর ৭ ম্যাচে ১৬ গোল করে সাড়া ফেলে দেন। তখন রিয়ালের ম্যানেজার ছিলেন হোর্হে ভালদানো। তিনিই রাউলকে মূল দলে ডেকে নেন। এমিলিও বুত্রাগুয়েনো ফর্মে ছিলেন না। অন্য ফরোয়ার্ডের ইনজুরি ছিল। রাউলকে প্রস্তুত হতে বললেন ভালদানো। জারাগোজার বিপক্ষে তার অভিষেক হলো। রাউলের বয়স তখন ১৭ বছর ১২৪ দিন। রিয়ালের ইতিহাসে কনিষ্ঠতম খেলোয়াড় প্রথম ম্যাচে বদলি হিসেবে মাঠে নামেন। গোল পাননি। দলও হেরেছিল। সহকারী কোচ অ্যাঞ্জেল কাপ্পার কাছে অনুরোধ করে পরের ম্যাচে আবার নেমেছিলেন। অ্যাথলেতিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে সেই ম্যাচে রাউল পেনাল্টি আদায় করেন, অ্যাসিস্ট করেন এবং নিজের প্রথম গোলেরও দেখা পান। রিয়াল সেই ম্যাচ জিতেছিল ৪-২ গোলে।

টানা ১৫ বছর রিয়ালে খেলেছেন রাউল। ক্লাবে নিজের পারফরম্যান্স এমন উচ্চতায় তুলেছিলেন যে, লোকে রিয়ালকে ডাকত ‘রাউল মাদ্রিদ’ নামে। গ্যালাকটিকো যুগের আগে এবং পরেও ছিলেন সমান উজ্জ্বল। খেলেছেন জিদান, ফিগো, বেকহ্যাম, কার্লোস, রোনাল্ডোর সঙ্গে। কোনোদিন এদের ছায়ায় ঢাকা পড়েননি। বুত্রাগুয়েনোর ফর্মহীনতায় সুযোগ পেয়েছিলেন। পরে তার ‘৭’ নম্বর জার্সির যোগ্য উত্তরাধিকারী হয়ে ওঠেন। রিয়ালে টানা ৮ বছর অধিনায়কত্ব করেছেন রাউল। স্পেন দলে ফার্নান্দো মরিয়েন্তেসের সঙ্গে যে জুটি গড়েছিলেন তা ছিল ইতিহাস-সেরা।

দেখতে যেমন সুদর্শন ছিলেন, খেলাতে তেমন সৌন্দর্য ছিল না। অথচ গোল করার ওস্তাদ ছিলেন রাউল। ফিনিশার হিসেবে তাকে দশে দশ দেওয়া যায়। হিয়েরোর ভাষায়, ‘রাউল কোনোটাতেই পারফেক্ট নন। তবে সবকিছুতেই ছিল ভালো। এটাই ওকে সেরাদের সেরা বানিয়েছে।’ জাভি-ইনিয়েস্তারা স্পেন ফুটবলের শাসনভার তুলে নেওয়ার আগে সেনাপতি ছিলেন রাউল। তার দলে তিকিতাকার সৌন্দর্য ছিল না। মরিয়েন্তেসের সঙ্গে তার জুটি কোনোদিন ফুটবলে ঢেউ তুলতে পারেনি। স্পেন বিশ্বকাপ জেতার পর তাই রাউলদের ভুলে গেছে সবাই। রিয়াল কিন্তু ভোলেনি। কারণ, স্পেনের রাউল আর রিয়ালের রাউল এক নন। আলাদা। রিয়ালের তিনি দেবদূত।