বিসিবির আয়ের উৎস কী?
পোস্টটি ৪৩৫৩ বার পঠিত হয়েছেদক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ। সিরিজ জেতার জন্যে বাংলাদেশ দলকে তিন কোটি টাকার বোনাস ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। বেশিরভাগ সময়েই অবশ্য বড় কোন সিরিজ জিতলে বিসিবি এটা করে থাকে। কিন্তু এরপরই যে ব্যাপারটা দেখা যায়, ইনিয়ে বিনিয়ে অনেকে বলার চেষ্টা করেন- ‘সামান্য’ একটা ক্রিকেট ম্যাচ/সিরিজ জিতলে এত টাকা দেওয়া হচ্ছে, এই টাকা তো অমুক অমুক জায়গাতেও ব্যাবহার করা যেত। এখানেই সবচেয়ে বড় প্রশ্নবোধক যে চিহ্নটি আমাদের সামনে এসে দাঁড়ায়, টাকাগুলি খরচ করার এই যে ‘অমুক অমুক’ বলে যে বিকল্প দেখানো হল, সেখানে কি আসলেই টাকাগুলি খরচ করা যেত? বিসিবি যে টাকাগুলি দিচ্ছে সেগুলি দিচ্ছে কোথা থেকে? বিসিবির আয়ের উৎস আসলে কি?
আইসিসির রেভিন্যিউ
প্রতিবছরই আইসিসি নানা খাত থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আয় করে থাকে। এই খাতের মধ্যে আছে সম্প্রচার স্বত্ত্ব বিক্রি, বিভিন্ন ধরণের লোন, বিভিন্ন জায়গায় বিনিয়োগের ফলে অর্জিত লাভ এবং আরো বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রাপ্ত অর্থ। আইসিসি মূলত একটি নির্দিষ্ট সময়ে অর্জিত অর্থের একটি সুনির্দিষ্ট অংশ সদস্য দেশগুলির মধ্যে বন্টন করে থাকে। বিসিবিও ঐ নির্দিষ্ট সময়ে এই অর্থ আইসিসির কাছ থেকে পেয়ে থাকে। যেমন, ২০১৯-২০ মৌসুমে বিসিবির আইসিসি থেকে অর্জিত আয় ছিল ১,৩৮০,৯০০,০০০ টাকা।
টুর্নামেন্টের রেভিন্যিউ
বিসিবির আয়ের অনেক বড় একটি উৎস বড় বড় টুর্নামেন্ট আর সিরিজগুলি। এসব টুর্নামেন্টে বিক্রি করা টিকিট, বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক সিরিজ আয়োজন, ঘরোয়া লীগ যেমন বিপিএল কিংবা এনপিএলের স্পন্সর থেকে বিসিবি একটি বড় অঙ্কের আয় করে থাকে। যেমন, ২০২১ সালে ‘ইমপ্রেস মাত্রা কনসোর্টিয়াম’ ২০২৩ সাল অব্দি বিসিবির সব ধরণের ঘরোয়া টুর্নামেন্টের স্বত্ত্ব ৩৩.৫ কোটি টাকায় কিনে নেয়। ‘ইমপ্রেস মাত্রা কনসোর্টিয়াম অবশ্য’ পরে সেটি ‘আলেশা মার্ট’ ও ‘ওয়ালটন’-এর কাছে এই স্বত্ত্ব বিক্রি করে দেয়। আবার ২০১৯-২০ সালে টুর্নামেন্ট আয়োজন থেকে বিসিবির অর্জিত আয় ছিল ১,০০০,৮১৪,৫৩৬ টাকা।
টিভি সম্প্রচার স্বত্ত্ব
বিভিন্ন টুর্নামেন্টের টিভি সম্প্রচার স্বত্ত্ব থেকেও বিসিবি একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ আয় করে থাকে। এই মুহুর্তে বিসিবির টিভি সম্প্রচার স্বত্ত্ব আছে ‘ব্যান টেক এজেন্সী’র অধীনে। ২০২১ সালে তারা ঐ বছরের মে মাস থেকে ২০২৩ সালের অক্টোবর অব্দি সব ম্যাচের সম্প্রচার স্বত্ত্ব কিনে নেয় ১৯.০৭ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে।
স্পন্সরশিপ
বাংলাদেশে ক্রিকেটের যে জনপ্রিয়তা, বিসিবির অর্জিত আয়ের অনেক বড় অবদান এটাই। এই জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করেই বিসিবি নানা রকম স্পন্সর পেয়ে থাকে। এই স্পন্সরের মধ্যে আছে- দলের স্পন্সরশিপ, জার্সির স্পন্সরশিপ, এমনকি বিভিন্ন ধরণের বিজ্ঞাপনের স্পন্সরশিপও। এই যেমন, ২০২১ থেকে ২০২৩ এর নভেম্বর অব্দি বাংলাদেশের পুরুষ ক্রিকেট দল, মহিলা ক্রিকেট দল, বাংলাদেশ ‘এ’ দল আর অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট দলের স্পন্সরশিপ কিনে নিয়েছে ‘দারাজ’। অন্যদিকে ‘দারাজ’-এর সিস্টার কন্সার্ন ‘হাংরিনাকি’ কিনে নিয়েছে ক্রিকেট দলের জার্সির স্পন্সরশিপ। এমনকি বিসিবি আইএসপি পার্টনার ‘আমরা’ আর হসপিটালিটি পার্টনার ‘প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও’ থেকেও স্পন্সরশিপের টাকা পেয়ে থাকে। ২০১৯-২০ সালে স্পন্সরশিপ থেকে বিসিবির অর্জিত আয় ছিল ২৯২,৮৩৫,২৪৬ টাকা।
অন্যান্য আয়
বিসিবি অন্যান্য আরো উৎস থেকে বড় অঙ্কের আয় করে থাকে। এর মধ্যে আছে ‘ডিসিপ্লিনারি ইস্যু’ আর ‘রিলিজ ফি’। ২০১৮-১৯ সালেই এ ধরণের ‘অন্যান্য উৎস’ থেকে বিসিবির আয় ছিল ১ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা। এছাড়াও বিভিন্ন ব্যংকে বিসিবির যে ডিপোজিট রাখা আছে সেখান থেকেও বিসিবি মোটা অঙ্কের মুনাফা করে থাকে।
এখন পাঠকদের কাছেই প্রশ্ন, বিসিবির আয়ের এসব উৎস যে স্পন্সররা তারা এসব টাকা বিসিবিকে কেন দেয়? নিশ্চয়ই ক্রিকেটের জন্যে। বিসিবি ক্রিকেটারদের যে টাকা দেয়, সেটাও আসে এসব উৎস থেকেই। আর এ কারণেই, বিসিবির বোনাস ঘোষণা দেখে অন্যান্য সেক্টরের অর্থাভাব তুলে আনা একদমই বোকাসোকা একটা প্রশ্ন।
- 0 মন্তব্য