মেসি না মদ্রিচ? দুই এলএম টেনের দ্বৈরথে কে হাসবে শেষ হাসি
পোস্টটি ৮৩৭ বার পঠিত হয়েছে
২০১৪ তে মেসি আর ২০১৮ তে মদ্রিচ, দুইজনই একদম নিজেদের লালিত স্বপ্নের একদম কাছাকাছি গিয়েও স্পর্শ করতে পারে নি সোনালি ট্রফি। মেসি নাকি মদ্রিচ, কে যাবে নিজের অধরা স্বপ্নকে সত্যি করার আরো একবার আরেক ধাপ কাছে? লুসাইলের আরেকটি রাত, আরো একটি ম্যাচের অপেক্ষা নিজের স্বপ্নের ট্রফির আরেকটি ধাপ কাছে যাওয়ার।
আর্জেন্টিনা বা ক্রোয়েশিয়া দুই দলই টুর্নামেন্টের এ পর্যন্ত এসেছে একটা দল হিসেবে এবং নিজেদের নার্ভ ধরে রেখে। যদিও আর্জেন্টিনা বললে অবধারিতভাবে চলে আসে মেসির নাম, মেসির চিরচেনা ফর্মের পাশাপাশি আর্জেন্টাইনদের দলগত পারফরম্যান্স এর জন্যই প্রথম ম্যাচে সৌদির সাথে হারের পরেও সেমিতে আলবিসেলেস্তেরা। আর ক্রোয়াট রা এতোদূর এসেছে জমাটবদ্ধ রক্ষন আর এ বিশ্বকাপের বলতে গেলে সবচেয়ে অভিজ্ঞতাপূর্ণ মিডফিল্ড ত্রয়ীর উপর ভর করে।
ফর্মেশন ও লাইন আপঃ কার্ড সংক্রান্ত কোনো ইস্যু না থাকায় ক্রোয়াটরা নিজেদের পরিচিত ৪-৩-৩ ফর্মেশনেই ব্রাজিলের সাথের একাদশটা ই খেলার সম্ভাবনা সবচেয়ে প্রবল, তবে পাসালিচের যায়গায় গত ম্যাচের স্কোরার পেটকোবিচ কেও দেখা যেতে পারে একাদশে। বোর্না সোসা পুরোপুরি ফিট থাকায় ডিফেন্সেও পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা একদমই শূন্য যেখানে ক্রোয়াটদের মূল ভরসা কিপার লিভাকোভিচের সাথে এক্সপেরিয়েন্স ভিদার পরিবর্তে একাদশে নিজের যায়গা পাকাপোক্ত করা ২০ বছর বয়সী গ্যাবার্ডিওল যে এবার বিশ্বকাপে তাদের ডিফেন্সকে একাই সামাল দিয়েছে, তবে এ ম্যাচে হয়তো তাকে সর্বোচ্চ পরীক্ষাটা ই দিতে হবে মেসি নামক এলিয়েনের বিপক্ষে। আর মিডে যথারীতি এ বিশ্বকাপেরই বলতে গেলে সবচেয়ে অভিজ্ঞ ও ব্যালেন্সড মিড ত্রয়ী মদ্রিচ কোভাচিচ আর ব্রোজোবিচ। তবে কোচ ডালিচের জন্য চিন্তার বিষয় হতে পারে এটাকিং লাইন আপ, কেননা আক্রমণের কোনো খেলোয়াড়ই এখন পর্যন্ত নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেনি।
স্কালোনি আগের ম্যাচে ডাচদের বিপক্ষে ৫-৩-২ তে শুরু করলেও গুঞ্জন অনুযায়ী এ ম্যাচে ৪-৪-২ তে শিফট করার সম্ভাবনা ই বেশি। এই ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে সবচেয়ে হুমকি হলো তাদের মিড ত্রয়ী, মদ্রিচের সাথে কোভাচিচ বা ব্রজোভিচ কে যদি থামানো না যায় তাহলে আর্জেন্টাইনদের কপালে চিন্তার ভাজ পড়ার ই কথা। তাই এই মিডত্রয়ীকে আউটক্লাস করতে স্কালোনি হয়তো মিডকে আরেকটু অভারলোড করে সুবিধা নিতে চাইবে। তাই লিসান্দ্রোর পরিবর্তে পারেদেস কে দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা ই বেশি, তাহলে দি মারিয়াকে এই ম্যাচেও বেঞ্চে থেকেই শুরু করতে হতে পারে। কার্ড ইস্যুর জন্য একুনা না থাকায় লেফট ব্যাক পজিশনে এ যায়গায় টাগ্লিয়াফিকোর উপরই ভরসা করবে স্কালোনি। আর যথারীতি মেসির সাথে আলভারেজ এর ই শুরু করবে, লাউতারো সেক্ষেত্রে বেঞ্চে ই থাকবে। আর্জেন্টিনার স্বস্তির বিষয় হলো নিজেদের ডিফেন্স লাইন, সাথে ক্রোয়াটদের আক্রমণভাগের খেলোয়াড়দের ফর্মহীনতা। আর বিশ্বকাপে ওটামেন্ডির নিজের ক্যারিয়ারের মনে হয় সবচেয়ে ভালো ফর্মে থাকাটাও এখানে নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে। নিশ্চিতভাবেই বলা যায় দুইদলের ডিফেন্সের মধ্যে একটা ভালো টক্কর হবে। তবে আর্জেন্টাইন সমর্থক বা স্কালোনি সবার জন্যই সবচেয়ে স্বস্তির বিষয় হলো বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত মেসির মেসিসুলভ থাকাটা।
এ ম্যাচে অবশ্যই পুরো বিশ্বের মতো আর্জেন্টাইন সমর্থকেরা তাকিয়ে থাকবে এক মেসি নামক এলিয়েনের দিকে, আর ক্রোয়াটদের ভরসা ৩৭ বছর বয়সে এসেও নিজের সেরাটা দেয়া লুকা মদ্রিচের দিকে।
আর্জেন্টাইন সমর্থকেরা আশায় বুক বাধতে পারে মেসিকে নিয়ে কেননা মেসির ৫ বিশ্বকাপের মধ্যে এই কাতারেই মনে হয় নিজের সেরাটা উজাড় করে দিচ্ছেন এলএম টেন, ২০১৪ তে একাই আর্জেন্টিনাকে ফাইনালে টেনে নিয়ে যাওয়া মেসির থেকেও কাতারের এই মেসিকে আরো ভয়ংকর আর ডেডিকেটেড মনে হচ্ছে। আর চিরো জৌবনা মদ্রিচের পায়ের দিকেই তাকিয়ে থাকবে পুরো ক্রোয়েশিয়া।এই দুই এলএম টেন এর মধ্যে যে ই জ্বলে উঠতে পারবে তার দল ই থাকবে ড্রাইভিং সিটে।
এছাড়াও চোখ রাখতে হবে দুই গোলকিপারের দিকে, কোয়ার্টারে দুইদল ই দুই গোলকিপারের উপর ভর করে পেনাল্টি নামক সাডেন ডেথ কে পার করিয়ে সেমিতে এসেছে। ক্রোয়েশিয়ার মধ্যে পেরিসিচের উপর আলাদা করে নজর রাখতে হবে, ক্রোয়েশিয়ার আক্রমণভাগের মধ্যে এই পেরিসিচ ই সবচেয়ে ভয়ংকর হতে পারে আর্জেন্টিনার জন্য। আর আর্জেন্টিনার মধ্যে মেসির বাইরে যেকোনো মুহুর্তে ম্যাচ বদল করে দিতে পারে দি মারিয়া যদিও বেঞ্চে থেকে শুরু করতে হতে পারে, তারপরও বেঞ্চ থেকে এসেও নিজের জানান দিতে সময় লাগার কথা না। এছাড়াও আলভারেজ, এনজো ফার্নান্দেজ আর ডি পলের দিকেও নজর থাকবে।
মঙ্গলবারের রাতে লুসাইলের আকাশে কার মুখে হাসি ফুটবে তা হয়তো সময় ই বলে দিবে, তবে মেসি মদ্রিচের মধ্যে যেকোনো একজনের বিদায়টাও হয়তো লুসাইলের আকাশকে কালো মেঘে ঢেকে দিবে। সোনালী ট্রফিটার জন্য ১৮ তারিখ কে লড়বে তা জানার জন্য আর মাত্র ৯০ বা ১২০ মিনিটের অপেক্ষা। অপেক্ষা সবসময়ই কষ্টের বা বেদনার, তবে এ ৯০ মিনিটের অপেক্ষা হবে অনেক রোমাঞ্চকর।
- 0 মন্তব্য