• ফুটবল

রামিরেস সান্তোস দো ন্যাসিমেনটো - " ন্যু ক্যাম্পের সেই দেবদূত"

পোস্টটি ২৮১ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

কিছু বিশেষ মুহূর্ত থাকে না, যেগুলো এমন সব ঘটনার জন্ম দেয় যার স্মৃতি আজীবন থেকে যায়!

 

২০১২ সালের ২৪ এপ্রিলের রাতটাও সেরকম চেলসি ফুটবল ক্লাবের ইতিহাসে,আজ থেকে একশো বছর পরেও স্বমহিমায় উজ্জ্বল হয়ে থাকবে ঐ রাত।এক বছর আগে বিশ্বসেরা হওয়া বার্সেলোনার ডেরা নু ক্যাম্পে সেদিন চ্যাম্পিয়ন্স লীগ সেমি ফাইনালের দ্বিতীয় লেগে আতিথেয়তা পেয়েছিল চেলসি।

 

ঘরের মাঠ স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে প্রথম লেগে ১-০ গোলের জয়টা বার্সেলোনার ইতিহাসের সেরা দলটার বিপক্ষে বিশেষ কিছু ছিলোনা। দ্বিতীয় লেগে এই শঙ্কা সত্যি প্রমাণ হতে লাগলো নু ক্যাম্পে ৪৩ মিনিটের মধ্যে দুই মিডফিল্ডার বুস্কেটস আর ইনিয়েস্তার গোলে বার্সেলোনা ২-০ তে (অ্যাগ্রীগেটে ২-১) এগিয়ে যাওয়ার পর।

 

এই ৪৩ মিনিটের মধ্যে আরেকটা চূড়ান্ত অঘটন ঘটে গিয়েছে।ম্যাচের ৩৭ তম মিনিটে মেজাজ হারিয়ে অ্যালেক্সিস সানচেজকে ট্যাকল করে রেড কার্ড রিসিভ করেন টেরি।২০০৮ এর মস্কোর বৃষ্টিস্নাত রাতের সেই শুটআউট স্লিপের পর আরেকবার অধিনায়ক থেকে খলনায়ক বনে গেলেন জন টেরি।

 

ম্যাচের এমন মুহূর্তে দেবদূতের মত আবির্ভাব হয় এক শির্নকায় ব্রাজিলিয়ানের, রামিরেসের।ম্যাচের শুরুতে হলুদ কার্ড হজমের কারণে যার ফাইনালে খেলা হবেনা চেলসি বার্সেলোনা নামের দেওয়াল পেরোলেও!

 

হাফ টাইমের কিছু আগে চেলসির ইতিহাসের সেরা খেলোয়াড় ল্যাম্পার্ডের মিডফিল্ড থেকে দেওয়া থ্রু পাসটা ডি বক্সের কিছু বাইরে খুঁজে নেয় বুস্কেটস আর পুয়োলকে কাটিয়ে দৌড়ে আসা রামিরেসকে।রামিরেস বল পেয়ে কন্ট্রোল করার কোনো চেষ্টা না করেই সুইপ করতে সামনে এগিয়ে আসা ভালদেসের মাথার উপর দিয়ে শূন্যে চিপ করে দিল,বল গিয়ে জড়ালো জালে,সাথে স্তম্ভিত করে দিলো নু ক্যাম্পের ৯৫,৮৮৫ জন দর্শককে।গোল পেয়েই রামিরেস সাম্বা ড্যান্স করা শুরু করলো,অভিবাদন পেলো গোলের অ্যাসিস্ট দেওয়া ল্যাম্পার্ডের।

 

ম্যাচের মোড় ঘুরে যায় ওখানেই। এ্যাগ্রিগেটে ২-২ গোলের সমতায় আসে চেলসি, অ্যাওয়ে গোল অ্যাডভান্টেজের কারণে আর গোল হজম না করলে দ্বিতীয়বারের মত ফাইনালে যাওয়াও নিশ্চিত, হলোও তাই।

 

বার্সেলোনা ঐ ম্যাচে ফেরত আসার মোক্ষম সুযোগ পেয়েছিল দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে চেলসির ডি বক্সে দিদিয়ের দ্রগবা ফ্যাব্রিগ্যাসকে ফাউল করে বসার পর কিন্তু পেনাল্টি নিতে আসা মেসির শট গিয়ে লাগলো ক্রসবারে।পুরো ম্যাচে আর গোলের দেখা পায়নি বার্সেলোনা,উল্টো সেকেন্ড লেগের আগে প্রেস কনফারেন্সে "best team doesn't always win" বলা তোরেসের ভালদেজকে কাটিয়ে স্কোর করা আইকনিক গোলের সাক্ষী হতে হয়।

 

টেরির রেড কার্ড রিসিভ করা, কাহিলের ইঞ্জুরিতে মাঠ ছাড়া,নু ক্যাম্পে প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার কিছু আগে ২-০ তে পিছিয়ে পড়া --- সবগুলো ঘটনাই অশনীর ইঙ্গিত দিচ্ছিল কিন্তু সবকিছু পরিবর্তন করে দিয়েছিল একটা মহামূল্যবান গোল, রামিরেস সান্তোস দো ন্যাসিমেনটোর গোল!

 

রামিরেস ব্রাজিলে সহজাত ফুটবল প্রতিভা নিয়ে জন্ম নেওয়া বাকি দশজনের মত ছিলোনা।মিডফিল্ডে খেললেও তার নামের পাশে "মায়েস্ট্রো" কিংবা " শিল্পী" শব্দ বেমানান, "কর্মী" শব্দটাই বরং যথার্থ।৯০ মিনিট অনায়াসে দৌড়ে বেড়াতে পারতো সমান তালে,কখনো ক্লান্ত হতো না,পরিশ্রম দিয়ে টেকনিকের ঘাটতি পুষিয়ে দিতো।৭ বছর লম্বা চেলসি ক্যারিয়ারটা পুরোটাই ছিলো ওয়ার্ক এথিক, সিনস্যারিটি দিয়ে মোড়ানো।

 

ইলাস্ট্রিয়াস ক্যারিয়ারে বড়ো মুহূর্তে জলে উঠেছে বহুবারই;কখনো ক্যাম্প নুর চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সেমির মঞ্চে কিংবা কখনো ওয়েম্বলির এফ এ কাপ ফাইনালে।চেলসি থেকে বেরিয়ে চীনের জিয়াংসু ঘুরে নিজের মাতৃভূমি ব্রাজিলে ফিরে এসেছিল পালমেইরাসের হয়ে খেলতে।দুই ক্লাবে মোটে পাঁচ বছর কাটানোর পর গতকাল রাতে পাবলিকলি জানালো বুটজোড়া তুলে রাখার কথা, পাঁচ ফুট সাড়ে দশ ইঞ্চির শীর্ণকায় ব্রাজিলিয়ানকে আর কখনো দেখা যাবেনা মাঠ দাপিয়ে বেড়াতে।

 

যার কারণে ক্লাব ফুটবলের সবচেয়ে বড় মঞ্চে চেলসির দুর্ভাগ্যের অবসান ঘটেছিল,রোমান আব্রামোভিচ নিজের চেলসির প্রতি ভালোবাসা আর বিশ্বাসের প্রতিদান পেয়েছিলেন ,সেই মানুষটার বিদায় মনটাকে বিষন্ন করে দিয়েছে বটে।

 

বিদায়ের ভালো দিকও আছে কিছু।হয়তো এখন কোটি কোটি চেলসি সমর্থকের তার প্রতি কৃতজ্ঞতা, ভালবাসা আরো তীব্রভাবে অনুভব করতে পারবে,হয়তো অবসরে নিজের গর্ব করার মত ক্যারিয়ারের স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে দুচোখ ভেজাবে,ওয়েম্বলি আর ক্যাম্প নুর রাতের কথা মনে করে আরেকবার পুলকিত হয়ে উঠবে।

 

ধন্যবাদ দিয়ে এই মানুষটাকে ছোট করতে চাইনা।আমাদের দেওয়া আনন্দের অনুভূতি একইভাবে তোমার জীবনে ফিরে আসুক শতবার।ভালো থাকবে,রামিরেস ।

ছবিসূত্র: ইএসপিএন