• ক্রিকেট

ক্রিকেটের জনপ্রিয় ফরম্যাটে আমরা এখনও শিশু

পোস্টটি ৭৯০ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

বর্তমান সময়ে বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় খেলার একটি ক্রিকেট। এই ক্রিকেট শব্দটা বাংলাদেশের মানুষের কাছে আরও বেশি জনপ্রিয়। কারণ বাংলাদেশ বিশ্ব ক্রিকেটের পরিচিত একটি দল। এদেশের মানুষের হৃদয়ে অন্যতম ক্রিকেট একটি ভালোবাসা এবং আবেগের নাম।

 

এক সময় এই খেলায় বাংলাদেশের অবস্থান নড়বড়ে থাকলেও বর্তমানে বিশ্বের সব দলের কাছে বাংলাদেশ একটি আতঙ্কের নাম। তবে সেটা একমাত্র ওয়ানডে ক্রিকেটে, খুব সাহস করেই আমরা বলতে পারি। কারণ ওয়ানডে ফরম্যাটে বাংলাদেশের খেলার মান অনেক অনেক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৫ সাল থেকে বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশ ক্রিকেটের যে উন্নতি হয়েছে তা অবিস্মরণীয় বলা যায়।

ক্রিকেট – BD Khobor 365

তবে টেস্ট আর টি-টোয়েন্টিতে সেভাবে নিজেদের মেলে ধরতে পারেন না টাইগাররা। মাঝে মাঝে টেস্টে কিছু ইতিহাস গড়ে জয় পায়। আবার টি-টোয়েন্টিতে মাঝে মধ্যে এতো ভালো খেলে, সমর্থকরা মনে করে এই বুঝি বাংলাদেশ দল টি-টোয়েন্টিতেও ভালো খেলছে। কিন্তু আসলে তেমন নয়। আমরা টেস্ট ও টি-টোয়েন্টিতে মোটেও ভালো খেলছি না। আমরা হঠাৎ হঠাৎ ভালো খেলছি। আরও পরিষ্কার করে বললে বলা যায়, বিপক্ষ দল খারাপ খেললেই আমরা জিতি। ক্রিকেটে যখন দু-দলই ভালো করে তখনই ম্যাচটা হয় উপভোগ্য। কিন্তু আমাদের এটা হচ্ছে না।

 

ওয়ানডে ফরম্যাটে ভালো চললেও শেষ সিরিজটা মোটেও ভালো ছিল না। জিম্বাবুয়ের কাছে হারতে হয়েছে সিরিজ। তবে এই জিম্বাবুয়েকেও কোনোভাবেই এখন তুচ্ছ করা যাবে না। সেটা তারা অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে তাদের পূর্ণ শক্তির দলকে হারিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন। এ থেকে বুঝা যায়, সুদিন ফিরছে জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটে।

হার দিয়ে টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরু বাংলাদেশের

অন্যদিকে বাংলাদেশ দল যেন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট ভুলেই গেছে। একের পর এক ম্যাচ হেরেই চলছে। বিশেষ করে ২০ ওভারের খেলায় বাংলাদেশ দল এখনো শিখছে। সর্বশেষ আমরা যদি তাকাই তাহলে এশিয়া কাপ দেখতে পারি। এই এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কা এবং আফগানিস্তানের সঙ্গে হেরে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিয়েছে বাংলাদেশ। এরও আগে যদি দেখি তাহলে জিম্বাবুয়ে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, আফগানিস্তান আর পাকিস্তানের সঙ্গে সিরিজ খেলে বাংলাদেশ। সেখানে ১০টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। যার মধ্যে আট ম্যাচই হেরেছে। তিনটা সিরিজই হেরেছে, শুধু আফগানিস্তানের সঙ্গে ড্র করেছে। এখানেও কথা আছে। ঘরের মাঠে আফগানদের সঙ্গে ড্র করলেও নিরপেক্ষ ভেন্যুতে আফগানরা কতটা ভয়ংকর সেটা এশিয়া কাপে প্রমাণ দিয়েছে। এছাড়াও পাকিস্তানের সঙ্গে ঘরের মাঠে হোয়াইটওয়াশও হয়েছে। সুতরাং এই টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ আসলে শিশুই বলা যায়। টি-টোয়েন্টিতে আসলে আমাদের পায়ের তলায় মাটি নেই। একমাত্র সাহস করে ওয়ানডে ক্রিকেটটা খেলতে পারে বাংলাদেশ। বর্তমান সময়ে ক্রিকেটের সবচেয়ে জনপ্রিয় ফরম্যাট হচ্ছে টি-টোয়েন্টি। এই খেলায় এখন পুরো বিশ্বের আগ্রহ। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট যুক্ত হওয়ার পর থেকে ক্রিকেটের দর্শকও বেড়েছে বেশ।

তিন রানের হারে স্বপ্ন ভাঙল বাংলাদেশের

ক্রিকেটের এই ছোট ফরম্যাটে বাংলাদেশের উন্নতি করা খুবই জরুরি। এখনো পর্যন্ত বাংলাদেশে সেরকম কোনো টি-টোয়েন্টি স্পেশালিস্ট নেই বললেই চলে। অথচ প্রতিটা দেশেই টি-টোয়েন্টি খেলার জন্য কিছু ভালো মানের খেলোয়াড় রয়েছে। ভারত, পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশের যে পরিমাণ খেলোয়াড় রয়েছে টি-টোয়েন্টির জন্য তার ছিটেফোঁটাও নেই আমাদের। আমাদের দেশে টি-টোয়েন্টি-টেস্ট-ওয়ানডে সবখানেই ঘুরেফিরে একই খেলোয়াড়। ভালো করেছে ওয়ানডে ফরম্যাটে, খেলানো হচ্ছে টি-টোয়েন্টি। ভালো করেছে টেস্টে, খেলানো হচ্ছে টি-টোয়েন্টি। আবার যেখানে ভালো খেলার কথা সেখানে খেলতেই পারছে না ঐ খেলোয়াড়।

 

প্রতিটি ফরম্যাটের জন্য বাংলাদেশের কিছু ভালো খেলোয়াড় তৈরি করা অত্যন্ত জরুরি। অথচ সেটার কোনো নমুনাই দেখা যায় না। অন্যান্য দেশে বিভিন্ন ফরম্যাটে বেশকিছু ঘরোয়া লিগ চলে। এছাড়াও টি-টুয়েন্টির জনপ্রিয়তার কথা বিবেচনা করে প্রায় সব দেশে আন্তর্জাতিক মানের বিভিন্ন ফ্রানসাইজিভিত্তিক দলের মাধ্যমে লিগ খেলানো হয়। যেমন আইপিএল, সিপিএল, বিগব্যাশ, পিএসএল, কাউন্টিসহ আরও অনেক লিগ রয়েছে। বাংলাদেশেও চলে এ লিগ। বিপিএল নামক এই লিগটাই বোধহয় সবচেয়ে নিম্নমানের লিগ হয়ে দাঁড়িয়েছে বর্তমানে। বিপিএলে কখনো পিচ, কখনো আম্পায়ারিং, কখনো প্রযুক্তি থাকে নিম্নমানের। এছাড়াও দেশি খেলোয়াড়দের তেমন পাত্তাই দেওয়া হয় না। একবার তো  বিপিএলে পাঁচ জন বিদেশি খেলোয়াড়ও খেলানোর অনুমতি দিয়েছে। এভাবে নাকি দেশের খেলোয়াড়দের প্রতিভা বের করে আনা হবে।

 

যাই হোক, বিসিবি যদি এই বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে না নেয় তাহলে এভাবেই চলতে থাকবে আমাদের ক্রিকেট। সিনিয়র ক্রিকেটারদের মধ্যে মুশি, তামিম, রিয়াদ একটা একটা ফরম্যাটে খেলছেন না। একমাত্র সাকিব তিনটা খেলছেন। ম্যাশ তো সেই কবেই নেই ক্রিকেটে। এক সময় সব সিনিয়র ক্রিকেটারই বিদায় নিয়ে নেবে। তাহলে পরবর্তী সময়ে আমাদের ক্রিকেটের হাল ধরবে কারা? এটা নিয়েও প্রশ্ন আছে।

জিম্বাবুয়ের কাছে টি-টোয়েন্টি সিরিজ হারল বাংলাদেশ

পরিশেষে বলতে চাই, বাংলাদেশকেও সবার সঙ্গে তাল মিলিয়ে এই খেলায় বাঘের মতো ওপরে উঠতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশের এই ফরম্যাটের খেলাগুলো দেখলে চোখের জল ফেলা ছাড়া আর কিছুই থাকে না। সমর্থকরাই বোধহয় এখানে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পায়। তাই এই ফরম্যাটের জন্য ভালো মানের খেলোয়াড় তৈরি করা এবং সার্বিকভাবে এই ফরম্যাটে ভালো খেলার জন্য বিসিবির উচিত বড় পরিকল্পনা করা। সেই পরিকল্পনা যেন কাগজে কলমে না হয়ে কাজেকর্মে দেখা যায়, সেই প্রত্যাশা রইল।

 

লেখক : আজহার মাহমুদ
প্রাবন্ধিক, ফিচার লেখক।