• ফুটবল

বেলা ফুরালো, রোনালদো?

পোস্টটি ৯৯৯ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

খুব জেদী একজন রাজা ছিলেন রাজ্যে কেউ আক্রমণ করতে এলে সেই প্রতিপক্ষকে নিমিষেই ছিঁড়েখুঁড়ে তছনছ করে ফেলতেন সবসময় ছিলেন অপ্রতিরোধ্য। অনুপ্রেরণাদায়ী ছিলেন, নিজেও সবসময় অনুপ্রেরণাতে ভরপুর থাকতেন। উষ্ণতা যেন ঠিকরে বেরোতো তার শরীর থেকে। প্রজাদের হাসাতেন, আবার কাঁদাতেনও, আনন্দে ভাসাতেন প্রতিনিয়ত। এক চুলও ছাড় দিতেন না কাউকে।

 

 

সবকিছু শেষ হয়ে গেলেও যেন শেষ করতে চাইতেন না তিনি। সকলে হাল ছেড়ে দিলেও তিনি ছেড়ে দিতেন না। বিশ্বাস রাখতেন জীবনের সকল অসম্ভবে। আর বহু অসম্ভবকে সম্ভবও করে ফেলতেন নিজের তীব্র বিশ্বাসের জোরে, নিজের কঠোর পরিশ্রম দিয়ে। নিজের সর্বস্ব দিয়ে লড়াই করে বারবার উঠে দাঁড়াতেন ধ্বংসস্তুপ থেকে আর বলতে,  

‘Your Love Makes Me Strong

Your Hate Makes Me Unstoppable’

 

সেই রাজা ছিলেন অপ্রতিরোধ্য। প্রজাদের আনন্দে তো ভাসাতেনই, সেই সাথে নিন্দুকদের গালে নিয়ম করে চপেটাঘাতও দিতেন। নিজেই নিজেকে ছাড়িয়ে যেতেন বারবার। মাথায় এভারেস্টসম চাপ নিয়েও রাজ্যকে আগলে রাখতেন সবসময়। প্রজাদের কাছে জনপ্রিয়তাও ছিল তুঙ্গে।

 

 

তবে একসময় দোর্দন্ড প্রতাপে প্রতিপক্ষকে ছিঁড়েখুঁড়ে ফেলা সেই রাজার তেজও কমে আসলো। দাপট, ক্ষমতা সবকিছুতেই ছাপ পড়তে লাগল বয়সের। আগের মত দাপট দেখাতে পারতেন না সব জায়গায়। প্রতিপক্ষকে তীব্র তেজে ছিঁড়েখুঁড়েও ফেলতে পারতেন না। সবকিছু করতে গেলেই কোথায় যেন পেয়ে যেতেন একটা বাঁধা। কোথায় যেন বেজে উঠল বিদায়ের সুর। সবকিছু থেকেও কী যেন নেই। রাজা আছেন হয়ত তার মতই। রাজ্যজুড়ে দাপটের যেই নমুনা দেখাতেন তিনি, সেখানে ছেদ পড়ল অনেকটাই। উঠল গেল গেল রব।          

 

 

রাজার আগের মত গতি ছিল না, ছিল না ক্ষিপ্রতাও। ছিল না প্রচন্ড তেজে কাউকে ধ্বংস করে দেওয়ার মত ক্ষমতাও। সময়ের স্রোতে ধীরে ধীরে কেন যেন সবকিছুতেই বয়সের ছাপ পড়ে গেল। একসময় তাকে নিয়ে মেতে থাকা প্রজারাও বুঝতে পারল রাজার বয়স বাড়ছে। রাজা আর আগের মত অমানবিক সব কাজ এক নিমিষে করে ফেলতে পারছেন না। সবখানেই পড়ছে বয়সের ছাপ। শরীরটা যেন একদমই কথা শুনছে। তাকে দেখে বড় হওয়া প্রজারাও বুঝতে শুরু করল বয়স তাদের নিজেদেরও বেড়েছে। আগের সেই ছোট্ট স্কুল পড়ুয়া প্রজারা এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। পৃথিবীতেও এসে গেছে অনেক পরিবর্তন। দাপুটে সেই রাজার দাপটও তাই নিঃশেষ হয়ে আসছে আস্তে আস্তে। নিন্দুকরাও তাই আরও বেশি হিংস্র হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ছে আক্রমণ করতে।  

 

 

এতক্ষণ যে রাজার গল্প আপনি পড়লেন তিনি কোনো দেশের রুপকথার গল্পের কোনো রাজা নন তিনি ফুটবল মাঠের রাজা ফুটবল খেলেই অবশ্য অসংখ্য রূপকথার জন্ম দিয়ে ফেলেছেন বিশ্বজোড়া লাখো কোটি ভক্ত তাই অবিস্মরণীয় সব কীর্তি দিয়েই চেনে সেই রাজাকে। ফুটবল মাঠে অসংখ্য রূপকথার গল্পের জন্ম দেওয়া সেই রাজার নাম ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো।     

 

মাদেইরা, লিসবন, ম্যানচেস্টার, মাদ্রিদ সব জয় করা হয়ে গেছে মহারাজার। এতকিছু বাদেও মহারাজা জয় করেছেন কোটি ভক্তের হৃদয়। আর সেই কারণেই হয়ত বিষাদের সুর বেজে উঠেছে অনেকের মাঝে। রাজার এমন বিদায় মানতে বেশ কষ্টই হচ্ছে অনেকের। হৃদয়ে চলছে রক্তক্ষরণ।  

 

 

বিশাল এক জনগোষ্ঠীর কৈশোরকে রঙিন করে ফুটবলের ভালোবাসায় মোহিত করে ফেলার জন্য বিশাল একটা ধন্যবাদ মহারাজা পেতেই পারেন। বিদায়বেলায় অসংখ্য ধন্যবাদ ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। আপনার ভক্তরা আপনাকে খুব মিস করবে।

 

 

ফুটবলার রোনালদো সময় ফুরিয়ে আসছে। ফুটবলের নিকট ভবিষ্যতে হয়ত খেলোয়াড় রোনালদো মিশে থাকবেন না। অন্য অনেকভাবেই তো মেশার সুযোগ আছে দ্য বিউটিফুল গেইমের সাথে। আপাতত সেইরকম কোনোকিছুর প্রত্যাশায় থাকাই যায়। তার আগ পর্যন্ত বিদায়, রোনালদো! আপনি অনন্য, আপনি অসাধারণ।