প্রতিটি গোলে যখন আপনাকে গগনবিদারী চিৎকার করার অনুমতি দেয়..
পোস্টটি ১১২৮ বার পঠিত হয়েছেযদি কারো প্রেমে বিচ্ছেদ হয় আর সে নাচছে ব্যাপারটা প্রাথমিকভাবে খুবই অদ্ভুত এবং দৃষ্টিকটু কিন্তু সেই নৃত্য যদি হয় প্রেমিকাকে বিয়ে করে প্রেম বিচ্ছেদের গল্প কথন তাহলে নিশ্চয়ই আপনার ভ্রুক্ষেপ তো হবেই না বরং রোমন্থিত হতে কার্পণ্য করার কথা নয় নিশ্চয়ই..!
ঠিক তেমনটাই যদি আমরা কোনো ফুটবল ম্যাচে দেখি ফাইনালে পরাজিত দল খুব করে নেচে-কুঁদে ট্রফি নিয়ে উদযাপন করছে তাহলে কি ভাববেন তারা পাগল নাকি এলিয়েন?
সাধারণত যেকোনো টুর্নামেন্টের ফাইনালে পরাজিত দল হেরে হতাশায় অথবা ক্লান্তিতে নুইয়ে পরে কিন্তু ৪ জুন ১৯৮০ সালে কোপা দেল রে'র ফাইনালে এই ঘটনার ব্যতয় ঘটে পরাজিত দলটি জয়ী দলের সাথে ট্রফি নিয়ে উদযাপন করছে..!
কেনই বা এমনটা হবে না যেখানে জয়ী দলটির নাম রিয়াল মাদ্রিদ আর পরাজিত দলটির নাম রিয়াল মাদ্রিদ কাস্তিয়া স্পষ্টভাবে বললে রিয়াল মাদ্রিদের যুব দল অথবা মাদ্রিদের রিজার্ভ দল..!
১৯৯১ সালের আগে যেকোনো যুবদল বা রিজার্ভ দলকে একটি স্বতন্ত্র দল হিসেবেই গণ্য করা হতো স্পেনে এই নিয়মটির লুপহোলও হয়ত সেই ফাইনাল ম্যাচ ছাড়া বুঝা যেতো না ১৯৯১ সালের পর নিয়ম হয় একটি প্যারেন্ট ক্লাবের ২টি দল একই ডিভিশনে কমপিট করতে পারবে না এমনকি কোপা দেল রে'র ড্রতেও পরস্পর মুখোমুখি হবে না..!
১৯৮০ সালের কোপা ডেল রে ফাইনালটি সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে অনুষ্ঠিত হয় যেখানে কাস্তিয়া বেগুনি জার্সি পরিহিত হয়ে মাঠে নামে..৩৪ বছর বয়সী কোচ জুয়ানজু গার্সিয়া সান্তোসের দলের এভারেজ বয়স ছিলো ২০ বছর যেখানে ২৩ বছরের উর্ধ্বে কোনো খেলোয়াড়ই স্কোয়াডে ছিলো না..!
দলটি ফাইনালে উঠার আগে বিলবাও,রিয়াল সোসিয়েদাদ এবং স্পোর্টিং গিজনকে হারিয়ে ফাইনালে উঠে পক্ষান্তরে ভুজাদিন ভসকবের রিয়াল মাদ্রিদ লগরনেস,রিয়াল বেটিস এবং নগর প্রতিদ্বন্ধী এটলেটিকো মাদ্রিদকে সেমিফাইনালে হারিয়ে ফাইনালে উঠে..!
ফাইনাল ম্যাচটিতে খেলার প্রথমার্ধের ২০ মিনিটে জুয়ানিতো এবং ৪২ মিনিটে সান্তিয়ানার গোলে ২-০ লীড নেয়..
দ্বিতীয়ার্ধেও অনুমিতভাবে ৫৯ মিনিটে সাবিদোর গোলে মাদ্রিদ ৩-০ গোলে এগিয়ে যায় খেলার ৬২ তম মিনিটে মাদ্রিদকে ২০০০ এবং ২০০২ সালে ইউসিএল এবং স্পেন জাতীয় দলকে ২টি ইউরো এবং একমাত্র বিশ্বকাপ জয়ী কোচ দেল বস্কের গোলে লীড ৪-০ করে নেয়..কিন্তু কাস্তিয়ার হয়ে খেলার ৮০ মিনিটে আলভারেজের ডি-বক্সের বাহিরে থেকে দূরপাল্লার শটে কাস্তিয়া একটি গোল পরিশোধ করতে সক্ষম হলেও পরবর্তিতে ৮২ এবং ৮৯ মিনিটে গার্সিয়া হার্নানদেজ এবং কপিনের শেষ পেরেক হিসেবে জুয়ানিতো স্কোর লাইনকে আরো বড় করে নেয় এরই মধ্য দিয়ে মাদ্রিদ জিতে নেয় তাদের ১৪তম কোপা ডেল রে শিরোপা..!
খেলার ফলাফল যাই হোক দুই দলকে নিজেদের দর্শকদের সামনে শিরোপা উদযাপনে সেদিন কেউ আটকাতে পারেনি..!
আধুনিক ক্লাব ফুটবলে রূপকথার কথা বললে নিঃসন্দেহে রানিয়েরির লেস্টারের ইপিএল জয়ের কথাই সর্বাগ্রে থাকবে অথবা মাদ্রিদ ইতিহাসের ইয়ুপ হেইঙ্কেসের ৯৮ এর আন্ডারডগ খ্যাত উচল জয়ী মাদ্রিদের কথাই ধরুন না কিন্তু কাস্তিয়ার ফাইনালে উঠে আসা কিংবা একই প্যারেন্ট ক্লাবের দু'টি দল যখন ফাইনালে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সেটাও বা রূপকথার চেয়ে কম কিসে সর্বোপরি এটা যে ফুটবলের জন্য একটি বিরল গাঁথা..!
নিজেকে যদি কখনো খুব খুশি বা জামা না পরা সুখী মানুষ মনে হয় তবে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে সেদিনের ৬৫ হাজার দর্শকদের একজন নিজেকে ভাবুন যেখানে যে দলই গোল করবে সাদা জার্সি পরিহিত হোম দল কিংবা প্রতিপক্ষ সবক'টি গোলের জন্য আপনাকে গগনবিদারী চিৎকার করতে হবে এবং আপনি জানেন শিরোপাটি শুধু আপনাদের..!
আজ সেই শিরোপা জয়ের ৪২ বছর পূর্ণ হলো..
আজ সেই যুব দলটির ফাইনাল খেলার ৪২ বছর পূর্ণ হলো..!
- 0 মন্তব্য